Category Archives: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর

কে তরিকাবন্দি নিতে পারেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

যে ব্যক্তি উপরিউক্ত পাঁচটি প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ দিতে পারে, সে ব্যক্তিই তরিকাবন্দি নেবার উপযুক্ত?

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

উদ্ধারপ্রাপ্ত যে কোন ব্যক্তিই তরিকাবন্দি নিতে পারে। অর্থাৎ হজরত ঈসার উপর ঈমান এনে নাজাত পেয়েছে এমন ব্যক্তিই তরিকাবন্দি নেবার জন্য উপযুক্ত। কোন অঈমানদারকে তরিকাবন্দি দেবার মধ্যে কোন বিশেষত্ব নেই। একজন অঈমানদারকে তরিকাবন্দি দেওয়া আর কোন কৃত্রিম দেহে কাপড় পড়ানো সমান কথা; যেমন কাপড়ের দোকানগুলোতে দেখা যায়। অনেকে ভুল করে এই ভেবে তরিকাবন্দি নেয় যে, এর মাধ্যমেই নাজাত পাওয়া যায়। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। কারণ যে নাজাত পায়নি তার নাজাত পাবার বিষয়টি দেখাবার বা স্বীকার করার কোন প্রশ্নই আসে না। যে মুখে স্বীকার করে সে নাজাত পেয়েছে কিন্তু তার জীবনের মধ্যে যদি কোন লক্ষণ দেখা না যায়, তবে তরিকাবন্দি নেবার বিষয়টি প্রশ্নসাপেক্ষ হয়। তরিকাবন্দি নিয়ে যদি সেই ব্যক্তির সামাজিক কোন সমস্যা দেখা দেয়, তবে তরিকাবন্দি পরেও নেওয়া যায়। কোন নির্দিষ্ট সময়ে যে তরিকাবন্দি নিতে হবে এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

তরিকাবন্দি হবার বিশেষ কোন নিয়ম আছে কি?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

হ্যাঁ সাধারণ নিয়ম আছে, তবে ব্যতিক্রমও আছে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

সাধারণত পানিতে ডুবিয়ে তরিকাবন্দি দেওয়া হয়। যে ব্যক্তিকে তরিকাবন্দি দেওয়া হয়, তাকে আগে ঈসায়ী ঈমান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে হয়। তরিকাবন্দির সময় সাধারণত যে প্রশ্নগুলো করা হয়, তা হলো: ১) আপনি কি পবিত্র আল্লাহর অস্তিত্বে বিশ্বাস করেন, এবং বিশ্বাস করেন যে তিনি নিষ্পাপ এবং ধার্মিক? ২) আপনি কি বুঝতে পেরেছেন যে, আপনি একজন গুনাহগার এবং আল্লাহর সাথে আপনার সম্পর্ক নেই? ৩) আপনি কি জানেন যে, আপনি কোনভাবেই নিজের ধার্মিকতায় গুনাহ থেকে উদ্ধার পেতে পারেন না? ৪) আপনি কি বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহ আপনাকে উদ্ধার করার জন্য হজরত ঈসাকে পাঠিয়েছেন, যিনি তাঁর নিষ্পাপ জীবন দিয়ে আপনার গুনাহর কাফ্ফারা দিয়েছেন? ৫) আপনি কি তাঁকে মুখে প্রভু এবং মসীহ বলে স্বীকার করেন এবং হৃদয়ে বিশ্বাস করেন যে, আল্লাহ তাঁকে মৃত্যু থেকে জীবিত করে তুলেছেন? উপরিউক্ত পাঁচটি প্রশ্নের উত্তরে যে ব্যক্তি সত্য সত্যই হ্যাঁ বলতে পারে, তাকেই তরিকাবন্দি দেওয়া হয়। সাধারণত যিনি তরিকাবন্দি দেন তিনি কিতাব থেকে তরিকাবন্দিবিষয়ক অংশগুলো পাঠ করেন, তরিকাবন্দির উদ্দেশ্যমূলক শিক্ষাগুলো ব্যাখ্যা করেন এবং তরিকাবন্দি নিতে আগ্রহী ব্যক্তিকে উপরিউক্ত প্রশ্নগুলো করেন, হ্যাঁ’সূচক উত্তর পেলে, তার মাথায় হাত রেখে পিতা পুত্র ও পাকরুহের নামে পানিতে ডুবিয়ে তরিকাবন্দি দেন। পানি থেকে ওঠার পর আবারো নতুন জীবন যাপন অর্থাৎ আল্লাহর পথে জীবন কাটানোর পরামর্শ দেন ও মুনাজাত করেন। উল্লেখ্য যে, কেউ তরিকাবন্দি নিতে ইচ্ছুক হলে, তাকে এ বিষয়ে কিতাবত থেকে শিক্ষা দেওয়া প্রয়োজন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

