Category Archives: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর

ঈসায়ীদের কি কোন বিচার হবে না?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

হ্যাঁ, ঈসায়ীদেরও বিচার হবে, তবে ভালো কাজের জন্য।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

হজরত ঈসা বলেন, “আমি আপনাদের সত্যই বলছি, আমার কথা যে শোনে এবং আমাকে যিনি পাঠিয়েছেন তাঁর কথায় ঈমান আনে, তার অনন্ত জীবন আছে। তাকে দোষী বলে স্থির করা হবে না; সে তো মৃত্যু থেকে জীবনে পার হয়ে গেছে” (ইউহোন্না ৪:২৫)। এই আয়াত থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, ঈসায়ীরা দোষের অধীন নয়। কারণ দোষ থেকে মুক্ত করার জন্য ঈসা মসীহ প্রাণ দিয়েছিলেন। ইঞ্জিল ও তৌরাত শরিফ অনুযায়ী শরিয়ত মানুষকে দোষী করে। শরিয়ত অনুযায়ী মানুষ আদি থেকে দোষী সাব্যস্ত। অবাধ্যতার ফলে, দুনিয়াতে পাপ এসেছে এবং মানুষ গুনাহগার হয়েছে। শরিয়ত দেওয়া হয়েছে যেন মানুষ তার এই অবস্থা বুঝতে পারে। আল্লাহ ন্যায়বিচারক, তিনি কখনও অন্যায় করেন না। অপরদিকে তিনি মানুষকে ভালোবাসেন এবং এই ভালোবাসার জন্যই তিনি হজরত ঈসা মসীহকে কোরবানি হিসাবে দিয়েছেন যেন গুনাহর উপযুক্ত বিচার হয়। এই দিক থেকে ঈসায়ীদের বিচার হয়ে গেছে এবং শরিয়ত অনুসারেই সেই বিচার হয়েছে। সেই বিচারের রায় অনুসারে মানুষের পক্ষে হজরত ঈসা নিজেই শাস্তি গ্রহণ করেছেন।

ঈসায়ীদের বিচার: আমরা জানি যে, হজরত ঈসা একদিন এই দুনিয়াতে ফিরে আসবেন। তিনি সিংহাসনে বসবেন, রাজত্ব করবেন ও বিচার করবেন। তখন অবিশ্বাসী লোকদের পাশাপাশি ঈসায়ীদেরও বিচার করবেন (মথি ২৫:৩১,৩২)। সেই সময় অনেককে মসীহ বলবেন, যখন আমার খিদে পেয়েছিল, যখন পিপাসা পেয়েছিল, যখন খালি গায়ে ছিলাম, যখন অসুস্থ হয়েছিলাম তখন তোমরা আমার দেখাশোনা করেছিলে। তখন লোকেরা বলবে, কখন এসব করেছিলাম? আর তিনি উত্তর দেবেন, যখন দুনিয়ার লোকদের প্রতি করেছিলে, তখন। এই লোকদের আরো বলবেন, ‘তোমরা আমার পিতার দোয়া পেয়েছ, এস। দুনিয়ার শুরুতে যে রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে তার অধিকারী হও।’ ইঞ্জিল শরিফে হজরত ঈসা বলেন, “এই কথা শুনে আশ্চর্য হবেন না, কারণ এমন সময় আসছে, যারা কবরে আছে তারা সবাই ইবনে-আদমের গলার আওয়াজ শুনে বের হয়ে আসবে, যারা ভাল কাজ করেছে তারা জীবন পাবার জন্য উঠবে, আর যারা অন্যায় কাজ করে সময় কাটিয়েছে তার শাস্তি পাবার জন্য উঠবে” (ইউহোন্না ৫:২৮-২৯)।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

একজন ঈসায়ী কি যা খুশি তা করতে পারে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, একজন ঈসায়ী যা খুশি তা করতে পারে না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

একজন ঈসায়ী কেন, যেকোন লোকই যা খুশি তা করতে পারে। মানুষ হিসেবে এটি প্রত্যেকের স্বাধীনতা। এখন কথা হলো, সে তা করবে কি না কিংবা করলে তার পরিণাম কি হবে, তা-ই আলোচনার বিষয়। হজরত ঈসার উপর ঈমান আনলে একজন গুনাহগার মানুষের সকল গুনাহ মাফ হয়। হজরত ঈসার কোরবানি অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের সকল গুনাহর মাগফেরাত এনে দেয়। তাই ধারণা করা হতে পারে যে, একজন ঈসায়ীর গুনাহ করতে বাধা নেই।

না, এই ধারণা ও শিক্ষা কোন ক্রমেই সঠিক নয়। সত্যিকারের একজন ঈসায়ী জীবনের পথে চলতে চলতে হঠাৎ পা পিছলে গুনাহর মধ্যে পড়ে যেতে পারে কিন্তু গুনাহর পথে চলতে পারে না। হজরত ঈসা বলেন, ‘আমি উত্তম মেষপালক’। অর্থাৎ আমরা তথা তাঁর উম্মতেরা হলাম মেষ বা ভেড়া। মহিষ পানির ভিতর ডুবে থাকে আর ভেড়া পা-পিছলে পানি বা কাদায় পড়লে ওঠার জন্য ছটফট করে। ঈসার উম্মতেরাও গুনাহ সহ্য করতে পারে না, তারা মেষের মতোই ছটফট করে উঠে আসে, তওবা করে, গুনাহ ত্যাগ করে এবং নতুন জীবনের পথে চলে। হজরত ঈসা বলেন, “আমি মুসার শরিয়ত বাতিল করতে আসিনি বরং পূর্ণ করতে এসেছি।” এথেকে বোঝা যায়, শরিয়তের বিধিবিধানগুলো মেনে চলা ঈসার উম্মতদের দায়িত্ব ও কর্তব্য। মসীহের সাহাবিরা জীবনের সুন্দর পথে চলতে চলতে তাদের নিজের জীবনকে উৎসর্গ করতেন এবং সমাজের সদস্যদের সুন্দর ও কিতাবি পথে চলতে উদ্বুদ্ধ করতেন।

