All posts by জাহাঙ্গীর

ঈসা মসীহ কি নিজেকে আল্লাহ বলে দাবি করেছেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

হজরত ঈসা নিজে কখনও বলেননি যে, ‘আমি নিজেই আল্লাহ’। কিন্তু আল্লাহর সব গুণাবলী তাঁর মধ্যে ছিল।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

হজরত ঈসা নিজেকে কখনও আল্লাহ বলে দাবি করেননি। এরূপ দাবি করলে তিনি কুফরি করতেন বরং তিনি আল্লাহর অধীনতা প্রকাশ করে নিজেকে আল্লাহর কাছে নত করেছেন। তাঁকে যখন সৎগুরু উল্লেখ করে তৎকালীন লোকেরা প্রশ্ন করতেন তখন তিনি বলতেন, ‘আমাকে কেন সৎ বলছ? সৎ কেবল একজনই আছেন।’ কেয়ামতের সময় সম্পর্কে সাহাবিরা জানতে চাইলে তিনি বলতেন, সেই সময় সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। সাহাবিরা যখন মুনাজাত করতে শিক্ষা দেবার জন্য হজরত ঈসা মসীহকে অনুরোধ করেছিলেন তখন শিক্ষা দিয়েছিলেন, তোমরা এইভাবে মুনাজাত করো, ‘হে আমাদের বেহেস্তি পিতা’। উপরিউক্ত উদ্ধৃতি থেকে বোঝা যায় তিনি সব সময় আল্লাহকে যথার্থ সম্মান দান করেছেন।

আমরা জানি হজরত ঈসা নিজে ইহুদি ছিলেন। ইহুদি ধর্মের প্রধান হুকুমগুলোর একটি হলো আল্লাহকে স্বীকার করা এবং সম্মান করা। তিনি নিজে তা মেনেছেন এবং অন্যদের শিক্ষা দিয়েছেন যে, আমাদের মাবুদ আল্লাহ এক, যা ছিল তাওরাত কিতাবের প্রধান শিক্ষা। অতএব, তিনি যদি নিজেকে আল্লাহ বলে দাবি করতেন তবে আল্লাহর বিরুদ্ধেই কাজ করতেন। একবার শয়তান হজরত ঈসাকে পরীক্ষায় ফেলতে এসে বলেছিল, ‘তুমি পাহাড়ের উপর থেকে লাফিয়ে পড়, তোমার কোন ক্ষতি হবে না।’ তখন শয়তানকে হজরত ঈসা বলেছিলেন, ‘তোমার মাবুদ আল্লাহকে তুমি পরীক্ষা করতে যেয়ো না।’ আল্লাহকে বরং হজরত ঈসা পিতা বলে ডাকতেন এবং পিতার মতোই সম্মান করতেন। নিশ্চিত মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে যিনি বলেছিলেন, ‘পিতা আমার ইচ্ছা নয় বরং তোমার ইচ্ছাই সিদ্ধ হোক’, তাহালে তিনি কীভাবে নিজেকে আল্লাহ বলে দাবি করতে পারেন?

তিনি নিজেকে আল্লাহ বলে দাবি করেন নি সত্য কিন্তু কালাম বলে যে, তিনি ‘আল্লাহর সমান থাকা আঁকড়ে ধরে রাখবার মতো এমন কিছু করেন নি’। এই কথাকে আমরা কেমন করে ব্যাখ্যা করব? এদ্বারা তো এটাই বোঝা যায় যে, একসময় তিনি আল্লাহর সমান ছিলেন। পরে নিজেকে নিচু করলেন। পাককালামের অন্যত্র আছে, ‘এই পুত্রই হলেন অদৃশ্য আল্লাহর হুবহু প্রকাশ’। যদি তা না হবেন তবে আমরা কেমন করে এই আয়াত বুঝব, ‘প্রথমেই কালাম ছিলেন, কালাম আল্লাহর সঙ্গে ছিলেন এবং কালাম নিজেই আল্লাহ ছিলেন’? হজরত ঈসার জন্মের সময় ফেরেশতার দেওয়া দু’টো নাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি ঈসা, যার মানে নাজাতদাতা আর দ্বিতীয়টি হলো, ‘ইম্মানুয়েল’ যার মানে আমাদের সাথে আল্লাহ। হজরত ঈসা নিজেই সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, যে আমাকে দেখেছে সে পিতাকে দেখেছেন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

