Category Archives: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর

ঈসায়ী বিশ্বাসের সঙ্গে হিন্দুধর্মের পার্থক্য কী?

পাককিতাব তথা কিতাবুল মোকাদ্দস বহুত্ববাদ বা পৌত্তলিকতাবাদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে। হজরত মুসার শরিয়তের মূল কথাই হলো, আল্লাহর স্থানে যেন কোন দেব-দেবী বা প্রতিমূর্তি রাখা না হয়। এই জন্য যেমন শিক্ষা দেওয়া হতো তেমনি অবাধ্যদের সরাসরি শাস্তিও দেওয়া হতো। এই মূর্তিপূজার কারণেই বনি-ইসরাইজাতির লোকদের আল্লাহ অন্যান্য জাতির মধ্য থেকে আলাদা করে নিয়েছিলেন। কিন্তু মাঝে মাঝে এই জাতির লোকেরা বিজাতীয়দের মতো মূর্তিপূজায় লিপ্ত হতো এবং কঠিন শাস্তিও পেতো। আমাদের দেশের হিন্দু এবং আদিবাসী লোকদের মধ্যে প্রতিমাপূজার প্রচলন দেখা যায়। নিচে ঈসায়ী ও হিন্দু ধর্মের পার্থক্য দেখানো হলো:

ক্রমিক বিষয় ঈসায়ী হিন্দু
সৃষ্টিকর্তা এক আল্লাহ বিশ্বাস করে বহুত্ববাদে বিশ্বাসী
নেতা হজরত ঈসা শ্রী কৃষ্ণসহ বহু দেবতা
ধর্মের নাম ঈসায়ী / খ্রিস্টধর্ম সনাতন/ হিন্দু
ধর্মীয় কিতাব পুরো কিতাবুল মোকাদ্দস (ইঞ্জিল শরিফ) শ্রীমৎ ভগবত গীতা
পোশাক বাধা-ধরা নিয়ম নেই বিশেষ কাপড় আছে
খাবার খাবারটা বড় বিষয় নয় খাবারে বিধি নিষেধ আছে
এবাদতখানা স্থান-কাল-পাত্রভেদে যেকোন নাম মন্দির
এবাদতের দিক কোন নির্দিষ্ট দিকে মুখ করতে হয় না মূর্তির দিকে মুখ করতে হয়
উপায় গান, কিতাব পাঠ/ব্যাখ্যা ও মুনাজাত মন্ত্রপাঠ, ধূপ জ্বালানো, সিঙাধ্বনি, উলুধ্বনি, কীর্তন
ধর্মকর্ম কিতাব অনুসারে জীবন যাপন নানা বাহ্যিক নিয়মকানুন পালন করা
নবিদের বিষয়ে নবিদের বিশ্বাস করে যত মত তত পথ
স্থানীয় নেতা ইমাম / পালক / পরিচালক ব্রাহ্মণ / ঠাকুর / পুরোহিত
উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীদের সঙ্গে মুসলমানদের পার্থক্য কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ঈসায়ী ও মুসলমানদের পার্থক্য গুনাহ থেকে উদ্ধার পাওয়ার ভিত্তি।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

ঈসায়ীরা হজরত ঈসা মসীহের উম্মত আর মুসলমানগণ হজরত মুহম্মদের উম্মত। কিন্তু মুসলমানগণ যেহেতু হজরত ঈসা মসীহকে নবি হিসেবে দাবি করেন সেহেতু তাঁদের দৃষ্টিতে ঈসা মসীহের উম্মতদের অবস্থান একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঈসায়ী এবং মুসলমানের মধ্যে নিম্নোক্ত পার্থক্যগুলো দেখা যায়:

ক্রমিক বিষয় ঈসায়ী মুসলমান
সৃষ্টিকর্তা এক আল্লাহ বিশ্বাস করে এক আল্লাহ বিশ্বাস করে
নেতা হজরত ঈসা হজরত মুহম্মদ
ধর্মের নাম ঈসায়ী / খ্রিস্টধর্ম ইসলাম
ধর্মীয় কিতাব পুরো কিতাবুল মোকাদ্দস কোরান শরিফ
পোশাক বাধা-ধরা নিয়ম নেই বিশেষ পোশাক আছে
খাবার খাবারটা বড় বিষয় নয় খাবারে বিধি নিষেধ আছে
এবাদতখানা স্থান-কাল-পাত্রভেদে যেকোন নাম মসজিদ
এবাদতের দিক কোন নির্দিষ্ট দিকে মুখ করতে হয় না কাবার দিকে মুখ করতে হয়
উপায় গান, কিতাব পাঠ/ব্যাখ্যা ও মুনাজাত শারীরিক নিয়ম
ধর্মকর্ম কিতাব অনুসারে জীবন যাপন নানা বাহ্যিক নিয়মকানুন পালন
নবিদের বিষয়ে নবিদের বিশ্বাস করে নবিদের বিশ্বাস করে
স্থানীয় নেতা ইমাম / পালক / পরিচালক পরিচালক ইমাম
উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ী এবং ইহুদির মধ্যে কি কোন পার্থক্য আছে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ঈসায়ী এবং ইহুদির পার্থক্য হলো ঈমান এবং শরিয়তের।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

পৃথিবীর ধর্মগুলোকে তিনটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। একেশ্বরবাদী ধর্ম, বহুত্ববাদী ধর্ম এবং মানবতাবাদী ধর্ম। একেশ্বরবাদী ধর্মগুলোর মধ্যে ইহুদি, ঈসায়ী এবং মুসলমানরা পড়ে। অনেকে ঈসায়ী এবং ইহুদি ধর্মকে এক বলে মনে করে। কিন্তু এ দুটি আসলে কোন ক্রমেই এক নয় বরং এদের পার্থক্য দিন রাতের পার্থক্যের মতো। এই দুই ধর্মে দুইএকটি ক্ষেত্রে মিল থাকলেও অমিল অনেক বেশি। হজরত ঈসা নিজে ইহুদি বংশে জন্মগ্রহণ করলেও এবং অনেক ইহুদি তাঁর উপর ঈমান আনলেও ইহুদি নেতারাই শেষে রোমীয়দের সাথে ষড়যন্ত্র করে, হজরত ঈসা মসীহকে ক্রুশে দিয়েছিলেন। ইহুদিদের ধর্মীয় কিতাব অনুসারে হজরত ঈসাই ছিলেন তাদের মসীহ কিন্তু মর্ধান্ধতা, কুসংস্কার এবং রুহানিকতার অভাবে তারা তাঁকে চিনতে পারেনি।

নিচে ঈসায়ীদের সাথে ইহুদিদের পার্থক্যগুলো দেখানো হলো:

ক্রমিক বিষয় ঈসায়ী ইহুদি
সৃষ্টিকর্তা এক আল্লাহ বিশ্বাস করে এক আল্লাহ বিশ্বাস করে
নেতা হজরত ঈসা হজরত মুসা
ধর্মের নাম ঈসায়ী / খ্রিস্টধর্ম ইহুদি
ধর্মীয় কিতাব পুরো কিতাবুল মোকাদ্দস তৌরাতসহ প্রথম ৩৯ খণ্ড
পোশাক বাধা-ধরা নিয়ম নেই বিশেষ পোশাক আছে
খাবার খাবারটা বড় বিষয় নয় খাবারে বিধি নিষেধ আছে
এবাদতখানা স্থান-কাল-পাত্রভেদে যেকোন নাম "সিনাগগ"
এবাদতের দিক কোন নির্দিষ্ট দিকে মুখ করতে হয় না নির্দিষ্ট দিকে মুখ করতে হয়
উপায় গান, কিতাব পাঠ/ব্যাখ্যা ও মুনাজাত গান, কিতাব পাঠ, ব্যাখ্যা ও মুনাজাত
ধর্মকর্ম কিতাব অনুসারে জীবন যাপন বাহ্যিক নিয়মকানুন পালন করতে হয়
নবিদের বিষয়ে নবিদের বিশ্বাস করে প্রায় সব নবিই ইহুদি ধর্মের
স্থানীয় নেতা ইমাম / পালক / পরিচালক পুরোহিত / রাব্বি