ইঞ্জিল শরিফ হজরত ঈসার উম্মতদের বলে, ‘তোমাদের আরো কঠিন বিচার হবে’। কিতাবের শিক্ষা অনুযায়ী ঈসায়ীদেরও বিচার হবে। আর সেই বিচার আমাদের ভালমন্দ কাজের বিচার। আমাদেরও মসীহের সামনে দাঁড়াতে হবে এবং আমরা কে কী করেছি তার বিচার তিনি করবেন। যারা গুনাহর পথ থেকে ফিরে মসীহের পথে এসেছেনে এবং পুনরায় সেই পথে ফিরে গেছেন তাদের হজরত ঈসার সাহাবি পিতর, কুকুর ও শুকরের সাথে তুলনা করেছেন। হজরত পৌল এই ধরনের ঈমানদারদের কাছ থেকে সাবধান থাকার কথা বলেছেন। ঈমানের সাথে যাদের কাজের মিল নেই, তাদের সম্পর্কে হজরত ইয়াকুব বলেন যে, তাদের ঈমান মৃত।

অতএব, একজন ঈসায়ী ঈমানদার যা খুশি তাই করতে পারে না। তাকে ঈসায়ী ঈমান অনুসারেই মসীহের নির্দেশিত পথে জীবন যাপন করতে হয়। মসীহ যেমন নিষ্পাপ ছিলেন, তেমনি তাঁর উম্মতেরা সত্য ও সুন্দরের পথে পরিচালিত হবে, এটা স্বাভাবিক বিষয়।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

জন্মসূত্রে কি ঈসায়ী হওয়া যায়?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, জন্মসূত্রে কেউ ঈসায়ী হতে পারে না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

আমাদের চিরাচরিত নিয়ম হলো, যে যে ধর্মীয় মা-বাবার পরিবারে জন্ম গ্রহণ করে, সে সেই ধর্মীয় লোক হয়। ঈসায়ী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করলে ঈসায়ী, মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করলে মুসলমান, হিন্দু পরিবারে জন্ম গ্রহণ করলে হিন্দু, বৌদ্ধ পরিবারে জন্মগ্রহণ করলে বৌদ্ধ ইত্যাদি। মানুষের এই ধারণা কোন ধর্মীয় বিধান মতেই সঠিক নয়। যদি সঠিক হতো, তবে প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে ধর্মীয় তরিকাভুক্ত থাকার বিধান থাকতো না।

ঈসায়ী হতে হলে, একজন মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে হজরত ঈসার উপর ঈমান আনতে হয়। ঈসায়ীদের এই ঈমান আনার বিষয়টি কয়েকটি ধাপে বিস্তৃত। যেমন- প্রথমত: কোন ব্যক্তিকে বুঝতে হয় যে, সে জন্মগত ও জীবনগতভাবে গুনাহগার এবং এই গুনাহ থেকে সে ধর্মকর্ম দিয়ে কিংবা ভাল কাজ দিয়ে উদ্ধার পেতে পারে না। দ্বিতীয়ত: তাকে বুঝতে হয় যে, আল্লাহ নিষ্পাপ ও ধার্মিক। এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই তিনি গুনাহগার মানুষকে তাঁর কাছে স্থান দিতে পারেন না। তৃতীয়ত: তাকে জানতে হয় যে, আল্লাহ তাঁর সেরা সৃষ্টি মানুষকে মহব্বত করেন এবং তাকে গুনাহ থেকে নাজাত দেবার ব্যবস্থা করেছেন। চতুর্থত: তাকে জানতে হয় যে, আল্লাহর সেই ব্যবস্থা হলো হজরত ঈসা মসীহ, যিনি তাঁর নিজের জীবন কোরবানি দিয়ে গুনাহগারকে আল্লাহর কাছে যাবার উপযুক্ত করে তুলেছেন। পঞ্চমত: তাকে মুখে হজরত ঈসাকে প্রভু বলে স্বীকার এবং হৃদয়ে ঈমান আনতে হয় যে, আল্লাহ তাঁকে মৃত্যু থেকে জীবিত করে তুলেছেন। উপরিউক্ত পাঁচটি ধাপ পেরিয়ে একজন ব্যক্তি ঈসায়ী হয়। বোধশক্তি ছাড়া কেউ কখনও ঈসায়ী হতে পারে না। জন্মের মধ্য দিয়ে কেউ সেই বোধসম্পন্ন হয় না।

ঈসায়ী ছাড়া অন্যান্য ধর্মের মধ্যেও প্রায়ই কিছু না কিছু করণীয় কাজের বা বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে, নিজ নিজ ধর্মের অনুসারী হয়। যেমন: ইসলামে কলেমা কিংবা তরিকা নেওয়ার ব্যবস্থা, হিন্দু ও বৌদ্ধদের দীক্ষা নেবার ব্যবস্থা এবং অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রে কোন কোন ব্যবস্থা থাকে, যার মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের ধর্মে সম্পৃক্ত হয়। এইসব ব্যবস্থাই প্রমাণ করে যে, জন্মের মধ্য দিয়ে কেউ ধর্মের অন্তর্ভুক্ত হয় না। ধর্মীয় জীবনের মূলকথা হলো রুহানি জীবন। গুনাহগার বোধশক্তি ছাড়া রুহানি জীবনের কথা ভাবা যায় না। আকারগত পার্থক্য ছাড়া কোন পশুর বাচ্চা এবং কোন মানুষের সন্তানের মধ্যে জন্মের পর কোন পার্থক্যই থাকে না। মানুষ পশু নির্বিশেষে সকল বাচ্চারাই জন্মের পর থেকে মা-বাবাকে যা করতে দেখে, তাই করতে শেখে এবং নিজ নিজ জীবনকে উৎকৃষ্ট মনে করে, জীবন পথে চলতে থাকে। আবার মানুষের মধ্যেও যে যে ধর্মে জন্ম গ্রহণ করুক না কেন সে সেই ধর্মকেই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠধর্ম হিসেবে বিবেচনা করে আর অপরাপর ধর্মকে হেয় করে। কিন্তু কোন ব্যক্তি এখন যে পরিবারে জন্মেছে সেই পরিবারে না জন্মে সে অন্যকোন ধর্মীয় পরিবারে এবং পরিবেশেও জন্মাতে পারতো। তাহলে তখন সেই ধর্মই আবার তার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠধর্ম হয়ে যেত।