হজরত ঈসার পুনরুত্থানের রহস্য কী? আসলেই কি তিনি মৃত্যু থেকে পুনর্জীবিত হয়ে উঠেছেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

হজরত ঈসার পুনরুত্থান কোন রহস্য নয়। বাস্তবিকই তিনি মৃত্যু থেকে পুনরুত্থিত হয়েছেন।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

একদিক থেকে ভাবলে মসীহের পুনরুত্থান এক বিরাট রহস্য। প্রকৃতির অমোঘ নিয়ম হচ্ছে মৃত্যু। ‘জন্মিলে মরিতে হবে, অমর কে কোথা রবে?’ চারণ কবির এই ছত্রকে ভুল প্রমাণিত করে আর এক জ্বলন্ত সত্যকে হজরত ঈসা মসীহ বাস্তবায়ন করেছেন। সেই জ্বলন্ত সত্য হলো নিষ্পাপকে কবরস্থ করে রাখা যায় না। ইঞ্জিল কিতাবে লেখা আছে, “গুনাহের বেতন মৃত্যু” (রোমীয় ৩:২৩)। আমরাও কথায় কথায় বলি, ‘লোভে পাপ পাপে মৃত্যু’। আসলেই তাই, গুনাহর কারণেই এই দুনিয়াতে মৃত্যু এসেছে। কিন্তু হজরত ঈসা তো গুনাহর স্বাদ গ্রহণ করেননি, তবে কি করে তাঁর মৃত্যু হবে। এজন্য তিনি জীবিত থাকাকালে নিজেই ভবিষ্যৎ বাণী করেছিলেন যে, তিনি মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠবেন। তিনি ইউনুস নবির উদাহরণ দিয়ে বলেছিলেন, ইউনুস যেমন তিনদিন মাছের পেটে ছিলেন তেমনি তিনিও তৃতীয় দিবসে কবর থেকে উঠে আসবেন।

সাহাবিদের জীবন পরিবর্তন: মানুষ যত বেশি মানসিক শক্তির অধিকারী হোক না কেন, মৃত্যুর কাছে হার মানতে বাধ্য। হজরত ঈসা মসীহের সাহাবিরা তাঁর যন্ত্রণাদায়ী মৃত্যুতে হতবিহ্বল হয়ে পড়েছিলেন এবং অনেকে পালিয়ে গিয়েছিলেন। হজরত ঈসার সাহাবি পিতর মসীহকে প্রাণের ভয়ে অস্বীকার করেছিলেন। সেই একই পিতর যখন দেখলেন যে হজরত ঈসা কবর থেকে উঠেছেন তখন তাঁর জীবনে এমন পরিবর্তন এসেছিল যে, তিনি মৃত্যুর মুখে যেতে ভয় পান নি। এমন কি রোমীয় শাসনকর্তাদের বিরুদ্ধে হজরত ঈসাকে মৃত্যুদণ্ড দেবার জন্য অভিযুক্ত করে বক্তব্য দিয়েছিলেন। এই কারণে অত্যাচারিত ও নির্যাতিত হতে কখনও আর পিছ পা হননি; অবশেষে সাক্ষ্য দিতে দিতে তিনি মৃত্যুবরণ করতেও প্রস্তুত ছিলেন এবং মৃতুকে আলিঙ্গন করেছেন। মূলত সাহাবিদের ভগ্নপ্রায় ঈমান এই পুনরুত্থানের মধ্য দিয়েই চাঙ্গা হয়ে উঠেছিল।

