খোদা ব্যক্তিগত ভাবে আমার কাছে কথা বলেন
অতীতে কিছুকাল ধরে আমি ছিলাম একজন সক্রিয় মুসলমান, মুহম্মদিয়া আন্দোলনের একজন সংগঠক এবং ইসলাম ধর্মের একজন প্রচারক। ১৯৪৭ সনে আমি আমুনতায়ী-তে কালিমান্টান্ মুসলিম কংগ্রেস এর সভাপতি মনোনিত হই কে, এইচ্ ইদ্হাম খালিদের সঙ্গে। দ্বিতীয় লেফ্টেন্যান্টের মর্যাদাসহ আমি ব্যান্জারমাসিন-এ সামরিক বাহিনীতে মুসলমান ইমমি হই ১৯৫০-৫১ সনে। আমার লিখিত প্রবন্ধগুলো ছাপা হয়েছিল মুসলিম বিভিন্ন সাময়িকীতে, যেমন, সোলো-র মিন্জুয়ান আদিল-এ, জাকার্তার মিন্জুয়ান রিসালাহ্, জ্বিহাদ-এ এবং বান্ডুং-এর মিন্জুয়ান এন্টি কমিউনিজ সাময়িকীতে। ১৯৩৬ সন থেকে আমি আক্রমণাত্মক মসীহীয়াত (খ্রীষ্টধর্ম) বিরোধীদের সহযোগি ছিলাম মুয়ারা তেউয়েহ্-তে (বারিতো) এবং ১১৬২ সন পর্যন্ত আমি সেসব মুসলমান দল গোটা ইন্দোনেশিয়াতে মুসলমান শাসন কায়েম করতে সংকল্পবদ্ধ ছিল তাদের প্রতি সহানুভূতিপূর্ণ ছিলাম, যা স্বতঃসিদ্ধ ভাবেই খ্রীষ্টানদের বিরুদ্ধে দাঁড়ায়।
বস্তুতঃপক্ষে, ১৯৩৬ সন থেকে একটি বাইবেল আমার অধিকারভুক্ত ছিল। কিন্তু সত্য খুঁজে পাওয়ার জন্য আমি তা থেকে পাঠ করিনি, কিন্তু খ্রীষ্টান-বিরোধী মনোভাব নিয়ে আমার নিজ অস্থানের (দৃষ্টিভঙ্গির) সমর্থনে অংশ খুঁজে পাওয়ার জন্যই তা করেছিলাম, এবং এরূপে যেন মসীহী বিশ্বাসের উপর আরও সম্পূর্ণরূপে ঈসা মসীহের খোদাত্ব অস্বীকার করে ৪০ বছর বয়স পর্যন্ত আমি তাঁর অপযশকারী ছিলাম। উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে সত্য প্রত্যাখান করে সত্যের ব্যঙ্গ করতাম। কিন্তু আল্লাহ্র মহব্বত এতই মহৎ যে, তিনি আমার অন্বেষণ করেছিলেন, আমাকে খুঁজে পেয়েছিলেন এবং আমাকে রক্ষা করেছিলেন।
১৯৬২ সনে মসজিদে দেবার উদ্দেশ্যে একটি উপদেশ লেখার সময়ে সূরাহ্ আল-মায়িদাহ্, ৬৮ আয়াতের সম্বন্ধে গভীরভাবে চিন্তা করছিলাম, যেখানে লেখা ছিল ,
قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لَسْتُمْ عَلَى شَيْءٍ حَتَّىَ تُقِيمُواْ التَّوْرَاةَ وَالإِنجِيلَ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ
“…বল, হে আহলে কিতাব ! তোমরা কোন পথেরই উপরে নহ, যে পর্যন্ত তোমরা তৌরাত, ইঞ্জিল ও তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হইতে তোমাদের প্রতি কিতাবের পাবন্দি না কর।”
ইতিপূর্বে অন্ততঃ একশো বার এ আয়াতটি আমি পাঠ করেছিলাম, কিন্তু পরিশেষে খোদা আমার অন্তরের কানে কানে বলেছিলেন যে, কোরানে যে তৌরাত ও ইঞ্জিল সম্বন্ধে উল্লিখিত আছে, বর্তমানে বাইবেলে (কিতাবুল মোকাদ্দসে) দৃষ্ট তৌরাত ইঞ্জিল তার সঙ্গে অভিন্ন ও এক।
আমি বরাবরই চিন্তা করে আসছিলাম যে, তৌরাত ও ইঞ্জিল বাস্তবে আর অস্তিত্বমান নেই এবং ওগুলোর বিষয়বস্তু সারসংক্ষেপে কোরানে বিবৃত হয়েছে। আমি নিশ্চিত বলে ভাবতাম যে, বর্তমান বাইবেল যে তৌরাত ও ইঞ্জিল নিয়ে গঠিত সেসব মিথ্যে, এবং মৌলিক বিষয়বস্তু ভুলভাবে মানুষের দ্বারা বিন্যস্ত হয়েছিল, জাল করা হয়েছিল, বা তার সাথে কিছু যুক্ত করা হয়েছিল।
যা হোক আমার অন্তর বলেছিল যে, বর্তমানে উপস্থাপিত তৌরাত ও ইঞ্জিল সত্য। আমার মন অনবরত আমার অন্তঃস্বরের বিরোধীতা করছিল :“না ! বাইবেলের তৌরাত ও ইঞ্জিলের রদবদল (মিথ্যায়ন) করা হয়েছে।” আমার চিন্তাসমূহ আমার অন্তরাত্ম ও বিবেকের বিরোধীতা করছিল, আর কি ঠিক সে সম্বন্ধে আমি অনিশ্চিত ও সন্দিগ্ধ হয়ে উঠেছিলাম।
আমার বিবেকের শান্তি বিধোনের জন্য আমি সমস্যাটি খোদার দরবারে মধ্যরাত্রির এবাদতে (তাহ্জুদ নামাজে) উপস্থিত করলাম। এ মোনাজাত আল্লাহ্র কাছে সত্যের সুনির্দিষ্ট চিহ্নের জন্য বিনতি জানানো হয়। দুটি বিশ্বাসের মধ্যে কোনটি সঠিক তা উপলব্ধি বা চিহ্নিত করতে আল্লাহ্র সাহায্য কামনা করেছিলাম। আমার মোনাজাত ছিল এই:
“হে খোদা আসমান ও জমিনের মালিক, আকাশ ও পৃথিবীর সৃষ্টিকর্তা, মুসলমান, খ্রীষ্টান ও বৌদ্ধদের আল্লাহ্; উপত্যকা ও পর্বতরাজির , চন্দ্র ও তারকারাশির আল্লাহ্; বিশ্ব-ব্রহ্মান্ডের আল্লাহ্; দয়া করে কোরানে উল্লিখিত তৌরাত ও ইঞ্জিল সম্পর্কিত সত্য আমাকে দেখিয়ে দিন। এর অর্থ কি এই যে, মৌলিক তৌরাত ইঞ্জিলের অস্তিত্ব আর নেই, সেসবেরই সংক্ষিপ্তসার কোরানে বিবৃত হয়েছে? তা-ই যদি সত্যি হয়, তবে আমার অন্তর সংবলীকৃত করুন, যেন আমি আর বাইবেল পাঠ না করি। কিন্তু কোরানে উল্লিখিত ‘তৌরাত ও ইঞ্জিলের সত্য’ যদি এখন বাইবেল প্রাপ্ত সত্যকে বুঝায়, তবে আমি মিনতি জানাই, আমার হৃদয় খুলে দিন, যেন আমি সততার সঙ্গে বাইবেল পাঠ করতে আরও আগ্রহী হই।”
আমার সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য আমি অন্য কারো সাহায্য কামনা করিনি। কোন ধর্ম-প্রচারক, দীনদার মুসলমান বা আমার জ্ঞানি বা বুদ্ধিমান বন্ধুদেরও আমি জিজ্ঞেস করিনি। সর্বজ্ঞ-সর্বদর্শী আল্লাহ্কে সরাসরি আমার জন্য মনোনয়ন করে দিতে বলেছিলাম, যেন আমি আসমানি ইচ্ছানুযায়ী সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারি। আমি আকুল ও আন্তরিক ভাবে মোনাজাত করেছিলাম খোদার পথ-নির্দেশনার প্রত্যাশায়, যেন তিনি আমার জন্য সত্য মনোনয়ন করে দেন এবং নির্ভুল ধর্ম জানতে ও স্বীকার করতে আমাকে সাহায্য করেন।
প্রত্যেক ধর্মপ্রাণ ব্যক্তিই আশা করেন যে, মৃত্যুর পর এক বাস্তব জীবন আছে। এবং এসব লোকদের মধ্যে একজন হওয়ার কারণে আমি আমার আশা স্থাপন করেছিলাম আল্লাহ্তেই। আমি বিশ্বাস করতাম, মৃত্যুর পরে আমাদের যাওয়ার জন্য মাত্র দুটি স্থানই আছে: অনন্ত অগ্নিতে নিরবিচ্ছিন্ন শাস্তি সমেত দোযখ, অথবা অনন্ত গৌরবে আল্লাহ্র সঙ্গে থাকার জন্য স্বর্গ বা বেহেশত। আমার অনন্ত ভবিষ্যতকে আমি হালকাভাবে বিবেচনা করতে পারিনি।
উদাহরণস্বরূপ, ধীরুন, আমরা ১০ গ্রাম বিশুদ্ধ স্বর্ণ ক্রয় করেছি। কেউ আদেরকে ঠকায়নি এ সম্বন্ধে নিশ্চিত হওয়ার জন্য তা আমাদের অবশ্যই সতর্কতার সঙ্গে পরীক্ষা করে দেখতে হবে, যেন ভবিষ্যতে আফশোস করতে না হয়।তাহলে আমাদের প্রাণের (আত্মর) ভবিষ্যত সম্বন্ধে আমাদের আরও না কত বেশি সতর্কতার সঙ্গে চিন্তা-বিবেচনা করা উচিত। আল্লাহ্ যিনি বেহেশ্তি জীবনদাতা তাঁর ইচ্ছানুক্রমেই আমাদের এবাদতের সত্য যাচাই করে দেখতে হবে এবং অধ্যয়ন করতে হবে। অন্যথায়, আমাদের অসতর্কতার জন্য চিরকাল আফশোস করতে হবে। আমি সব সময়ই বিশ্বাস করতাম, আল্লাহ্ নিজেই বেহেশ্ত ও দোযখের নির্মাতা। এ কারণে আমি মানুষের উপদেশ বা পরামর্শ নেই নি- খ্রীষ্টানদেরও নয়, মুসলমান ধর্ম-প্রচারকদেরও নয়। তারা মানুষ মাত্র এবং খোদার ইচ্ছানুরূপ সঠিক সত্য তারা না জানতেও পারেন। তাই আমি সরাসরি সব সত্রের অধিকারী আল্লাহ্র সমীপবর্তী হয়েছিলাম এবং এই আশা ও আস্থা সহ তাঁর কাছে মিনতি জানিয়েছিলাম যে, তিনি আমাকে সত্য পথ-নির্দেশনা দিবেন।
আল্লাহ্ মাবুদের গৌরব হোক যে, আমার সব মোনাজাতের উত্তর মিলেছিল। এর দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, যে কেউ সত্য জানতে চায় এবং সেজন্য আন্তরিকভাবে মিনতি জানায় তিনি তাদেরকে অবশ্যই লক্ষ্যনীয় যে, সূরাহ্ আল-মায়েদাহ্, ৬৮ ছাড়া কোরানের আরও বহু অংশ ঐ সময়ে আমার মনে রেখাপাত করেছিল। উদাহরণস্বরূপ:
সূরাহ্ আল-সাজ্বদাহ্, ২৩:
تَكُن فِي مِرْيَةٍ مِّن لِّقَائِهِ وَجَعَلْنَاهُ هُدًى لِّبَنِي إِسْرَائِيلَ
“আর আমি মূসাকেও ধর্মগ্রন্থ প্রদান করিয়াছিলাম। অতএব তুমি উহা প্রাপ্তিতে সন্দেহ পোষন করিও না।”
সূরাহ্ আল-সাজ্বদাহ্ ২৩
সূরাহ্ আল-মায়েদাহ্, ৪৬:
قُلْ يَا أَهْلَ الْكِتَابِ لَسْتُمْ عَلَى شَيْءٍ حَتَّىَ تُقِيمُواْ التَّوْرَاةَ وَالإِنجِيلَ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلَيَزِيدَنَّ كَثِيرًا مِّنْهُم مَّا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ طُغْيَانًا وَكُفْرًا فَلاَ تَأْسَ عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
“আমি তাহাদের” (পূর্ববর্তী নবীদের) “পশ্চাতে মরিয়ম পুত্র ঈসাকে প্রেরণ করিয়াছিলাম, তাহার পূর্ববর্তী কিতাব সমর্থকরূপে, এবং তাঁহাকে ইঞ্জিল প্রদান করিয়াছিলাম যাহাতে হেদায়েত ও নূর রহিয়াছে এবং যাহা তাহার পূর্ববর্তী কিতাব তৌরাতের সমর্থক ও পরহেজগারদিগের জন্য হেদায়েত এবং উপদেশ।”
সূরাহ্ আল-মায়েদাহ্ ৪৬
সূরাহ্ আল-মায়েদাহ্, ৪৭:
وَلْيَحْكُمْ أَهْلُ الإِنجِيلِ بِمَا أَنزَلَ اللّهُ فِيهِ وَمَن لَّمْ يَحْكُم بِمَا أَنزَلَ اللّهُ فَأُوْلَـئِكَ هُمُ الْفَاسِقُونَ
“এবং যেন ইঞ্জিলধারীগণ আল্লাহ্ যাহা উহাতে নাজিল করিয়াছেন, তদনুযায়ী ব্যবস্থা প্রদান করে এবং যে ব্যক্তি আল্লাহ্র নাজিলকৃত কিতাব অনুযায়ী হুকুম প্রদান না করে, তাহারাই অবাধ্য।”
সূরাহ্ আল-মায়েদাহ্ ৪৭
সূরাহ্ আল-বাকারাহ্, ৬২:
إِنَّ الَّذِينَ آمَنُواْ وَالَّذِينَ هَادُواْ وَالنَّصَارَى وَالصَّابِئِينَ مَنْ آمَنَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الآخِرِ وَعَمِلَ صَالِحاً فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلاَ خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلاَ هُمْ يَحْزَنُونَ
“যাহারা মুসলমান এবং যাহারা ইহুদি এবং নাসারা ও যাহারা অগ্নিপূজারী, ইহাদের মধ্যে যাহারা আল্লাহ্র প্রতি ও পরকালের প্রতি ঈমান আনিবে এবং সৎকাজ করিবে, তাহাদের জন্য তাহাদের প্রভুর নিকট পুরস্কার রহিয়াছে, তাহাদের ভয় নাই এবং তাহারা মর্মপীড়িত হইবে না ।”
সূরাহ্ আল-বাকারাহ্ ৬২
তৌরাত ও ইঞ্জিল আল্লাহ্র ইচ্ছানুরূপ সত্যের প্রকৃত পথ, এ ইঙ্গিত বাহী আরও বহু উক্তি কোরানে আছে। কোরানের এসব অংশ বাইবেলের আরও গভীরে অনুসন্ধান করতে আমার মনকে সঞ্জিবিত করেছিল, কারণ খোদা এর সত্য সম্বন্ধে আমার আত্মর কাছে মৃদুস্বরে কথা বলেছিলেন।
মধ্যরাত্রির মোনাজাতে তাঁর কাছে পথ-নির্দেশনার মিনতি জানানোর পরদিন আমি আমার মধ্যে সুস্পষ্ট পরিবর্তন অনুভব করেছিলাম। সেই সময় থেকে, আর শত্রু বলে নয়, কিন্তু বাইবেলকে আমি বন্ধু বলে বিবেচনা করতাম। মহা আগ্রহ নিয়ে সকাল বেলাতে বাইবেল হাতে নিলাম এবং পাঠ কালে পাঠ্যাংশের প্রতিটি শব্দের প্রতি আমি অভিনিবেশ সন্নিবেশিত করেছিলাম, কারণ আমি এর সত্য সুনির্দিষ্টভাবে জানতে ইচ্ছুক ছিলাম।
بِسْمِ اللّهِ الرَّحْمـَنِ الرَّحِيمِ
“দয়াময় ও করুনাময় আল্লাহ্র নামে,”
এ কথাগুলো দিয়ে আমি বাইবেল খুলেছিলাম। ঐ সময়ে আমি দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১৫ পদ পড়তে আগ্রহী ছিলাম। এ অংশটি আমাকে আকর্ষিত করেছিল, কারণ ইতিপূর্বে আমি, ধর্মপ্রচারক হোক বা শিক্ষকই হোক, খ্রীষ্টানদের বিশ্বাসের ওপরে আঘাত হানার হাতুড়িরূপে এ অংশটিকে ব্যবহার করতাম, উদ্দেশ্য এই, যেন তারা বাইবেলের এ অংশের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে হযরত মুহম্মদকে নবীরূপে স্বীকার ও বিশ্বাস করে। এ অংশটি আমার পূর্বপরিচিত ছিল, কিন্তু এর অর্থ এখন আমার জন্য বদলে গিয়েছে। সত্যিই, যারা বাইবেলে বিশ্বাস করে না তাদের প্রতেকের জন্য তা বুঝার জন্য রুদ্ধ ও কঠিনই থেকে যায়, কিন্তু অপর পক্ষে, যারা এতে বিশ্বাস করে এবং যাদের অন্তর পাক-রূহে পূর্ণ, তারা স্পষ্ট ভাবে তা বুঝতে সক্ষম হয়।
দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১৫ পদের কথাগুলো নিুরূপ:
“তোমার আল্লাহ্ মাবুদ তোমার মধ্য হইতে, তোমার ভ্রাতৃগণের মধ্য হইতে, তোমার জন্য আমার সদৃশ একজন নবী উৎপন্ন করিবেন , তাঁহারই কথায় তোমরা কর্ণপাত করিবে।”
দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১৫
ইতিপূর্বে আমি এ অংশটিকে হযরত মুহম্মদ সম্পর্কিত ভবিষ্যদ্বানী বলে বিবেচনা করতাম । “আমার (মূসার) সদৃশ একজন নবী”- এ কথাগুলোকে আমার কাছে প্রতিজ্ঞাত নবীরূপে হযরত মুহম্মদের ইঙ্গিতবহ ছিল, কারণ:
- মূসা পিতা-মাতার দ্বারা জন্মপ্রাপ্ত ছিলেন, হযরত মুহম্মদও তদ্রুপ মাতা-পিতার দ্বারা জন্মপ্রাপ্ত ছিলেন। তিনি ঈসা মসীহের মত ছিলেন না, যিনি পিতা ছাড়া কেবল মাতা দ্বারা জন্মপ্রাপ্ত হয়েছিলেন।
- বয়ঃপ্রাপ্ত হলে পর মূসা বিয়ে করেছিলেন। ঈসা যিনি কখনও বিয়ে করেননি, এর বিপরীতে হযরত মুহম্মদও বিয়ে করেছিলেন।
- মূসার সন্তানেরা ছিল এবং হযরত মুহম্মদেরও সন্তান-সন্ততি ছিল। কিন্তু ঈসার কোন বংশধর ছিল না, কারণ তিনি কখনও বিয়ে করেননি।
- মূসা বৃদ্ধ বয়সে মারা গিয়েছিলেন এবং হযরত মুহম্মদের প্রতিও অনুরূপ ঘটেছিল। কিন্তু ঈসা মসীহ্ মৃত্যুর দ্বারা কবলিত থাকেননি। তিনি জীবিতবস্থায় বেহেশতে আরোহন করেছিলেন, কবরে আবদ্ধ থাকেননি।
ইতিপূর্বে আমার কাছে স্পষ্ট বলে প্রতীয়মান হত যে, দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১৫ পদে মূসার দ্বারা প্রতিজ্ঞাত নবীরূপে হযরত মুহম্মদকেই নিদের্শ করে, কিন্তু মসীহী বিশ্বাস অনুসারে এতে ঈসা মসীহকে নবীরূপে, এবং আদৌ ইব্নুল্লাহ্রূপে ভবিষ্যদ্বানী করা হয়নি।
কিন্তু ঐ দিন প্রকৃত অর্থ অনুধাবনের জন্য আমি, পদটিকে ধীরে ধীরে আন্তরিকভাবে পাঠ করেছিলাম। যখন আমি “…আমার সদৃশ এক নবী”কে এ অভিব্যক্তি পর্যন্ত পৌছালাম, তখন পাক-রূহ মৃদুস্বরে আমার অন্তরে এ কথা বলেছিলেন, “তুমি যদি বুঝতে চাও যে, হযরত মুহম্মদ ও মূসা নবীর মধ্যে সাদৃশ্য হল, তারা উভয়েই পিতা-মাতার দ্বারা জন্মপ্রাপ্ত, তবে তো তারা অবশিষ্ট মানবজাতির সকলেরই সদৃশ, কারণ তারাও পিতা-মাতার দ্বারা জন্মপ্রাপ্ত।” এই ভবিষ্যদ্বানীর সত্য নির্দেশ করার জন্য এই বৈশিষ্ট্যটিকে একটি বিবেচ্য বিষয় বলে বিবেচনা করা যায় না।
অধিকন্তু, বিবাহিত হওয়ার কারণেই যদি হযরত মুহম্মদ মূসার সদৃশ হন, তবে উভয়ে ছিলেন দুনিয়ার অন্যসব মানুষেরই মত। তাই, এটিকেও হযরত মুহম্মদ উক্ত নবী ছিলেন প্রমাণ করার জন্য ব্যবহার যায় না।