তরিকাবন্দি তো বাহ্যিক অনুষ্ঠান, এর আবার গুরুত্ব কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

এই অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে আমরা আমাদের ঈমানকে প্রকাশ করি।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

ঈসায়ী জীবনে তরিকাবন্দির গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা যে হজরত ঈসা মসীহের উপর ঈমান এনেছি, তা এই তরিকাবন্দি অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে দেখানো যায় বা প্রকাশ করা যায়। ইঞ্জিল শরিফ বলে, “এই কথা কি জানো না যে, আমরা যারা মসীহ ঈসার মধ্যে তরিকান্দি নিয়েছি, আমরা তাঁর মৃত্যুর মধ্যে অংশ গ্রহণ করেই তা নিয়েছি? আর সেই জন্য সেই তরিকারন্দির দ্বারা মসীহের সঙ্গে মরে আমাদের দাফন করা হয়েছে, যেন পিতা তাঁর মহাকুদরতি দ্বারা যেমন মসীহকে মৃত্যু থেকে জীবিত করেছিলেন, তেমনি আমরাও যেন নতুন জীবনের পথে চলতে পারি” (ইঞ্জিল শরিফ, রোমীয় ৫:৩,৪)। হজরত ঈসা মৃত্যু বরণ করেছিলেন, কবরে ছিলেন এবং তৃতীয় দিন কবর থেকে পুনরুত্থিত হয়েছিলেন। তরিকাবন্দির মাধ্যমে হজরত ঈসার সাথে নিজের একাত্মতার কথা আমরা ঘোষণা করি। হজরত পৌল বলেন, “আমাকে মসীহের সঙ্গে ক্রুশের উপরে হত্যা করা হয়েছে। তাই আমি আর জীবিত নই, মসীহই আমার মধ্যে জীবিত আছেন। এখন এই শরীরে আমি যে জীবন কাটাচ্ছি তা ইব্নুল্লাহর উপর ঈমানের মধ্যদিয়েই কাটাচ্ছি। তিনি আমাকের মহব্বত করে আমার জন্য নিজেকে দান করেছিলেন” (গালাতীয় ২:২০) এই চরম সত্যটি কেবল তরিকাবন্দির মধ্য দিয়ে প্রকাশ করা যায়।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীদের প্রধান প্রধান ধর্মীয় অনুষ্ঠান এবং উৎসবগুলো কী কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ঈসায়ীদের কিতাব স্বীকৃত ধর্মীয় অনুষ্ঠান দুটি, একটি তরিকাবন্দি এবং দ্বিতীয়টি প্রভুর মেজবানি।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

আরও কয়েকটি অনুষ্ঠান আছে যা ধর্মীয় অনুষ্ঠান না বলে সামাজিক উৎসব বলা যায়। সামাজিক উৎসব তিনটি। প্রথমটি বড়দিন বা হজরত ঈসা মসীহের জন্মদিন; দ্বিতীয়টি পুণ্য শুক্রবার বা হজরত ঈসার মৃত্যু দিন এবং তৃতীয়টি পুনরুত্থান দিন অর্থাৎ হজরত ঈসার কবর থেকে জীবিত হয়ে ওঠার দিন। এছাড়াও ঈসায়ীদের মধ্যে আরো কিছু অনুষ্ঠান পালন করা হয়, যেমন- ধন্যবাদ সভা, পারিবারিক মুনাজাত সভা, সাপ্তাহিক এবাদত সভা, আলোকিত স্কুল, শিশু উৎসর্গ, মৃত্যু পরবর্তী অনুষ্ঠান বা স্মৃতিসভা ইত্যাদি।