তাঁর বেহেস্তে চলে যাওয়া: একেশ্বরবাদীদের প্রায় সকলেই জানে ও বিশ্বাস করে যে, ঈসা মসীহকে আকাশে তুলে নেয়া হয়েছে। যুক্তির খাতিরে যদি ধরে নেয়া হয় যে, তিনি মৃত্যু থেকে উঠেননি, তবে তিনি কীভাবে আসমানে উঠে গেলেন? মানব বংশে জন্মগ্রহণকারী হিসাবে সকল মানুষের মৃত্যু তো অবধারিত। এও তো প্রাকৃতিক নিয়ম। ইঞ্জিল শরিফ অনুসারে হজরত ঈসা মানুষ হিসাবে জন্মেছিলেন, আর প্রাকৃতিক নিয়ম মেনে আমাদের হয়ে তিনি মৃত্যু বরণ করেছিলেন। যেহেতু তিনি নিজে নিষ্পাপ ছিলেন সেহেতু মৃত্যুর সাধ্য ছিল না তাঁকে ধরে রাখার। কবর থেকে জীবিত হয়ে ওঠার পর তিনি ৪০ দিন যাবৎ পৃথিবীতে ছিলেন এবং একসাথে ৫০০এরও বেশি লোককে দেখা দিলেন। অতপর সাহাবিদের সামনেই তিনি আসমানে উঠে গেলেন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসা মসীহ কি কোন নির্দিষ্ট জাতির জন্য এসেছেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, তিনি সকল মানুষের জন্যই এসেছেন।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

অনেকে এই প্রশ্ন করে যে, হজরত ঈসা তো ইসরাইল জাতির জন্য এসেছেন, তবে কেন আমরা তাঁকে সকল মানুষের নাজাতদাতা বলি? একদিক থেকে এটা যথার্থ যে হজরত ঈসা বনি ইসরাইল জাতির জন্য এসেছিলেন। আল্লাহ তাঁর লোকদের উদ্ধারের জন্যই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন এবং সেই প্রতিজ্ঞা অনুযায়ী মসীহকে পাঠিয়েছেন। এর স্বপক্ষে যুক্তির জন্য যে আয়াতগুলো সাধারণত ব্যবহার করা হয় তা হলো এই: হজরত ঈসা মসীহের জন্মের হাজার বছর আগে, হজরত ইশাইয়া নবি বনি-ইসরাইলদের অবাধ্যতা ও মসীহকে অগ্রাহ্য করার বিষয়ে যে ভবিষ্যত বাণী করেছিলেন, তার উদ্ধৃতি ইঞ্জিল শরিফে দেওয়া হয়েছে। মসীহ যে তাদের জন্যই আসবেন ও পরবর্তিতে এসেছেন, তাই বোঝা যায়। কালামে লেখা আছে, “গরু তার মালিককে চেনে, গাধাও তার মালিকের যাবপাত্র চেনে; কিন্তু ইসরাইল তার মালিককে চেনে না, আমার বান্দারা আমাকে বোঝে না” (ইশাইয়া ১:৩)। হজরত ঈসার জন্মের আগে ফেরেশতা বিবি মরিয়মের কাছে এসে বলেছিলেন, “তুমি তাঁর নাম ঈসা রাখবে, কারণ তিনি তাঁর লোকদের তাদের গুনাহ থেকে নাজাত দেবেন” (মথি ১:২১)। হজরত ঈসা তাঁর কাজ শুরু করার পর, পরজাতি এক মহিলা উপকার চাইলে, হজরত ঈসা বলেছিলেন, ‘সন্তানদের খাবার নিয়ে কুকুরদের দেওয়া উচিত নয়।’ এতেও হজরত ঈসার বনি-ইসরাইলদের পক্ষপাতিত্ব করেছেন বলে মনে হয়।

অতপর হজরত ঈসা বেহেশতে চলে যাবার পর হজরত পিতর ইসরাইলদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন, “আল্লাহ তাঁকেই বাদশাহ ও নাজাতদাতা হিসাবে নিজের ডানপাশে বসবার গৌরব দান করেছেন, যাতে তিনি বনি-ইসরাইলদের তওবা করবার সুযোগ দিয়ে, গুনাহের মাফ দান করতে পারেন” (প্রেরিত ৫:৩১)।