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যায় জন্মগতভাবে কেউ ঈসায়ী হয় না। জেনে, বুঝে ও ঈমান এনে এবং হৃদয়ে গ্রহণ করেই ঈসায়ী হতে হয়। অর্থাৎ সজ্ঞানে ঈসায়ী হতে হয়, জন্মের মধ্য দিয়ে অজ্ঞানে কিংবা অসচেতনতায় নয়।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ধর্মকর্মের মাধ্যমে কি নাজাত পাওয়া সম্ভব নয়?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ধর্মকর্মের মধ্যদিয়ে নাজাত পাওয়া যায় না, সম্ভবও নয়।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

এই প্রশ্নটির উত্তর আমরা শেষ দিক থেকে শুরু করতে পারি। অর্থাৎ কোন ধর্মকর্মের মধ্য দিয়ে নাজাত পাওয়া সম্ভব কি না, তা নিয়েই আমরা আলোচনা শুরু করব। সংস্কৃত ধৃ ধাতু থেকে ধর্ম শব্দের উৎপত্তি। ধর্ম মানে ধারণ করা। মানুষ যে যে ধর্মীয় পরিবেশে জন্ম গ্রহণ করে, সাধাণরত সেই ধর্মকেই তার নিজের ধর্ম বলে বিশ্বাস করে। প্রত্যেক মা-বাবাই চান যেন সন্তান তাদের বিশ্বাসে বিশ্বাসী হয়, তাদের মতো ধর্মকর্ম পালন করে। ফলে কোন মানবশিশু যে ধর্মীয় পরিবেশে জন্মে, সেই ধর্মের নিয়মকানুনগুলো ধারণ করতে চেষ্টা করে। প্রত্যেক ধর্মই ভাল, প্রত্যেক ধর্মের নিয়মকানুনই মানুষকে সুন্দর ও সচ্চরিত্রবান হবার দিকে চালিত করে। মানুষ তাই সত্য ও সুন্দরকে ধারণ করার তাগিদে বেড়ে ওঠে এবং ভালমন্দ বিচার করে চলতে শেখে। এখন প্রশ্ন হলো, ধর্ম কি নাজাত পাবার জন্য?

ধর্মের উদ্দেশ্য কি, এ নিয়ে নানা মুনির নানা মত থাকতে পারে; কিন্তু বাস্তবতায় যা দেখা যায় তা হলো, শান্তির জন্যই ধর্ম বলা হলেও কোন ধর্মই মানুষকে দুনিয়াতে শান্তি দিতে পারেনি, পারছে না এবং ভবিষ্যতেও পারবে না। উক্তিটি আপাত দৃষ্টিতে কঠিন মনে হলেও হাজার হাজার বছরের ইতিহাস অনুযায়ী বাস্তবে তা-ই সত্য। কারণ পৃথিবীতে যত রকমের ছলচাতুরী, মিথ্যা, দুর্নীতি, হানাহানি, যুদ্ধ, মহাযুদ্ধ হয়েছে, তার প্রায় সবই ধর্ম নিয়ে ও ধর্মের কারণেই হয়েছে। ধর্মেধর্মে যেমন যুদ্ধ হয়েছে তেমনি একই ধর্মে বিভিন্ন গোত্রের মধ্যেও যুদ্ধ হয়েছে। ধর্মের নামে, ধর্মীয় বিচারের নামে, ধর্মীয় আনুষ্ঠানিকতার নামে, ধর্মীয় মসজিদ-মন্দির-গির্জা-প্যাগোডা ইত্যাদির নামে, ধর্ম রক্ষার নামে সৃষ্টির শ্রেষ্ঠ জীব মানুষ সবসময় নিগৃহীত হয়েছে এবং আজো হচ্ছে। তাতে কি বোঝা যায়? বোঝা যায় ধর্ম ভালো হলেও গুনাহগার মানুষ ধর্ম ধারণ করতে পারে না। আসলে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করলে, মানুষ কোন ধর্মের মধ্য দিয়েই নাজাত পেতে পারে না।

নিচের এই মইটি দিয়ে ধর্ম পালনে মানুষের নির্মম ব্যর্থতার বিষটি বোঝাায়। প্রত্যেক ধর্মের মধ্যেই নিয়ম-কানুন আছে। মানুষ চেষ্টা করে সেই নিয়ম পালন করে অর্থাৎ নিয়মের সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠার জন্য। কেউ দুটি কেউ পাঁচটি আবার কেউ কেউ হয়তো আটটিও পালন করে কিন্তু সকল নিয়ম পালন করতে পারে না। ফলে কেউ ধর্মীয় নিয়ম কানুন পালন করে, কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করতে কিংবা ধার্মিকতা লাভ করতে পারে না। এই কারণে ইঞ্জিল শরিফে লেখা আছে, ‘ধার্মিক কেউ নেই, একজনও নেই।’ আসলে তা-ই। ১০০% ধার্মিক বলতে যা বুঝায়, তা কেউ অর্জন করতে পারে না। ফলে, নবি-পয়গাম্বরগণও আল্লাহর কাছে তাঁদের আপন আপন গুনাহর মাগফেরাত চেয়েছেন। হজরত দাউদ বলেন, “আমার সব অন্যায় তুমি ধুয়ে ফেল, আমার গুনাহ থেকে আমাকে পাকসাফ কর” (জবুর শরিফ ৫১:২)।