কিতাব স্বীকৃত ধর্মীয় অনুষ্ঠানের ১ম ধর্মীয় অনুষ্ঠান: তরিকাবন্দি। হজরত ঈসা কর্তৃক নির্ধারিত দুটি অনুষ্ঠানের প্রথমটি তরিকাবন্দি অনুষ্ঠান। এই অনুষ্ঠানের সাথে ঈসায়ীদের ঈমানের একটা গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এই অনুষ্ঠান পালনের জন্য হজরত ঈসা সরাসরি নির্দেশ দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “…তোমরা গিয়ে সমস্ত জাতির লোকদের আমার উম্মত কর। পিতা, পুত্র ও পাকরুহের নামে তাদের তরিকাবন্দি দাও” (ইঞ্জিল শরিফ, ১ম সুরা মথি ২৮:১৯)। আমরা হজরত ঈসা মসীহের সাহাবিগণের জীবন ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখতে পাই, তাঁরা এই আদেশ পালন করেছিলেন। অর্থাৎ তারা তরিকাবন্দি দিয়েছিলেন এবং তরিকাবন্দি দিতে শিক্ষাও দিয়েছিলেন। যার ফলে, সাধারণ মানুষ জানতো যে, ঈসা মসীহকে বিশ্বাস করলে তরিকাবন্দি নিতে হয়। একবার ফিলিপ নামের একজন ঈমানদার ইথিওপিয়ার এক রাজকর্মচারীর কাছে ঈসা মসীহের সুখবর প্রচার করেছিলেন। এই রাজকর্মচারী পরজাতি ছিলেন। ফিলিপের কথা বলা শেষ হলে, সেই রাজকর্মচারী বলেছিলেন, “এই দেখুন, এখানে পানি আছে; আমার তরিকাবন্দি নেবার বাধা কি আছে” (ইঞ্জিল শরিফ, প্রেরিত ৮:৩৭)? এ থেকে বুঝা যায় ঈসায়ী ঈমানদার হবার পর তরিকাবন্দি নেওয়া একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীরা কি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, ঈসায়ীদের জন্য পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ার বিধান নেই।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

হজরত ঈসাকে ভোরে, সন্ধ্যায় ও মাঝে মাঝে সারারাত মুনাজাত (এবাদত বা নামাজ) করতে দেখতে পাই। কিন্তু তিনি কখনও বলেননি কতবার মুনাজাত করতে হবে। বারের প্রশ্ন যখন আসে তখন নিয়মের প্রশ্ন এসে দাঁড়ায়। আর নিয়ম আসলেই নিয়ম ভাঙার কথা এবং নিয়মের দাস হওয়ার বা নিয়মতান্ত্রিকতার কথা আসে। মানুষ নিয়ম মানতে পারেনি বলেই মসীহ এসেছিলেন নিয়মের শৃঙ্খল থেকে মুক্তি দিতে। আসলে নামাজ বা এবাদত নিয়মের বিষয় নয়। হজরত দাউদ একবার বলেছিলেন, তিনি দিনে সাতবার মুনাজাত করেন। কিন্তু তিনি শত্রুর তাড়ায় যখন বনে জঙ্গলে ঘুরে বেড়াতেন, তখন নৈমিত্তিক এবাদত করতে পারতেন না। আসলেই কি পারতেন না? অবশ্যই পারতেন ও করতেন। তিনি তখন হয়তো নিয়ম হিসাবে এবাদত করতেন না। অবশ্যই পথ চলতে চলতে, হাঁটতে হাঁটতে, বসতে বসতে আল্লাহর এবাদত করতেন। আল্লাহর এবাদত হাঁটতে হাঁটতে, চলতে চলতে, কাজ করতে করতেও করা যায়। ঈসায়ী ঈমানদারদের জন্য আল্লাহর পক্ষে যে কোন কাজ করাই এবাদত। অতএব, ঈসায়ী এবাদত গণনার বিষয় নয়। তবে ঈসায়ীরা সাধারণত সকালে ও সন্ধ্যায় ব্যক্তিগত ও পারিবারিক এবাদত করে এবং সপ্তায় একবার সম্মিলিত এবাদত করে।

কীভাবে বলা যায় যে নাজাতের নিশ্চয়তা আছে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

আল্লাহর কালামে বহুবার নাজাতের নিশ্চয়তার কথা বলা হয়েছে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