বংশধর থাকার কারণে যদি হযরত মুহম্মদকে মূসার সদৃশ বলে বিবেচনা করা হয়, তবে এই বাস্তবতাকেও ভবিষ্যদ্বানীটি নির্ভুলভাবে নির্ধারন কার জন্য ব্যবহার করা যায় না, কারণ পৃথিবীর অধিকাংশ লোকেরই সন্তান-সন্ততি আছে।
হযরত মুহম্মদ ঠিক মূসা নবীরই মত বৃদ্ধ বয়সে মারা গিয়েছেন ও কবরস্থ হয়েছেন। এ দৃষ্টান্ত যদি ভবিষ্যদ্বানীটির অর্থ প্রমাণের জন্য ব্যবহারযোগ্য নয়, কারণ পৃথিবীর সব মানুষকেই মরতে ও সমাহিত হতে হবে। মারা যাওয়া ও সমাহিত হওয়া সকলেরই স্বাভাবিক পরিণতি, এবং কোন মানুষকে অনন্য করে তোলে না।
আমার কাছে স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হয়ে উঠেছিল যে, মূসার ভবিষ্যদ্বানী প্রতিজ্ঞাত নবীরূপে একমাত্র ঈসা মসীহের প্রতিই নির্দেশ করেছিল। সেই কারনে মূসা ও ঈসা মসীহের মধ্যে অনন্য ও অসাধারণ সাদৃশ্য খুঁজে বের করতে হয়েছিল। বাস্তবিকই, আমি বেশ কয়েকটি অসাধারণ সাদৃশ্য এ দুজন ব্যক্তির মধ্যে খুঁজে পেয়েছিলাম, যেগুলোর ভাগী অন্যেরা কেউ নেই।
- মূসার শৈশব কালে ফিরাউন তাকে হত্যা করার হুমকি দিয়েছিলেন, ঠিক তেমনি ঈসা তার শৈশবে হেরোদ দ্বারা নিহত হবার হুমকির সম্মুখিন হয়েছিলেন। সব মানুষ জন্মগ্রহন করে তাদের শৈশবে হত্যার হুমকির সম্মুখিন হয় না।
- মূসার জন্মকালে ফিরাউন ভয়ানক ক্রুদ্ধ হয়েছিলেন এবং দুই বছর বয়সের নিচের সব বালককে অবশ্যই হত্যা করার আদেশ দিয়েছিলেন। সমগ্র বিশ্বে কেবলমাত্র এ দুজন ব্যক্তিই এরূপ প্রচন্ড ঘৃণা ও নির্যাতনের অভিজ্ঞতা লাভ করেছেন।
- তার শৈশবে মূসা রক্ষিত হয়েছিলেন ফিরাউনের কন্যার দ্বারা। শিশুরূপে ঈসা রক্ষিত হয়েছিলেন তাঁর পালক-পিতা ইউসুফের দ্বারা। সব লোকেরাই তাদের শৈশবে জীবনের উপরে হুমকি এলে পরে আল্লাহ্র মনোনিত লোকদের দ্বারা রক্ষিত হয়নি।
- শৈশব কালে মূসা স্বদেশ থেকে সুদূর মিশরে বাস করতেন। ঈসার বেলাতেও ঠিক তাই, যিনি শৈশবে মিশরে প্রবাসী জীবন যাপন করেছিলেন। সমস্ত লোকদেরই শৈশবে মিশরের মত দূর কোন দেশে পালাতে হয়নি।
- আসমানী বার্তাবাহক হিসেবে যখন তিনি কাজ করছিলেন, তখন মূসা অলৌকিক সাধন করার জন্য মাবুদের শক্তি প্রাপ্ত হয়েছিলেন, ঠিক যেমনি ভাবে ঈসা, যিনি জীবন্ত কালাম হিসেবে নিজ ক্ষমতাবলে আল্লাহ্র শক্তি প্রাপ্ত হয়েছিলেন পীড়িতদের সুস্থ ও মৃতদের কবর থেকে উত্থিত করা দ্বারা অলৌকিক কাজ সম্পাদন করার জন্য।
- মূসা ইস্রাইল জাতিকে মিশরীয় ক্রীতদাসত্বের বন্ধন থেকে মুক্ত করেছিলেন, কিন্তু ঈসা তাঁর লোকদের মুক্ত করেছিলেন পাপ ও মৃত্যুর শিকল থেকে।
এই বিশেষ প্রমাণগুলো আমাকে এ সিদ্ধান্তে পৌছতে অনুমোদন করেছিল যে, দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১৫ পদে উল্লিখিত অনন্য ভবিষ্যদ্বানীটি পূর্বোক্ত নবীরূপে হযরত মুহম্মদকে প্রমাণ করার জন্য উদ্দিষ্ট হয়নি, কিন্তু ঈসা মসীহই মাংসে ছুরতপ্রাপ্ত আল্লাহ্র কালাম (কালেমাত্-উল্লাহ্), এ সত্য নির্দেশ করার জন্যই।
যদিও খোদার মহব্বত এত মহৎ ছিল যে, তিনি বাইবেলকে আল্লাহ্র প্রকৃত কালামরূপে স্পষ্টভাবে দেখতে আমাকে জ্ঞানালোক প্রদান করেছিলেন, কিন্তু তখনও আমি খ্রীষ্টান হতে প্রস্তুত ছিলাম না। কেন? কারণ, খ্রীষ্টিয় (মসীহ) বিশ্বাসের কয়েকটি বিষয় আমি গ্রহণ করতে পারছিলাম না, বিশেষত: এই বিশ্বাস যে, ঈসা আল্লাহ্র পুত্র (ইবনুল্লাহ্)। শৈশব থেকে আমাকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল, এবং পরবর্তীকালে আমি অন্যদের শিক্ষা দিয়ে আসছিলাম যে,
لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ
“আল্লাহ্ বে-নেওয়াজ, না তিনি প্রজনন করিয়াছেন, না প্রজনিত হইয়াছেন।”
আর আমি একথাও স্পষ্ট ভাবে উচ্চারণ করতে পারছিলাম না যে, ঈসা ছিলেন খোদাবন্দ, কারণ আমাকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল, এবং আমি নিজেও শিক্ষা দিচ্ছিলাম যে,
لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ
“আল্লাহ্, তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নাই।”
আরও, আমি ত্রিত্ববাদের অর্থও বুঝে উঠতে পারছিলাম না। আমি শিক্ষা পেয়েছিলাম যে,
لَّقَدْ كَفَرَ الَّذِينَ قَالُواْ إِنَّ اللّهَ ثَالِثُ ثَلاَثَةٍ
“আল্লাহ্ তিনের তৃতীয় জন এ উক্তিকারীগণও নিঃসন্দেহে কাফের হইয়া গিয়াছে।”
আরও, আমি মসীহী এই বিশ্বাস গ্রহণ করতে পারছিলাম না যে,ঈসা বাস্তবিকই সলীবে হত হয়েছিলেন। “ঈসা-আল-মসীহ” যদি একজন নবী, আল্লাহ্র প্রিয় ও বিশ্বস্ত বার্তাবাহক, অথবা খ্রীষ্টানদের আখ্যা অনুসারে, তিনি যদি ‘আল্লাহ্র পুত্র ’ হয়ে থাকেন, তাহলে ইহুদিরা কিভাবে এত সহজে তাঁর উপর নির্যাতন চালাতে এবং মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত তাঁকে সলীবে টাঙ্গিয়ে রাখতে পেরেছিল? খোদা কেন তাঁকে রক্ষা করলেন না, কিন্তু তাঁকে সলীবে হত হতে দিলেন? ধরুন, আমি আমার ছেলেকে দৈহিকভাবে নির্যাতিত হতে, অথবা, এমনকি, সলীবে ঝুলতে দেখতে পেলাম, তাহলে তখন নিশ্চিতভাবেই আমি তাকে রক্ষার জন্য নির্যাতনকারী লোকদের সঙ্গে লড়াই করতাম, পরিণামে যা-ই ঘটুক না কেন। আল্লাহ্ কিভাবে ইহুদিদের উপরে তাঁর কর্তৃত্ব হারাতে পারলেন? ঐ সময়ে সত্যিই আমি এ বিষয়টিকে মেনে নিতে পারিনি।
এ বিষয় বুঝার জন্য সহায়ক ব্যাখ্যা পাওয়ার উদ্দেশ্যে আমি কয়েকজন ইঞ্জিল প্রচারকের সাথে দেখা করে জানতে চেয়েছিলাম যে, কেন ঈসাকে আল্লাহ্র পুত্র অথবা খোদাবন্দ বলা হয় এবং আল্লাহ্র ত্রিত্ববাদের অর্থ কি। আমি অনুসন্ধান করেছিলাম আল্লাহ্র পুত্র ঈসা কেন ইহুদীদের দ্বারা সলীবে বিদ্ধ ও হত হয়েছিলেন? আমি তাদের আরও জিজ্ঞেস করেছিলাম “পূর্বপুরুষদের পাপ সন্তান-সন্ততির উপরে বর্তানোর” মতবাদ সম্বন্ধে, যেটিকে আমি খোদার অন্যায় শাস্তি প্রদান বলে বিবেচনা করতাম।
যাদের কাছে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম তারা সব ক’জন মসীহী প্রচারকই আমার প্রশ্নগুলোর উত্তর সযত্নে ব্যাখ্যা করেছিলেন, কিন্তু ঐ সময়ে আমি তাদের মন্তব্যগুলো আমি গ্রহণ করতে পারিনি, যদিও সেগুলো সুন্দরভাবে প্রকাশ করা হয়েছিল। এর কারণ ছিল আমাদের বিভিন্ন পটভূমি যা আমাদের দুই পক্ষের মাঝখানে বিশাল উপসাগরের তুল্য ব্যবধান করেছিল। এ দুই ধর্মের পার্থক্যগুলো যথেষ্ট ভালোভাবে অধ্যয়ন ও গবেষনা করা হয়নি যা দ্বারা কিছু সংখ্যক সম্মিলন-বিন্দু (ঐক্যের বিষয়) খুঁজে পাওয়া যেত। নিশ্চিতঃই, দুটি ধর্মের পার্থক্য আমাদের অবশ্যই অধ্যয়ন ও গবেষণা করতে হবে, ভুল বুঝাবুঝি অতিক্রম করার জন্য যুক্তিসম্মত সংযোগ খুঁজে পাবার উদ্দেশ্যে। ঐ সময়ে আমি ছিলাম বেতারের একটি গ্রাহক-যন্ত্রের মত এবং প্রচারক ছিলেন প্রেরন যন্ত্রের মত। উভয়েই চমৎকার অবস্থাতে ছিল, কিন্তু আমাদের বিভিন্ন তরঙ্গ দৈর্ঘ্যের কারণে তার (প্রচারকের) প্রেরন ও আমার গ্রহণ ছিল সম্পূর্ণ পৃথক। গ্রাহক-যন্ত্র ঘোষকের কন্ঠস্বর ধরতে অক্ষম ছিল।
ইঞ্জিল প্রচারক ও ঘোষকদের ব্যাখ্যাগুলো আমার বাম কান দিয়ে ঢুকে ডান কান দিয়ে বের হয়ে গিয়েছিল। ওসব আমার হৃদয় স্পর্শ করতে পারেনি, কারণ আমি তাদের বিশেষ শব্দ-প্রয়োগ অনুধাবনে অক্ষম ছিলাম। মসীহী প্রচারক নিজেই সুনির্দিষ্টভাবে আমার পটভূমি বুঝতে পারেননি, তাই তার ব্যাখ্যাও আমার আশানুযায়ী হয়নি। মসীহী প্রচারকের বর্ণনা ভুল ছিল বলে এমনটি ঘটেছিল তা নয়, কিন্তু মূল উপাদানের দিক থেকে চিন্তা ও ব্যাখ্যাদানের পদ্ধতি ছিল বিভিন্ন, যেজন্য একে অপরকে বুঝতে পারে নি। এ সত্বেও আমি আশায় পূর্ণ ছিলাম। আমি তখনও নিশ্চিত ছিলাম যে, খোদা যখন একবার আমাকে সত্য বেছে নিতে সাহায্য করেছেন, যেসব সমস্যা আমার অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছিল সেসব পূর্ণরূপে তিনিই আমাকে পথ-নির্দেশনা দিবেন।
আমার অবিশ্রান্ত মোনাজাত ছিল :“হে খোদা, তোমার কাছে করজোড়ে মিনতি জানাই, ‘ইবনুল্লাহ্’ শব্দ এবং ঈসা মসীহের জন্য ‘খোদাবন্দ’ নাম ব্যবহার সম্পর্কিত সত্য আমার কাছে প্রকাশ কর। আরও মিনতি জানাই, পবিত্র ত্রিত্ববাদের অর্থ এবং সলীবের রহস্য আমার কাছে প্রকাশ কর। হে খোদা, তুমি আমাকে এই অন্তর্র্দর্শন দিয়েছো যে, বাইবেল সত্য সত্যই আসমানী কিতাব, তাই তুমি বাইবেলের মধ্য দিয়েই আমার সব বাধা বুঝিয়ে পরি¯কার করে দিবে, যে বাইবেল আল্লাহ্র কালাম যা আদি থেকে আজ পর্যন্ত পরিবর্তিত হয়নি এবং শেষ কাল পর্যন্ত কস্মিনকালেও পরিবর্তিত হবে না।”
বাস্তবিকই তাই। তাঁর রূহ, পাক-রূহ্ যিনি আমার অন্তরে কাজ করছিলেন, তাঁর মাধ্যমে খোদা আমাকে বহুবার সাহায্য করেছিলেন। খোদা কিভাবে আমার অন্তরায়গুলো অতিক্রম করতে সাহায্য করেছিলেন, আমি আপনাদের তা বুঝিয়ে বলব।
ঈসাকে আল্লাহ্ পুত্র (ইবনুল্লাহ্) আখ্যা দেয়া হয়
ইউহোন্না ১:১,১৪ পদে এরূপ লেখা আছে:
“শুরুতে কালাম ছিলেন, এবং কালাম আল্লাহ্র কাছে ছিলেন, এবং কালাম আল্লাহ্ ছিলেন।…আর সেই কালাম দেহে ছূরতপ্রাপ্ত হইলেন , এবং আমাদের মধ্যে বসবাস করিলেন, আর আমরা তাঁহার মহিমা দেখিলাম, যেমন পিতা হইতে আগত একজাতের মহিমা; তিনি রহমতে ও সত্যে পূর্ণ।”
এই পদে ‘আল্লাহ্র পুত্র’ অভিব্যক্তিটির আত্মিক অর্থ প্রকাশ পেয়েছে।‘আল্লাহ্র কালাম’ মানব-রূপ পরিগ্রহ করেছিলেন ঈসা মসীহের জন্মের দ্বারা। এজন্য, ঈসাকে বলা হয় ‘জীবন্ত কালাম’, যেমন ১ ইউহোন্না ১:১ পদে উক্ত আছে।
একথা সুস্পষ্ট প্রতীয়মান হয় যে, আল্লাহ্ দৈহিক ও জৈবিক প্রক্রিয়ায় জন্ম দেওয়া হেতু ঈসাকে আল্লাহ্র পুত্র বলা হয় না, যেমন, অনেকে এরূপ ভ্রান্ত চিন্তা করে থাকেন, কিন্তু পাক-রূহের দ্বারা মরিয়মের পুত্রে ‘আল্লাহ্র কালাম’ প্রকাশিত হওয়া হেতু তাঁকে সেই আখ্যা দেওয়া হয়।
এ পদের সত্যের পক্ষে হযরত মুহম্মদ নিজেই বেশ কয়েকবার সাক্ষ্য বহন করেছেন এরূপ উক্তির দ্বারা:
عيسى فانه روح الله وكلمته
“ঈসা সত্য সত্যই আল্লাহ্র রূহ্ (রূহুল্লাহ্)এবং তাঁর কালাম (কালেমাত্-উল্লাহ্)।”
(হাদীস এনাস-বিন-মালিক, মুতিয়ারা হাদীস, পৃঃ৩৫৩)
সূরাহ্ আল-নিসা, ১৭১-এ আমরা এরূপ পাঠ করি:
إِنَّمَا الْمَسِيحُ عِيسَى ابْنُ مَرْيَمَ رَسُولُ اللّهِ وَكَلِمَتُهُ أَلْقَاهَا إِلَى مَرْيَمَ وَرُوحٌ مِّنْهُ
“মরিয়মের পুত্র ঈসা আল্লাহর একজন রাসূল ছিল, আল্লাহর একটি কালেমা যাহা তিনি মরিয়মের দিকে পাঠাইয়াছিলেন এবং আল্লাহর তরফ হইতে একটি আত্মা।”
সূরাহ্ আল-নিসা, ১৭১
‘তাঁর কালাম’ বা ‘আল্লাহর কালাম’ যা ঈসার দেহে পরিণত হয়েছিল, এ অভিব্যক্তি সম্পর্কে ডঃ হাযবুল্লাহ বার্কি তার ‘নবী ঈসা দালাম আল-কোরান এন্ষ’ কোরানে ঈসা নবী) শীর্ষক পুস্তকের ১০৯ পৃষ্ঠায় এরূপ বলেন, “নবী ঈসাকে ‘কালেমাত্-উল্লাহ’ (আল্লাহর-কালাম) বলে অভিহিত করা হয়, কারণ তিনি আল্লাহর কালামের দৈহিক রূপ, এবং নবী ঈসাকে ধারণ করার কাজের জন্য মরিয়মকে মনোনীত করা হয়েছিল।”
এ কারণে, সেই সময় থেকে আমি আর ঈসাকে ‘আল্লাহর পুত্র, বলতে দ্বিধাগ্রস্ত হই নি, কারণ তিনি ‘মাবুদের জীবন্ত কালামের’ দৈহিক রূপ। পূর্বে আমি ঈসাকে আল্লাহর পুত্র বলে স্বীকার করতে অস্বীকার করতাম, কারণ তখন ‘পুত্র’ শব্দটি আমি জৈবিক ও মানবিক ভাবে বুঝতাম।
সূরাহ এখ্লাসে লেখা আছেঃ
اللَّهُ أَحَدٌ…لَمْ يَلِدْ وَلَمْ يُولَدْ وَلَمْ يَكُن لَّهُ كُفُوًا أَحَدٌ
“আল্লাহ্ এক, … না তিনি প্রজনন করিয়াছেন, না প্রজনিত হইয়াছেন, আর না কেহ তাঁহার সমকক্ষ আছে।”
সূরাহ এখ্লাস
আল্লাহর একজন পুত্র আছে একথা অস্বীকার করার জন্য এই ‘বিশ্বস্ততার সূরাহ’ টিকে মুসলমান ধর্ম প্রচারকেরা ব্যবহার করে থাকেন যাদের মধ্যে পূর্বে আমিও একজন ছিলাম। যাই হোক, একজন খ্রীষ্টান কোরানের এ অংশটি গ্রহণ করতে পারে, কারণ খ্রীষ্টধর্ম (মসীহীয়াত) কখনও জৈবিক অর্থে আল্লাহর একজন পুত্র আছে বলে দাবি করে না, যেভাবে কোরানে ‘ওয়ালাদ’ শব্দ দ্বারা উক্ত হয়েছে, যার অর্থ জৈবিক প্রক্রিয়ায় জাত পুত্র। আরবী ভাষা-ভাষী খ্রীষ্টানরা ঈসাকে ‘আল্লাহর পুত্র’ আখ্যা দিতে আইনগত অর্থে ‘ইবনে’ শব্দটি ব্যবহার করে। এ শব্দ প্রয়োগে তাঁকে জৈবিক প্রক্রিয়া জাত সন্তান বলা হয় না, যেভাবে কোরানে ‘ওয়ালাদ শব্দ দ্বারা বর্ণিত হয়েছে।
এজন্য, আমি উল্লেখ করতে চাই যে, আইনগত অর্থে ঈসা মসীহের জন্য ‘ইবনে’ (পুত্র) ব্যবহারে ‘আল্লাহর পুত্র’ নাম সংক্রান্ত বাইবেলের শিক্ষা প্রত্যাখ্যানকারী একটি আয়াতও কোরানে সেই। ‘ওয়ালাদ’ অর্থে আল্লাহ ও মরিয়মের মধ্যে যৌন-প্রক্রিয়াজাত এক জন পুত্র হিসাবে ঈসাকে ‘আল্লাহর পুত্র’ বলার দাবিকেই মাত্র কোরান প্রত্যাখ্যান করেছে। আমরা খ্রীষ্টানরাও এরূপ ধারনাকে অগ্রাহ্য করি।
ঈসাকে খোদাবন্দ (প্রভু) আখ্যা দেয়া হয়
কেন ঈসাকে খোদাবন্দ বা প্রভু বলা হয়? এর আগেই আমি স্পষ্টভাবে বুঝিয়ে দিয়েছি যে আমি দীর্ঘ্য কাল যাবৎ ‘ইসাই প্রভু বা খোদাবন্দ’ একথা উচ্চারণ করতে পারিনি। আমি একথাও উচ্চারণ করতে পারি নি, “খোদাবন্দ ঈসা মসীহ”। শৈশব কাল থেকে আমি শিক্ষা পেয়ে এসেছি এবং পরে অন্যদেরও শিক্ষা দিয়েছি যে,
“আল্লাহ, তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নাই।”
পিতা ছাড়া জন্মগ্রহন করার কারণেই হয়তো ঈসাকে খোদাবন্দ বা প্রভু বলা হয়। না! আদমও পিতা ছাড়া, এমন কি, মাতা ছাড়া জন্মেছিলেন। অথবা, এজন্য কি যে, তিনি অনেক অলৌকিক কাজ সম্পাদন করেছিলেন? না, এটিও উত্তর হতে পারে না। নবী মূসাও অনেক অলৌকিক কাজ করেছিলেন, অথচ তাকে খোদা বলা হয় নি। ঈসা কুষ্ঠ রোগীদের সুস্থ করতে পারতেন এবং মৃতদের জীবিত করতে পারতেন, এ কারণে কি? না, কারণ নবী ইলিয়াশও কুষ্ঠরোগী সুস্থ করতে এবং মৃতদের পুনর্জীবন দিতে পারতেন, এবং তবুও তাকে খোদা বলা হয় নি। ঈসার সরাসরি বেহেশতে আরোহনের কারণে কি? না, নবী ইলিয়াসেরও একই অভিজ্ঞতা ছিল, এবং তাঁকেও খোদাবন্দ বা প্রভু বলা হয় নি। তাহলে কেন ঈসাকে প্রভু বলা হয়?