১০








১ম ২য়

উপরিউক্ত মইটির দু’টি দিক দেখানো হয়েছে। নাম্বার দেওয়া যে মইটি আছে, তা হলো হজরত মুসার দেওয়া দশটি হুকুম বা শরিয়তের মই। সেখানে আছে দশটি ধাপ। এই ধাপগুলো অতিক্রম করতে কেউ কোন কালে পারেনি। তারপরও মানুষের রয়েছে আরো নানা ধর্মীয় নিয়ম কানুন। মই তৈরি করতে দুই পাশে দুটি মইদণ্ড বা লাঠি দিয়ে মাঝখানে ধাপগুলো দিতে হয়। যদি কোন মইতে দুই পাশের কোন এক পাশে লাঠি না থাকে, শুধু একপাশে থাকে এবং যথারীতি ধাপগুলো দেওয়া হয়, তবে কি ধাপগুলো অতিক্রম করা যাবে?

চিত্রে উল্লেখিত ২য় মই দিয়ে মানুষের দুর্দশার চিত্র দেখানো হয়েছে। ২য় মইয়ের একপাশে দেখা যাচ্ছে একটি লাঠি আছে কিন্তু অপর পাশে কোন লাঠি নেই। এরূপ মইয়ে কেউ যদি উঠতে যায় তবে প্রথম ধাপও কেউ উঠতে পারে না। এই মইয়ের প্রথম খাড়া লাঠি বা মই দণ্ডটি আল্লাহর দিক বোঝানো হয়েছে, দ্বিতীয় লাঠি মানুষের দিক। আর দ্বিতীয় লাঠির অনুপস্থিত ২য় মইটি মানুষের রুহানি অবস্থার কথা বোঝায়। রুহানি ভাবে মানুষ মৃত। অর্থাৎ আল্লাহর সাথে তাদের কোন সম্পর্ক নেই। যার ফলে মানুষ যুগ যুগ চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে। এই মই বা সিঁড়ি একসময় উপযুক্ত বা দুইপাশে মইদণ্ডযুক্ত। আর তখন হজরত আদমের সাথে আল্লাহর সম্পর্ক ছিল জীবন্ত। কিন্তু অবাধ্যতার ফলে মই বা সিঁড়ির অপর লাঠি ভেঙে যায়। মানুষ চেষ্টা করেও সেই মইদণ্ড বা লাঠি আর তৈরি করতে পারে না। যে ধর্মেরই হোক না কেন মানুষ কেউ তার ধর্মীয় নিয়ম-কানুন সব পালন করতে পারে না। অতএব, ধর্মের মাধ্যমে নাজাত পাওয়া সম্ভব নয়।

ধর্ম বা শরিয়ত নাজাতের জন্য নয়, সমাজের শৃক্সক্ষলার জন্য: ধর্ম কি নাজাতের জন্য? কিতাবে আছে, শরিয়ত দেওয়া হয়েছে যেন মানুষ নিজেকে দেখতে পায়, তার অবাধ্যতার কথা তথা তার মৃত অবস্থার কথা যেন বুঝতে পারে। শরিয়ত বা ধর্মকর্ম হলো আয়নার মতো। আয়না যেমন মানুষের ত্রুটিবিচ্যুতি দেখায়, শরিয়তও মানুষের গুনাহ দেখায়। উদ্দেশ্য হলো গুনাহগার অবস্থার কথা জানতে ও বুঝতে পেরে যেন মানুষ নাজাত লাভের জন্য পদক্ষেপ নেয়।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

কেন ঈসায়ী হওয়া প্রয়োজন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

গুনাহ থেকে নাজাত পেয়ে অনন্তকাল আল্লাহর সাথে বেহেস্তে স্থান পাবার জন্য।

ব্যখ্যামূলক উত্তর: ঈসায়ী ধর্মে ধর্মান্তরিত হওয়া ও ঈসায়ী হওয়া এক কথা নয়। ঈসায়ী হওয়া মানে কোন ধর্ম পালন করা নয়। ঈসায়ী হওয়াকে যদি কেউ ধর্মের অন্তর্তুক্ত হওয়া মনে করে, তবে ভুল হবে। হজরত ঈসা নিজে কোন ধর্ম স্থাপন করেননি, বা নিজেও ঈসায়ী হিসেবে পরিচিত ছিলেন না। হজরত ঈসার উপর ঈমান আনার মধ্যদিয়েই মানুষ ঈসায়ী হয়। ঈসায়ী একটি জাতি গোষ্ঠীর নামমাত্র, এতে কোন বিশেষত্ব নেই। কেউ যদি অন্যকোন নাম ব্যবহার করতে চায়, তবে তা হবে তার ব্যক্তিগত ব্যপার। হজরত ঈসা মানুষকে নাম পরিবর্তন, ধর্ম পরিবর্তন কিংবা জাতি পরিবর্তনের কথা বলেন নি। তিনি মন বা হৃদয় পরিবর্তনের কথা বলেছেন। এভাবে তিনি আল্লাহর রাজ্যে আসার দাওয়াত দিয়েছেন। আল্লাহর রাজ্যে ঢুকতে তিনি নতুন জন্মের কথা বলেছেন। তিনি বলেন, নতুন জন্ম না হলে কেউ আল্লাহর রাজ্যে ঢুকতে পারে না। যেহেতু পাপের বেতন মৃত্যু এবং হজরত আদমের অবাধ্যতার মধ্য দিয়ে আমরা সবাই মরে গিয়েছিলাম, সেহেতু হজরত আদমের সাথে আমরাও তাঁর রক্তে জন্মগ্রহণ করে, আল্লাহর রাজ্য থেকে রেরিয়ে গিয়েছিলাম। এখন আল্লাহর রাজ্যে ঢুকতে হলে, তাঁর স্থাপিত ব্যবস্থায় ঈমান আনতে হবে অর্থাৎ হজরত ঈসার কোরবানিতে বিশ্বাস করে, আমাদের নতুন জন্ম লাভ করতে হবে।