মানুষের নাজাতের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য হজরত ঈসা এসেছিলেন। যে কাজ করার জন্য তিনি এসেছিলেন তা তিনি সম্পন্ন করতে পেরেছিলেন। সেই কাজ হলো, মানুষের জন্য কোরবানি হওয়া। এই কোরবানি ছিল মানুষের পরিবর্তে কাফফারা। আল্লাহর কালামে লেখা আছে, “আল্লাহ যে আমাদের মহব্বত করেন তার প্রমাণ এই যে, আমরা গুনাহগার থাকতেই মসীহ আমাদের জন্য প্রাণ দিলেন” (রোমীয় ৫:৮)। হজরত ঈসা নিজেই বলেছেন, “আমি আপনাদের সত্যই বলছি, যে কেউ আমার উপর ঈমান আনে সে তখনই অনন্ত জীবন পায়” (ইউহোন্না ৬:৪৭)।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীরা খাবার আগে মুনাজাত করে কেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

আল্লাহকে শুকরিয়া জানাবার জন্য ঈসায়ীরা খাবার আগে মুনাজাত করে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

খাবার আগে মুনাজাত করতেই হবে কিংবা না করলে তার ধর্মকর্ম সব মিথ্যা হয়ে যাবে এমন কোন কথা নেই। যেহেতু আমরা আল্লাহর সৃষ্টি এবং তিনিই আমাদের জন্য খাবারসহ প্রয়োজনীয় সবকিছুর ব্যবস্থা করেন, সেহেতু আমাদের তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞ হওয়া উচিত। এটি কোন ধরাবাঁধা মন্ত্র নয়। শুধু আল্লাহ যে দয়া করে, উপযুক্ত সময়ে খাবার যোগান দিয়েছেন, তার জন্য ধন্যবাদ দেওয়া কিংবা কৃতজ্ঞতা জানানো।

খাবার আগে মুনাজাত করতে হবে কিনা সুনির্দিষ্ট কোন নিয়ম না থাকলেও আমরা দেখতে পাই, হজরত ঈসা খাবার আগে, খাবার নিয়ে আল্লাহকে শুকরিয়া জানিয়েছিলেন (ইঞ্জিল শরিফ, লুক ৯:১৬)। এছাড়া হজরত ঈসাকে একবার তাঁর সাহাবিরা মুনাজাত শেখাতে বললে, তিনি যে মুনাজাত শিখিয়েছিলেন (মথি ৬ অধ্যায়) তাতেও খাবারের জন্য আল্লাহর কাছে ফরিয়াদ জানাবার বিষয় দেখা যায়।

ঈসায়ীরা কেন বাংলা ভাষায় এবাদত করে, কেন আরবিতে নয়?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

আল্লাহ সব দেশের মানুষের মাতৃভাষা বোঝেন।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

আল্লাহর কাছে কোন একটি বিশেষ ভাষার বিশেষ কোন মূল্য নেই। তাঁর কাছে সব ভাষাই সমান। কিতাবের ইতিহাস থেকে জানা যায়, আল্লাহ নিজেই বিভিন্ন ভাষার সৃষ্টি করেছেন যেন মানুষ কৃষ্টি-সংস্কৃতি-ভাষা নিয়ে অহংকার করতে না পারে। হজরত ঈসার মাতৃভাষা ছিল অরামিক। তিনি হিব্রু এবং গ্রিক ভাষাও জানতেন এবং ব্যবহার করতেন। তাঁর সাহাবিরা গ্রিকেই কিতাব লিখেছিলেন। এই কারণে ইঞ্জিল শরিফের ভাষা হলো গ্রিক ভাষা।

