সংক্ষিপ্ত উত্তর:
ঈসায়ীদের প্রধান সামাজিক উৎসব তিনটি। যথা বড়দিন, পুণ্য শুক্রবার এবং পুনরুত্থান দিবস।
ব্যাখ্যমূলক উত্তর
বড়দিন: হজরত ঈসার জন্মদিনকেই বড়দিন বলা হয়। তাত্ত্বিক দিক থেকে বিবেচনা করলে, এই দিনকে ছোট দিন বলতে হয়, কারণ হজরত ঈসার জন্মদিন পালন করা হয় ২৫ ডিসেম্বর। ডিসেম্বর মাস ঋতুচক্রের হিসাবে শীতকাল। শীতকালে সাধারণত রাত বড় ও দিন ছোট হয়। এইদিক থেকে বলতে গেলে, হজরত ঈসার জন্মদিনকে ছোট দিন বলা যায়। আসলে গুণ ও মানের দিক বিবেচনা করেই এই দিনকে বড় দিন বলা হয়। একটি নির্দিষ্ট দিনে হজরত ঈসার জন্মদিন হলেও এর পরিকল্পনা ছিল সৃষ্টির আগে থেকে। আল্লাহ মানুষের উদ্ধারের পরিকল্পনা করেছিলেন সৃষ্টির আগে। উদ্ধারের কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন, হজরত ঈসা, যার নামের মানেই হলো উদ্ধারকর্তা। তাঁর যে জন্ম হবে তা বিভিন্ন নবিদের দিয়ে আল্লাহ জানিয়েছিলেন; জানিয়েছিলেন স্থান, কাল, পাত্র নির্বিশেষে। ফলে তিনি যেমন মানব ইতিহাসের কেন্দ্রবিন্দু তেমনি তাঁর জন্মের সময়কালও হয়েছে সময় গণনার কেন্দ্রবিন্দু। যার কারণে আমরা হজরত ঈসার জন্মদিনকে কেন্দ্র করেই খ্রিস্টপূর্ব এবং খ্রিস্টাব্দ বলে থাকি।
পুণ্য শুক্রবার: পুণ্য শুক্রবার হলো হজরত ঈসার মৃত্যু বা ওফাত দিবস। এই শুক্রবারকে একদিক থেকে ইতিহাসের সবচেয়ে কালোদিন বলা যায়। কারণ এই দিনে পাপী মানুষেরা একজন নিষ্পাপ মানুষকে ক্রুশে দিয়ে হত্যা করেছিলেন। যার বিচার করতে গিয়ে, বিচারক কোন দোষ খুঁজে না পেলেও জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য তাঁকে হত্যার আদেশ দিয়েছিলেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, যাদের উদ্ধার করতে তিনি দুনিয়াতে এসেছিলেন সেই গুনাহগার মানুষেরাই তাঁকে হত্যা করেছিল। কিন্তু এই দিনকে কালো শুক্রবার না বলে পুণ্যশুক্রবার বলার কারণ হলো, এই মৃত্যুর দ্বারা মানুষের নাজাত বা উদ্ধার এসেছে। হজরত ঈসা মানুষের চক্রান্তের স্বীকার হয়ে, মৃত্যু বরণ করলেও আল্লাহর ইচ্ছাতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে এবং একদিক থেকে আল্লাহর পরিকল্পনাই বাস্তবায়িত হয়েছে। হজরত ঈসার জন্মের বিষয়ে যেমন আগের কিতাবে ভবিষ্যতবাণী করা হয়েছিল, তেমনি তাঁর মৃত্যু সম্পর্কেও ভবিষ্যতবাণী করা হয়েছিল। আল্লাহ ঠিক করেছিলেন যেন মানুষের উদ্ধারের জন্য কাফফারাস্বরূপ হজরত ঈসার মৃত্যু হয়। উক্ত দিনে তা-ই ঘটেছিল। হজরত ঈসা আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী মানুষের গুনাহর বোঝা তুলে নিতে, স্বেচ্ছায় মৃত্যু বরণ করেছিলেন। সুতরাং এই দিন পুণ্যদিন, এই বার পুণ্য শুক্রবার।
পুনরুত্থান দিবস: পুনরুত্থান দিবস হলো হজরত ঈসার মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে ওঠার দিন। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় ছিল হজরত ঈসার পুনরুত্থান। মানুষ মরে যায়, মাটির সাথে বিলীন হয়ে যায়। রাজা, মহারাজা, সম্রাট, নবি-পয়গাম্বর সবারই মাটির দেহ মাটিতে মিশে গিয়ে, একাকার হয়ে গিয়েছে। ব্যতিক্রম কেবল ঈসা মসীহ। তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন কিন্তু মৃত্যুকে জয় করে, আবার কবর থেকে উঠেছেন। পাককিতাব বলে, এই পুনরুত্থান হলো মানবজাতির পুনরুত্থানের প্রথম ফল। তিনি পুনরুত্থিত না হলে, কোন মানুষেরই পুনরুত্থান সম্ভব হতো না। তিনি পুনরুত্থিত হয়েছেন বলেই বর্তমানে আল্লাহর কাছে আছেন এবং আবার ফিরে আসবেন। ঈসায়ীদের বিশ্বাসের মূলশক্তি হলো পুনরুত্থান এবং ঈমানের ভিত্তি হলো হজরত ঈসা মসীহের মৃত্যু, কবর ও পুনরুত্থান।
উপরিউক্ত তিনটি উৎসব ছাড়াও ঈসায়ীদের মধ্যে আরো কিছু অনুষ্ঠান পালন করা হয়। যেমন- ধন্যবাদ সভা, পারিবারিক মুনাজাত সভা, সাপ্তাহিক এবাদত সভা, আলোকিত স্কুল, শিশু উৎসর্গ, মৃত্যু পরবর্তী অনুষ্ঠান ইত্যাদি।
উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০