উল্লেখ্য যে, ইসরাইলিদের বর্তমান পরিস্থিতিতে আমেরিকা এবং কিছু ইউরোপীয় দেশের বাস্তব সাহায্যের কারণে অনেকে ধারণা করতে পারে যে, ঈসায়ী এবং ইহুদিরা এক। কিন্তু মনে রাখা প্রয়োজন, বর্তমানকার এই পরিস্থিতি রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং মাঝে মাঝে ব্যক্তিগত। এর সাথে ঈসায়ীদের কোন সম্পর্ক নেই। বরং কিতাবুল মোকাদ্দস অনুসারে স্বৈরাচারী, স্বেচ্ছাচারী, অত্যাচারী কোন দলকে কোনভাবে সাহায্য সহযোগিতা দেওয়া সম্পূর্ণ অন্যায় ও গর্হিত কাজ; কোন কিতাবি লোক এই কাজ করতে পারে না।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

অন্যান্য একেশ্বরবাদীদের সঙ্গে ঈসায়ীদের মৌলিক পার্থক্যগুলো কী কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

অন্যান্য একেশ্বরবাদীরা আল্লাহকে খোঁজে কিন্তু ঈসায়ী ধর্মে আল্লাহ মানুষকে খোঁজেন।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

ধর্মে ধর্মে পার্থক্য চিরকালের। এই পার্থক্য থাকা নিয়ে হিংসা, রাগারাগি, মারামারি এমনকি ধর্মযুদ্ধও হয়েছে। যদিও প্রত্যেক ধর্মের মূলকথা শান্তি, তথাপি বাহ্যিক ও আভ্যন্তরীণ নানা পার্থক্যের কারণে একধর্মের লোকের সাথে আর একধর্মের অশান্তি লেগেই আছে। মানুষ ছোটবড় অনেক পার্থক্যের মধ্যদিয়ে, নিজেদের অপর ধর্ম থেকে আলাদা করে নিয়েছে। এই পার্থক্যগুলো ভাষা, সংস্কৃতি, পোশাক, খাবার, এবাদতের উপায়, নাজাতের উপায় ইত্যাদি প্রত্যেক ক্ষেত্রে রয়েছে। ধর্মের পার্থক্য জানতে হলে, সংশ্লিষ্ট ধর্মগুলো কী, নেতা কে, কিতাব কী, ধর্মকর্ম কী, বিশ্বাস কী ইত্যাদি জানতে হবে। প্রকৃত ঈসায়ীদের সাথে মানুষের সাথে পার্থক্য বিশ্বাসের; বাহ্যিক নয়, আভ্যন্তরীণ। অন্য কথায় বলা যায়, সেই পার্থক্য হলো, উদ্ধারপ্রাপ্ত এবং উদ্ধারহীন ঈসায়ীর।

ঈসায়ীরা কি কোরানকে অশ্রদ্ধা করে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, ঈসায়ীরা এসব হীনম্মন্য কাজ করে না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