ইহুদি জাতির ভাষা ছিলো হিব্রু বা ইবরানী এবং এই ভাষাতেই তাওরাত, জবুরসহ আগের প্রায় সব কিতাব লেখা হয়। হজরত ঈসা যে কিতাব ব্যবহার করতেন তা হিব্রু ভাষাতেই লেখা। তিনি এবাদতখানায় সেই ভাষায় কিতাব পড়ে লোকদের কাছে অরামিক ও গ্রিক ভাষায় বুঝিয়ে দিতেন। অতএব, ঈসায়ীদের কাছে হিব্রু এবং গ্রিক খুবই মূল্যবান। কেননা এই দু’টো ভাষাতেই কিতাবুল মোকাদ্দস নাজেল হয়। মূল্যবান এই অর্থে যে, প্রকৃত সত্য জানতে হলে মূল ভাষা জানা থাকলে কিতাব বুঝতে সুবিধা হয়। কিন্তু সেই ভাষাতেই এবাদত করতে হবে তার কোন মানে নেই এবং এব্যাপারে আল্লাহও কোন নির্দেশ দেননি। আল্লাহর কাছে ভাষা বড় বিষয় নয়, বড় বিষয় হলো মানুষের অন্তর। আরব দেশের লোকদের জন্য আরবি ভাষায় এবাদত করা প্রয়োজন, বাঙালির বাংলাভাষাতেই এবাদত করা উচিত, এই ভাষাতেই সে মনের কথা খুলে বলতে পারে। অতএব, বাঙালি ঈসায়ীদের জন্য বাংলা ভাষায় এবাদত করাই সমীচীন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীরা কি এবাদতের সময় মদ খায়?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

প্রকৃত অর্থে ঈসায়ীরা এবাদতের সময় মদ খায় না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

ঈসায়ীরা এবাদতের সময় মদ খায় না। কারণ মদেমত্ত মানুষ আল্লাহর এবাদত করতে পারে না। মদাসক্ত লোক বা মাতাল কখন কী বলে বা করে তা সে নিজেই জানে না। অতএব, কোন মাতালের পক্ষে এবাদত করা সম্ভব নয়। প্রকৃত ঈসায়ীর কাছে আল্লাহর এবাদত একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। ঈসায়ী জীবন মানেই এবাদতপূর্ণ জীবন। এবাদতের মধ্যদিয়েই একজন ঈসা আল্লাহর সাথে কথা বলেন এবং আল্লাহ যা বলেন তা শোনেন। ঈসায়ী এবাদতের বৈশিষ্ট্য হলো রুহানি গান, প্রশংসা, কিতাব পাঠ ও মুনাজাত ইত্যাদির মাধ্যমে আল্লাহর এবাদত করা। গান, প্রশংসা ও মুনাজাতের মধ্যদিয়ে আল্লাহর সাথে কথা বলা হয়। আর কিতাব পাঠের মধ্য দিয়ে আল্লাহ কী বলছেন তা শোনা হয়। এবাদতের উপায় একএক দেশে সেই দেশের ভাষা-কৃষ্টি-সংস্কৃতির উপর নির্ভর করে। প্রত্যেক ব্যক্তি তার নিজনিজ ভাষায় এবং নিজ নিজ উপায়ে এবাদত করতে পারে।

মদ খাওয়ার প্রশ্নটি কেন আসে? একটি বিশেষ অনুষ্ঠানের কারণেই হয়তো এই প্রশ্নটি এসেছে। অনুষ্ঠানটির নাম প্রভুর ভোজ বা মেজবানি। প্রভুর ভোজ হলো হজরত ঈসার স্থাপিত দুটি অনুষ্ঠানের মধ্যে একটি। এই অনুষ্ঠানটি মূলত হজরত ঈসার নির্দেশে, তাঁর মৃত্যুর ঘটনাকে স্মরণ করার জন্য পালন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রয়োজন হয় রুটি এবং রস। রুটির বেলায় যে কোন সাধারণ রুটি বা চাপাতি কিংবা বিশেষভাবে তৈরি রুটি ব্যবহার করা হয়। আর রসের বেলায় যেকোন স্কোয়াশ বা শরবত ব্যবহার করা হয়। রুটি ব্যবহার করা হয় হজরত ঈসার দেহের প্রতীক হিসাবে। তিনি মানব জাতির মুক্তির জন্য তাঁর দেহকে কোরবানি করেছিলেন। আর স্কোয়াশ বা শরবতকেও রক্তের প্রতীক হিসেবে একই উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। কারণ তিনি তাঁর রক্তের মূল্য দিয়ে আমাদের কিনে নিয়েছেন। এখন সেই স্কোয়াশ বা রস খাওয়ার সময় যদি কেউ দেখে, তখন সে ভাবতে পারে যে, ঈসায়ীরা এবাদতে বসে মদ খাচ্ছে। আসলে তা মদ নয়, এ হলো সাধারণ পানীয় বা স্কোয়াশ। কোন কোন শীতপ্রধান দেশে এই রসের পরিবর্তে আঙুর রসও ব্যবহার করতে পারে। তবে তা অবশ্যই মাতাল হবার জন্য নয়, অনুষ্ঠান পালনের জন্য।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীরা কি প্রতিমা পূজা সমর্থন করে? তারা এবাদতখানায় মূর্তি রাখে কেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ঈসায়ীরা প্রতিমাপূজা করে না এবং সমর্থনও করে না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর: ঈসায়ীদের জন্য প্রতিমাপূজা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ একটি কাজ। প্রতিমা পূজা তো দূরের কথা, প্রতিমা বানানো কিংবা প্রতিমার সামনে উৎসর্গীকৃত কোন খাবারও খাওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। পাককিতাবে লেখা আছে, “…মূর্তির কাছে কোরবানি করা খাবার খাওয়ার বিষয়ে বলছি, আমরা জানি, দুনিয়াতে মূর্তি আসলে কিছুই নয় আর আল্লাহও মাত্র একজন ছাড়া আর নেই। … মূর্তি পূজার অভ্যাস ছিল বলে মূর্তির কাছে উৎসর্গ করা খাবার এখনও পর্যন্ত কেউ কেউ সেই হিসাবেই খেয়ে থাকে, তাদের বিবেক দুর্বল বলে নাপাক হয়” (১করিন্থীয় ৮:১-১৩)।