এগুলোই শেষ কথা নয়, আরো কথা আছে। বনি-ইসরাইল জাতির জন্য তাঁর আগমনের স্বীকৃতিতে যেমন আয়াত আছে, তার চেয়ে ঢের বেশি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকল মানুষের জন্য মসীহের আগমনের বিষয়ে। শুধু হজরত ঈসা মসীহ নন, পৃথিবীতে যত মহাপুরুষ এসেছিলেন তারা কেউ কোন বিশেষ গোত্রের জন্য আসেন নি, এসেছিলেন সকল মানুষের জন্য। নবিরা সকল মানুষকেই হেদায়েত করতেন আর যারা নবির কথা শুনতো তারা রক্ষা পেত। তেমনি হজরত ঈসাও যে কেবল ইসরাইলদের জন্য আসেন নি বরং দুনিয়ার সকল লোকদের জন্য এসেছিলেন, তা নিচের দেয়া আয়াতগুলো থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়।

ইঞ্জিল শরিফে হজরত ঈসা নিজে বলেন, “আল্লাহ মানুষকে এত মহব্বত করলেন যে, তাঁর একমাত্র পুত্রকে দান করলেন যেন যে কেউ তাঁর উপর ঈমান আনে সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন পায়” (ইউহোন্না ৩:১৬)। এই আয়াতে তিনি বনি-ইসলাইলদের কথা না বলে, মানুষকে বলেছেন। আর মানুষ বলতে পৃথিবীর সকল মানুষকে বোঝানো হয়েছে। কোন বিশেষ জাতি বা গোষ্ঠীর প্রশ্নই আসে না। আল্লাহ মানুষের দুঃখ দুর্দশা লাঘবের জন্যই মসীহকে এই দুনিয়াতে পাঠিয়েছিলেন। দুঃখার্ত মানুষের প্রতি সদয় হয়ে তাঁর আহ্বান, “তোমরা যারা ক্লান্ত ও বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছ, তোমরা সবাই আমার কাছে এস; আমি তোমাদের বিশ্রাম দেব” (মথি ১১:২৮)। হজরত ঈসা তাঁর বেহেশতে যাবার সময় শেষ আদেশ দিয়েছিলেন এভাবে, “বেহেশতের ও দুনিয়ার সমস্ত ক্ষমতা আমাকে দেওয়া হয়েছে। এই জন্য তোমরা গিয়ে সমস্ত জাতির লোকদের আমার উম্মত কর” (মথি ২৮:১৯)। হজরত ঈসা যদি কেবল ইসরাইল জাতির জন্য আসতেন তবে তিনি সমস্ত জাতি উল্লেখ করতেন না। এখানে পরিষ্কার করে বলা হয়েছে যেন সকল জাতির লোকদের কাছে যাওয়া হয়।

একদিন কোন এক পরিবারে শিক্ষা দেবার সময়, হজরত ঈসার মা ও ভাইয়েরা তাঁকে ডাকতে এসে ঘরের বাইরে দাঁড়িয়েছিলেন। কেউ গিয়ে হজরত ঈসাকে একথা জানালো, হজরত ঈসা তাদের বলেছিলেন, ‘আমার মা ও ভাই তারাই যারা আমার উপর ঈমান আনে এবং আমার শিক্ষা কাজে লাগায়।’ আমরা জানি হজরত ঈসা নিজে ব্যক্তিগত জীবনে পিতামাতার বাধ্য ছিলেন। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে তিনি এই দুনিয়াতে এসেছিলেন তা ছিল গোটা মানব জাতির উদ্ধার। আর সেই মানব জাতির মধ্যে তাঁর মা ও ভাইয়েরাও পড়ে। তাই হজরত ঈসার মা নিজেও হজরত ঈসাকে প্রভু বলে ডাকতেন। হজরত ঈসা বিবি মরিয়মের গর্ভে জন্মেছিলেন সত্য কিন্তু তিনি পবিত্র আত্মা বা পাকরুহ থেকে জন্মেছিলেন।