কেউ কেউ প্রচার করে যে, কোন ব্যক্তিকে ঈসায়ী হতে হলে, তাকে কোরান শরিফকে পায়ে মাড়াতে হয় অর্থাৎ অশ্রদ্ধা করতে হয়। কিন্তু আসলে এ কথা এবং ধারণা কোনভাবেই সঠিক নয়। কারণ কোরান শরিফ একটি বিশাল জনগোষ্ঠীর ধর্মগ্রন্থ। এই ধর্মগ্রন্থকে অশ্রদ্ধা করা কারো উচিত নয় বলে আমরা মনে করি। এছাড়া কোরান শরিফের মধ্যে রয়েছে তৌরাত, জবুর ও ইঞ্জিল শরিফের কথা। যদি কেউ কোরান শরিফের অমর্যাদাকর কিছু করে, তবে সে ব্যক্তিগতভাবে দায়ী এবং অপরাধী। একজন সত্যিকারের ঈসায়ী কখনও এমন কাজ করে না এবং অন্যকে করতে উৎসাহিত করে না। শুধু কোরান কেন, একজন সুস্থ বিবেকবান মানুষ সাধারণ কোন বইকেও পায়ে মাড়াতে পারে না।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

গলায় ক্রুশ ঝোলানো কী ধর্মীয় কোন নিয়ম?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, এটি কোন ধর্মীয় নিয়ম নয়।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

কোন ধাতব পদার্থ দিয়ে বানানো ক্রুশ একটি অলংকার মাত্র। মানুষ শখের বশে তা পরে থাকে। আবার কেউ কেউ হজরত ঈসার প্রতি সাধারণ ভক্তি দেখানোর জন্য ব্যবহার করে থাকে। কিন্তু ব্যবহার যেভাবেই হোক না কেন এর কোন কিতাবি ভিত্তি নেই। হজরত ঈসা ইঞ্জিল শরিফে যে ক্রুশ বহনের কথা বলেছেন, তার সাথে গলায় ক্রুশ ঝোলানোর কোন সম্পৃক্ততা নেই। ক্রুশ দুঃখকষ্টের প্রতীক; হজরত ঈসা তাঁর অনুসারীদের বলেছিলেন যে, যে কেউ তাঁর অনুসরণ করতে চায়, তার দুঃখকষ্টকে সাথি করেই পথ চলতে হয়। তিনি যেমন মানুষকে ভালোবেসে নিজের জীবন দিয়েছিলেন, তেমনি মানুষকে ভালোবাসতে হলে দুঃখকষ্ট স্বীকার করতে হবে, তিনি তা-ই বুঝিয়েছিলেন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ী হলে কি নাম পরিবর্তন করতে হয়?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, ঈসায়ী হলে নাম পরিবর্তন করতে হয় না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

মানুষের নাম গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। আল্লাহ আদমের নাম রেখেছিলেন। আদম মানে মাটি, আদমকে মাটি দিয়ে তৈরি করেছিলেন বলে তার নাম আদম রাখা হয়েছিল। আল্লাহ সব জিনিস সৃষ্টি করার পর আদমের কাছে নিয়ে এসেছিলেন যেন তিনি তাদের প্রত্যেকের নাম রাখেন। আর আদম বুদ্ধিমত্তার সাথে সকল জিনিসের নাম রেখেছিলেন।

হজরত ঈসা শিমোনের নাম পরিবর্তন করে কৈফা বা পিতর রেখেছিলেন, যার মানে হলো পাথর। তাই বলে তিনি সব সাহাবিদের নাম পরিবর্তন করেননি। আগেকার ঈসায়ীদের মধ্যে কিতাবের চরিত্রের সাথে মিল রেখে নাম রাখার প্রবণতা দেখা যেতো। এখনও কেউ কেউ কিতাবের চরিত্রের সাথে মিল রেখে নাম রাখতে পছন্দ করে। নাম পরিবর্তন করে নতুন নাম রাখা বা না রাখা একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাপার। হজরত ঈসা কোথাও একথা বলেননি যে, তাঁর উপর ঈমান আনার পর নাম পরিবর্তন করতে হবে। তিনি গুরুত্ব দিয়ে বলতেন যে মন পরিবর্তন করতে হবে, নাম নয়। অতএব, কোন ঈসায়ীর জন্য নাম পরিবর্তন করা জরুরি কোন বিষয় নয়।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীদের খাবারদাবারের নিয়ম কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