পাককিতাবে স্পষ্ট লেখা আছে, প্রতিমাপূজা করো না। কেউ যদি প্রতিমা পূজা করে, সে স্পষ্টতই আল্লাহর আদেশ অমান্য করে। ইঞ্জিল শরিফের কোথাও প্রতিমাপূজা সংক্রান্ত কোন নির্দেশনা নেই, বরং তার বিরুদ্ধেই কিতাবের বাণী সোচ্চার হয়ে আছে। আর একটি কথা বলা ভালো যে, কাঠ, বাঁশ কিংবা মাটি দিয়েই যে প্রতিমা বানানো যায় তা-ই যে কেবল প্রতিমা তা নয়, আল্লাহর কালাম অনুসারে সবরকমের অবাধ্যতাই প্রতিমা পূজার সমান। এছাড়া যেকোন লোভ, মাদকাসক্তি যা আল্লাহর চেয়েও বেশি আকর্ষণীয় বলে মনে হয় এবং মানুষ যখন তার জন্য লালায়িত হয় তখনই প্রতিমাপূজা হয়। যদিও হওয়া উচিত নয়, তথাপি এই অবাধ্যতার প্রতিমা পূজা থেকে মাঝেমাঝে ঈসায়ীরাও মুক্ত নয়।

এবাদাতখানায় হজরত ঈসার কিংবা বিবি মরিয়মের বা অন্যকোন মহাপুরুষের মূর্তি রাখা প্রসঙ্গে। প্রকৃত ঈসায়ীরা কখনও কোন মূর্তি তাদের এবাদতখানায় রাখে না। তবে ঈসায়ীদের মধ্যে দুএকটি দল আছে, যারা স্বাকার উপাসনায় বিশ্বাসী, তারা হজরত ঈসার কাল্পনিক ছবি বা মূর্তি এবাদতখানায় ও ঘরে সাজিয়ে রাখে; কেউ কেউ ব্যবসার স্থানেও রাখে। এগুলো কুসংস্কার এবং ভ্রান্ত ধারণামাত্র। পাককিতাবে এগুলোর মোটেই স্থান নেই। আল্লাহর কালামে লেখা আছে, “পূজার উদ্দেশ্যে তোমরা কোন মূর্তি তৈরি করবে না, তা আকাশের কোন কিছুর মতো হোক বা মাটির উপরকর কোনকিছুর মতো হোক কিংবা পানির মধ্যেকার কোনকিছুর মতো হোক। তোমরা তাদের পূজাও করবে না, তাদের সেবাও করবে না। কারণ কেবলমাত্র আমি আল্লাহই তোমাদের মাবুদ। আমার পাওনা এবাদত আমি চাই” (তাওরাত শরিফ, হিজরত ২০:৪,৫ আয়াত)।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০