যেমন আমরা ইউহোন্না ১:১, ১৪ পদে পাঠ করি, ঈসাকে প্রভু বলা হয়, কারণ ঈসা মসীহের জন্মে ‘আল্লাহর কালাম’ মানব-রূপ নিয়েছিলেন। সেই কারণে ১ ইউহোন্না ১:১ পদে তাঁকে জিন্দেগীর কালাম এবং অন্যান্য পদে দেহে প্রকাশিত আল্লাহ, বলে অভিহিত করা হয়েছে।
‘আল্লাহর দেহে প্রকাশিত হওয়া বা ছুরতপ্রাপ্ত হওয়া অথবা ‘আল্লাহ’ সম্পর্কিত অনুরূপ শব্দ আভিধানিক বা পার্থিব অর্থে কখনই অনুবাদ করা উচিত নয়। “আল্লাহ্, বিদ্যমান আছেন, মানুষও বিদ্যমান রয়েছে।” বিদ্যমান থাকা’ বা ‘অস্তিত্বমান থাকা’ আল্লাহর সম্পর্কে ব্যবহৃত হলে মানুষের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত ঐসব শব্দের চাইতে ভিন্নতর অর্থ গ্রহণ করে। আল্লাহ স্বীয় অস্তিত্বে অস্তিত্বমান, কিন্তু মানুষ অস্তিত্বমান, কারণ তাদের অস্তিত্বমান করা হয়েছে, তারা সৃষ্ট।
সেই কারণে আল্লাহ, সম্পর্কে ‘দেহে ছুরতপ্রাপ্ত’ হওয়ার বিষয়ক শব্দটি পার্থিব অর্থে অনুবাদ করা উচিত নয়। অভিধানিক অর্থ অনুসারে, যদি একটি বিড়াল হাতির রূপ ধারন করে, বিড়ালটি উবে যাবে এবং একটি হাতি উপস্থিত হবে। যদি এক খন্ড পাথর সোনায় রূপান্তরিত হয়, তবে পাথরের অস্তিত্ব আর থাকবে না, থাকবে সোনার। ‘দেহে ছুরতপ্রাপ্ত হওয়া’ অভিব্যক্তিটি আল্লাহর সম্পর্কে ব্যবহার ভিন্নতর অর্থ বহন করে। আল্লাহর সম্পর্কিত ‘দেহে প্রকাশিত হওয়া’ বলতে খোদার অস্তিত্বে কোন পরিবর্তনের অর্থ প্রদান করে না, কারণ আল্লাহর কোন পরিবর্তন নাই কিতাবুল মোকাদ্দস, মালাখী ৩:৬
আল্লাহ মানুষের রূপ গ্রহণ করলেন। এ দ্বারা একথা বুঝায় না যে, খোদা আর অস্তিত্বমান নেই, কেবলমাত্র মানুষেরই অস্তিত্ব থাকবে। এ ধারণা ভূল। আল্লাহ মানব-রূপ গ্রহণ করলেন এর অর্থ হল, আল্লাহর অস্তিত্ব অব্যাহত রয়েছে এবং মানব-রূপও অস্তিত্বমান রয়েছে। তাই ‘মানবরূপ-গ্রহন’ বা ‘দেহে ছুরতপ্রাপ্ত হওয়া’ অভিব্যক্তিগুলো বিভিন্নতায় সাদৃশ্যমূলকভাবে যুক্তিবিদ্যার বহির্ভূত একটি কাজ ও সত্যের সাদৃশ্য হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে, কিন্তু তবুও এর অর্থ মানুষের ভাষায় অর্থের অনুরূপ নয়।
আল্লাহ্ দেহে ছুরতপ্রাপ্ত হলেন বা মানব-রূপ গ্রহণ করলেন বলতে এই অর্থ প্রকাশ করে যে, আল্লাহ্ নিজেকে, তাঁর সম্পূর্ণ সত্ত্বাকে একটি মানুষে প্রকাশিত করেছেন এবং তিনি তাঁর ইচ্ছা, পরাক্রম(শক্তি) এবং মহব্বত অনন্য মানুষ ঈসা মসীহের ব্যক্তিত্বে প্রকাশিত করেছেন। এখন আমরা ঈসার উক্তিগুলো অনুধাবন কতে পারি:
“পিতা আমাতে আছেন এবং আমি পিতাতে আছি”
ইঞ্জিল শরীফ, ইউহোন্না-১০:৩৮খ
“আমি ও পিতা, আমরা এক”
ইঞ্জিল শরীফ, ইউহোন্না ১০:৩০
“যে আমাকে দেখিয়াছে, সে পিতাকে দেখিয়াছে”
ইঞ্জিল শরীফ, ইউহোন্না ১৪:৯খ
রাসূল পৌল বলেছেন:
“কেননা তাঁহাতেই খোদাত্বের সমস্ত পূর্ণতা দৈহিক আকারে বাস করে”
ইঞ্জিল শরীফ, কলসীয় ২:৯
দ্বিতীয় যে পদটিতে ঈসা প্রকৃত খোদা বলে উক্ত আছে, সেটি আমরা পাঠ করতে পারি মথি ২৮:১৮ পদে, যেখানে ঈসা বলেন:
“আসমানে ও জমিনে সমস্ত ইখতিয়ার আমাকে দেওয়া হইয়াছে।”
ইঞ্জিল শরীফ, মথি ২৮:১৮
ঈসা সর্ব শক্তিমান, সমস্ত কিছুর নিয়ন্তা।
রাসূল পৌল স্বীকার করেছিলেন:
“যিনি (অর্থাৎ ইসা) সমস্ত কর্তৃত্ব ও আধিপত্যের মস্তক”
ইঞ্জিল শরীফ, কলসীয় ২: ১০
স্বয়ং আল্লাহ্ই মবিুদ, যেমন আমরা কোরানে পাঠ করি:
اللّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
“আল্লাহ্ই সারা জাহানের প্রভু।”
ইঞ্জিল শরীফে আমরা পাঠ করি যে, সর্বশক্তিমান আল্লাহ্ ঈসাকে খোদাবন্দ বা প্রভু করেছেন। এখানে আমরা আল্লাহ্র ও প্রভুর মধ্যেকার পার্থক্য নিরূপন করতে পারি। খোদা অর্থ গ্রীক ভাষাতে ‘থিয়স’ এবং আরবীতে আল্লাহ্; কিন্তু প্রভু অর্থ গ্রীকে ‘কাইরিয়স’ এবং আরবীতে ‘রব্ব’। বিধানিক ও শাসনিক দিক সমেত শেষোক্ত শব্দটির অর্থ সবসময়ই কর্তৃত্বপূর্ণ ‘ক্ষমতা’। আল্লাহ্র ক্ষমতা নিজেকে ঈসা মসীহের মধ্যে অনেক ভাবে প্রকাশ করেছে:
- সৃষ্টিতে
- শরীয়ত ও হুকুম প্রদানে
- পথ-নির্দেশনায় (সাহায্য ও খোদাই তত্ত্বাবধানে)
- ক্ষমা ও নাজাতে
- তাঁর আত্ম দ্বারা নবীনীকরণে
- বিচারে
- মহিমায়
আল্লাহ্র হুকুম প্রদানের, পথ-নির্দেশনা ও নাজাত দেবার ক্ষমতা ঈসার ব্যক্তিত্বে দেখতে পাওয়া যায়। সে কারণেই ঈসাকে ‘আল্লাহ্র জিন্দেগী কালাম’, “আমাদের একমাত্র নাজাতদাতা” আখ্যা দেওয়া হয়। জিন্দেগীর কালামরূপে প্রচার ও ক্ষমা দান দ্বারা ঈসা আল্লাহ্র খোদাত্ব সম্পন্ন করেন। সে কারণে ঈসা আল্লাহ্র দ্বারা খোদাবন্দ হয়েছেন (প্রেরিত ২:৩৬; কলসীয়২:১৬)।
ঈসা প্রভু, এই অর্থে যে, সম্পূর্ণরূপে নাজাত করার ক্ষমতা তাঁর আছে। ঈসা আমাদের সকলের নাজাতদাতা, জিন্দেগীর সেই কালাম ঈসা আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন “আমিই তরিকা, হক ও জিন্দেগী, আমা দিয়া না আসিলে কেহ পিতার নিকটে আসেনা” (ইউহোন্না ১৪:৬)।
মনে রাখা উচিত যে, ইসলামী সাক্ষ্যই সেই প্রতিবন্ধক যা ঈসাকে প্রভু বা খোদাবন্দ বলতে আমাকে অক্ষম করেছিল। আমাকে শিক্ষা দেওয়া হয়েছিল এবং আমি অন্যদের শিক্ষা দিয়ে আসছিলাম:
لآ اِلَهَ اِلّا اللّهُ
“আল্লাহ্, তিনি ছাড়া কোন মাবুদ নাই।”
ঐ সময়ের মধ্যে আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে, এই ইসলামী স্বীকারোক্তি আবশ্যিকভাবে বাইবেল-বিরুদ্ধ বলে প্রতিপন্ন হয়না। হিজরত ২০:৩ পদে লেখা আছে, “আমাকে ছাড়া তোমার অন্য দেবতা না থাকুক।” সেই কারণে আমি দেখতে পাই যে, হযরত মুহম্মদের উক্তিতেও ঈসার খোদাত্বের ইঙ্গিত রয়েছে যাতে স্বীকার করা হয়েছে যে, ঈসা মসীহ, আল্লাহ্র রূহ ও তাঁর কালাম, আল্লাহ্র স্থলাভিষিক্ত ক্ষমতা:
عيسى فانه روح الله وكلمته
“ঈসা সত্য সত্যই আল্লাহ্র রূহ এবং তাঁর কালাম।”
মসীহীয়াতে এক আল্লাহ্-বাদ (তৌহিদ)
‘তৌহিদ’ কথাটি মসীহী বিশ্বাসীদের কানে অদ্ভুত শোনায়, কারণ তা মসীহীয়াতে আদৌ ব্যবহৃত হয়না। মসীহীয়াতে তৌহিদ আল্লাহ্র ত্রিত্বের একত্ব বুঝিয়ে দেয় বা ব্যাখ্যা করে। ত্রিত্বের একত্ব, মসীহী বিশ্বাসীদের এই কেন্দ্র বিন্দু নিয়ে মাঝে মাঝে আলোচনা হয়েছে, কিন্তু আমাদের ভাইয়েরা যারা মুসলিম শিক্ষা ও পটভূমি থেকে আগত তারা অধিকাংশই সাধারণতঃ এই সত্য যথার্থভাবে অনুধাবন করতে পারেন না।
একমাত্র সত্য আল্লাহ্
প্রত্যেক প্রকৃত মুসলমানই একমাত্র সত্য আল্লাহে বিশ্বাস করে। ইসলামী মতবাদে এটি সুবিদিত সত্য যে, এ বিষয় কখনও পরিবর্তিত বা পরিহার করা যায় না।
সেই একই প্রত্যয় মসীহীয়াতেও বিদ্যমান। মসীহীরাও একমাত্র এক এবং সত্য আল্লাহকে স্বীকার করে। ‘কেবল মাত্র এক ও সত্য আল্লাহ্’ এ অভিব্যক্তি সম্পর্কে মসীহী ও মুসলমানদের ধারনা বস্তুতঃ কি অভিন্ন?
ইসলামের শিক্ষায় আল্লাহ্র একত্ব ব্যাখ্যা করা হয়েছে সূরাহ্ আল-এখলাস, ১, সূরাহ আল-বাকারাহ্, ১৬৩, সূরাহ্ আল-মায়েদাহ্, ৭২খ এবং অন্যান্য আয়াতে।
কিতাবুল মোকাদ্দসে আল্লাহ্র একত্ব ব্যাখ্যা করা হয়েছে:
“আমিই মাবুদ, আর কেহ নাই।”
কিতাবুল মোকাদ্দস, ইশাইয়া ৪৫:৫
“আর ইহাই অনন্ত জিন্দেগী যে, তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় আল্লাহকে এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে, ঈসা মসীহকে, জানিতে পারে।”
ইঞ্জিল শরীফ, ইউহোন্না ১৭:৩
“আমরা জানি,…এক আল্লাহ ছাড়া দ্বিতীয় নাই।”
ইঞ্জিল শরীফ, ১ করিন্থীয় ৮:৪খ
“আমাদের জ্ঞানে একমাত্র আল্লাহ, পিতা, যাঁহা হইতে সকলই হইয়াছে, ও আমরা যাঁহারই জন্য; এবং একমাত্র খোদাবন্দ সেই ঈসা মসীহর, যাঁহার দ্বারা সকলই হইয়াছে এবং আমরা যাঁহারই দ্বারা আছি।”
ইঞ্জিল শরীফ, ২ করিন্থীয় ৮:৬
এ অনুচ্ছেদ গুলো পড়ার পরে আমি আর সন্দিগ্ধ থাকলাম না। আমার দৃঢ় প্রত্যয় হল যে, আল্লাহ্র একত্ব সম্পর্কিত মুসলমান হিসেবে আমার পূর্ববর্তী বিশ্বাস এবং মসীহী হিসেবে আমার বর্তমান বিশ্বাস পরিবর্তন করার প্রয়োজনীয়তা নেই। অন্য ভাষায় বলতে গেলে, যদিও আমি নিজেকে মসীহী বলে ঘোষনা করি, তথাচ আমি আল্লাহ্র একত্ব সম্পর্কিত সত্য পরিহার কি প্রত্যাহার করিনি। আমি অনুভব করি, মসীহী হবার পরে আমি তা আরও বিশুদ্ধভাবে বুঝতে পারি।
মুসলমানরা সব সময়ই ধরে নেই যে, মসীহীরা আল্লাহ্র একদ্বের মতবাদ লঙ্ঘন করে। তারা ভুল করছে। কিন্তু আমি দৃঢ়ভাবে নিশ্চিত যে, মসীহী শিক্ষা বস্তুত পক্ষে আল্লাহ্র একত্বের মতবাদকে বিশোধিত করে। আল্লাহ্ সম্বন্ধে মসীহী এক-আল্লাহ্বাদ সর্বোত্তম ও বিশুদ্ধতম শিক্ষা। এ বিষয়টি আমরা বহু-ঈশ্বরবাদের (বহু-আল্লাহবাদ) অর্থ ব্যাখ্যা করে পরীক্ষা করে দেখতে পারি।
বহু-আল্লাহ্বাদের সমস্যা
বহু-আল্লাহ্ বাদ (বহুদেব-দেবীর এবাদত) ইসলামে একটি অপরিহার্য বিষয়। এ বিষয়ে আমাদের সতর্কতার সঙ্গে অভিনিবেশ করা উচিত, যেন মসীহীয়াতে আল্লাহ্র একত্বের সঙ্গে বহু-আল্লাহবাদ মিলিয়ে গুলিয়ে না ফেলি।
ইসলামে তিনটি অমার্জনীয় পাপের মধ্যে বহু-ঈশ্বরবাদ অন্যতম। এ কারণে দুটি ধর্মের তুলনা করার প্রচেষ্টাতে এ প্রশ্নটি অত্যন্ত জরুরী হয়ে উঠেছিল। আমি সব সময়ই সতর্ক দৃষ্টি মেলে লক্ষ্য করতাম মসীহীয়াত বহু-ঈশ্বরবাদের কোন উপাদান ধারন করে কি না।
সর্ব প্রথমে আমি একটি উল্লেখযোগ্য অংশ কিতাবুল মোকাদ্দসে দেখতে পেয়েছিলাম যা বলছে,
“আমাকে ছাড়া তোমার অন্য দেবতা না থাকুক। তুমি নিজের জন্য খোদাই করা মূর্তি বানাইও না; উপরিস্থ আসমানে, নীচস্থ জমীনে ও জমীনের নিচের পানির ভিতরে যাহা যাহা আছে, তাহাদের কোন মূর্তি বানাইও না; তুমি তাহাদের কাছে সিজদা করিও না, এবং তাহাদের এবাদত করিও না, কেননা তোমার আল্লাহ্ মাবুদ আমি নিজের গৌরব রক্ষা করিতে উদ্যোগী আল্লাহ্; আমি বাপ দাদাদের অপরাধের প্রতিফল সন্তানদিগের উপরে বর্তাই, যাহারা আমাকে দ্বেষ করে, তাহাদের তৃতীয় ও চতুর্থ পুরুষ পর্যন্ত বর্তাই।”
তৌরাত শরীফ, হিজরত ২০: ৩-৫
রাসূল ইউহোন্না আমাদের স্মরণ করিয়ে দেন, “বৎসেরা, তোমরা মূর্তি হইতে নিজদিগকে রক্ষা কর” (১ ইউহোন্না ৫:২১)। এসব প্রতিমা বা মূর্তি সম্পর্কে অবশ্যই পরিস্কার সংজ্ঞা থাকতে হবে যে, কোন্ বস্তুকে কখন মূর্তি বা প্রতিমা বলা হয়। সব শিলা মূর্তি বা ধাতব-মূর্তিকেই প্রতিমা (আরাধ্য) বলা যায় না। সমস্ত স্তম্ভকেই প্রতিমা বলা যায় না। আবার সমস্ত কবর-প্রস্তরকেই মূর্তি বলা যায় না, ঠিক যেমনি ভাবে সমস্ত ঐতিহাসিক ইমারতকেই মূর্তি বা প্রতিমা বলা যায় না। যদি লোকেরা তাদের উদ্দেশ্যে ধর্মীয় কর্তব্যাদি সম্পাদন করত, অথবা যদি তাদের এবাদত করত এবং তাদের উদ্দেশ্যে মোনাজাত করত, তবে এসব ইমারত আরাধ্য মূর্তি হতে পারত, অথবা আরাধ্য মূর্তিতে রূপান্তরিত করা যেতে পারত। মৃত লোকদের আত্ম চালান, অথবা ঝাড়নের মাধ্যম হিসেবে ধূপ-ধূনা, আগরবাতি এবং মন্ত্রোচ্চারন সমেত গুপ্ত বিদ্যায় বিশ্বাসী, ভাগ্য-কথক ও জাদুকরীরা বহু-ঈশ্বরবাদের ইঙ্গিত বহ। কিতাবুল মোকাদ্দসে জোরালোভাবে এরূপ অভ্যাসে বিজড়িত না হতে আমাদেরকে স্মরণ করিয়ে এবং এরূপ মন্ত্র ব্যাবহারকারী লোকদের এড়িয়ে চলতে বলে, যেমন দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১০-১৩ পদে সুদৃঢ় ভাবে ঘোষনা করা হয়েছে:
“তোমাদের মধ্যে যেন এমন লোক পাওয়া না যায়, যে পুত্র বা কন্যাকে আগুনের মধ্যে উৎসর্গ করে, যে মন্ত্র ব্যাবহার করে, বা গণক, বা মোহক, বা মায়াবী, বা ঐন্দ্রজালিক বা ভূতুড়িয়া, বা গুণী বা প্রেত সাধক। কেননা মাবুদ এই সকল কাজ যাহারা করে তাহাদিগকে ঘৃনা করেন, আর সেই ঘৃণার্হ কাজের জন্য তোমার আল্লাহ্ মাবুদ তোমার সম্মুখ হইতে তাহাদিগকে বেদখল করিবেন। তুমি আপন আল্লাহ্ মাবুদের উদ্দেশ্যে কামিয়াব হও।”
তৌরাত শরীফ, দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১০-১৩
বহু-ঈশ্বরবাদ সম্পর্কে সারসংক্ষেপে আমি বলতে চাই:
- মসীহীয়াত দৃঢ়ভাবে ঘোষনা করে যে, একমাত্র আল্লাহ্ আছেন। এই এক আল্লাহ্র এবাদত করতে এবং তাঁর উদ্দেশ্যে নিবেদিত-প্রণ হতে প্রত্যেকে বাধ্য। অন্য দেব-দেবীর উদ্দেশ্যে বিচ্যুতি মহা পাপ। (পড়ুন:- লূক ৪:৮; মথি ৪:১০; দ্বিঃবিবরণ ৬:১৩; ইউসা ২৪:১৪,১৫)।
- আল্লাহ্র একত্ব বুঝার জন্য মসীহী মতবাদ এক আল্লাহ্ ব্যতীত কোন আকারে অন্য দেব-দেবীর বা আরাধ্য বস্তুর অস্তিত্ব যথার্থ বলে বিবেচনা করে না, যেমন, প্রতিমা, ইমারত বা মানুষের তৈরী প্রাকৃতিক কোন কিছুর মূর্তি, এমন কি সাদা লাল বা কালো রঙের ছবিতে বা কার্পেটে অঙ্কিত কাবাও (বায়তুল্লাহ্ও) নয়। এর সম্মুখে বা পাদদেশে এবাদতের নমুনায় নতজানু হওয়া সমর্থনযোগ্য নয়। (পড়ুন: হিজরত ২০:৩-৫)
- কিতাবুল মোকাদ্দস অনুসারে একজন প্রকৃত মসীহী ভাগ্য-কথক, জাদুকর-জাদুকরীদের মন্ত্রোচ্চারণ এবং সৌভাগ্য আনয়নকারী কল্পিত বস্তু (এমন কি, যদি বাইবেল থেকেও তৈরী করা হয়) এবং মৃত আত্ম চালান অথবা ঝাড়নের জন্য ধূপ-ধূনা- আগরবাতি জ্বালানোর কাছে যাওয়া ও আস্থা স্থাপন করা এড়িয়ে চলে। সে অবশ্যই অন্ধ-সংস্কার ও অন্ধকারের দুষ্টাত্মদের প্রভাবের ভয়মুক্ত হবে। (পড়ুন: দ্বিতীয় বিবরণ ১৮:১০-১৩)।
- দুষ্টাত্মর প্রভাব, বা জাদু-মন্ত্র বা অন্ধকারের শক্তি বলে অর্থ করা যায় এমন কিছুকে নিবেদিত-পাণ মসীহী অবশ্যই ভয় করবে না এবং করেও না। কিতাবুল মোকাদ্দসের অনেক ক্ষেত্রে উক্ত আছে যে, মসীহের পরাক্রম দুষ্টাত্মদের শক্তিকে পরাজিত করে বিজয় গ্রহণ করেছে। অবশেষে ঐ সব দুষ্টাত্মরা মসীহ্ ও তার অনুসারীদের কাছে নতিস্বীকার করবে। (পড়ুন: ইউহোন্না ১৪:১২; মার্ক ১৬:১৭)।
- আঙটিতে মূল্যবান পাথর, ছোরা, মাদুলি বা তাবিজ-কবজের মত বস্তু সমূহকে বিশেষ অধিভৌতিক শক্তি সম্বলিত বলে মসীহীরা কখনই বিবেচনা করবে না। মসীহীয়াতে একমাত্র শক্তি হলেন আল্লাহ্র রূহ, রুহুল কুদ্দুস (পড়ুন: রোমীয় ১৪:১৭-১৮)।
- ভীতি, অস্বস্তি, উদ্বেগ এবং মসীহীদের জীবনের অন্য সব সমস্যাগুলো এমন বিষয় যা অবশ্যই মোনাজাতে একমাত্র আল্লাহ্র সাক্ষাতে নিয়ে আসতে হবে। কেবলমাত্র তিনিই আমাদের সব প্রয়োজন বুঝেন এবং আমাদের মোনাজাতের উত্তর দেন। (পড়ুন: যবুর ৫:৩;মথি ৬:২৫-৩৪; ৭:৭,৮) পাক্-কবরে (মাজারে) যাবেন না, এমন কি, নবীদের মাজারেও না, তাদের নাম যাই হোক না কেন।
পরিশেষে, আমি শুদ্ধ সংবেদে সর্ব সমক্ষে স্বীকার করতে ও বিশ্বাস করতে পারি যে, মসীহী তৌহিদ পরমোৎকৃষ্ট ও বিশুদ্ধতম তৌহিদ। এতে বিধি আত্ম, মূর্তি অথবা মানব-সৃষ্ট দেব-দেবীর স্থান নেই। একমাত্র আল্লাহ্, পিতা এবং তাঁর সক্রিয়, জীবন্ত কালাম, খোদাবন্দ ঈসা মসীহ আছেন।
আল্লাহ্ সম্পর্কিত ত্রিত্ববাদ
ঈসা মসীহের উপর ঈমান দ্বারা মন-পরিবর্তনের পূর্বে আল্লাহ্, সম্পর্কিত ত্রিত্ববাদ আমার জন্য ছিল অপর আরেকটি অন্তরায়। এটি অবশ্য আরও অনেকেরই জন্য অন্তরায় হয়ে দাড়িয়েছিল। মসীহী ঈমান সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারনার কারণেই এই অন্তরায় ।
আমি প্রত্যক্ষ করেছিলাম যে, আল্লাহ্ সম্পর্কিত ত্রিত্ববাদের অর্থের সত্য আল্লাহ্র একত্বের মতবাদ (তৌহিদ) আদৌ লঙ্ঘন করে না।
সূরাহ আল মায়েদাহ্ ৭৩- এ বলা হয়েছে:
لَّقَدْ كَفَرَ الَّذِينَ قَالُواْ إِنَّ اللّهَ ثَالِثُ ثَلاَثَةٍ
“আল্লাহ্ তিনের তৃতীয় জন, এই উক্তিকারীগণও কাফের হইয়া গিয়াছে।”
সূরাহ আল মায়েদাহ্ ৭৩