বনি-ইসরাইল জাতির মধ্যে শামাউন নামে একজন মহান ও ধার্মিক ব্যক্তি ছিলেন। তিনি মসীহের অপেক্ষায় ছিলেন। তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস ছিল যে, মসীহকে না দেখা পর্যন্ত তিনি মারা যাবেন না। তাঁর ঈমানের জোরে তিনি মসীহকে দেখা পর্যন্ত বেঁচেছিলেন। তিনি তাঁর বাণীতে হজরত ঈসার আগমনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন, “… মানুষকে নাজাত করবার জন্য সমস্ত লোকের চোখের সামনে তুমি যে ব্যবস্থা করেছ, আমি তা দেখতে পেয়েছি (লূক ২:৩০)। তিনি যদিও ইসরাইল জাতির লোক ছিলেন, তথাপি তিনি বলেন নি ইসরাইলকে, বলেছেন মানুষকে। অর্থাৎ আল্লাহর পরিকল্পনা কোন বিশেষ জাতির জন্য হতে পারে না, হলে তিনি পক্ষপাতদুষ্ট হবেন, সকলের সৃষ্টিকর্তা আল্লাহ তাঁর অনন্ত পরিকল্পনা সকল লোকের জন্যই করেছেন।

এক অর্থে বলা যায়, তিনি ইহুদিদের জন্যই এসেছিলেন, আর সেই ইহুদি হলো আসল ইহুদি। “বাইরের দিক থেকে যে ইহুদি সে আসল ইহুদি নয়, শরীরের বাইরে খৎনা করানো হলেই যে আসল খৎনা করা হলো তাও নয়। কিন্তু দিলে ইহুদি সে-ই আসল ইহুদি” (রোমীয় ২:২৮, ২৯)।

হজরত ইব্রাহিমের কাছে যে প্রতিজ্ঞা করা হয়েছিল তা ঈমানের মধ্যদিয়েই পূর্ণতা পেয়েছে। কারণ হজরত ইবরাহিম ঈমানের মাধ্যমেই ধার্মিক গণিত হয়েছিলেন। শরিয়তের হুকুম পালনের মধ্যদিয়ে হজরত ইবরাহিম ধার্মিক গণিত হননি কারণ তখন শরিয়ত আসেও নি। এর কারণ হলো, “শরিয়ত পালন করেই যদি কেউ দুনিয়ার অধিকার পেয়ে যায়, তবে তো ঈমান অকেজো হয়ে পড়ে আর আল্লাহর সেই ওয়াদারও কোন মূল্য থাকে না, কারণ শরিয়ত আল্লাহর গজবকে ডেকে আনে” (৪:১৪,১৫)। কিন্তু হজরত ঈসার জীবন দর্শন শরিয়ত নয়, তাঁর অভীষ্ট লক্ষ্য হলো ঈমানের মাধ্যমে নাজাত। যেমন করে হজরত ইবরাহিম কেবল ঈমানের দ্বারাই ধার্মিক হয়েছিলেন। এতে বোঝা যায় যে, তিনি কেবল ইসরাইল জাতি তথা শরিয়ত পালনকারী লোকদের জন্য আসেননি, এসেছেন পৃথিবীর সকল মানুষের জন্য (রোমীয় ৪:২৩,২৪)।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

হজরত ঈসার কি মৃত্যু হয়েছিল?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

হ্যাঁ, তাঁর মৃত্যু হয়েছিল। তবে মৃত্যুর তিনদিনের দিন তিনি পুনরুত্থিত হয়েছিলেন?

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

মানুষের জন্য জন্ম যেমন সত্য তেমনি মৃত্যুও অবধারিত। এ সত্যকে অতীতে যেমন কেউ লংঘন করতে পারে নি, বর্তমানেও পারছে না এবং ভবিষ্যতেও পারবে না। ইঞ্জিল শরিফে লেখা আছে, প্রত্যেক মানুষের জন্য একবার মৃত্যু তারপরে বিচার নির্ধারিত (ইবরানি ৯:২৭)। আরো লেখা আছে ‘কেননা পাপের বেতন মৃত্যু।’ অর্থাৎ যে প্রাণী পাপ করে সে মরবেই, এটা রূঢ় সত্য। হজরত ঈসা মানুষ হিসেবে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন আর মৃত্যু বরণ করাই তার পক্ষে স্বাভাবিক ছিল। এই চরম বাস্তবতা ও সত্যের কশাঘাতকে একমাত্র হজরত ঈসা জয় করেছিলেন; এর কারণ হলো, একমাত্র তিনিই জন্ম থেকে নিষ্পাপ ছিলেন। হজরত ঈসার জন্মের আগে ফেরেশতা কর্তৃক বিবি মরিয়মকে অবিবাহিত অবস্থায় বলা হয়েছিল, ‘পাকরুহ তোমার উপরে আসবেন এবং আল্লাহতা’লার কুদরতির ছায়া তোমার উপরে পড়বে। এই জন্য যে পবিত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করবেন তাঁকে ইবনুল্লাহ্ বলা হবে” (ইঞ্জিল শরিফ লূক ১:৩৫)।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসা মসীহ কি একজন নবির চেয়ে বেশিকিছু?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