ঈসায়ী হওয়া মানে হজরত ঈসাকে মনেপ্রাণে বিশ্বাস করা। এই বিশ্বাস তিনটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার সাথে সংশ্লিষ্ট। বিষয় তিনটি হলো, হজরত ঈসার মৃত্যু, কবর এবং পুনরুত্থান।

প্রথমত: হজরত ঈসার মৃত্যু আমাদের ঈমানের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি আমাদের হয়ে মৃত্যু বরণ করেছেন, যে শাস্তি আমাদের পাবার প্রয়োজন ছিল, তিনি আল্লাহর ইচ্ছায় সেই শাস্তি গ্রহণ করেছেন। তাঁর মৃত্যু ছিল আমাদের পাপের কাফফারা। তাই তার মৃত্যুকে যদি আমরা বিশ্বাস না করি, তবে আমাদের বিশ্বাসের বা ঈমানের কোন মূল্যই নেই।

দ্বিতীয়ত: কবর হলো মৃত্যুর নিশ্চয়তা। হজরত ঈসা যে মৃত্যু বরণ করেছিলেন, কবর তার ধ্রুব সত্যতা প্রমাণ করে। হজরত ঈসা আগেই ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন যে, মৃত্যু বরণ করবেন এবং তৃতীয় দিন কবর থেকে উঠবেন। তাঁর এই ঘোষণার কারণে, ক্রুশে দেবার পর তাঁর মৃত্যু নিশ্চিত করার জন্য সৈন্যরা তাঁর পাঁজরে বর্শা দিয়ে খোঁচা দিয়েছিল এবং সেখান থেকে পানি ও রক্ত বেরিয়ে এসেছিল। মৃত্যু নিশ্চিত হলে, তাকে কবর দেওয়া হয়েছিলে। লেখা আছে, “পরে লাশটি ক্রুশ থেকে নামিয়ে, কাফন দিয়ে জড়ালেন এবং পাথর কেটে তৈরি করা একটি কবরের মধ্যে দাফন করলেন” (ইঞ্জিল শরিফ, লূক ২৩:৫৩)।

তৃতীয়ত: পুনরুত্থান। পুনরুত্থান হলো ঈসায়ী ঈমানের অন্যতম দিক। হজরত ঈসা যদি মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে না উঠতেন, তবে তাঁর ভবিষ্যতবাণীসহ অন্যান্য নবিদের সকল ভবিষ্যৎবাণী মিথ্যা প্রমাণিত হতো। হজরত ঈসার ভবিষ্যতবাণীকে মিথ্যা প্রমাণ করার জন্য কর্তৃপক্ষ থেকে এই কবর সীলগালা করে দেয়া হয়েছিল। কিন্তু আল্লাহর কি অপার লীলা! তখন ভূমিকম্প হলো আর কবরের পাথর সরে গেল। উপড়ে গেলো সব সীলগালা। আল্লাহর ইচ্ছায় হজরত ঈসা কবর থেকে উঠলেন। তিনি তার সাহাবিদের এবং অন্যান্য লোকদের দেখা দিলেন।

হজরত ঈসার মৃত্যু, কবর এবং পুনরুত্থানই হলো ঈসায়ী ঈমানের ভিত্তি। সেই সাথে আল্লাহ এবং তাঁর চরিত্রকে বোঝা এবং বুঝতে পেরে তাঁর দেওয়া উপায় হিসাবে আল্লাহর উপর নির্ভর করাই হলো ঈসায়ী হওয়া। অতএব, জীবন পেতে হলে এবং অনন্তকাল আল্লাহর সাথে থাকতে হলে ঈসায়ী হওয়া প্রয়োজন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীরা রক্তের কথা কেন বলে? রক্তপাত তো নিষিদ্ধ?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ঈসায়ীরা মানুষের রক্তপাতের কথা বলে না, বলে ঈসা মসীহের রক্তপাতের কথা।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

রক্তেই থাকে শরীরের প্রাণ। এইজন্য রক্তপাত দ্বারা গুনাহর জন্য কাফফারার ব্যবস্থা করা হয়েছিল আগের কিতাবের সময়। আল্লাহ নিজেই এই ব্যবস্থা স্থাপন করেছিলেন। হজরত আদমের গুনাহর ফলে, যখন লজ্জা প্রকাশ পেয়েছিল, তখন আদম-হাওয়া পাতার পোশাক পরেছিলেন কিন্তু আল্লাহ পশুর চামড়া পরিয়ে দিয়ে, প্রমাণ করলেন যে পাপ ঢাকা দেবার জন্য রক্তপাতের প্রয়োজন আছে। পাপ ঢাকা দেবার জন্য আল্লাহ বনি-ইসরাইল জাতিকে নানা রকম কোরবানির ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন। কিন্তু পশুর রক্তে মানুষের পাপ ঢাকা যায় না। তাহলে তিনি কেন তা চালু করেছিলেন? পশু কোরবানি ছিল আসল কোরবানির ছায়ামাত্র। পশু কোরবানি দিয়ে আল্লাহ মানুষকে আসল কোরবানির জন্য প্রস্তুত করেছেন। আসল কোরবানি হলেন হজরত ঈসা মসীহ, যিনি স্বেচ্ছায় কোরবানি হয়ে, নিজের রক্ত ঢেলে মানুষের গুনাহর কাফফারা দিয়েছিলেন। হজরত ঈসার রক্ত মানুষকে গুনাহ থেকে নাজাত দেয়।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