সূরাহ্ আল-নিসা ১৭১- এ লেখা আছে:
وَلاَ تَقُولُواْ ثَلاَثَةٌ
“তোমার খোদা তিনজন বলিও না।”
সূরাহ্ আল-নিসা ১৭১
মসীহী ঈমানে আসার পূর্বে আমাকে সহ, আমাদের মুসলমান ভাইয়েরা আল্লাহ্ সম্পর্কিত ত্রিত্ববাদের মসীহী ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করার ধরাবাধা সূত্ররূপে কোরানের এসব আয়াত প্রায়শঃ ব্যবহার করে থাকেন। বস্তুত পক্ষে কোরানের এ আয়াতগুলো মসীহী ঈমানের পবিত্র ত্রিত্বের একত্বের নয়, কিন্তু কেবল মাত্র তিন পৃথক খোদায় বিশ্বাস প্রত্যাখ্যান করে।
কোরানের এ আয়াতগুলোকে আমরা মসীহীরা প্রশংসা করতে পারি, কারণ কিতাবুল মোকাদ্দস বিরুদ্ধ ত্রি-আল্লাহ্বাদ, অর্থাৎ- “তিন পৃথক খোদায়” ঈমান সহ সব ধরনের “বহু-আল্লাহবাদ” মসীহীয়াত অগ্রাহ্য করে। পরন্তু মসীহীয়াত নিরেশ্বরবাদ (অর্থাৎ, আল্লাহ্ নাই) এবং সর্বেশ্বরবাদও (অর্থাৎ,আল্লাহ্ ও সৃষ্টি অভেদ) অগ্রাহ্য করে।
কিতাবুল মোকাদ্দস আল্লাহে ঈমান এভাবে মুদ্রাঙ্কিত করে রেখেছে:
“হে ইস্রায়েল, শুন; আমাদের আল্লাহ্ মাবুদ এক মাবুদ”
তৌরাত শরীফ, দ্বিতীয় বিবরণ ৬:৪,৫
ঈসা এই বিশ্বাস সূত্র জনসমক্ষে স্বীকার করেছিলেন (মার্ক ১২:২৯,৩০)।
ইশাইয়া ৪৫:৫ পদে উক্ত আছে,
“আমিই মাবুদ, আর কেহ নাই।”
কিতাবুল মোকাদ্দস, ইশাইয়া ৪৫:৫
ইউহোন্না ১৭:৩ পদে লেখা আছে,
“আর ইহাই অনন্ত জিন্দেগী যে, তাহারা তোমাকে, একমাত্র সত্যময় আল্লাহ্ কে, এবং তুমি যাঁহাকে পাঠাইয়াছ, তাঁহাকে ঈসা মসীহকে জানিতে পারে।”
ইঞ্জিল শরীফ, ইউহোন্না ১৭:৩
আল্লাহ্ সম্পর্কিত ত্রিত্ববাদে মসীহী বিশ্বাস একমাত্র সত্যময় আল্লাহের একত্বের সঙ্গে বিরুদ্ধ ভাবাপন্ন এ সম্পর্কে, এমন কি, নূন্যতম প্রমাণও নেই। অনেকে যেমন ব্যাখ্যা দিয়ে থাকেন, তা এমন কি তিনজন সংযুক্ত খোদার অর্থও প্রকাশ করে না।
- আল্লাহ্ সম্পর্কিত ত্রিত্ববাদ নিম্নোক্তভাবে ব্যাখ্যা করা যায়: “পিতা” রূপে আখ্যায়িত সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ্ বিশ্বের স্রষ্টা, যা ইসলামে ‘পরাক্রমশালী’ অর্থে আল্-কাদির শব্দের সদৃশ।
- তাঁর কালাম, যাকে ‘পুত্র’ নামেও আখ্যা দেওয়া হয়, ঈসার জন্মে মানব-রূপ পরিগ্রহ করেছিল। আল্লাহের বিধিসমূহ ও ইচ্ছা প্রকাশ করার জন্য, মানুষের কাছে আল্লাহের প্রতিজ্ঞা ব্যক্ত করার জন্য, মানবিক ভাষায় কথা বলার জন্য তিনি ছিলেন আল্লাহের জীবন্ত কালাম। (তাঁর কালাম হওয়া মুসলমান শিক্ষা অনুযায়ী “মুরিদ-ইচ্ছুক” বিশেষণের অনুরূপ)।
- আল্লাহ্র রূহ্, অথবা “পাক-রূহ,” সত্যের সেই আত্ম তিনি যারা তাঁর উদ্দেশ্যে উৎসর্গীকৃত হয় তাদেরকে সাহায্য ও পরিচালনা দিয়ে থাকেন। (আল্লাহের-রূহ্ ইসলামে ‘মূহাই-জীবনদাতা’ বিশেষণের সমতুল্য।)
আল্লাহ্রই তিনটি রূপ বা অভিব্যক্তি (পিতা,পুত্র/কালেমাত্-উল্লাহ্, এবং পবিত্র বা পাক-রূহ) তিন ব্যক্তিত্বরূপে বর্ণিত ও অঙ্কিত হয়েছেন (যা ইসলামে ‘সিফাত’ শব্দের সমতুল্য), কিন্তু তারা সারসত্ত্বায় আল্লাহ্র অস্তিত্বে এক। প্রত্যেক জনই অন্যদের থেকে অবিচ্ছেদ্য, প্রত্যেক জনেরই অভিন্ন পরাক্রম ও অমরত্ব আছে, এবং কোন জনই অন্যদের চাইতে পূর্বে বা পরে অস্তিত্বমান ছিলেন না। পিতা, পুত্র/কালেমাত্-উল্লাহ্ এবং পবিত্র আত্ম- সকলকেই একটি শব্দে প্রকাশ করা যায়: আল্লাহ্।
এ কথা সুস্পষ্ট প্রতীয়মান যে, মসীহীয়াতের আল্লাহ্ সম্পর্কিত ত্রিত্ববাদের একত্ব তৌহিদের মতবাদ লঙ্ঘন করে না, এবং তা একাধিক আল্লাহ্ বা ঈশ্বরের ঐক্যের অর্থও বহন করে না।
মসীহীয়াতের আল্লাহ্ সম্পর্কিত ত্রিত্ববাদের অর্থের বিরুদ্ধে কোরান আপত্তি তোলে না বা প্রত্যাখ্যানও করে না। কোরান দ্বারা যা প্রত্যাখ্যিত হয়েছে তা দৃষ্ট হয় সূরাহ্ আল- মায়েদাহ্, ৭৩ অথবা সূরাহ আল-নিসাহ্, ১৭১ আয়াতে, যা তিন বিভিন্ন খোদায় বা ত্রি-আল্লাহ্বাদের বিশ্বাস। মসীহীয়াতেও নিজেই ত্রি-আল্লাহ্বাদ, বা তিন খোদায় বিশ্বাস পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করে।
সেই কারণে আমি মনে করি, মসীহীয়াতের সম্পর্কিত ত্রিত্ববাদের সঙ্গে সংঘাতপূর্ণ একটি আয়াতও কোরানে নেই।
ঈসা মসীহের মৃত্যু ও পুনরুত্থান
সূরাহ্ আল-নিসাহ্, ১৫৭ আয়াতে বলা হয়েছে,
وَقَوْلِهِمْ إِنَّا قَتَلْنَا الْمَسِيحَ عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ رَسُولَ اللّهِ وَمَا قَتَلُوهُ وَمَا صَلَبُوهُ وَلَـكِن شُبِّهَ لَهُمْ وَإِنَّ الَّذِينَ اخْتَلَفُواْ فِيهِ لَفِي شَكٍّ مِّنْهُ مَا لَهُم بِهِ مِنْ عِلْمٍ إِلاَّ اتِّبَاعَ الظَّنِّ وَمَا قَتَلُوهُ يَقِينًا
তারা এই কথা বলেছিল, “নিশ্চয় আমরা আল্লাহ্র রাসূল মরিয়ম পুত্র ঈসা মসীহকে হত্যা করিয়াছি, বস্তুত:তাহারা তাঁহাকে হত্যা করে নাই, শূলেও দেয় নাই, পরন্তু তাহারা বিভ্রান্ত হইয়াছে এবং যাহারা তাঁহার সম্বন্ধে মতবিরোধ করে, এই ব্যাপারে সন্দেহের মধ্যে পড়িয়া রহিয়াছে।”
সূরাহ্ আল-নিসাহ্ ১৫৭
ঈসা বাস্তবিকপক্ষে সলীবে হত হয়েছিলেন এ সত্য অগ্রাহ্য করার জন্য মুসলমান প্রচারকেরা প্রায়শঃ কোরানের এই আয়াতটি ব্যবহার করে থাকেন এবং ইতিপূর্বে আমিও মাঝেমধ্যে তা ব্যবহার করেছি। এর আগে আমি ভাবতাম যে, আল্লাহ্র প্রিয় পাত্র, যিনি তাঁর নবী হয়েছিলেন, তাঁর পক্ষে কোন রক্ষা-ব্যবস্থা ছাড়া সলীবে হত হওয়া অসম্ভব ছিল। পরন্তু মসীহীরা যেহেতু তাঁকে ইবনুল্লাহ্ আখ্যা দেয়, সেই হেতু খোদা যিনি তাঁর পিতা তিনি আদৌ কোন রক্ষা-ব্যবস্থা দেন নি, তা অসম্ভব।
সূরাহ্ আল-মায়েদাহ্, ৬৮ ও অন্যান্য আয়াত দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়ে আমার এই প্রত্যয় জন্মেছিল যে কোরান বাইবেলের সত্য সমর্থন করে, আর সেই হেতু আমি কিতাবুল মোকাদ্দস ও কোরানে লিখিত বিষয় অনুসারে ‘সলীবে ঈসার মৃত্যু ’ সম্বন্ধে নিরপেক্ষ ভাবে পুনরায় অধ্যয়ন ও গবেষণা করেছিলাম।
- কোরান অনুসারে আমরা একটি ঘটনা পাঠ করি যে, অন্য কেউ সলীবে বিদ্ধ ও হত হয়েছিল, কিন্তু সেই মৃত ব্যক্তির পরিচয় নিশ্চিত করা যায় নি। যিনি মরেছিলেন তিনি ঈসা মসীহ্ কোরানের শিক্ষকেরা তা অস্বিকার করেন। তারা বলে থাকেন সলীবে হত ব্যক্তি ছিল এহুদা।
- কোরান একথা বলে, ইহুদিরা স্থির-নিশ্চিত ছিল যে তারা বাস্তবিকই ‘ঈসাকে হত্যা’ করেছিল।
এখন, বাস্তবিকপক্ষে যে সলীবে বিদ্ধ ও হত হয়েছিল-ঈসা না অন্য কেউ সে সম্পর্কে আমাকে আরও ভাল ও প্রত্যয়-উৎপাদক তথ্য খুঁজতে হয়েছিল। এ তথ্য পাবার উদ্দেশ্যে আমাদের বিষয় গত ঐতিহাসিক দলিলের প্রমাণ খুঁজে বের করতে হয়েছিল। তা দেখতে পাওয়া যায় কিতাবুল মোকাদ্দসে যা একটি উন্মুক্ত লিপিবদ্ধ দলিল যা ঐতিহাসিক তথ্যের উৎস হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
ঈসার সলীবে হত হওয়ার বিবরণ ইঞ্জিল শরীফের মথি, মার্ক, লূক ও ইউহোন্নার লিখিত চারটি কিতাবে আমরা পাঠ করতে পারি। এসব লেখকের সাক্ষ্য গুলো বাস্তব ঘটনা-ভিত্তিক যা তিনজন নিজেরাই প্রত্যক্ষ করেছিলেন।
যদি আমরা শরীয়তের এই শর্তটি মেনে নিই যে, কোন ঘটনার দুই বা তিনজন প্রত্যক্ষদর্শী সেই ঘটনা শরীয়ত মোতাবেক (দ্বিতীয় বিবরণ ১৭:৬,৭) সত্য বলে স্থির-নিশ্চিত করতে যথেষ্ট, তাহলে আসার সলীবে বিদ্ধ ও হত হবার চারজন লেখকের মধ্যে তিনজন প্রত্যক্ষদর্শীর সাক্ষ্য সত্য, আইনানুগ ও বিশ্বাসযোগ্য; সেই তুলনায় ঘটনার ছয় শতাব্দী পরে হযরত মুহম্মদ বা কোরানে লিখিত সাক্ষ্য লেখক প্রত্যক্ষদর্শী না হওয়া হেতু প্রত্যয় উৎপাদনে অক্ষম নিছক ধারনা মাত্র বলে প্রতিপন্ন হয়
আরেকটি সাক্ষ্য যোগ করা যায়। প্রহরীদের কমান্ডার যখন ঈসাকে মৃত বলে ঘোষনা দিয়েছিলেন, তখন অরিমাথীয়ার ইউসুফ পন্তীয় পিলাতের সাক্ষাতে উপস্থিত হয়ে ঈসার দেহের জন্য অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তার অনুরোধ মঞ্জুর করা হয়েছিল (মার্ক ১৫:৪২-৪৬)। ধরুন, সলীব থেকে যে দেহ নামানো হয়েছিল তা যদি ঈসার দেহ না হত, তাহলে কি অরিমাথীয়ার ইউসুফ সেই দেহের মৌলিকতা প্রত্যাখ্যান ও অস্বিকার করতেন না।
আরও একটি প্রমাণ হল এই যে, ইহুদিরা পন্তীয় পিলাতকে ঈসার কবর পাহারা দিতে অনুরোধ করেছিল। ঈসা ছাড়া অন্য কেউ সমাহিত হলে পিলাত পাহারার ব্যবস্থা করতেন না, কারণ তিনদিন পরে তিনি মৃতদের মধ্য থেকে আবার উঠবেন এ কথা পিলাত ঈসাকে বলতে শুনেছিলেন।
ধরে নেয়া যাক, সলীবে বিদ্ধ ব্যক্তি ঈসা ছিলেন না। তাহলে ঈসার প্রকৃত চরিত্র প্রকাশক এরূপ কথা তার পক্ষে উচ্চারণ করা সম্ভব হত না, “পিতা, ইহাদিগকে ক্ষমা কর, কারণ ইহারা কি করিতেছে তাহা জানেনা” এবং “সমাপ্ত হইলো”- এসব প্রমাণ করে যে সলীবে বিদ্ধ ব্যক্তি স্বয়ং ঈসা মসীহ্ বৈ অন্য কেউ নয়।
এরূপে আমি এ প্রত্যয়-উৎপাদিত সিদ্ধান্তে পৌছি যে, সূরাহ্ আল-নিসাহ্, ১৫৭ আয়াতে বর্ণিত “সলীব-বিদ্ধ হত” ব্যক্তি নিঃসন্দেহে স্বয়ং ইসা, এহুদার মত অন্য কোন ব্যক্তি নয়। চারজন ইঞ্জিল লেখকের সত্য সাক্ষ্য প্রত্যয় উৎপাদক, আইনানুগ ও সত্য।
মৃতদের মধ্য থেকে ঈসার পুনরুত্থান
কোরান কোন স্থানে মৃতদের মধ্য থেকে ঈসার পুনরুত্থান অস্বীকার করেনি। কোরান অনুসারে হযরত মুহম্মদ ঈসা সম্বন্ধে নিম্নরূপ অহী পেয়েছিলেন:
وَالسَّلَامُ عَلَيَّ يَوْمَ وُلِدتُّ وَيَوْمَ أَمُوتُ وَيَوْمَ أُبْعَثُ حَيًّا
“আর আমার প্রতি আল্লাহ্র শান্তি যে দিবস আমি ভূমিষ্ট হইয়াছি, আর যে দিবস আমার মৃত্যু ঘটিবে, আর যে দিবস আমাকে জীবিত অবস্থায় উঠাইয়া দাঁড় করানো হইবে।”
সূরাহ্ মরিয়ম ৩৩
যদিও কেউ কেউ তাঁর সলীবে মৃত্যু অস্বীকার করেন, উপরোক্ত আয়াতটি আমাকে স্থির-নিশ্চিত করেছিল যে, ঈসা বস্তুতঃই প্রকৃত মৃত্যুর অভিজ্ঞতা লাভ করেছিলেন। আমি নিশ্চিত হয়েছিলাম যে, ঈসা পুনরুত্থিত হয়েছিলেন (উব্ আছু হাইয়ান)। ‘উব্ আছু হাইয়ান’ কথাগুলোর অর্থ হল, ‘আমুতু’, অর্থাৎ প্রকৃত মৃত্যুর অভিজ্ঞতার পরে জীবন্ত প্রেরিত হওয়া।
তৃতীয় দিনে ঈসা সত্য সত্যই মৃতদের মধ্য থেকে উঠেছিলেন, পুনরুত্থিত হয়েছিলেন দৃশ্য ও স্পর্শযোগ্য দেহ নিয়ে (ফিলিপীয় ৩:২১)। ঈসার মৃত্যুর কোন অর্থই থাকত না, যদি তা মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থানের মুকুটে বিভূষিত না হত।
ধরে নেয়া যাক, ঈসা সলীবে বিদ্ধ হয়েছিলেন, মৃত্যু বরণ করেছিলেন এবং তথাচ মৃতই থেকে গিয়েছিলেন। তবে তা হত মসীহীদের ওপর এক প্রচন্ড আঘাত, কারণ তাহলে তাদের আল্লাহ্ মারা গিয়ে উবে যেতেন। মসীহীয়াত আজ পর্যন্ত সুদৃঢ়ভাবে দাড়িয়ে থাকত না, এমনকি মসীহীদের বেহেশতে নাজাতের কোন প্রত্যাশাই থাকত না।
আরও, ঈসা যদি মৃত্যু বরণ করতেন এবং মৃত থেকে যেতেন এবং তাঁর হাড়গুলো আজও কবরেই থাকত, তাহলে মসীহীগণ কেন মৃত আল্লাহ্র এবাদত করত? কি উদ্দেশ্যেই বা একজন মসীহী একজন মৃত ব্যক্তির নামে বাপ্তিষ্ম নিত (তরীকাবন্দী হত)? তবে কোন উদ্দেশ্যে মসীহীগণ মৃত এক ব্যক্তি সম্বন্ধে ধ্যান করত? যদি তিনি নিজেই মৃত্যু থেকে মুক্তি না পান এবং এখনও কবরে শায়িত থাকেন, তা সত্ত্বেও যদি মসীহীগণ ঈসাকে তাদের নাজাতদাতা হিসেবে বিবেচনা করত, তবে তাদের ধ্যান-চিন্তা নিত্যান্ত বাজে বিষয়ে পর্যবসিত হত। আল্লাহ্ মহব্বত প্রমাণ করার উদ্দেশ্যেই ঈসাকে সলীবে হত হতে হয়েছিলো- চিরতরে মৃত থাকার জন্য নয়, কিন্তু পুনরুত্থিত হবার জন্য এবং এমন কি, কালের পরিসমাপ্তির পরেও জীবিত থাকার জন্য।
ঈসা মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত হয়ে হয়ে আবার জীবন যাপন করেছিলেন তা কোন ব্যক্তির মিথ্যে রচনা বা উদ্ভাবন নয়, কিন্তু তা ছিল বাস্তব-সত্য যা অনেকে দেখেছিল এবং সাক্ষ্যও দিয়েছিল।
সমগ্র বিশ্বব্যাপী মসীহী জামাতের বিশ্বস্ত সাক্ষ্যের সার-বস্তুই হল ঈসার মৃত্যু ও পুনরুত্থান। আমাদের বিশ্বাস প্রত্যাশায় পরিপূর্ণ। আমাদের একজন নাজাতদাতা আছেন যিনি চিরঞ্জীব। আমাদের আছে মহব্বত-ভিত্তিক ঈমান, এবং আমরা ঈসার মাধ্যমে আল্লাহ্র প্রতিজ্ঞাসমূহের ওয়ারিশ। আমরা একসঙ্গে দুঃখভোগ করি এবং একসঙ্গে তাঁর সাথে গৌরবপ্রাপ্তও হব (রোমীয় ৮:১৭)।
মসীহের উম্মত হিসেবে আমাদেরকে অবশ্যই স্থির-নিশ্চিত হতে হবে যে, বিভিন্ন ধরনের সব মৃত্যু থেকে আমরা উত্থিত হব:
- আমরা পারিবারিক অমিল, মতবিরোধ এবং ঘৃণা থেকে উত্থিত হই।
- আমরা যন্ত্রনাদায়ক জীবিকা উপার্জনের মৃত্যু থেকে উত্থিত হই।
- উদ্বেগপূর্ণ হৃদয়ের মরণ থেকে আমরা উত্থিত হই।
- দুর্বল বিশ্বাসের মরণ থেকে আমাদের উত্থিত করা হবে।
- আত্মবাদের (স্বার্থপরতার) মরণ থেকে আমরা উত্থিত হই।
- দুঃখভোগ, পীড়া ও ভীতির মরণ থেকে আমরা উত্থিত হই।
আমাদের কাছে ঈসার সলীবের অর্থ
আসমানী অনুপ্রেরণায় রাসূল পৌল নিম্নোক্ত কথা লিখেছেন:
“কেননা কেহ যদি আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে বিবেকের কারণে অন্যায় ভোগ করিয়া দুঃখ সহ্য করে তবে তাহাই তারিফের বিষয়। বস্তুতঃ গোনাহ্ করিয়া চপেটাঘাত প্রাপ্ত হইলে যদি তোমরা সহ্য কর তবে তাহার সুখ্যাতি কি? কিন্তু সদাচরন করিয়া দুঃখ ভোগ করিলে যদি সহ্য কর, তবে তাহাই তো আল্লাহ্র কাছে তারিফের বিষয়। কারণ তোমরা ইহারই জন্য আহ্বানপ্রাপ্ত হইয়াছ কেননা মসীহও তোমাদের জন্য দুঃখভোগ করিলেন, যেন তোমরা তাঁহার পদ চিহ্নের অনুসরণ কর; “তিনি গোনাহ্ করেন নাই, তাঁহার মুখে কোন ছলও পাওয়া যায় নাই”, তিনি নিন্দিত হইলে প্রতিনিন্দা করিতেন না; দুঃখভোগ কালে তর্জন করিতেন না, কিন্তু যিনি ন্যায় অনুসারে বিচার করেন, তাঁহার উপর ভার রাখিতেন। তিনি আমাদের “গোনাহের বোঝা তুলিয়া লইয়া” আপনি নিজ দেহে কাঠের উপর বহন করিলেন, যেন আমরা গোনাহের পক্ষে মরিয়া দ্বীনদারীর পক্ষে জিন্দা হই; “তাঁহারই ক্ষত দ্বারা তোমার আরোগ্য প্রাপ্ত হইয়াছ”, কেননা তোমরা “মেষের ন্যায় ভুল পথে চলিয়াছিলে,” কিন্তু এখন তোমাদের জানের হেফাজতকারী ও উপদর্শকের কছে ফিরিয়া আসিয়াছ।”
ইঞ্জিল শরীফ, ১ পিতর ২:১৯-২৫
ঈসার সলীব ছিল তাঁর দুঃখভোগের শীর্ষ-বিন্দু। সলীবে মৃত্যু বরণ এমন কিছু ছিল না যা তিনি চেয়েছিলেন, কিন্তু তা ছিল আল্লাহ্র দ্বারা উদ্দীষ্ট পরিণতি অনুসারে। ঈসার দুঃখভোগের সুগভীর অর্থ সম্বন্ধে সে ঘটনা বাস্তবে সংঘটিত হবার ৭০০ বছর আগে নবী ইশাইয়া ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন:
“সত্যিই,
আমাদের তকলিফ সকল তিনিই তুলিয়া লইয়াছেন ,
আমাদের ব্যাথা সকল তিনি বহন করিয়াছেন;
তবু আমরা মনে করিলাম, তিনি আহত ,
আল্লাহ্ কর্তৃক প্রহারিত ও দুঃখার্ত।
কিন্তু তিনি আমাদের অধর্মের জন্য বিদ্ধ ,
আমাদের অপরাধের জন্য চূর্ণ হইলেন;
কিতাবুল মোকাদ্দস, ইশাইয়া ৫৩: ৪-১২
আমাদের শান্তিজনক শাস্তি তাঁহার উপরে বর্ষিত হল, এবং তাঁহার ক্ষত সকল দ্বারা আমাদের আরোগ্য হইলো।
আমরা সকলে ভেড়ার ন্যায় ভ্রান্ত হইয়াছি, প্রত্যেকে নিজ নিজ পথের দিকে ফিরিয়াছি; আর মাবুদ আমাদের সকলকার অপরাধ তাঁহার উপরে বর্তাইয়াছেন।
তিনি মজলুম হইলেন, তবু দুঃখভোগ স্বীকার করিলেন, তিনি মুখ খুলিলেন না; মেষ শাবক যেমন জবেহ্ হইবার জন্য নীত হয়, ভেড়ী যেমন লোম কাটিবার লোকদের সামনে নীরব হয়, সেইরূপ তিনি মুখ খুলিলেন না।
তিনি জুলুম ও বিচার দ্বারা অপনীত হইলেন; তৎকালীয়দের মধ্যে কে ইহা আলোচনা করিল যে, তিনি জীবিতদের দেশ হইতে নির্মূল হইলেন?