আপাত দৃষ্টিতে ঈসায়ীদের খাবারদাবারের কোন নিয়ম নেই।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

পৃথিবীর সব মানুষ সবকিছু খায় না। আবার এমন কোন জিনিষ নেই যা কোন না কোন মানুষ খায় না। কোন কোন মানুষের কাছে যা অখাদ্য অন্যকোন মানুষের কাছে সুখাদ্য। জাতি, ধর্ম, বর্ণ, স্থান, কাল ও পাত্রভেদে মানুষের খাবার এবং রুচি বিচিত্র রকমের। খাদ্য-অখাদ্য বিষয়টি খাদ্যের পাক-নাপাক ধারণা থেকে এসেছে। কোন কোন লোক মনে করে, কোন কোন খাবার জায়েজ আবার অপর কোন কোন খাবার না-জায়েজ। হজরত ঈসা বলেন, মানুষের বাহির থেকে যা ভেতরে যায়, তা মানুষকে নাপাক করে না বরং ভেতর থেকে যা বেরিয়ে আসে, যেমন কুচিন্তা, রাগ, ঘৃণা, হিংসা, ব্যভিচার, লোভ ইত্যাদিই মানুষকে নাপাক করে। খাবার বাইরে থেকে ভেতরে যায় আবার বাইরে বেরিয়ে যায়, তা মানুষের শরীরকে স্পর্শ করে গেলেও অন্তরকে স্পর্শ করতে পারে না। আর যা মানুষের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসে, তা মানুষের অন্তরকে নাপাক করে এবং তা মানুষের জন্য ক্ষতিকর।

একথাও ঠিক যে, একসময় আল্লাহ কোন কোন পশু-পাখি মানুষের জন্য হারাম ঘোষণা করেছিলেন। যেমন থাবা দিয়ে ধরে এমন হিংস্র জীবজন্তু, কীটপতঙ্গ, জাবর না কাটা জীবজন্তু, এক ক্ষুরওয়ালা জীবজন্তু, মাংসাসি জীবজন্তু ইত্যাদি মানুষের জন্য হারাম করে দিয়েছিলেন। কিন্তু হজরত ঈসার সময়কাল থেকে সেই সব নিষেধাজ্ঞা আর বলবৎ নেই। তার কারণ হলো, একসময় অর্থাৎ হজরত আদমের গুনাহ করার আগে হারাম বলতে কোন কিছুই ছিল না। মানুষের জন্যই আল্লাহ সবকিছু তৈরি করেছিলেন আর মানুষ তার সবই ইচ্ছানুযায়ী ভোগ করতে পারতো। কিন্তু দুনিয়াতে গুনাহর ফলে পশুর মধ্যে হিংস্রতা আসল, আসল নানা রকম ভেদাভেদ। হজরত ঈসার দুনিয়াতে আগমন এবং কাফফারা দানের মধ্যদিয়ে সেই বিধিনিষেধ উঠে গেছে। আসলে মানুষের গুনাহ খাবারদাবারের মধ্যদিয়ে হয় না, হয় তার কর্মের মধ্যদিয়ে। এই কারণে শুধু খাবার নয়, ঘুষের অর্থ দিয়ে কেনা যে কোন ভালো খাবারই হারাম হয়ে যেতে পারে। আবার মানুষের জীবন রক্ষার তাগিদে ঘোষিত হারাম জিনিষও হালাল হয়ে যেতে পারে। যেমন অনেক ঔষধের মধ্যে তথাকথিত হারাম জিনিষ রয়েছে অথচ মানুষ প্রয়োজন অনুযায়ী বাঁচার জন্য তা খায়।