যাদু, তাবিজ, কবজ, ঝাড়-ফুক, মাজার-খানকা ইত্যাদি বিষয়ে ঈসায়ীদের দৃষ্টিভঙ্গি কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ঈসায়ীরা এসবে বিশ্বাস করে না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

যারা যাদু, তাবিজ, কবজ, ঝাড়-ফুকে বিশ্বাসী, তারা প্রকৃত অর্থে আল্লাহর উপর আস্থা রাখে না। তাদের আচরণে প্রকাশ করে যে, আল্লাহর চেয়েও যাদু, তাবিজ, কবজ, ঝাড়-ফুকের শক্তি বেশি। কিন্তু আল্লাহ হলেন স্বগৌরব রক্ষণে উদ্যোগী আল্লাহ। আল্লাহ তাঁর পাওনা সম্মান কাউকে দেন না। আল্লাহর কালামে আল্লাহ নিজেই বলেন, “কোন জাদুকারিণীকে বেঁচে থাকতে দেবে না” (হিজরত ২২:১৮)। যাদুকরদের কাজ হলো নিজের চালাকি দিয়ে কিছু তৈরি করা বা কোনকিছু ঘটানো, যা অবিশ্বাস্য বা অলৌকিক এবং এর মধ্যদিয়ে মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করা ও কোন কোন ক্ষেত্রে মানুষকে ঠকিয়ে পয়সা উপার্জন করা। আমরা জানি যে, আল্লাহ কোন কোন নবিকে বিশেষ উদ্দেশ্যে এমন মোজেজা দেখাবার ক্ষমতা দিয়েছিলেন। আর সেই ক্ষমতা ব্যবহার করার মধ্যদিয়ে, আল্লাহর গৌরব হয়েছে। মানুষ আল্লাহর ক্ষমতাকে জেনেছে। যেমন হজরত মুসা, হারুন, ইলিয়াস, আলিছা, শামূয়েল, ঈসা প্রমুখ নবিগণসহ আরো বেশ কয়েকজন নবিকে এরূপ কিছু ক্ষমতা আল্লাহ দিয়েছিলেন। যারা এসব অলৌকিক কাজ করেছেন। তারা সেসব কাজের মধ্যদিয়ে মহান আল্লাহর গৌরব বয়ে এনেছেন। মানুষ আল্লাহকে সম্মান ও ভয় করতে শিখেছে।

যারা রোগ-ব্যাধি, আয়-উন্নতি ইত্যাদির জন্য ভূতের আশ্রয় নেয়, তারা এসব কাজের মধ্যদিয়ে আল্লাহর অগৌরব করে। তারা তাদের এই কাজের মধ্যদিয়ে প্রকাশ করে যে, আল্লাহ তাদের রোগ-ব্যাধি থেকে সুস্থ করতে পারে না, আয়-উন্নতিও দিতে পারে না; বরং তাবিজ কবজ বা ভূতেরাই পারে। অথচ আল্লাহ তাঁর কালামে বলেন যেন আমরা মুনাজাতের মধ্যদিয়ে তার কাছে সরাসরি চাই। হজরত ঈসার উম্মতেরা তাঁর মধ্যদিয়ে, মুনাজাতের দ্বারা তাদের প্রয়োজনের কথা আল্লাহর কাছে বলার সুযোগ পেয়েছে। তাদের ভূতের কাছে যাবার কোন প্রয়োজন নেই। আল্লাহর কালামে লেখা আছে, “যারা ভূতের মাধ্যম হয় কিংবা যারা ভূতের সঙ্গে সম্বন্ধ রাখে তাদের কাছে যাওয়া চলবে না, কারণ তারা তোমাদের নাপাক করে তুলবে” (লেবীয় ১৯:৩১)। অতএব, যাদুবিদ্যা, ভূত-প্রেত-মাজার ইত্যাদির উপর বিশ্বাস এবং নির্ভরতা ঈসায়ীদের জন্য কোনভাবেই কাম্য নয়।

আল্লাহ মানুষকে তাঁর কালাম দিয়েছেন পড়ার জন্য এবং কালামে যা যা লেখা আছে তা নিজের জীবনে কাজে লাগানোর জন্য। আল্লাহ চান, তাঁর কালামের মধ্যে তিনি তাঁর যে ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন, তা যেন আমরা পালন করি। কিন্তু তা না করে যদি আমরা সেই কালামকে অথবা কালামে উল্লেখিত কোন গাছ অথবা তার শিকড়কে কিংবা কোন মাঝারের পানিকে, মাটিকে, তাবিজ-কবজ বানিয়ে গলায় ঝুলিয়ে রাখি বা হাতে বেঁধে রাখি তবে আল্লাহ অবশ্যই অসন্তুষ্ট হবেন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীরা কি ভাগ্য বা নিয়তি মানে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, ঈসায়ীরা ভাগ্য বা নিয়তিতে বিশ্বাস করে না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

ভাগ্যে যারা বিশ্বাস করেন, তাদের কথা হলো ভাগ্যে বা অদৃষ্টে যা লেখা আছে তা ঘটবেই, কোনভাবেই তা ফেরানো যাবে না। এর মানে এই যে, মানুষের কী হবে না হবে তা আগেই লেখা আছে। তাতে একজন মানুষ যা-ই করুক না কেন, কোনভাবেই তার ব্যতিক্রম হবে না। এই ধারণা অনুযায়ী মানুষ কাঠের পুতুলের মতো, তার নিজস্বতা বলতে কিছু নেই। পুতুলের মালিক যেমন করে তাকে নাচায় ঠিক তেমনি করে সে নাচে। সে নিজে ইচ্ছা করে কিছু করতে পারে না, তাকে দিয়ে যা করানো হয় কেবল তা করে।