আমার জাতির অধর্ম প্রযুক্তই তাঁহার উপরে আঘাত পড়িল। আর লোকে দুষ্টদের সহিত তাঁহার কবর ঠিক করিল, এবং মৃত্যুতে তিনি ধনবানের সঙ্গী হইলেন, যদিও তিনি জুলুম করেন নাই, আর তাঁহার মুখে ছল ছিল না। তথাপি তাঁহাকে চূর্ণ করিতে মাবুদেরই দিলের খায়েশ ছিল; তিনি তাঁহাকে যাতনাগ্রস্ত করিলেন, তাঁহার জান যখন দোষার্থক কুরবাণী হাসিল করিবে, তখন তিনি আপন বংশ দেখিবেন, দীর্ঘায়ূ হইবেন, এবং তাঁহার হাতে মাবুদের মনোরথ সিদ্ধ হইবে;
তিনি আপন জানের মেহনতের ফল দেখিবেন, তৃপ্ত হইবেন; আমার দ্বীনদার বান্দা তাঁহার জ্ঞান দিয়া অনেককে দ্বীনদার করিবেন, এবং তিনিই তাহাদের অপরাধ সকল বহন করিবেন।
এই জন্য আমি মহানদিগের মধ্যে তাঁহাকে অংশ দিব, তিনি পরাক্রমীদের সহিত লুট বিভাগ করিবেন, কারণ তিনি মৃত্যুর জন্য আপন জান ঢালিয়া দিলেন, তিনি অধর্মীদের সঙ্গে গণ্য হইলেন; আর তিনিই অনেকের গোনাহের বোঝা তুলিয়া লইয়াছেন, এবং অধর্মীদের জন্য সাফায়াত করিতেছেন।”
কিতাবুল মোকাদ্দস, ইশাইয়া ৫৩:৪-১২
ঈসা নিজেও অনুধাবন করতে পেরেছিলেন যে, এ ভবিষ্যদ্বানী তাঁর ব্যক্তিত্বেই পূর্ণতা লাভ করবে, কারণ তিনিই ছিলেন ভবিষ্যদ্বানীতে উল্লিখিত মাবুদের বান্দা।
সে কারণেই যখন তিনি এই মাত্রার দুঃখভোগের মুখোমুখি, তখন যে সব সৈনিকেরা তাঁকে গ্রেফতার করতে যাচ্ছিল তাঁর সহযোগি শিষ্য তাদেরকে হত্যার হুমকি দিলে পর ঈসা শিষ্যকে আদেশ করেছিলেন:
“তোমার তলোয়ার পুনরায় জায়গা মত রাখ, কেননা যে সকল লোক তলোয়ার ধারন করে তাহারা তলোয়ার দ্বারা হালাক হইবে। আর তুমি কি মনে কর যে, আমি আমার পিতার কাছে আরজ করিলে তিনি এখনই আমার জন্য বারোটি ফৌজ অপেক্ষা অধিক ফেরেশতা পাঠাইয়া দিবেন না? কিন্তু তাহা করিলে কেমন করিয়া কিতাবের এই কালাম সকল সফল হইবে যে, এরূপ হওয়া আবশ্যক?”
ইঞ্জিল শরীফ, মথি ২৬:৫২-৫৪
তিনি তৌরাৎ লঙ্ঘন করে গোনাহ্ করার কারণে ইহুদি যাজকত্বের ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ অধিকারিকভাবে ঈসাকে রোমীয় গভর্ণরের কাছে সোপর্দ করে নি। আল্লাহ্-নিন্দার দোষে তিনি বিচারিত হয়েছিলেন ইহুদি ধর্মীয় কর্তৃপক্ষ, তথা ইমামদের দ্বারা, কারণ তিনি তাদের সাক্ষাতে নিজেকে ইবনুল্লাহ্, নাজাতদাতা বলে স্বীকার করেছিলেন।
আমাদের ও মসীহের প্রত্যেক অনুসারীকে সলীবের প্রতিকৃতি একথা স্মরণ করিয়ে দেওয়া উচিত যে, ঈসা সলীবে দুঃখভোগ করে মৃত্যুবরণ করেছিলেন আমাদেরকে পাপের ক্ষমতা থেকে রক্ষা করার কোরবাণী রূপে, যেন আমরা চিরকাল বেহেশতে ঢোকার জন্য অধিকার ও রূহ লাভ করি।
ঈসার বেহেশতে আরোহন (মিরাজ)
(জেরুশালেম) নগরীর বাইরে বেথানীর নিকটে ঈসার এগার জন শিষ্য ঈসার বেহেশতে আরোহন (মিরাজ) প্রত্যক্ষ করেছিলেন (লূক ২৪:৫০)। ঈসার বেহেশতে আরোহন (মিরাজ) সম্পর্কে কোরানের কোন আপত্তি বা বিরোধিতা নেই। এমন কি, তা কোরান দ্বারা সমর্থিত, কারণ সূরাহ্ আল-ইমরান,৫৫ তে বলা হয়েছে:
إِذْ قَالَ اللّهُ يَا عِيسَى إِنِّي مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ إِلَيَّ
“….হে ঈসা ! আমি তোমার মৃত্যু ঘটাইব এবং তোমাকে নিজের কাছে উঠাইয়া লইব…।”
সূরাহ্ আল-ইমরান ৫৫
ঈসার বেহেশতে আরোহনে দুটি বিষয় আছে যা লক্ষ্য করা উচিত:
- সাহাবীদের প্রতি ঈসার চূড়ান্ত বাণী, তাঁর পুনরাগমনের আলোকপাত ছিল তাঁর সব উম্মতদের প্রতি উদ্দিষ্ট একটি আদেশ:
- ক) তোমরা সমগ্র জগতে যাও, নাজাতের সুখবর প্রচার কর এবং লোকদের ঈসার উম্মত কর।
- খ) ত্রিত্ব আল্লাহ্-পিতা, পুত্র ও পাক-রূহের নামে তাদের বাপ্তিষ্ম দাও (তরীকাবন্দী দাও)।
- গ) বিশেষভাবে সুসমাচার (ইঞ্জিল) সম্বন্ধে আমি তোমাদের যেসব শিক্ষা দিয়েছি সেই সব এবং সার্বিকভাবে কিতাবুল মোকাদ্দস তাদেরকে শিক্ষা দাও।
- এ ছিল তাঁর সব সহাবীদের পাক-রূহের শক্তি প্রদানের ঈসার প্রতিশ্রুতি যা আমাদেরও বুঝায়, যেন, বর্তমানে আমরা যারা তাঁর সাহাবী বা অনুসারী আমরা সবাই ঈসা যে ইবনুল্লাহ্, জীবন্ত কালাম এই সাক্ষ্য বহন করি। কালের পরিসমাপ্তি পর্যন্ত চিরকাল তাঁর রূহ আমাদের সঙ্গে থাকবেন।
ঈসার দ্বিতীয় আগমন (পুনরাগমন)
জীবিত ও মৃত সকলে বিচার করতে খোদাই বিচারক হবার জন্য ঈসা দ্বিতীয়বার আসবেন (প্রেরিত ১: ১১; জাহেরী কালাম ২০:১১-১৫)।
কালের পরিসমাপ্তিতে দ্বীনদার বিচারক হবার জন্য ঈসার আগমন সার্বিকভাবে মুসলমানদের দৃঢ়-প্রত্যয়, যেহেতু অন্যান্য হাদীসের মত নিম্নোক্ত গুলোতেও সেই ঘটনার ভবিষ্যত উক্তি রয়েছে:
১। আবু হুরাইরা থেকে প্রাপ্ত হাদীস বুখারীর, ২য় খন্ড ২৫৬ পৃষ্ঠায় লেখা আছে:
كَيْفَ أَنْتُمْ إِذَأ نَزَلَ اُبْنَ مَرْيَمَ فِيكُمْ وَ إِمَامُكُمْ مِنْكُمْ
“তোমাদের অবস্থা কি হবে, যদি মরিয়ম-পুত্র ঈসা তোমাদের ধর্মীয় নেতা ও ইমাম হবার জন্য পুনরাবতরণ করেন?”
আবু হুরাইরা থেকে প্রাপ্ত হাদীস বুখারীর, ২য় খন্ড ২৫৬ পৃষ্ঠায়
২। মুসনদ ইমাম আহমদ ইবনে হানবল-এর হাদীসের ২য় খন্ডের পৃঃ ২৪০, ৪১১-তে লেখা আছে এরূপ:
لَيُوشَكَنَّ أَنْ يَنْزِلَ فِيكُمْ آبْنَ مَرْيَمَ إِمَاماً مَهْدِياً وَ حَكَماً
“শীঘ্রই মরিয়ম-পুত্র ঈসা প্রধান ইমাম ও দ্বীনদার বিচারক রূপে তোমাদের কাছে নেমে আসবেন।”
মুসনদ ইমাম আহমদ ইবনে হানবল-এর হাদীসের ২য় খন্ডের পৃঃ ২৪০, ৪১১
৩। হযরত মুহম্মদ একবার অন্যদের প্রত্যয় উৎপন্ন করার জন্য শপথ করে বলেছিলেন যে, মরিয়ম-পুত্র ঈসা দ্বীনদার বিচারক হবার জন্য আবার আসবেন। হযরত মুহম্মদ বলেছিলেন:
وَآللَّه لِيُنْزِلَ آبْنَ مَرْيَمَ حَكَماً عَدْلاً
“কসম আল্লাহ্র, সত্য সত্যই মরিয়ম-পুত্র দ্বীনদার বিচারক রূপে অবতীর্ণ হবেন”
হাদীস মুসলমান, ১ম খন্ড, পৃঃ৭৬
এই হাদীসের তফসীর, কাল- সমাপ্তিতে ঈসা মসীহের দ্বিতীয় আগমন। ‘হাকামান’কথাটি এই ইঙ্গিত বহন করে যে, দ্বিতীয়বারে ঈসা মসীহ বর্তমানে ব্যবহৃত কিতাবুল মোকাদ্দস বা কোরানে প্রাপ্ত আল্লাহ্র বিধান (শরীয়ত) নিয়ে আসবেন না, কিন্তু একটি নতুন কিতাব ,‘জিন্দেগীর কিতাব’ সহ সব মানুষের বিচার করতে আসবেন (জাহেরী কালাম ২০: ১১-১৫)
হাদীস আল-সহী, বুখারী-মুসলিম-এর পূর্বোক্ত আয়াতটি রোমীয় ২:১৬ পদের সঙ্গে তুলনা করা যায়:
“যেদিন আল্লাহ্ আমার ইঞ্জিল মোতাবেক ঈসা মসীহের দ্বারা মানুষদের গোপন বিষয় সকলের বিচার করবেন।”
ইঞ্জিল শরীফ, রোমীয় ২:১৬
সেই কারণে ঈসাকে আমার আল্লাহ্ ও ব্যক্তিগত নাজাতদাতা হিসাবে গ্রহণ এবং দ্বীনদার বিচারক রূপে তাঁর দ্বিতীয় আগমনের প্রতীক্ষা করার পথে অন্তরায় সৃষ্টিকারী কোন প্রতিবন্ধক আর রইলো না।
ঈসার অনুসারীদের নাজাত লাভের পক্ষে কোরান নিম্নোক্ত সাক্ষ্য বহন করেছে। খোদা ঈসাকে বলেছিলেন:
إِذْ قَالَ اللّهُ يَا عِيسَى إِنِّي مُتَوَفِّيكَ وَرَافِعُكَ إِلَيَّ وَمُطَهِّرُكَ مِنَ الَّذِينَ كَفَرُواْ وَجَاعِلُ الَّذِينَ اتَّبَعُوكَ فَوْقَ الَّذِينَ كَفَرُواْ إِلَى يَوْمِ الْقِيَامَةِ
“আমি তোমার মৃত্যু ঘটাইব এবং তোমাকে নিজের কাছে উঠাইয়া লইব, আর তোমার অনুসারীগণকে কিয়ামত পর্যন্ত অবিশ্বাসীদের উপর বিজয়ী রাখিব।”
সূরাহ্ আল-ইমরান, ৫৫)
স্পষ্টতঃই কোরান সাক্ষ্য বহন করে যে, ঈসার অনুসারীদের নাজাতের নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে যার অর্থ বেহেশ্তে অনন্ত জীবন, যেমন ঈসা নিজেও বলেছেন:
“সত্য সত্য, আমি তোমাদিগকে বলিতেছি, যে ব্যক্তি আমার কথা শুনে, ও যিনি আমাকে পাঠাইয়াছেন, তাঁহার উপর ঈমান আনে, সে অনন্ত জিন্দেগী প্রাপ্ত হইয়াছে, এবং বিচারে আনীত হয় না, কিন্তু সে মৃত্যু হইতে জিন্দেগীতে পার হইয়া গিয়াছে।”
ইঞ্জিল শরীফ, ইউহোন্না ৫:২৪
আমিই তরীকা, হক ও জিন্দেগী; আমা দিয়া না আসিলে কেহ পিতার নিকটে আসে না।” (ইউহোন্না ১৪:৬)
কিতাবুল মোকাদ্দসের সত্যতা
আমার এই সাক্ষ্যের শুরুতেই যেমন আমি বর্ণনা করেছি, প্রথম যে জিনিসটি আমাকে কিতাবুল মোকাদ্দসের সত্য অন্বেষায় প্রবর্তনা দিয়েছিল তা ছিল সূরাহ্ আল-মায়েদাহ্, ৬৮ আয়াত যা প্রত্যায়ন করে যে, আল্লাহ্র ইচ্ছানুসারে যারা সত্যে আল্লাহ্র এবাদৎ করে সেই সব লোকের জন্য কিতাবুল মোকাদ্দস অভ্রান্ত কিতাব।
কোরানে আরও অনেক আয়াত আছে যেগুলো মুসলমান প্রচারকদের দ্বারা ব্যবহৃত হয় এবং আমিও পূর্বে ব্যবহার করতাম, যেগুলোকে অজ্ঞদের কলুষিত হাত তৌরাত ও ইঞ্জিল মিথ্যায়ন ও পরিবর্তন করার প্রমাণ রূপে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে থাকে।
সে যা-ই হোক, আমি কোরানের আয়াতগুলোর সত্যিকার অর্থ মূল কোরান থেকেই বুঝতে চেয়েছিলাম, যেভাবে আমি ইতিপূর্বে কিতাবুল মোকাদ্দস থেকেই কিতাবুল মোকাদ্দসের বিষয়-বস্তু বুঝতে চেয়েছিলাম।
সততার সাথে আমি যাচাই করতে চেষ্টা করেছিলাম যে, কোরানের আয়াতগুলোতে কী সত্য নিহিত রয়েছে, যা আমাকে সিদ্ধান্তে (উপসংহারে) পৌছতে চালিত করেছিল।
১। সূরাহ্ আল-বাকারাহ্, ৭৫
أَفَتَطْمَعُونَ أَن يُؤْمِنُواْ لَكُمْ وَقَدْ كَانَ فَرِيقٌ مِّنْهُمْ يَسْمَعُونَ كَلاَمَ اللّهِ ثُمَّ يُحَرِّفُونَهُ مِن بَعْدِ مَا عَقَلُوهُ وَهُمْ يَعْلَمُونَ
“তোমরা কি এরূপ আশা পোষন কর যে, তাহারা তোমার কথা মান্য করিবে, এবং ইহাদের এই অবস্থা যে, ইহাদের মধ্যে এরূপ কিছু লোকও গত হইয়া গিয়াছে যে, তাহারা আল্লাহ্র কালাম শুনিবার জন্য তৎপর, অতঃপর উহা বুঝিবার পর তাহারা উহার কিছু পরিবর্তন করিয়া দিত এবং তাহারা এ সম্পর্কে পরিজ্ঞাত ছিল।”
সূরাহ্ আল-বাকারাহ্ ৭৫
সাধারনতঃ মুসলমানেরা ‘এরূপ কিছু লোকও’ উক্তিটিকে (ফারিকুন মিনহুম) কিতাবুল মোকাদ্দস বিশেষজ্ঞ (ইহুদি ও মসীহীদের) বলে ব্যাখ্যা করে থাকেন যারা আল্লাহ্ কালাম, তৌরাত ও ইঞ্জিলের বিষয়-বস্তু পরিবর্তন করেছেন।
আমার পরীক্ষা-নীরিক্ষা অনুসারে সূরাহ্ আল-বাকারাহ্ ৭৫- এর অর্থ তা নয়। ‘এরূপ কিছু লোকও’ বলতে মুসলমানদেরই বোঝানো হয়েছে যারা ইহুদি ও মসীহীদের মধ্য থেকে উৎপন্ন হয়েছিল এবং তারপর মুহাম্মদের প্রকৃত শিক্ষা জানার পরে ইসলাম প্রত্যাখ্যান করেছিল। কোরান তাদেরকেই কোরানের বিষয়-বস্তুর অর্থ বা ব্যাখ্যা পরিবর্তন করার দোষে অভিযুক্ত করেছে, কিতাবুল মোকাদ্দস পরিবর্তনের জন্য নয়
একথা আয়াতটির এ উক্তি থেকে বুঝা যায় ,“তুমি”(যদিও ‘তোমরা’ অনুদিত হয়েছে পরবর্তী ‘তোমার কথা-র সঙ্গে অসঙ্গতি লক্ষ্যনীয়) “কি এরূপ আশা পোষন কর যে তাহারা তোমার কথা বিশ্বাস করিবে…?”এ বাক্যের ‘তুমি’(তোমার) স্পষ্টভাবে হযরত মুহাম্মদকে বুঝায়। কিন্তু ‘তাহারা’ (ইহুদি ও মসীহীরা) নবী রূপে হযরত মুহাম্মদকে গ্রহণ করার পর ইসলাম প্রত্যাখ্যান করেছিল এবং ‘তাহারা’ আল্লাহ্র বাণী সমূহ অর্থাৎ কোরানের অর্থ পরিবর্তন করার দোষে অভিযুক্ত হয়েছিল; পরন্তু তারা নির্বুদ্ধিতা, মিথ্যা ও অজ্ঞতা দোষে অভিযুক্ত হয়েছিল।
কোরানের উক্ত আয়াতটি ইহুদি ও মসীহী আলেমদের বিরুদ্ধে লিখিত হয়নি এবং তারা কিতাবুল মোকাদ্দস পরিবর্তন করেছে এমন দাবী ও করে না, কিন্তু কোরানেরই বিষয়-বস্তু সম্বন্ধে একথা বলে।
২। সূরাহ্ আল-বাকারাহ্, ১০৬
مَا نَنسَخْ مِنْ آيَةٍ أَوْ نُنسِهَا نَأْتِ بِخَيْرٍ مِّنْهَا أَوْ مِثْلِهَا
“আমি (মূলে: আমরা) কোন আয়াত বাতিল করিয়া দেই কিংবা স্মরনপথ হইতে বিস্মৃত করিয়া দেই, তৎপর তাহা অপেক্ষা উত্তম কিংবা তাহারই অনুরূপ আয়াত নাজির করি ….।”
সূরাহ্ আল-বাকারাহ্ ১০৬
সূরাহ্ আল-বাকারাহতে উল্লিখিত ‘বাতিল করিয়া’ দেওয়া আয়াতগুলো সম্বন্ধে সাধারনতঃ মুসলমানেরা কিতাবুল মোকাদ্দসের তৌরাত- ইঞ্জিলের আয়াতকে বোঝাতে চান।
কিন্তু একাধিক ইসলামী তফসীর থেকে দেখা যায় যে, ‘বাতিল করিয়া’ দেওয়া আয়াত বলতে কোরানের আয়াতকেই বুঝায়, কারণ ওগুলোর শরীয়ত এবং বিধিসমূহ বিলোপ করা হয়েছিল। “আল্-তাজদিদ ফিল্ ইসলাম” শীর্ষক কিতাব এ কথা বলে যে, কোরানে পাঁচ থেকে পঞ্চাশটি আয়াত রয়েছে যেগুলো বাতিল করা হয়েছে।
অন্যান্য লোকেরা বলেন যে, ‘বাতিল করিয়া’ দেওয়া ঐ আয়াতগুলো হযরত মুহাম্মদের অলৌকিক কাজ (মাজেজা) সম্পর্কিত, কারণ খোদার অহী প্রাপ্ত নবীরূপে হযরত মুহাম্মদ তার পূর্বে আগত মূসা ও ঈসা নবীর মত অলৌকিক কাজ সাধন করার ক্ষমতা সম্পন্ন ছিলেন বলে প্রতিভাত হয়নি। তাই যারা সত্যিকার ভাবে আল্লাহ্র এবাদত করবে তাদের জন্য সত্যের প্রকৃত ভিত্তিস্বরূপ যে কিতাবুল মোকাদ্দস আসমানী কিতাব রূপে সেটির সত্য প্রত্যাখ্যান করার প্রমাণ হিসেবে সূরাহ্ আল-বাকারাহ্ ব্যবহার করা যায় না।
৩। সূরাহ্ আল্-মায়েদাহ্, ১৩
فَبِمَا نَقْضِهِم مِّيثَاقَهُمْ لَعنَّاهُمْ وَجَعَلْنَا قُلُوبَهُمْ قَاسِيَةً يُحَرِّفُونَ الْكَلِمَ عَن مَّوَاضِعِهِ وَنَسُواْ حَظًّا مِّمَّا ذُكِّرُواْ بِهِ وَلاَ تَزَالُ تَطَّلِعُ عَلَىَ خَآئِنَةٍ مِّنْهُمْ إِلاَّ قَلِيلاً مِّنْهُمُ
“অতঃপর উহাদেরই একরার ভঙ্গের কারণে আমি উহাদিগকে অভিসম্পাত করিয়াছি ও উহাদের অন্তঃকরণ গুলিকে শক্ত করিয়া দিয়াছি, তাহারা কালক্রমে তাহার স্থান হইতে ঘুরাইয়া দিতেছে ও উহাদিগকে যে উপদেশ প্রদত্ত হইয়াছিল, তাহা হইতে এক বিরাট অংশ ভুলিয়া বসিয়াছে; বস্তুত; অল্প সংখ্যক ছাড়া। উহাদের বিশ্বাসঘাতকতার উপর তুমি সর্বদাই খবরদার হইতেছ।”
সূরাহ্ আল্-মায়েদাহ্ ১৩
সূরাহ্ আল-মায়েদাহ্ ১৩,-তে উক্ত ‘উহাদেরই’ শব্দের সঙ্গে মুসলমানরা উদ্দেশ্যমূলকভাবে ‘ইহুদিদের/মসীহীদের’ শব্দগুলো বাক্যের মধ্যে লঘু বন্ধনীতে যোগ করে থাকেন। “… … তাহারা কালক্রমে তাহার স্থান হইতে ঘুরাইয়া দিতেছে…” উক্তিকে মুসলমানরা এরূপ ব্যাখ্যা দেন যে, কিতাবুল মোকাদ্দস অর্থাৎ তৌরাত ও ইঞ্জিলের সত্য পরিবর্তিত ও মুছে ফেলা হয়েছে।
এই আয়াতটি ঠিক সূরাহ্ আল্-বাকারাহ্ ৭৫ আয়াতের মত। বস্তুতঃপক্ষে হযরত মুহাম্মদের জীবনকালে কিছু সংখ্যক লোকের প্রতি প্রয়োগ করা হয়েছিল যারা মূলতঃ ইহুদি ও মসীহী ছিল, কিন্তু ইসলামে মতান্তরিত হয়েছিল এবং পরবর্তিতে আবার নিজ নিজ ধর্মে ফিরে গিয়ে ইসলাম প্রত্যাখ্যান করেছিল। তাদের প্রতিশ্রুতি পরিবর্তন করে কোরানের আয়াতের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা করার জন্য কোরান তাদের অভিযুক্ত করেছে। হযরত মুহাম্মদের প্রকৃত শিক্ষা জানার পরে তারা ইসলামের বাণী প্রত্যাখ্যান করেছিল। সূরাহ্ আল-মায়েদাহ্ ১৩, ৭-১৪ আয়াতের প্রেক্ষাপটে এ বিষয়টি অধ্যয়ন করা যেতে পারে !