হ্যাঁ। তিনি শুধু নবি ছিলেন না; ছিলেন নাজাতদাতা ও প্রভু।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

নবি আরবি শব্দ। এর অর্থ ভাববাদী অর্থাৎ যিনি ভবিষ্যতবাণী বলেন ও আল্লাহর পক্ষে কথা বলেন। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় যে, নবিরা শুধু ভবিষ্যতের কথাই বলেন না, যা ঘটে গিয়েছে তার তাৎপর্য ব্যাখ্যা করেন, তাৎক্ষণিকভাবে যা ঘটে তার কথা বলেন এবং মানুষকে আল্লাহর পথে চলার বিষয়ে শিক্ষা দেন। হজরত ঈসা একজন পরিপূর্ণ নবি ছিলেন তাতে কোন সন্দেহ নেই, কেননা তিনি নবিদের মতো তৎকালীন লোকদের প্রয়োজন অনুযায়ী শিক্ষা দিয়েছেন এবং পরকাল বিষয়ে প্রচুর ভবিষ্যতবাণী করেছেন। এছাড়া জীবনদায়ী কথামালা এবং কালজয়ী শিক্ষাগুলো তাঁর কাছ থেকেই এসেছে। তবে হজরত ঈসা কেবল এগুলোর মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিলেন না, এসবকে অতিক্রম করে তিনি নিজেই শিক্ষার উপমা এবং উপাদান হয়েছিলেন। প্রত্যেক নবিই শরিয়তের কথা বলেছেন, আইনের কথা বলেছেন, পথ দেখিয়ে দিয়েছেন। কেবল হজরত ঈসাই নাজাতদাতা যিনি মানুষের হয়ে, মানুষকে ভালোবেসে নিজেই গুনাহগারদের পক্ষে শাস্তি গ্রহণ করেছেন। একমাত্র তিনিই বলেছেন ‘আমিই পথ, সত্য ও জীবন।’ তাঁর এই দুনিয়াতে আসার উদ্দেশ্য নবি হওয়া নয়, উদ্দেশ্য ছিল যেন তিনি মানুষের জন্য নিজের জীবন কোরবানি দিতে পারেন, আর তিনি তাই করেছিলেন। সুতরাং তিনি কেবল নবি নন, তিনি হলেন মসীহ, নাজাতদাতা এবং প্রভু।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

হজরত ঈসা কি হজরত মুহম্মদ (স:) এর উম্মত হয়ে ফিরে আসবেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, তিনি হজরত মুহম্মদ (স:) এর উম্মত হয়ে ফিরে আসবেন না বরং তিনি ফিরে আসলে পর তৎকালীন জীবিত সকলেই তাঁর উম্মত হবে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