আমরা এরূপ বিশ্বাস করি না। আমরা বিশ্বাস করি, ভাগ্যের নিয়ন্তা হচ্ছেন আল্লাহ স্বয়ং। আল্লাহ সবসময় তাঁর সন্তানদের মঙ্গল কামনা করেন এবং যা তাদের জন্য সবচেয়ে ভালো তাই করে থাকেন। আল্লাহ যখন মানুষ সৃষ্টি করেন তখন, তিনি তাঁর আপন সুরত ও সিফত দিয়ে সৃষ্টি করেন। এর মানে হলো আল্লাহ মানুষকে তাঁরই মতো ইচ্ছা, আবেগ ও অনুভূতি দিয়ে তৈরি করেন। মানুষ কাঠের পুতুলের মতো নয়, ইচ্ছা করলে সে কোনকিছুু পছন্দ করতে পারে, ভালোমন্দ বেছে নিতে পারে। ভালোকিছু বেছে নিয়ে, তার জন্য ভালো ভবিষ্যত নির্মাণ করতে পারে, আবার খারাপ কিছু পছন্দ করে দুর্ভাগ্য টেনে আনতে পারে।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ফেরেশতা, নবি, কেয়ামত, শেষবিচার, বেহেস্ত, দোজখ সম্পর্কে ঈসায়ীদের সাধারণ বিশ্বাস কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

বর্ণিত সবকিছু সম্পর্কে ঈসায়ীরা সাধারণভাবে বিশ্বাস করে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

উপরিউক্ত বিষয়গুলোতে বিশ্বাসের প্রশ্ন দেখা দিলে বলতে হয় যে, এদের প্রত্যেকটা সম্পর্কে কিতাবুল মোকাদ্দসে নির্দিষ্ট সীমারেখা অনুসারেই ঈসায়ীরা বিশ্বাস করে। এসব সম্পর্কে সমাজে নানা গল্প এবং কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। আমরা সরাসরি যতটুকু আল্লাহর কালামে লেখা আছে, ততটুকু বিশ্বাস করি, এর বাইরে কোন বিন্দু বিসর্গে আমাদের আস্থা নেই। উদাহরণ স্বরূপ:

ফেরেশতা: আমরা যতদূর আল্লাহর কালাম থেকে জানি, সৃষ্টির সময় আল্লাহ ফেরেশতাদের সৃষ্টি করেছিলেন। পাককালামে লেখা আছে, আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টিকাজ দেখে, ফেরেশতারা আল্লাহর প্রশংসা করেছিলেন। ফেরেশতাদের সম্পর্কে নানা ধর্মে নানা মতবাদ থাকলেও আমরা কালাম অনুসারে বিশ্বাস করি যে, ফেরেশতারা আল্লাহর সৃষ্ট আত্মা যাদের তাঁর সেবা করার জন্য এবং তাঁর সংবাদ বাহক হিসাবে তিনি তৈরি করেছেন। এই ফেরেশতাদের মধ্যে কিছু ফেরেশতা, সবচেয়ে বড় ও সুন্দর ফেরেশতা লুসিফারের সাথে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহে যোগ দিয়ে, শয়তানের অনুসারী বা মন্দ আত্মায় পরিণত হয়েছে। এসব মন্দ আত্মারা মহাশাস্তির অপেক্ষায় আছে। আর মানুষকে মন্দতায় টেনে নেবার জন্য সর্বক্ষণ চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এই মন্দ আত্মারা ঈসার উম্মতদের তেমন ক্ষতি করতে পারে না। কারণ হজরত ঈসা মন্দ আত্মার সকল শক্তি থেকে তাঁর উম্মতদের উদ্ধার করেছেন।

নবি: নবি মানে ভাববাদী, যিনি ভবিষ্যতের কথা বলেন। পাককিতাবের মধ্যে অনেক নবির বিষয়ে আমরা জাতে পাই; কোন দেশ বা ব্যক্তি যখন আল্লাহর কথা ভুলে গিয়ে পাপ, অনাচার, অবিচার ইত্যাদির মধ্যে গা ভাসিয়েছে তখন আল্লাহ নবিদের পাঠাতেন যারা ব্যক্তি, সমষ্টি এমন কি কোন দেশের বিপক্ষে ভবিষ্যত বাণী করতেন। নবিরা মাঝে মাঝে মানুষকে সৎ পথের বিষয়ে শিক্ষাও দিতেন। নবিদের কথা যারা শোনেনি তারা নানা শাস্তি লাভ করতো আর যারা শুনতো তারা আল্লাহর আশ্রয় ও রহমত লাভ করতো।

কেয়ামত: কেয়ামত মানে শেষকাল। আমরা শেষকাল সম্পর্কে বিশ্বাস করি। কেয়ামতের অনেক আলামত সম্পর্কে ইঞ্জিল শরিফে বর্ণিত আছে। কেয়ামতের সবচেয়ে বড় আলামতগুলোর মধ্যে ভীষণ দুর্ভিক্ষ, মহামারি, ভূমিকম্পের উল্লেখ আছে। সবচেয়ে বড় আলামত হলো, হজরত ঈসা মসীহ দ্বিতীয়বার পৃথিবীতে আসবেন। কেয়ামত সম্পর্কে হজরত ঈসা বলেন, “তোমাদের কানে যুদ্ধের আওয়াজ আসবে আর যুদ্ধের খবরাখবরও তোমরা শুনতে পাবে। কিন্তু সাবধান! এতে ভয় পেয়ো না কারণ এই সব হবেই; কিন্তু তখনও শেষ নয় এক জাতি অন্য জাতির বিরুেেদ্ধ এবং এক রাজ্য অন্য রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। অনেক জায়গায় দুর্ভিক্ষ ও ভূমিকম্প হবে। কিন্তু এসবই যন্ত্রণার শুরু” (ইঞ্জিল শরিফ, মথি ২৪:৬-৮)।