স্পষ্টতই, সূরাহ্ আল-মায়েদার আয়াতগুলোকেও কিতাবুল মোকাদ্দসের সত্য প্রত্যাখ্যানের জন্য ভিত্তিরূপে ব্যবহার করা যায় না।
উপসংহার
একই সুরে আরও আয়াত কোরানে আছে যেগুলো আপাত দৃষ্টিতে মনে হয় কিতাবুল মোকাদ্দসের সত্যকে প্রত্যাখ্যান করে। ওগুলো নিরপেক্ষভাবে অধ্যয়নের পরে আমি স্বীকার করি যে, কোরানে একটিও আয়াত নেই যা দ্ব্যার্থহীনভাবে ব্যক্ত করে যে, তৌরাত ও ইঞ্জিল মৌলিক সত্য থেকে মিথ্যায়িত বা পরিবর্তিত হয়েছে।
পরিশেষে, আমি সিদ্ধান্ত টানছি যে, সূরাহ্ আল-মায়েদাহ্, ৬৮ আল-বাকারাহ্ ,৬২ আল-সাজ্বদা-হ্,২৩ এবং অন্যান্য আরও আয়াতে কোরান যা বলে এবং যে সম্বন্ধে আমি পূর্বেই প্রকাশ করেছি, সে সব এই স্থির-নিশ্চয়তা বিধান করে যে, আল্লাহ্র ইচ্ছানুক্রমে যারা আল্লাহ্র এবাদত করতে আকাঙ্খী তাদের প্রত্যেকের জন্য তৌরাত ও ইঞ্জিল অভ্রান্ত সত্য।
পরিবেশের প্রভাবের বিরুদ্ধে আমার সংগ্রাম
যদিও আমি সত্য সম্বন্ধে সুদৃঢ় ও প্রত্যয়যুক্ত হয়েছিলাম এবং ঈসা মসীহ্ কে আমার ব্যক্তিগত নাজাতদাতা বলে গ্রহণ করতে প্রস্তুত ছিলাম, তথাচ আমি বিধিসম্মতভাবে মসীহীয়াতে দীক্ষিত হই নি, কারণ পরিবেশের প্রভাব আমার অন্তরায় হয়েছিল। ভীতি ও দুর্ভাবনা বারংবার আমাকে পেয়ে বসত।
আমার অভিজ্ঞতা প্রতীয়মান করে যে, এমন অনেক লোক আছেন যারা ঈসাকে ব্যক্তিগত নাজাতদাতা রূপে গ্রহণ করার ইচ্ছা প্রকাশ করে থাকেন, কিন্তু তারা পরিবেশের প্রভাবের সাথে উছোট খান, সম্ভবতঃ এ কারণ যে, তারা পিতামাতার বিরোধীতা করতে অনিচ্ছুক বা ভীত। কখনও কখনও তারা ভয় পান, তারা মসীহী হলে তাদের উর্ধতন কর্মকর্তা হয়তো তাদের চাকুরীচ্যুত করবেন। এমন একজন বিশ্বাসী ছিলেন যার ভাবী-বধুর সঙ্গে সংঘাত বেধেছিল, কারণ তিনি তাকে সহ মসীহী হতে চেয়েছিলেন। অন্যান্য আরও অন্তরায় আছে যেগুলো লোকদেরকে তাদের হৃদয়ে ঈসাকে পূর্ণভাবে রাজত্ব করতে দিতে বিঘিœত করে।
মথি ১০: ৩৪-৩৬ পদে লিখিত ঈসার সতর্কবাণীতে পরিবেশের ভীতিপূর্ণ প্রভাব নির্দেশিত হয়েছে। যারা মসীহকে অনুসরণ করতে ইচ্ছা করে তারা যেসব দুঃখভোগের সম্মুখিন হবে তিনি তার বর্ণনা দিয়েছেন: সে তার পিতা মাতা দ্বারা ঘৃণিত হতে পারে; তার পারিবারিক সম্পর্ক বিচ্ছিন্ন হতে পারে; তাঁর নিজ জীবনের উপরেও ঝুকি আসতে পারে। যাহোক, যারা ঈসাকে প্রভু হিসেবে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং তাদের হৃদয়ে রাজত্ব করতে দেয় তাদের জীবনে এরূপ উদ্বেগ বেশীদিন থাকে না। প্রতিটি দুর্ভাবনা আল্লাহ্র সহায়তায় বিজিত হয়। আমি নিজেও এরূপ পারিপার্শিক চাপের অভিজ্ঞতা লাভ করেছি। তবুও মাবুদ সব সময়ই উদ্ধারের একটি পথ খুলে দিয়েছিলেন।
১৯৬১-১৯৬৪ সন পর্যন্ত আমি দ্বৈত ধর্মীয় কর্তব্যাদি সম্পাদন করছিলাম। ইসলাম অনুসারে আমি মোনাজাত করতাম (নামাজ আদায় করতাম) এবং প্রতি শুক্রবারে মসজিদে যেতাম। আবার প্রতি শনি ও রবিবারে গীর্জাতেও যেতাম। আমি একটি এ্যাড্ভেন্টিষ্ট জামাতে (মন্ডলীতে) এবাদত করতাম। দৃঢ় প্রত্যয়ের কারণে তখন আমি জামাতে যেতাম না। তার চাইতে সত্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষার জন্যই যেতাম। মাঝে মাঝে আমি মসীহী নয় এমন লোকদের লেখা বর্ণনা পড়েছিলাম যাতে বলা হয়েছে যে, গীর্জাতে লোকেরা মূর্তি ও ছবির মত জিনিসের পুতুল-পূজা করে। ঐ কালের রবিবার গুলোতে আমি তাই পালাক্রমে জাকার্তার চারিপাশের গীর্জাতে পরিদর্শনে যেতাম। এমন কি, আমি একই রবিবারে একাধিক গীর্জায় যেতাম মূর্তি অথবা ছবির সামনে পুতুল-পূজারী আছে কি না তা খুঁজে বের করার জন্য।
পরিশেষে, আমি একটি সিদ্ধান্ত টানতে ও প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছিলাম যে, আমার সন্দেহ ছিল অপ্রতিষ্ঠিত। যত গীর্জাতে আমি গিয়েছি কোথাও আমি কোন প্রতিমাপূজক দেখতে পায়নি।
১৯৬৪ সন থেকে বাস্তবিকই আমার অন্তর আল্লাহ্র রূহ্, পাক-রূহ্ বা সত্যের রূহ দ্বারা পূর্ণ হয়েছিল। সেই সময় থেকে ঈসাকে আমার নাজাতদাতা রূপে সর্বান্তঃকরণে গ্রহণ করবার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম। তবুও একটি দুর্বলতা তখনও ছিল। আমি প্রকাশ্যে আমার প্রত্যয় ব্যক্ত করতে সাহস পাই নি। তখনও আমি আমার মসীহী ঈমান গোপন করে রেখেছিলাম। ইন্দোনেশিয়ার কুইটাং-এর মসীহী জামাতে গিয়ে প্রথমবারের মত আমি গোপনে বাপ্তিষ্ম গ্রহণ করার অনুরোধ জানিয়েছিলাম, কারণ আমার পরিবার-পরিজন বা অন্যেরা, এমন কি, আমার স্ত্রী জানুক তা আমি চাই নি। আমি জানতাম না সেই মসীহী জামাতের দায়িত্বে কে ছিলেন, তবুও আমার বিশেষ অনুরোধ প্রত্যাখ্যাত হয়েছিল, কারণ কাউকেই গোপনে বাপ্তিষ্ম দেওয়া হত না।
কয়েক সপ্তাহ্ পরে মনে একই উদ্দেশ্য নিয়ে জাতিনেগারা-র বেথেল চার্চের (জামাতের) ইমাম জে, সেপুলীট এর সঙ্গে সাক্ষাত করতে গিয়েছিলাম। তিনি তক্ষুনি আমাকে এই শর্তে বাপ্তিষ্ম দিতে প্রস্তুত ছিলেন যে, আমি আমার প্রতিবেশী দু-তিন জন মসীহীকে নিয়ে আসব যারা আমাকে আত্মিক জীবনে পথ-নির্দেশনা দিবেন, যেন আমি মসীহীরূপে জীবন যাপন করি।
আমি শর্তটি মেনে নিতে পারিনি, কারণ তখনও আমি নিজেকে প্রকাশ্যভাবে মসীহী বলে ঘোষনা দিতে অসমর্থ ছিলাম। এমনটি হয়েছিল পরিবেশের, বিশেষতঃ আমার নিজ পরিবার-পরিজনের প্রভাব হেতু। আমি ভীত ছিলাম যে, আমার বাড়িতে বিরাট এক গোলমাল দেখা দিবে। আমি আমার স্ত্রীকে আমার সঙ্গে গীর্জাতে যেতে বলতে এই ভয়ে ভীত ছিলাম যে, সে হয়তো প্রতিশোধ স্বরূপ আমাকে কোন মুসলমান কাজীর কাছে তালাকের জন্য যেতে বলবে। তালাকের প্রক্রিয়ায় সম্মুখিন হতে আমি ভীতিপূর্ণ ছিলাম। সে কারণে আমি কেবল গোপনে ঈসা মসীহকে গ্রহণ করতে চেয়েছিলাম।
তথাচ আমার অন্তর অনিশ্চিত রইল না।
ঈসা মসীহকে গ্রহণ করা সম্বন্ধে আমার কোন সন্দেহ ছিল না।
এজন্য আমি আর দ্বৈত ধর্মীয় এবাদত সম্পন্ন করতাম না। আমি শুধুমাত্র গীর্জাতেই যেতাম। তবুও আমার পরিবার সম্পর্কে কিছু ভীতি ও উদ্বেগ নাছোড়বান্দার মত লেগেই ছিল। এর ওপরে বিজয়ের পথ আমার জানা ছিল না। আমার ব্যাপার নিয়ে কারো কাছে উপদেশের জন্যও আমি যাই নি। সেই সময়ে আমি আমার অন্তর্দ্বন্দ সূক্ষ¥ভাবে অনুভব করেছিলাম।
যাহোক, আল্লাহ্ তাঁর নিরূপিত সময়ে আমাকে আমার অন্তর্দ্বন্দের ওপরে বিজয় নিতে সাহায্য করেছিলেন। এর আগ পর্যন্ত আমি ধরে নিয়েছিলাম যে, যদি ইসলাম থেকে মসীহীয়াতে পরিবর্তিত হওয়ার কথা আমি আমার স্ত্রীর সাথে আলোচনা করি, তবে তা অশান্তির সৃষ্টি করবে। কিন্তু আল্লাহ্ অনুগ্রহের সঙ্গে, এমন কি, আমার স্ত্রীর মধ্য দিয়েই সত্যের দরজা খুলে দিয়েছিলেন। ঐ সময়ের মধ্যে অনেক মসীহীদের বাড়িতে উজ্জ্বল ভাবে ঝলমল করছিল বড়দিনের গাছ, আর ঐ আলো ও সৌন্দর্যের মাধ্যমে তাকে শান্তি দত্ত হয়েছিল। তা তার জন্য একটা চিহ্নস্বরূপ হয়েছিল যে, একটা মসীহী পরিবারে জীবন কেমন সুন্দর হতে পারে। বড়দিনের গান এবং মসীহীদের মনোভাবের আন্তরিকতার ঔজ্জ্বল্যের সে শান্তির পরশ অনুভব করেছিল।
তার অনুভূতির প্রকাশের জন্য আমার স্ত্রী ও এক মেয়ে পরিবাররূপে মসীহী হওয়ার আগ্রহ সম্বন্ধে আমার কাছে বলতে এসেছিল। এ সুযোগের জন্যই তো আমি অপেক্ষা করছিলাম।
পরের দিন ছিল বড়দিন এবং আমি দ্বিতীয়বার ইমাম জে, সেপুলীট-এর সঙ্গে দেখা করে বললাম যে, আমি এবং আমার পরিবার বাপ্তিষ্ম নিতে ও ঈসা মসীহকে গ্রহণ করতে চাই। আমার অনুরোধ তক্ষুনি মঞ্জুর করা হল এবং আমরা, অর্থাৎ, আমি, আমার স্ত্রী এবং আমাদের সাত সন্তান-সন্ততি ২৬ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন, গেরেজা বেথেল জামাতে (জি পি আই বি) ইমাম জে, সেপুলীট-এর দ্বারা বাপ্তিষ্ম গ্রহণ করলাম। এক সপ্তাহ্ পরে আমাদের ছেলে আমাদের অনুসরণ করল। সেও প্রায় গোপনে মসীহী জামাতে যোগ দিত, কারণ সে ভীত ছিল যে, আমি সত্য জেনে যাব। আমিও জামাতে যাচ্ছিলাম গোপনে, এই ভযে যে আমার স্ত্রী ও ছেলে মেয়েরা সে সম্বন্ধে জেনে ফেলবে। তাই, আমার বস্তুতঃ লুকোচুরি খেলছিলাম। আল্লাহ্র প্রশংসা হোক যে, পরিণতিতে আমার পরিবারের সব সদস্য ঈসার অনুসারী হয়েছে এবং তাঁকে হৃদয়ে রাজত্ব করতে দিয়েছে।
বহু আশির্বাদ
১৯৬৯ সনের ২৬ শে ডিসেম্বর আমি ও আমার পরিবার বাপ্তিষ্ম নেওয়ার পরে আমাদের গোটা পরিবার সুখ ও আনন্দময় সব পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা লাভ করেছিল। আমরা অনেক আশির্বাদ লাভ করেছিলাম যা আমাদের জীবন পরিবর্তিত করে দিয়েছিল।
রাসূল পৌল বলেন:
“ফলতঃ কেহ যদি মসীহে থাকে, তবে নূতন সৃষ্টি হইলো, পুরাতন বিষয় গুলি অতীত হইয়াছে, দেখ, সেগুলি নতুন হইয়া উঠিয়াছে”
ইঞ্জিল শরীফ, ২ করিন্থীয় ৫: ১৭
যখন কেউ ঈসাকে তার নাজাতদাতা বলে গ্রহণ করে, তখন খোদা তার জীবনে পরিবর্তন সাধন করেন। মসীহের সাদৃশ্য তার মধ্যে অঙ্কিত করা হবে। কিতাবুল মোকাদ্দস বলে যে, “আল্লাহ্ মানুষ সৃষ্টি করেছিলেন তাঁর সাদৃশ্যে”
তৌরাত শরীফ, পয়দায়েশ ১:২৬,২৭
এই নতুন প্রকৃতি থেকে উৎসারিত হয় এক নতুন আনন্দ ও মহব্বত এবং ভিন্নতর সব আকাঙ্খা। সে পূর্বে যা ভালবাসত এখন সে তা ঘৃণা করে, আর যা সে পূর্বে ঘৃণা করত এখন তা ভালবাসে। তার জীবন পরিবর্তিত হয়। এই পরিবর্তন দৃষ্টিগোচরে সুস্পষ্ট এবং চারিপাশের লোকেরা তা দেখতে পাবে। তার জীবন-যাপন পদ্ধতি পরিবর্তিত হবে এবং এসব, এমন কি, তার উচ্চারিত কথায়ও পরিবর্তন নিয়ে আসবে। কী আশ্চর্য !