কোন খাবারের জন্য যদি অন্যকোন লোক বিঘœ পায়, তবে তার পক্ষে সেই খাবার খাওয়া নিষেধ রয়েছে। আবার কোথাও কেউ কোন খাবার দিলে, তাকে মনোকষ্ট না দেবার জন্য সেই খাবার কী রকমের তা জিজ্ঞাসা না করেই খাবার নির্দেশনাও কিতাবে পাওয়া যায়। অতএব, ঈসায়ীদের জন্য খাবারের কোন বাধ্যবাধকতা নেই।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীদের প্রধান প্রধান সামাজিক উৎসবগুলো কী কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ঈসায়ীদের প্রধান সামাজিক উৎসব তিনটি। যথা বড়দিন, পুণ্য শুক্রবার এবং পুনরুত্থান দিবস।

ব্যাখ্যমূলক উত্তর

বড়দিন: হজরত ঈসার জন্মদিনকেই বড়দিন বলা হয়। তাত্ত্বিক দিক থেকে বিবেচনা করলে, এই দিনকে ছোট দিন বলতে হয়, কারণ হজরত ঈসার জন্মদিন পালন করা হয় ২৫ ডিসেম্বর। ডিসেম্বর মাস ঋতুচক্রের হিসাবে শীতকাল। শীতকালে সাধারণত রাত বড় ও দিন ছোট হয়। এইদিক থেকে বলতে গেলে, হজরত ঈসার জন্মদিনকে ছোট দিন বলা যায়। আসলে গুণ ও মানের দিক বিবেচনা করেই এই দিনকে বড় দিন বলা হয়। একটি নির্দিষ্ট দিনে হজরত ঈসার জন্মদিন হলেও এর পরিকল্পনা ছিল সৃষ্টির আগে থেকে। আল্লাহ মানুষের উদ্ধারের পরিকল্পনা করেছিলেন সৃষ্টির আগে। উদ্ধারের কেন্দ্রবিন্দুতে আছেন, হজরত ঈসা, যার নামের মানেই হলো উদ্ধারকর্তা। তাঁর যে জন্ম হবে তা বিভিন্ন নবিদের দিয়ে আল্লাহ জানিয়েছিলেন; জানিয়েছিলেন স্থান, কাল, পাত্র নির্বিশেষে। ফলে তিনি যেমন মানব ইতিহাসের কেন্দ্রবিন্দু তেমনি তাঁর জন্মের সময়কালও হয়েছে সময় গণনার কেন্দ্রবিন্দু। যার কারণে আমরা হজরত ঈসার জন্মদিনকে কেন্দ্র করেই খ্রিস্টপূর্ব এবং খ্রিস্টাব্দ বলে থাকি।

পুণ্য শুক্রবার: পুণ্য শুক্রবার হলো হজরত ঈসার মৃত্যু বা ওফাত দিবস। এই শুক্রবারকে একদিক থেকে ইতিহাসের সবচেয়ে কালোদিন বলা যায়। কারণ এই দিনে পাপী মানুষেরা একজন নিষ্পাপ মানুষকে ক্রুশে দিয়ে হত্যা করেছিলেন। যার বিচার করতে গিয়ে, বিচারক কোন দোষ খুঁজে না পেলেও জনরোষ থেকে বাঁচার জন্য তাঁকে হত্যার আদেশ দিয়েছিলেন। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, যাদের উদ্ধার করতে তিনি দুনিয়াতে এসেছিলেন সেই গুনাহগার মানুষেরাই তাঁকে হত্যা করেছিল। কিন্তু এই দিনকে কালো শুক্রবার না বলে পুণ্যশুক্রবার বলার কারণ হলো, এই মৃত্যুর দ্বারা মানুষের নাজাত বা উদ্ধার এসেছে। হজরত ঈসা মানুষের চক্রান্তের স্বীকার হয়ে, মৃত্যু বরণ করলেও আল্লাহর ইচ্ছাতেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে এবং একদিক থেকে আল্লাহর পরিকল্পনাই বাস্তবায়িত হয়েছে। হজরত ঈসার জন্মের বিষয়ে যেমন আগের কিতাবে ভবিষ্যতবাণী করা হয়েছিল, তেমনি তাঁর মৃত্যু সম্পর্কেও ভবিষ্যতবাণী করা হয়েছিল। আল্লাহ ঠিক করেছিলেন যেন মানুষের উদ্ধারের জন্য কাফফারাস্বরূপ হজরত ঈসার মৃত্যু হয়। উক্ত দিনে তা-ই ঘটেছিল। হজরত ঈসা আল্লাহর ইচ্ছানুযায়ী মানুষের গুনাহর বোঝা তুলে নিতে, স্বেচ্ছায় মৃত্যু বরণ করেছিলেন। সুতরাং এই দিন পুণ্যদিন, এই বার পুণ্য শুক্রবার।