আরো লেখা আছে, “সেই সময়কার কষ্টের ঠিক পরেই সূর্য অন্ধকার হয়ে যাবে, চাঁদ আর আলো দেবে না, তারাগুলো আসমান থেকে খসে পড়ে যাবে এবং চাঁদ-সূর্য-তারা আর স্থির থাকবে না। এমন সময় আসমানে ইবনে-আদমের চিহ্ন দেখা দেবে। তখন দুনিয়ার সমস্ত লোক দুঃখে বুক চাপড়াবে। তারা ইবনে-আদমকে শক্তি ও মহিমার সঙ্গে মেঘে করে আসতে দেখবে। জোরে জোরে শিঙা বেজে উঠবে আর সঙ্গে সঙ্গে ইবনে-আদম তার ফেরেশতাদের পাঠিয়ে দেবেন। সেই ফেরেশতারা দুনিয়ার একদিক থেকে অন্যদিক পর্যন্ত চার দিক থেকে তাঁর বাছাই করা বান্দাদের একসঙ্গে জমায়েত করবেন” (ইঞ্জিল শরিফ, মথি ২৪:২৯-৩১)।

শেষবিচার: শেষবিচার সম্বন্ধে আমাদের বিশ্বাস হলো, হজরত ঈসাই মানুষের শেষ বিচার করবেন। “সেইসময় সমস্ত জাতির লোকদের তাঁর সামনে একসঙ্গে জমায়েত করা হবে। রাখাল যেমন ভেড়া আর ছাগল আলাদা করে, তেমনি তিনি সব লোকদের দু’ভাগে আলাদা করবেন। তিনি নিজের ডানদিকে ভেড়াদের আর বাঁদিকে ছগলদের রাখবেন। এরপরে বাদশাহ তাঁর ডানদিকের লোকদের বলবেন, ‘তোমরা যারা আমার পিতার দোয়া পেয়েছ, এস। দুনিয়ার শুরুতে যে রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে, তার অধিকারী হও।… পরে তিনি বাঁদিকের লোকদের বলবেন, বদদোয়াপ্রাপ্ত লোকেরা, আমার কাছ থেকে দূর হও। ইবলিশ এবং তার ফেরেশতাদের জন্য যেআগুন প্রস্তুত করা হয়েছে, তার মধ্যে যাও” (মথি ২৫:৩২-৪১)। তিনি ঈমানদাদেরও বিচার করবেন। তবে সেই বিচার হবে ভালো কাজের পুরস্কার দেবার জন্য। যারা বিশ্বস্তভাবে ভালো কাজ করেছেন, তিনি তাদের মূল্যায়ন করে পুরস্কার দেবেন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

গুনাহ থেকে নাজাতের প্রকৃত উপায় কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

গুনাহ থেকে নাজাতের উপায় হলো আল্লাহকে জানা এবং তিনি যে উপায় দিয়েছেন তাতে ঈমান এনে তা অনুসরণ করা।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

গুনাহ থেকে নাজাতের প্রকৃত উপায় জানতে হলে, প্রথমত জানতে হবে গুনাহ কী? গুনাহ মানে, আল্লাহর কাছ থেকে পৃথক হওয়া। গুনাহ হলো আল্লাহর অবাধ্যতা, যার পরিণাম মৃত্যু। এই মৃত্যু থেকে রক্ষা পাওয়াই হলো নাজাত। আল্লাহ পবিত্র এবং ধার্মিক। তিনি কখনও পাপ বা গুনাহ সহ্য করতে পারেন না। বেহেশতে ফেরেশতা যখন আল্লাহর অবাধ্য হয়ে গুনাহ করেছিলেন তখন আল্লাহ সেই প্রধান ফেরেশতার ক্ষেত্রে অনন্ত শাস্তির ব্যবস্থা করেছেন। সেই ফেরেশতা ইবলিস বা শয়তান নামে আখ্যাত। আল্লাহ মানুষ সৃষ্টি করে বলেছিলেন, তিনি চমৎকার জিনিস সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু হজরত আদম অবাধ্য হয়ে, সেই চমৎকারিত্ব নষ্ট করেছেন। আল্লাহর কাছ থেকে দূরে সরে গেছেন। আল্লাহ আদমকে সৃষ্টি করার পর ফুঁ দিয়ে প্রাণবায়ু এবং আত্মা দিয়েছিলেন কিন্তু আদম অবাধ্যতার মধ্যদিয়ে মৃত্যুকেই বেছে নিয়েছেন। তাঁরই জন্য আজ মানুষ মরে যায়, গাছপালা ধ্বংস হয়, রোগব্যধিতে আক্রান্ত হয় মানুষ, পশু ও গাছপালা। হিংস্রতার জন্ম এই অবাধ্যতার শাস্তি থেকে। সমস্ত রকমের অন্যায়, জোরজুলুম এবং ক্ষয়ক্ষতি ও দুঃখ-কষ্টের উৎপত্তি এখান থেকেই। আল্লাহ রহমানুর রাহিম। তিনি মানুষকে ভালোবাসেন। মানুষকে উদ্ধার করার জন্য ব্যবস্থা করে, হজরত ঈসা মসীহকে এই দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। আল্লাহ তাঁর কালামে বলেছেন, “যদি তুমি ঈসাকে প্রভু বলে মুখে স্বীকার কর এবং দিলে ঈমান আন যে, আল্লাহ তাঁকে মৃত্যু থেকে জীবিত করে তুলেছেন, তবেই তুমি নাজাত পাবে” (ইঞ্জিল শরিফ, রোমীয় ১০:৯)। হজরত ঈসা নিজের মুখে বলেন, “আমি আপনাদের সত্যই বলছি, যে কেউ আমার উপর ঈমান আনে সে তখনই অনন্ত জীবন পায়” (ইউহোন্না ৬:৪৭)

অতএব, নাজাত পাবার প্রকৃত উপায় হজরত ঈসার উপর ঈমান এনে, তাঁকে প্রভু বলে স্বীকার করা এবং হৃদয়ে গ্রহণ করা।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০