এসব পরিবর্তনের অভিজ্ঞতা আমি লাভ করেছি এবং অনুভব করেছি পরিবার রূপে আমাদের জীবন। রাগী মেজাজ অন্তর্হিত হয়েছে এবং পরিবর্তিত হয়েছে মহব্বতের মেজাজে। আমাদের আত্মিক জীবনে আমরা অনুভব করেছি শান্তি ও আনন্দ। আমাদের আর কোন সন্দেহ ছিল না। আমাদের অন্তর ছিল নিশ্চিত ও আনন্দে পূর্ণ। এমন কি, আমাদের বৈষয়িক জীবনেও আমরা প্রচুরভাবে আশর্বিাদ লাভ করেছিলাম। এই অভিজ্ঞতা আল্লাহ্র প্রতিজ্ঞাসমূহের সত্যতার প্রমাণ বহন করে, যেগুলো তার অনুসারীদের মধ্যে ঈসা মসীহের দ্বারা পরিপূর্ণ হয়।
“কেহ যদি তৃষ্ণার্ত হয়, তবে আমার কাছে আসিয়া পান করুক। যে আমার উপর ঈমান আনে, কিতাবে যেমন, বলে তাহার অন্তর হইতে জিন্দা পানির নদী বইবে।”
ইঞ্জিল শরীফ, ইউহোন্না ৭:৩৭,৩৮
“আমি আসিয়াছি, যেন তাহারা জিন্দেগী লাভ করে ও অতিরিক্ত পায়।”
ইঞ্জিল শরীফ, ইউহোন্না ১০:১০
আমাদের গোটা পারিবারিক পরিবেশে পরিবর্তন সুস্পষ্ট ছিল এবং তা ঘটেছিল এত দ্রুত যে, আমরা নিন্দার (অপবাদের) পাত্র হয়ে পড়েছিলাম। আমাদের প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনেরা ভাবছিলেন যে, মসীহী হবার পুরস্কার হিসেবে আমরা মসীহী জামাত থেকে আর্থিক সহায়তা পেয়েছিলাম। লোকেরা এ কথা বলে আমাদের উপহাস করত: “যদি তুমি রাতারাতি ধনী হতে চাও তবে মিঃ আমব্রী-র মনোভাবের অনুসরণ কর, মসীহী হও, আর তাহলে লক্ষ লক্ষ টাকা তুমি মসীহী জামাত থেকে অনুদান পাবে।”
তারা সন্দেহ করছিলেন যে, মসীহী হবার জন্য ঘুষ হিসেবে মসীহী জামাতের দানের মাধ্যমে আমাদের জীবন আশীষযুক্ত হয়েছিল। না, আদৌ তা নয় ! মসীহকে গ্রহণ করার জন্য বাধ্য করার উদ্দেশ্যে কারও কাছ থেকে বা মসীহী জামাতের কাছ থেকে আমরা কখনও কোন আর্থিক সাহায্য পাই নি। আমরা কোন অর্থ বা সামগ্রী পাই নি, কোন চাকুরীর প্রতিশ্রুতিও নয়, এক পয়সাও নয়। বস্তুতঃপক্ষে সে সময়ে আমাদের আশীষযুক্ত জীবন ছিল একমাত্র খোদার বদান্যতার মাধ্যমে। এটি আল্লাহ্র একটি স্থায়ী প্রতিজ্ঞা যে, যেসব লোক বিশ্বাস করে তারা পর্যাপ্তরূপে আশীষযুক্ত হবে।
মসীহী রূপে আমাদের নিষ্ক্রিয় বছর গুলো
১৯৭০-৭২ সন পর্যন্ত আমি ছিলাম একজন নিষ্ক্রিয় মসীহী। আমি আমার ব্যবসায়িক তদারকীতে এবং পরিবার-পরিজনদের আর্থিক ব্যায় নির্বাহে ব্যস্ত থাকতাম। আমি কেবলমাত্র রবিবারে জামাতের এবাদতে উপস্থিত হতাম এবং অবসর সময়ে কিতাবুল মোকাদ্দস পড়তাম। এমন মনোভাবের জন্য আল্লাহ্ আমাকে দোষী সাব্যস্ত করেছেন। আমি স্পষ্ট অনুভব করছিলাম যে, সেই সময়ে আল্লাহ্ আমাকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন: “যদি তুমি একজন মসীহী হতে চাও, তবে এমন নিষ্ক্রিয় মনোভাব যথেষ্ট নয়। তোমার জীবন যেসব আশীর্বাদে খোদা পূর্ণ করেছেন তা ভোগ করে তোমার জন্য অলস ভাবে বসে থাকা উপযুক্ত নয়। মসীহরে একজন প্রকৃষ্ট উম্মত হিসেবে তুমি অবশ্যই উঠে দাড়াবে এবং যেমন, তিনি মথি ২৮: ১৯-২০ পদে আদেশ করেছেন, সেই মত মসীহের সুখবর বলে সুস্পষ্ট সাক্ষ্য দিবে।”
কিভাবে আমি খোলাখুলি সাক্ষ্য দিতে এবং সহজভাবে সুখবর বলতে আরম্ভ করতে পারতাম। প্রকৃত পক্ষে, আমি তেমন করতে ইচ্ছুক ছিলাম, তবুও আমি জানতাম না কিভাবে তা আরম্ভ করতে হয়। এ কারণে, খোদা আবারও পথ খুলে দিয়েছিলেন এবং এভাবে তিনি তা করেছিলেন
একদিন আমার ঘনিষ্টতম বন্ধু বান্জার্মাসিন থেকে আমাদের সঙ্গে রাত কাটানোর জন্য এসেছিল। প্রকৃত বন্ধুর কথার পূর্ণ অর্থে সে আমার বন্ধু ছিল, কারণ সুদিন বা দুর্দিনে সে আমার সঙ্গে দাড়িয়েছিল। ওলন্দাজ সৈনিকেরা যখনই গ্রেফতার করত, তখন আমরা সব সময়ই জেলখানায় বা কয়েদ-শিবিরে একে অন্যের সঙ্গে দেখা করতাম।
সে যথারীতি আমাদের অভিনন্দন জানিয়েছিল, কারণ আমরা মসীহী হয়েছি এমন কোন চিহ্ন আমাদের ঘরে ছিল না। যখন সে বলল,“আস্-সালাম-ওয়ালাইকুম,” আমি প্রতি উত্তরে বলেছিলাম ,“ওয়ালাইকুম আস্সালাম।” আমার বন্ধুটি প্রতিবেশীদের কাছ থেকে শুনেছিল যে, আমি মসীহী হয়ে গিয়েছি। সে ঘোষণা করেছিল যে, তা সম্ভব হতে পারে না এবং এ সম্বন্ধে সে প্রতিবেশীদের প্রায় নিশ্চিত করে ফেলেছিল। সে তাদের বলেছিল:
“শুধু জাকার্তাতেই নয়, কিন্তু বান্জার্মাসিন-এও আমি আমার বন্ধু হামরান আমব্রী-কে ভালভাবে চিনেছি। সে একজন সাধারন মুসলমান বিশ্বাসী নয়- তার ঈমানে সে বিবেকী। এ প্রদেশে সে একজন সংগ্রামরত মুসলমান যোদ্ধা (সৈনিক) বলে পরিচিত; এমন কি, সে একজন মসীহী বিরোধী, অন্যতম মুহাম্মদিয়া নেতা, একজন মুসলমান সাংবাদিক এবং ইসলাম প্রচারক রূপে মধ্যপূর্ব কালিমান্টান-এ সুপরিচিত। অধিকন্তু, ১৯৪৭ সনে আমুনটাই-তে সমগ্র ইসলামিক কংগ্রেসে হামরান আমব্রী ছিলেন অন্যতম উদ্যোক্তা। ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় সেনাবাহিনীতে বান্জার্মাসিন-এর সেনাবহিনীর জন্য তাকে মুসলমান প্রচারক-প্রধান হিসেবে নিয়োগ করা হয়েছিল। সুতরাং আমি স্থির-নিশ্চিত যে, হামরান আমব্রী মসীহীয়াতের পক্ষে মুসলমান ধর্ম পরিবর্তন করতে পারে না।”
কিন্তু আমার প্রতিবেশীরা তাকে নিশ্চিত করেছিলেন যে, কয়েক বছর যাবৎ আমার গ্রামের লোকেরা আমাকে নিয়মিত মসীহী জামাতে যেতে এবং বড়দিনের সময়ে বড়দিনের গাছ স্থাপন করতে দেখে আসছে। তারা তাকে বলেছিলেন, আরও ব্যাখ্যার জন্য যেন সে আমাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করে।
এ কারণে, এবার আমার বাড়িতে বেড়াতে আসা মাত্রই সে আমাকে সরাসরি জিজ্ঞেস করল যে, আমি মসীহী হয়েছি সে খবর সত্য কি না। কোন সন্দেহ বিনা আমি প্রশ্নটির উত্তর দিয়েছিলাম, “হ্যাঁ, তা নির্ভুল। আমি ও আমার গোটা পরিবার বাপ্তিষ্ম গ্রহণ করেছি।”
আমার উত্তর শুনে সে কেঁদে ফেলেছিল। সে অত্যন্ত দুঃখিত হয়েছিল, কারণ তার কাছে গভীর পরিতাপের বিষয় এমন কিছু ঘটেছিল। কিন্তু তার করার কিছুই ছিলনা, সে বিস্ময়াহত হয়ে শুধু কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকেছিল। বান্জার্মাসিন-এ ফিরে এসে সে অন্যদের, বিশেষতঃ আমার ঘনিষ্ট বন্ধুদের কাছে আমার মসীহীয়াতে ধর্মান্তরিত হওয়ার কথা জানিয়েছিল ।
এ ঘটনার খবর আমার অপর এক ঘনিষ্ট মুসলমান সাংবাদিক বন্ধু দ্বারা বান্জার্মাসিন থেকে প্রকাশিত ‘হরিয়ান উটামা’ পত্রিকাতে ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছিল। বড় হাতের অক্ষরে এইচ, আরশাদ মারান্ লিখেছিল:
আন্দোলনের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বের মসীহীয়াত গ্রহণ:
ত্রিশের দশকের মুহাম্মদিয়ার একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব, যিনি এক সময় ‘জিহাদ’-এর প্রধান সম্পাদক ছিলেন।
অন্যান্যদের মধ্যে জে, এ্যান্টেমাস লিখেছিলেন:
একজন মুহাম্মদীয় ব্যক্তিত্বের মসীহীয়াতে ধর্মান্তর:
অত্যন্ত বিস্ময়কর সংবাদ !
অপর একজন সাংবাদিক আর্থাম আর্থা আশা করেছিল:
“আমরা আশা করি এ খবর সত্য নয়; স্বাধীনতার অগ্রদূত (প্রবক্তা) হামরান আমব্রীর ঈমান সম্বন্ধে এখনও সন্দেহ আছে।”
বান্জার্মাসিন-এর মুসলমানরাও এ উত্তেজনা সৃষ্টিকারী সংবদের পক্ষপাত-দুষ্ট প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছিল: “সাম্প্রতীক অর্থনৈতিক সমস্যাদি কোন ব্যক্তিকে নিজ ধর্ম পরিবর্তনে প্রবৃত্ত করতে পারে।” এ মুসলমান ব্যক্তিটির নাম দেয়া হয়নি।
এমন কি, এ্যান্টাসারী-র মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় আই, এ আই, এন, থেকেও মসীহীয়াতে আমার ধর্মান্তরিত হওয়ার খবরে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছিল। ইতিমধ্যে পি এম ডাব্লিউ-র (মুহাম্মদীয়া-র), বান্জার্মাসিন-এর সম্পাদক আমি একজন বিশিষ্ট মুহাম্মদীয়া ব্যক্তিত্ব ছিলাম তা অস্বীকার করার প্রয়াস পেয়েছিলেন, কিন্তু তিনি আমাকে একজন মুসলমান যোদ্ধারূপে স্বীকার করেছিলেন।
আমার মসীহীয়াত গ্রহণের সব সংবাদই পূর্বোল্লিখিত পত্রিকাতে প্রকাশ করা হয়েছিল আমাকে লজ্জিত করার উদ্দেশ্যে এবং পরিণতিতে তারা আশা করেছিলেন যে, আমি ইসলাম ধর্মে ফিরে আসব। কিন্তু তাদের ইচ্ছা আল্লাহ্র ইচ্ছা থেকে ছিল ভিন্নতর। আল্লাহ্ তাদের এরূপ উপায়ে ব্যবহার করেছিলেন আমাকে সক্রিয় করে তোলার জন্য, যেন আমি একজন তৎপর মসীহী হয়ে উঠি এবং মসীহের খোদাত্বের সত্য সম্বন্ধে সাক্ষ্য দিই।
ঐ ভাবে প্রায় দু মাস কাল যাবৎ আমার মসীহীয়াত গ্রহণের বিষয়টি জন-সাধারনের আলোচনার বিষয়-বস্তু এবং বান্জার্মাসিন-এর ‘হরিয়ান উটামা’ পত্রিকার প্রধান শিরোনাম হয়ে দাড়িয়েছিল। আমি খবর পেয়েছিলাম যে রক্তপাত সংঘটিত হওয়ার উপক্রম হয়েছিল। আমার কিছু সংখ্যক বন্ধু যারা খবরটিকে নিছক অপবাদ বলে মনে করত তারা সংবাদ লেখককে আক্রমণ করতে প্রস্তুত হয়েছিল। সৌভাগ্যবশতঃ আমি শিঘ্রই ‘একটি খোলা চিঠি’- আমার স্বীকারোক্তির বিবৃতি বান্জার্মাসিন-এর ‘হরিয়ান উটামা’ পত্রিকার উদ্দেশ্যে লিখে পাঠিয়েছিলাম যা নিম্নরূপ প্রকাশিত হয়েছিল:
একটি খোলা চিঠি-
‘হরিয়ান উটামা’পত্রিকার পাঠকবর্গের উদ্দেশ্যে, আসসালামু ওয়ালাইকুম,
প্রিয় মহোদয়গণ,
এতদ্বারা আমি স্বীকার করছি, একথা সত্য যে আমি প্রোটেষ্ট্যান্ট মসীহীয়াতের সঙ্গে সংযুক্ত এবং ১৯৬৪ সন থেকে আমি ধর্মান্তরিত আছি।
আপনার সংবাদপত্রের খবরটি ছিল আলোড়ন সৃষ্টিকারী, কারণ তা আমাকে ইসলামের একজন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব বা মুক্তিযোদ্ধা রূপে বর্ণিত করেছে।
যদিও এ মূহুর্ত পর্যন্ত আমি কখনও নিজেকে ইসলামের বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব রূপে বোধ করিনি এবং কখনও মুক্তিযোদ্ধা বলে ঘোষণা দেই নি, তথাচ আমার বন্ধুরা আমার প্রতি যে প্রতিবেদনশীলতা ও সপ্রশংসা মূল্যায়ন প্রদর্শন করেছেন সেসবের জন্য আমি কৃতজ্ঞ। যেমন আমার বন্ধুরা লিখেছেন, আমি যদি অতীতে যুদ্ধে যোগ দিয়ে থাকি তবে তা মাতৃভূমির একজন সন্তান হিসেবে কর্তব্যের বেশী কিছু ছিল না। সেই কারণে, অভিজ্ঞ সৈনিক অথবা স্বাধীনতার উদ্যোক্তা হিসেবে কোন খেতাব না চাওয়া এটি আমার নীতি হয়ে দাড়িয়েছে। আমি কেবল মাত্র আমার কর্তব্যই সম্পাদন করেছি।
আমার বন্ধুরা, আপনাদের সকলের উদ্দেশ্যে ধন্যবাদ, বিশেষতঃ আরশাদ মারানের প্রতি (আমি তোমার চিঠি গ্রাহ্য করি নি) এবং জে, এ্যান্টেমাস্ এবং আর্থাম আর্থার প্রতি যারা প্রয়োজন অনুসারে লিখেছেন। আপনাদের লেখনীর মধ্যে অস্বীকার করার বা তার বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশীল হবার কিছু নেই; শুধু মাত্র সংশোধনের এই বিষয় আছে যে, আমি স্বাধীনতার উদ্যোক্তা (প্রবক্তা) খেতাব পাওয়ার অনুরোধ র্ফম আমি কখনও সই করি নি। আর্থাম আর্থার কাছে আমি ‘ঈমানের টীকা’ পাঠিয়েছি যা প্রোটেষ্টান্ট মসীহীয়াতের সঙ্গে আমার সংযুক্ত থাকার ভিত্তি হয়ে উঠেছে।
যা-ই ঘটুক না কেন, বন্ধুরা বন্ধুই থাকে এবং উত্তম বন্ধুত্ব ছিন্ন হতে পারে না।
আজ এ পর্যন্তই এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে ধন্যবাদ।
জাকার্তা, ৬ই মে, ১৯৭২ আপনাদের বিশ্বস্ত,
হাম্রান আম্ব্রী
আমার সক্রিয় সাক্ষ্যদানকারী মসীহী জীবনের সূচনা
উপরোক্ত ‘খোলা চিঠি’ প্রকাশিত হবার পরে বানজার্মাসিন এবং হুলু সুনগাই-স্থিত আমার বন্ধুদের কাছ থেকে কোরানের আয়াতের সতর্কবাণী ও উপদেশ সহযোগে দুঃখের সুরবাহী অনেক চিঠি এসেছিল। এমন কিছু চিঠিও ছিল যাতে কি সব ঘটনা আমাকে মসীহের প্রতি (মসীহীয়াতে) ধর্মান্তরিত হওয়ার দিকে চালিত করেছিল তা জানতে চাওয়া হয়েছিল।
এগুলো ছিল আমার জন্য উঠে দাঁড়িয়ে স্পষ্টভাবে আমার সাক্ষ্য দেওয়ার প্রারম্ভিক কারণ। শুরুতে আমি টাইপরাইটারে ব্যক্তিগতভাবে প্রত্যেক চিঠির উত্তর দিতাম। এসব চিঠি ঈমানের টাকা-র ব্যাখ্যা রূপে উন্নীত হয়েছিল ষ্টেন্সিলে।
আরও উন্নীত ও বর্ণিত হলে পর আমাকে ‘আল্লাহ’ ঈসা ও পাক-রূহ শীর্ষে একটি প্রবন্ধ হস্ত-চালিত ছাপাখানায় প্রকাশ করা হয়েছিল। পরবর্তী প্রকাশনা ‘মসীহ্-তত্ব ও আল্লাহ্র একত্বের মতবাদ’ শেষ হয়েছিল ১৯৭৩ সনে। পরিণতিতে প্রশ্ন ও সহানুভূতির আকারে আরও চিঠি পেতে থাকলাম; তাছাড়া সত্যের অন্বেষায় আলোচনার আকারেও কিছু চিঠি আসত।
অধিকন্তু, জাভাতে প্রকাশিত কয়েকটি ইসলামী সাময়িকী আমার ঈমানের ওপরে আক্রমন শানছিল। ঐসব নিবন্ধের কারণে আরও অধিক হারে চিঠি আমার কাছে আসছিল। যেসব চিঠি আমি পেতাম তা আসত ইন্দোনেশিয়ার সব অংশ থেকে- বান্জার্মাসিন, পশ্চিম জাভার মুসলমান এলাকা, মধ্য জাভা ও পূর্ব জাভা, সুমাত্রা (পালেমব্যাঙ্গ, মেডান, পাডাং, আকেহ্) ইত্যাদির সব এলাকা থেকে। কিছু সংখ্যক এসেছিল বিদেশ (মিসর ও মালয়েশিয়া) থেকে। এ ছিল আল্লাহ্র পথ-নির্দেশনা, যেজন্য আমাকে দাঁড়াতে এবং স্বাভাবিকভাবে আমার সাক্ষ্য দিতে হয়েছিল।
ওসব যোগাযোগের কয়েকটি ছ’মাসেরও অধিককাল পর্যন্ত টিকে ছিল। মসীহীয়াত সম্বন্ধে বিধি সমস্যা নিয়ে আলোচনা হত। কিছু সংখ্যক প্রশ্ন ও উত্তর আমি পুস্তক রূপে সংকলন করেছি এবং সত্যের ব্যবহারিক দলিল রূপে প্রকাশ করেছি:
- এইচ, এম, ইউসুফ শোয়েব সাহেবের সঙ্গে পত্র-যেগাযোগ, যিনি একজন মুসলমান সাংবাদিক (জাকার্তার কিবলাত সাময়িকীর সম্পাদকের সহকারী)।
- সামুদি সাহেবের সঙ্গে পত্র-যোগাযোগ (যিনি ছিলেন সালাটিগা-য় ইসলাম ধর্মের শিক্ষক)।
- ইমাম মূসা প্রয়োসিসওয়াইও-র সঙ্গে পত্রালাপ, (যিনি ছিলেন জাকার্তার ষ্টুডি ইসলাম সাময়িকীর সম্পাদক)।
- ওয়াহ্ইওনো হাদী সাহেবের সঙ্গে পত্রালাপ (দারূল কুতুবিল ইসলামিয়া, জাকার্তা)।
- আলী ইয়াকুব মাটন্ডাং-এর সঙ্গে পত্র-যোগাযোগ (একজন মুসলমান ছাত্র, কায়রো, মিশর)।
- এ, হাসান তৌ-এর সঙ্গে পত্র-যোগাযোগ (যিনি ছিলেন স্পীকার, আহম্মদীয়া আসলামী জামাত, ডেন্পাসার, বালী)।
- আসিফ ফাহ্মী ও অন্যান্যদের সঙ্গে পত্রালাপ (একদল মুসলমান ছাত্র, সুরাবাইয়া)।
- এম, এ, ফ্যাড্লী-র সঙ্গে পত্র-যোগাযোগ (যিনি ছিলেন মসজিদ আগুং, কেন্দ্রীয় মসজিদ, কিমহি, বান্ডুং-এর প্রধান)।
১৯৭৯ সন পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ার সব অংশের মুসলমান পটভূমির ভাইদের হাজার হাজার চিঠির উত্তর দিয়েছে। প্রতিদিন আগত চিঠিগুলো আমাকে উৎসাহিত করত। ওগুলো একথা নির্দেশ করত যে, পত্র-লেখকেরা সত্যের অনুসন্ধান করছিল, এবং আমার ব্যাখ্যা দেওয়ার পরে, তারা পরিতৃপ্তি অনুভব করত। আল্লাহ্র প্রশংসা হোক! এমন কি, অনেকে ছিল যারা ব্যক্তিগতভাবে আমার সঙ্গে সাক্ষাতও করেছিল।
যেহেতু আমি দেখলাম যে, কত অধিক মনযোগ আমার ধর্মান্তরিত হওয়ার এবং সত্য অন্বেষার প্রতি দেওয়া হচ্ছিল, সেই হেতু আমি মসীহী ঈমান ও সত্য সম্বন্ধে দর্শনার্থীদের পরামর্শ দেওয়ার জন্য মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনিবারে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বিশেষ সময়ের বন্দোবস্ত করেছিলাম।
এ সবের জন্য আল্লাহ্র শুক্রিয়া হোক। কিতাবুল মোকাদ্দাসের সত্য এবং ঈসা মসীহের খোদাত্ব ব্যাখ্যা করার মাধ্যম হিসেবে তিনি আমাকে ব্যবহার করেছেন, বিশেষতঃ আমার মুসলমান ভাইদের কাছে, যেন তারা মসীহএক সঠিকভাবে অনুধাবন করতে সক্ষম হয়।
এসব প্রশ্নের ও প্রত্যাখ্যানের উত্তর দেওয়া থেকে আমি অনুভব করেছিলাম যে, কিতাবুল মোকাদ্দাস ও মসীহের খোদাত্ব সম্পর্কিত সাম্প্রাতিক ভুল বুঝাবুঝি ও ব্যাখ্যাদি সত্য স্পষ্টভাবে দেখিয়ে দিয়ে সত্বর সংশোধন করা উচিত।
বাইরে খেদমতের শুরু
১৯৭৩ সন থেকে ১৯৭৮-র ফেব্রুয়ারী মাস পর্যন্ত কেবলমাত্র আমার ডেস্ক্ থেকে মসীহীয়াত সম্পর্কে প্রশ্ন উত্থাপন কারী পত্র সমূহের উত্তর দিয়ে সাক্ষ্য বহন করেছিলাম। সত্যের দলিল রূপে আমি ওসব উত্তর প্রকাশও করেছিলাম।
কিন্তু ১৯৭৮-র ফেব্রুয়ারীতে আমি মোনাজাত করেছিলাম: “হে আল্লাহ্ ! দয়া করে এই আন্দোলনের একটি নতুন ক্ষেত্র দাও, কারণ আমার পত্র-যোগাযোগের ক্ষেত্র প্রায় পরিত্যক্ত হয়েছে।” এরূপে মোনাজাত করে আমি সরাসরি আমার অন্তরে একটি উত্তর পেলাম যে, পরবর্তী দিনে আমার ঘরের বাইরে যাওয়া উচিৎ এবং সেখান থেকে আমি আমার নতুন ক্ষেত্র খুঁজে পাব।