পুনরুত্থান দিবস: পুনরুত্থান দিবস হলো হজরত ঈসার মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে ওঠার দিন। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে আশ্চর্য বিষয় ছিল হজরত ঈসার পুনরুত্থান। মানুষ মরে যায়, মাটির সাথে বিলীন হয়ে যায়। রাজা, মহারাজা, সম্রাট, নবি-পয়গাম্বর সবারই মাটির দেহ মাটিতে মিশে গিয়ে, একাকার হয়ে গিয়েছে। ব্যতিক্রম কেবল ঈসা মসীহ। তিনি মৃত্যুবরণ করেছিলেন কিন্তু মৃত্যুকে জয় করে, আবার কবর থেকে উঠেছেন। পাককিতাব বলে, এই পুনরুত্থান হলো মানবজাতির পুনরুত্থানের প্রথম ফল। তিনি পুনরুত্থিত না হলে, কোন মানুষেরই পুনরুত্থান সম্ভব হতো না। তিনি পুনরুত্থিত হয়েছেন বলেই বর্তমানে আল্লাহর কাছে আছেন এবং আবার ফিরে আসবেন। ঈসায়ীদের বিশ্বাসের মূলশক্তি হলো পুনরুত্থান এবং ঈমানের ভিত্তি হলো হজরত ঈসা মসীহের মৃত্যু, কবর ও পুনরুত্থান।

উপরিউক্ত তিনটি উৎসব ছাড়াও ঈসায়ীদের মধ্যে আরো কিছু অনুষ্ঠান পালন করা হয়। যেমন- ধন্যবাদ সভা, পারিবারিক মুনাজাত সভা, সাপ্তাহিক এবাদত সভা, আলোকিত স্কুল, শিশু উৎসর্গ, মৃত্যু পরবর্তী অনুষ্ঠান ইত্যাদি।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

কে তরিকাবন্দি দিতে পারেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ঈসা মসীহের উপর ঈমান এনে নাজাত লাভ করেছেন এবং নিজে তরিকাবন্দি নিয়েছেন, এমন যে কোন ব্যক্তি তরিকাবন্দি দিতে পারেন।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

হজরত ঈসা বলেছিলেন, তোমরা সারা দুনিয়াতে যাও, শিক্ষা দাও এবং তরিকাবন্দি দাও। হজরত ঈসা তাঁর উম্মতদের সরাসরি তরিকাবন্দি দিতে বলেছেন। কিন্তু যেহেতু এটি ঈসায়ীদের একটি সামাজিক-ধর্মীয় অনুষ্ঠান সেহেতু সমাজের পরিচালকই সাধারণত তরিকাবন্দি দেন। এছাড়া পরিচারক (খাদেম) বা যাকে কোন সমাজ কর্তৃক দায়িত্ব দেয়া হয়েছে, তেমন ব্যক্তি তরিকাবন্দি দিতে পারেন। তবে স্থান-কাল-পাত্রভেদে এর ব্যতিক্রমও হতে পারে। এমন অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে কোন স্বীকৃত সমাজ নেই কিংবা সমাজের কোন স্বীকৃতি নেই। সেই ক্ষেত্রে ঈমানদারিত্বের বিষয়টি পরিষ্কার থাকলেই যেকোন ঈসায়ী ঈমানদারই তরিকাবন্দি দিতে পারেন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০