পরদিন খুব ভোরে, কোন্ পথে যাব তা না জেনেও আমি আমার ঘর থেকে বের হলাম। যখন আমি প্রধান সড়কে পৌছলাম, তখন আমি খোদাকে অনুরোধ করলাম, যেন যেখানে আমার যাওয়া উচিৎ সেই পথে তিনি আমার কদম পরিচালিত করেন। আমার অন্তর আমাকে বলল- আমার উত্তর দিকে যাওয়া উচিৎ। যেহেতু আমি আমার গন্তব্যস্থল নির্দিষ্টভাবে জানতাম না, সেই হেতু আমি কোন যান বা বাস না নিয়ে পায়ে হেঁটে চললাম। ইন্দোনেশিয়ার কিতাবুল মোকাদ্দস ইন্ষ্টিটিউটের সামনে যখন আমি পৌছলাম, তখন মাবুদ আমাকে ঐ অফিসে ঢুকতে বললেন। আমি সন্দিগ্ধ ছিলাম, কারণ আমি কাউকেই ভালমত চিনতাম না। এক সময় সেখানে ছিলেন হযরত বি প্রবোউইনটো, তাকে সালাটিগা-তে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল। এ কারণে, যদি আমি অফিসে ঢুকি কার কাছে আমি কথা বলব, আর কি বলা আমার সমীচীন হবে? কিন্তু আমার অন্তর আমাকে এগিয়ে যাওয়ার প্রবর্তনা দেওয়া হেতু আমি অফিসে ঢুকলাম।
অন্যতম বন্ধু আমাকে ভেতরে ঢুকতে দেখে চিনতে পেরে তক্ষুনি আমাকে সম্বোধন করে বললেন, “মিঃ আম্ব্রী! খোদার প্রশংসা হোক, কি আশ্চর্য পথ-নির্দেশনা ! জনৈক ব্যক্তি আপনার সঙ্গে দেখা করতে চান।” শীঘ্রই আমরা আলাপ করতে সক্ষম হলাম। পরে আমি হযরত এম, কে, জাক্রাটমাড্জার সঙ্গে দেখা করেছিলাম যিনি আমার সম্বন্ধে শুনেছিলেন এবং আমার সঙ্গে দেখাও করতে চেয়েছিলেন। এ আলাপ থেকে আমি আশীর্বাদ পেয়েছিলাম। তারা আমার কিছু বই কিনতে চেয়েছিলেন।
আমি বিস্মত হৃদয়ে ভাবছিলাম, এটিই আমার নতুন ক্ষেত্র কি না, কিন্তু আমি মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম যে না, এটি নয়। আমি বাড়িতে ফিরতে চাইলাম, কিন্তু আমার অন্তর আরও উত্তরে আমার হাঁটা চালিয়ে যেতে প্রবর্তনা দিচ্ছিল। আমি হেঁটে চললাম, যতক্ষণ না ক্রামাট ৫-এর সম্মুখে উপস্থিত হলাম। আমার অন্তর আমাকে ভেতরে গিয়ে ডঃ আইস্ এম, ও, পোরমেস্-এর সঙ্গে দেখা করতে বলছিল। আমি অবাক হয়ে ভাবছিলাম যে, কিভাবে হযরত পোরমেস্-এর সঙ্গে আমার কথা বলা সম্ভব, কারণ আমি তার সঙ্গে ভালমত পরিচিত ছিলাম না এবং আমরা তার সংস্থার অন্তর্ভক্তও ছিলাম না। একে অপরের সঙ্গে আমাদের দেখা হয়েছিল, কিন্তু সে তো তিন বছর আগে। কিন্তু যেহেতু পাক-রূহ্ আমার কাছে কথা বলছিলেন, আমি ক্রামাট ৫-এর দিকে ফিরলাম। সেই ঘরে ঢোকার আগে আমি সন্ধিগ্ধ ছিলাম। পূর্বে এ ঘরটি আল্লাহ্র খাদেমদের দ্বারা পরিপূর্ণ ছিল, কিন্তু তখন যেন নীরব ঠেকছিল। সম্ভবতঃ হযরত পোরমেস্ চলে গেছেন, তাই। যাহোক, হযরত পোরমেস্ আমাকে দেখতে পেয়েছিলেন, কারণ তিনি সামনের দরজাতে আমাকে অভ্যর্থনা জানাতে চলে এসেছিলেন এবং বলেছিলেন: “এই যে মিঃ আম্ব্রী ! বাস্তবিকই গতকাল থেকে আপনার কথাই ভেবেছি এবং আপনার সঙ্গে দেখা করতে চেয়েছি, কারণ একটা বিষয় আমি আপনার সঙ্গে আলাপ করতে চই। আমি আপনাকে আশা করছি-সম্ভবতঃ আমরা একসঙ্গে কাজ করতে পারি।” আমি বিস্ময়ে কতকটা হতবাক হয়ে গেলাম। হযরত পোরমেস্ কি করে আমাকে মনে রাখলেন? আমরা কখনই খুব সুপরিচিত হয়ে উঠিনি। কিন্তু আগের দিনের প্রার্থনা আমার স্মরণ হল। সম্ভবতঃ পাক-রূহ এখানেই নতুন ক্ষেত্রে প্রবেশ করতে পরিচালিত করেছেন।
এ আলোচনায় অনেক কিছুই ছিল যা আমার হৃদয় ও অনুভূতিকে সঞ্জীবিত করেছিল। হযরত আইস পোরমেস্ আশা করছিলেন, আমি আল্লাহ্র খেদমতে তার সঙ্গে কাজ করব। আরও, তিনি আমার স্বাস্থের তত্ত্বাবধান করেছিলেন যা তখন ভাল যাচ্ছিল না।
পরিশেষে, হযরত পোরমেস্ আমাকে তার একটি চিঠি সোলোর ষ্ট্রীট-৪-এ বুমাই আসিহ্-র ডিরেক্টর এম, কে, সিনাগা-র কাছে নিয়ে যেতে বললেন। আমি চিঠিটা নিয়ে ব্যক্তিগত ভাবে হস্তান্তর করেছিলাম। কে, এম, সিনাগার ঘর থেকে আমাকে অনুরোধ করা হয়েছিল, যেন শুক্রবার সকালে আমি হোটেল ইন্দোনেশিয়াতে যাই, কারণ, তিনি যেমন জানিয়েছিলেন, কয়েকজন প্রচারক আমার সঙ্গে পরিচিত হতে চাচ্ছিলেন।
১৯৭৮ সনের ২ শে ফেব্রুয়ারী, শুক্রবার সকালে আমি হোটেল ইন্দোনেশিয়াতে গেলাম জাকার্তার মসীহী ব্যবসায়ীদের আয়োজিত একটা মোনাজাত সম্মেলনে যা “সি,বি,এম,সি” নামে পরিচিত।
ভূমিকা থেকে মনে হল, কিছু সংখ্যক লোক আমার নাম জানতেন এবং আমার সঙ্গে সেদিন ব্যক্তিগত ভাবে দেখা করতে ইচ্ছুক ছিলেন। সেই সময় থেকে আমি অনেক গৃহ-সম্মেলনে খেদমত করতে আনন্ত্রিত হয়েছি যা ক্রমশঃ জামাতে এবাদতের সহযোগীতার ক্ষেত্রে উন্নিত হয়েছিল। জাকার্তা ও বান্ডুং-এর চারিদিকস্থ অনেক জামাতে আমাকে সাক্ষ্য দিতে হত। এ সময়ের মধ্যে আমি জাকার্তার বাইরেও খেদমত করেছিলাম। দক্ষিন কালিমান্টান (বান্জার্মাসিন, আমুন্টাই) মধ্য কালিমান্টান (প্যালাংকারায়ো), পূর্ব জাভা (সুরাবাইয়া এবং মালাং), বান্ডুং অন্যান্য স্থানে।
এ ছিল আমার নতুন কর্মক্ষেত্র। এতে আমি বিশ্বস্তভাবে সমস্ত সম্মেলন ও এবাদতখানার মাধ্যমে মসীহের সুখবর জানিয়ে আমার খেদমত অব্যাহত রাখব। যদিও এখন আমি আমার বাড়ির বাইরে খেদমতের নতুন ক্ষেত্র লাভ করেছি, তবু আমার পত্র-যোগাযোগ থেমে যায় নি, এমন কি, তা বরং শতগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে। আল্লাহ্র প্রশংসা হোক ! এই চিঠি গুলো আমার জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ, কারণ আমি সানন্দে বহু সত্যান্বেষীর খেদমত করতে পারছি।
মাবুদ আমার খেদমতের ক্ষেত্র প্রচুররূপে বাড়িয়ে তুলেছিলেন
১৯৭৯ সনের ১৩ ই মে লিখিত আমন্ত্রণ মারফত জাকার্তার বাটংহারি ষ্ট্রীটস্থ দারূস্ সালাম মসজিদে ‘লেম্বাগা পেংগাজিয়ান ইসলাম আল-ফুরকান’-এ যোগদানকারী একদল মুসলিম যুবকের সামনে বক্তৃতা দিতে অনুরুদ্ধ হয়েছিলাম। আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল ‘ঈসা মসীহের খোদাত্ব’। প্রধান তর্ক-বাগীশেরা ছিলেন ডঃ আবুনিয়ামিন রোহাম এবং ডঃ সানি আর্দি। ইসলামের শিক্ষক ও শিক্ষার্থী সম্বলিত উপস্থিত লোকের সংখ্যা ছিল কমবেশ ১০০ জন। আমি একাই উত্তর দিতে এসেছিলাম। চূড়ান্ত প্রভাব ছিল উত্তম। সভা বন্ধুভাবাপন্ন ছিল এবং শেষ হয়েছিল করমর্দনের মধ্য দিয়ে।
১৯৭৯ সনের ২২ শে জুলাই আবার প্রশ্নোত্তরে বক্তৃতা চলেছিল আমার এবং মসজিদ উলেমা-র (মুসলিম ধর্মতাত্ত্বিক কাউন্সিল-এর) কয়েকজন ইসলামী নেতার সঙ্গে। আলোচনার বিষয় বস্তু ছিল ‘সর্বশক্তিমান আল্লাহ্- ত্রিত্বে এক’। দশ ব্যক্তি তার্কিকরূপে তালিকাভুক্ত হয়েছিলেন। এদের মধ্যে ছিলেন অধ্যা. ডঃ এইচ, এম, রশীদি, ডঃ বুনাইয়ামিন রোহান, ডঃ টাগোর, ও ডঃ আসমুনি। বিতর্কের নিয়ন্ত্রক ছিলেন ডঃ র্মামানসিয়াহ্ রহমান। মুসলমান নেতা, শিক্ষক ও বুদ্ধিমান লোকবৃন্দ সম্বলিত উপস্থিত শ্রোতার সংখ্যা ছিল কমবেশ ১৫০ জন।
১৫ ই আগষ্টের পরে দু’মাসের মধ্যে আমি জাকার্তার বাইরে বেশ কয়েক জায়গায় পরিভ্রমনে গিয়েছিলাম পশ্চিম ও পূর্ব জাভাতে। ১লা সেপ্টেম্বর মেনাডো, উজুং প্যান্ডাং, তানাহ্ তোরাজা, পালাপো, বালিক্পাপান, বান্জার্মাসিন এবং কাপুয়াস-এ ‘ইঞ্জিল মিশন’ অভিযান পরিচালনা করেছিলাম।
উপসংহার
প্রত্যেক মানুষেরই জন্য নাজাত সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য। এই নাজাত অর্থাৎ মুক্তি তার নিজের জন্য, মুক্তি তার পরিবারের জন্য, মুক্তি তার বিষয়-সম্পত্তির এবং অন্যান্য সব রকমের মুক্তি। এসব উদ্দেশ্য তার জীবনে সুখের জন্য শীর্ষ স্থানীয় লক্ষ্য বস্তু হয়ে থাকে।
একজন ধর্মপ্রাণ লোকের জন্য নাজাত বা মুক্তি কেবলমাত্র জাগতিক জীবনেই সীমাবদ্ধ নয়, কিন্তু এর মধ্যে পাপের প্রভাব থেকে স্বাধীনতায় তার আত্মর মুক্তিও অন্তর্ভুক্ত। তার আত্মিক (রূহানিক) নাজাত বা মুক্তি মহব্বতের সঙ্গে ঘনিষ্টভাবে সম্পর্কযুক্ত যা বেহেশ্তী জীবনের ভিত্তি।
ধরা যাক, আদম ও হাওয়া পাপে পতিত হয় নি, তবে তো মানুষ এখনও চিরন্তন জীবন যাপন করত। কিন্তু, আদম ও হাওয়া যারা আল্লাহ্র নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করেছিল তাদের সেই মৌলিক পাপের কারণে মানবজাতি আদম ও হাওয়ার সঙ্গে অনন্ত জীবন বহির্ভূত হয়েছে এবং এমন জীবনে পতিত হয়েছে যা ক্ষয় পায় এবং আত্মিক ও দৈহিক মৃত্যুর অভিজ্ঞতার অধীন। আদম ও হাওয়ার পাপের কারণে আত্মিক ও দৈহিক মৃত্যু সমেত ক্ষয়শীল এই জীবনে আমরা উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়েছি। আমি ও আপনি সহ দুনিয়ার সব মানুষ এর অন্তর্ভূক্ত।
কিন্তু দয়াময় ও করুনাময় আল্লাহ্ আমাদেরকে তাঁর কাছ থেকে বিচ্ছন্ন ও মৃত থাকতে দিবেন না। সূচনাতে আদম হাওয়ার সৃষ্টির সময়ে তাদের যে জীবন ছিল তার চাইতেও বহুগুনে শ্রেষ্টতর অনন্ত জীবন আমাদের দিতে খোদা প্রতিজ্ঞা করেছেন।
প্রথম পদক্ষেপ: বহুকাল পূর্বে খোদা তাঁর নবীদের মাধ্যমে আদেশ করেছেন যে, আমাদের অনুতপ্ত হওয়া, তাঁর কাছে ফিরে আসা, তাঁর বাধ্য হওয়া এবং মূসা ও নবীদের কিতাবসমূহের শরীয়ত (আজ্ঞাসমূহ) অনুসরণ করা উচিৎ (ইব্রানী ১:১)।
দ্বিতীয় পদক্ষেপ: আল্লাহ্ তাঁর কালাম ঈসা মসীহে মানব-রূপ পরিগ্রহ করিয়েছিলেন, যিনি ‘জিন্দেগীর কালাম ’ এবং ‘পিতার একমাত্র পুত্র ’ (ইব্রানী ১:১; ইউহোন্না ১:১, ১৪; ১ ইউহোন্না ১:১)।
তৃতীয় পদক্ষেপ: আসমানী পথ-নির্দেশনা প্রদান করতে ও এবং দুনিয়ার অগণিত লোককে সাহায্য করতে আল্লাহ্-পাক পাক-রূহ, আল্লাহ্ নিজ রূহ দ্বারা মানুষদের পরিচালিত করেন, যেন তারাও কিতাবুল মোকাদ্দসে লিখিত আল্লাহ্র কালামের বাধ্য হতে পারে। এ কারণে, যারা আসমানী বিধিসমূহ এবং খোদার আশ্চর্য প্রতিজ্ঞাসমূহ গ্রহণ করে তাদের সকলেরই জন্য আল্লাহ্ অনন্ত জীবন মঞ্জুর করেন ।
এ কথা গুলো অনুধাবন করতে হবে:
“কারণ আল্লাহ্ দুনিয়াকে এমন মহব্বত করিলেন যে, নিজের একজাত পুত্রকে দান করিলেন, যেন কেহ তাঁহার উপর ঈমান আনে, সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জিন্দেগী লাভ করে।”
ইউহোন্না ৩:১৬
“যে ঈমান আনে ও তরীকাবন্দী হয়, সে নাজাত পাইবে, কিন্তু যে অবিশ্বাস করে, তাহার দন্ডাজ্ঞা করা যাইবে”
মার্ক ১৬:১৬
ঈসা বলেন:
“আমি আসিয়াছি, যেন তাহারা জীবন পায়, আর সেই জীবন যেন পরিপূর্ণ হয় ”
ইঞ্জিল শরীফ, ইউহোন্না ১০:১০
“দেখ, আমিই কেয়ামত পর্যন্ত প্রতিদিন তোমাদের সঙ্গে সঙ্গে আছি”
ইঞ্জিল শরীফ, মথি ২৮:২০
ফেরেশতাগণ ঈসার সাহাবীদের বলেছিলেন:
“হে গালীলীয় লোকেরা তোমরা আসমানের দিকে দৃষ্টি করিয়া দাঁড়াইয়া রহিয়াছ কেন? এই যে ঈসা তোমাদের নিকট হইতে আসমানে নীত হইলেন, তাঁহাকে যেরূপে আসমানে গমন করিতে দেখিলে, সেইরূপে উনি আগমন করিবেন।”
ইঞ্জিল শরীফ, প্রেরিত ১:১১
এ ক্ষেত্রে ঈসা স্বয়ং বলেছিলেন:
“আর সেই সময়ে তাহারা ইবনে আদমকে কুদরত ও মহা প্রতাপ সহকারে মেঘযোগে আসিতে দেখিবে”
ইঞ্জিল শরীফ, লূক ২১: ২৭
ঈসা মসীহের দ্বিতীয় আগমন সম্বন্ধে শুধু মাত্র কিতাবুল মোকাদ্দসই বলা হয়নি, কিন্তু এর সত্য মুসলমানরা সমর্থন ও বিশ্বাস করে, যেমন আমরা এ বইয়ের ৩৩ পৃষ্ঠাতে হাদীসে উক্ত মুহাম্মদের উক্তি পাঠ করি। সেখানে বিচারক রূপে ঈসার দ্বিতীয় আগমনের কথা আমরা লিখিত দেখতে পাই।
আল্লাহ্র সন্তান-সন্ততিদের (বান্দাদের) জন্য চারটি প্রতিজ্ঞার গ্যারান্টি (নিশ্চয়তা) দেওয়া হয়েছে:
- বেহেশতে অনন্তজীবন এবং এমন এক জীবন যা আদি সৃষ্টিতে আদম ও হাওয়ার জীবনের চাইতেও গৌরবময়। অনন্ত জীবনের অধিকার এবং আসমানী নাজাত লাভের উদ্দেশ্যে লোকদের ঈসা মসীহের উপর ঈমান আনতে, তাঁর বিশ্বস্ত সাহাবী হতে এবং বাপ্তিষ্ম নিতে (তরীকাবন্দী হতে) হবে।
- । বেহেশ্ত থেকে আশীর্বাদের আকারে আত্মিকভাবে দৈহিক ভাবে এবং বৈষয়িকভাবে পরিপূর্ণতা। মসীহের অনুসারীদের কোন কিছুরই অভাব থাকবে না, কিন্তু তাঁর পূর্ণতা থেকে সব সময়ই প্রাচুর্যের অভিজ্ঞতা লাভ করবে।
- যারা মসীহ্ কে স্বীকার করে এবং বিশ্বস্ত অনুসারী হয়, সে যেখানেই থাকুক, তাদের প্রত্যেকজনের মধ্যে আল্লাহ্র রূহ বা পাক-রূহ্ কেয়ামত পর্যন্ত বসবাস করবেন।
প্রিয় পাঠকবৃন্দ, এসব কারণে আমি এ পরামর্শ দেয়ার সুযোগ চেয়ে নিচ্ছি:
এক্ষুনি আপনারা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন ! প্রতিজ্ঞাত এ প্রস্তুত নাজাত গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিন। আপনার হৃদয়ে রাজত্ব করতে ঈসা মসীহকে গ্রহণ করুন, যেন আপনি আপনার নূতন জীবনে মসীহে নিরাপদ ও শান্তিপূর্ণ থাকতে পারেন। তাহলে আমরা একসঙ্গে আল্লাহ্র সঙ্গে অনন্তকাল বসবাস করতে পারব।
এই সুযোগ অবহেলা করবেন না। আগামী দিন পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন না। যা করা উচিৎ আজই করুন। আগামী দিন বড় বেশী দেরী হয়ে যেতে পারে। অনুতাপের দরজা বন্ধ হয়ে যেতে পারে, আর তাহলে আপনি অনন্ত মনোদুঃখে জীবন যাপন করবেন এবং শাস্তি ভোগ করবেন। অনন্তকালের জন্য আসমানী নাজাতের দরজা দিয়ে প্রবেশের উদ্দশ্যে অকপট হৃদয়ে এগিয়ে আসুন এবং ঈসা মসীহকে আপনার প্রভু এবং ব্যক্তিগত নাজাতদাতা রূপে গ্রহণ করুন।
অভীক্ষা
(আল্লাহ্ আমার জন্য অনন্ত জীবনের ব্যবস্থা করেছেন)
প্রিয় পাঠক,
আপনি যদি এই আলোড়ন সৃষ্টিকারী জীবন-চরিত সযত্নে পাঠ করে থাকেন, তাহলে আপনি নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর দিতে সমর্থ হবেন। যদি আপনি ২৪-টি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারেন, তাহলে খোদা সম্বন্ধে আরও জানতে এবং যারা তাঁর বাধ্য হয় তাদের জীবনে খোদা কি সব উপায় কাজ করেন তা আবিষ্কার করতে আপনাকে আরও উৎসাহিত করার জন্য আমরা আপনাকে পুরস্কার হিসেবে আমাদের একটি বই পাঠিয়ে দিব।
- কোরানের মূল বা প্রধান আয়াতটি লিখুন যেটি প্রতীয়মান করে যে, কোরানে উক্ত তৌরাত ও ইঞ্জিল এবং বর্তমান কিতাবুল মোকাদ্দসের তৌরাত ও ইঞ্জিল অভিন্ন।
- কোরানের আর কোন্ চারটি অংশও নির্দেশ করে যে, তৌরাত ও ইঞ্জিল আল্লাহ্র ইচ্ছানুরূপ সত্যস্বরূপ?
- মূসা ও মসীহের মধ্যে অনন্য ও অসাধারণ সাদৃশ্য গুলো কি কি?
- কি কি বিশেষ চিহ্ন প্রতীয়মান করে যে, দ্বিতীয় বিবরণ ১৮ অধ্যায়ে উল্লিখিত ভবিষ্যদ্বানী ঈসা মসীহকে মানবরূপী ‘আল্লাহ্র কালাম’ বলে নির্দেশ করে?
- হাম্রান আম্ব্রী কিতাবুল মোকদ্দসকে আল্লাহ্র সত্য-কালাম রূপে প্রত্যক্ষ করার পরও মসীহকে গ্রহণ করতে তখনও প্রস্তুত ছিলেন না। কেন?
- সুসমাচার (ইঞ্জিল) প্রচারক ও ঘোষকদের উত্তর ও ব্যাখ্যা সমূহ কেন তিনি গ্রহণ করতে পারেন নি?
- তার যে তিনটি প্রধান প্রতিবন্ধক ছিল সেসব হাম্রান আম্ব্রী কিভাবে জয় করেছিলেন?
- কি উপায়ে আল্লাহ্ হাম্রান আম্ব্রীকে এসব প্রতিবন্ধক অতিক্রম করতে সাহায্য করেছিল?
- ঈসাকে ‘প্রভু’ (খোদাবন্দ) বলা হয় কেন?
- হাম্রান আম্ব্রী যখন মসীহী হয়েছিলেন, তখন আল্লাহ্র একত্ব সম্পর্কিত ঈমান কেন পরিবর্তন করা আবশ্যক হয় নি?
- কিভাবে মসীহীয়াতের শিক্ষা আল্লাহ্র একত্বের মতবাদকে বিশোধিত করে?
- বহু-ঈশ্বরবাদ বলতে কি বুঝায়?
- কেন মসীহীদের বহু-ঈশ্বরবাদী বলা যায় না?
- আল্লাহ্ সম্পর্কিত ত্রিত্ববাদ কেন মুসলমানদের জন্য অন্তরায়স্বরূপ?
- পবিত্র ত্রিত্বের ঐক্য মসীহী দৃষ্টিকোন থেকে বুঝিয়ে দিন।
- কিভাবে আমরা নির্দেশ করতে পারি যে, ঈসা মসীহ্ সত্যি সত্যিই সলীবে বিদ্ধ হয়েছিলেন?
- কিভাবে আমরা জানতে পারি যে, ঈসা মৃতদের মধ্য থেকে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন?
- কি কি বিভিন্ন প্রকারের মৃত্যু থেকে আমরা উত্থিত হতে পারি?
- ঈসার সলীবের অর্থের সংক্ষিপ্তসার লিখুন।
- ইশাইয়া ৫৩:৪-১২ পাঁচবার লিখুন এবং মুখস্ত করুন।
- যেসব লোক তলোয়ার ধারন করে তাদের প্রতি কি ঘটবে?
- কোরান কি ঈসার বেহেশতে আরোহনের বিরোধীতা করে?
- দুনিয়াতে আবার ফিরে এলে পর ঈসা কি করবেন?
- কিতাবুল মোকাদ্দস মিথ্যায়িত হয়েছে একথা প্রতীয়মান করার জন্য কিভাবে কোরানের কয়েকটি আয়াত অপব্যবহার করা হয়ে থাকে?
- কোরানে কি এমন একটি আয়াতও আছে যা দ্ব্যার্থহীনভাবে একথা ব্যক্ত করে যে, মূল সত্য থেকে কিতাবুল মোকাদ্দস মিথ্যায়িত বা পরিবর্তিত হয়েছে?
- আমরা যদি ঈসাকে অনুসরণ করি, তাহলে আমাদের কি প্রকারের দুঃখভোগের সম্মুখিন হতে হবে?
- তাদের জীবন ঈসার হাতে তুলে দেবার পরে মিঃ হাম্রান আম্ব্রী ও তার পরিবারের জীবনে কি কি পরিবর্তন সাধিত (সংঘটিত) হয়েছিল?
- আল্লাহ্র সন্তান-সন্ততিদের জন্য কোন চারটি প্রতিজ্ঞার গ্যারান্টি (নিশ্চয়তা) দেওয়া হয়েছে?
- ইউহোন্না ৩: ১৬ এবং আমল (প্রেরিত) ৪:১২ উভয় পদ পাঁচবার করে লিখুন এবং ও দুটি মুখস্ত করুন।
- আপনি কি জীবন্ত মসীহকে গ্রহণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন?
সমাপ্ত