আগের আলোচনায় আমরা পরিষ্কার দেখেছি, যে কারণে আল্লাহ মানুষের কাছে নবি-পয়গাম্বরদের পাঠিয়েছেন তার সমাধান হজরত ঈসা মসীহের মধ্য দিয়েই হয়েছে। আগের সকল নবিই হজরত ঈসার কথা নানাভাবে ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন। এমনকি তাঁর জন্ম, কাজ, মৃত্যু, পুনরুত্থান, পুনরাগমন এবং তাঁর উভয় আগমনের উদ্দেশ্যও নবিরা তাঁদের ভবিষ্যত বাণীর মাধ্যমে প্রকাশ করেছিলেন। হজরত ঈসা কখনও কোথাও বলেন নি, তাঁর চলে যাবার পর আর একজন নবি আসবেন। ইঞ্জিল শরিফের কোথাও এমন কোন উদ্ধৃতি নেই যে মুহম্মদ নামে কোন নবি আসবেন এবং হজরত ঈসা তাঁর উম্মত হবেন। বরং হজরত ঈসার শিক্ষা ও দর্শন থেকে খুব স্পষ্ট করে বোঝা যায়, গুনাহগার মানুষের জন্য একমাত্র হজরত ঈসাকেই প্রয়োজন। কেননা তিনিই গুনাহগার মানুষের জন্য প্রাণ দিয়েছেন; তাঁর মধ্য দিয়েই ইহকাল ও পরকালের নিশ্চয়তা এসেছে।

হজরত ঈসা কেন দুনিয়াতে ফিরে আসবেন, তার কারণ তিনি নিজেই বলে গেছেন। তিনি বলেন, “আমি গিয়ে তোমাদের জন্য জায়গা ঠিক করে আবার আসব আর আমার কাছে তোমাদের নিয়ে যাব যেন আমি যেখানে থাকি তোমরাও সেখানে থাকতে পার” (ইউহোন্না ১৪:৩)। এই আয়াতের মর্মার্থ হলো, হজরত ঈসা তাঁর উম্মতদের নেবার জন্যই আবার আসবেন, মানুষকে অন্যকারো উম্মত বানাতে নয়। হজরত ঈসা নিজেকে ইবনে আদম বলেও পরিচয় দিতেন এবং উম্মতদের মেষ বা ভেড়া বলতেন। একবার তিনি বলেছেন, “ইবনে-আদম সমস্ত ফেরেশতাদের সঙ্গে নিয়ে যখন নিজের মহিমায় আসবেন, তখন তিনি বাদশাহ হিসাবে তাঁর সিংহাসনে মহিমার সঙ্গে বসবেন। সেই সময় সমস্ত জাতির লোকদের তাঁর সামনে একসঙ্গে জমায়েত করা হবে। রাখাল যেমন ভেড়া আর ছাগল আলাদা করে, তেমনি তিনি সব লোকদের দু’ভাগে আলাদা করবেন। তিনি নিজের ডানদিকে ভোড়াদের আর বাঁ দিকে ছাগলদের রাখবেন। এরপরে বাদশাহ তাঁর ডানদিকের লোকদের বলবেন, ‘তোমরা যারা আমার পিতার দোয়া পেয়েছ, এস। দুনিয়ার শুরুতে যে রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে, তার অধিকারী হও (মথি ২৫:৩১-৩৫)। এই আয়াতগুলোতেও হজরত ঈসার দ্বিতীয় আগমনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলা হয়েছে।

হজরত ঈসা কি বলেছেন যে আর একজন নবি আসবেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, তিনি বলেননি যে, আর এক জন নবি আসবেন।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

কেউ কেউ ব্যাখ্যা দেন, হজরত ঈসা ভবিষ্যতবাণী করে গেছেন যে, দুনিয়াতে আর একজন নবি আসবেন। আসলে এই কথার যৌক্তিকতা আমরা ইঞ্জিল শরিফে দেখতে পাই না। যারা এই যুক্তি দেন তারা ইঞ্জিল শরিফের একটি আয়াতকে তুলে ধরেন। সেই আয়াতটি হলো, “আমি পিতার কাছে চাইব, আর তিনি তোমাদের কাছে চিরকাল থাকবার জন্য আর একজন সাহায্যকারীকে পাঠিয়ে দেবেন। সেই সাহায্যকারী সত্যের রুহ” (ইঞ্জিল ইউহোন্না ১৪:১৬)। অনেকে এই আয়াতকে ব্যাখ্যা করে বলেন যে, তিনি তো আর একজন নবির আসার কথা বলেছেন সুতরাং তিনি নিজে শেষ নবি নন। কিন্তু গভীরভাবে কালাম পাঠ করলে বোঝা যায়, তিনি অন্যকোন নবির আগমনের কথা বলেননি। লক্ষ্য করুন:

প্রথমত: তিনি যার আসবার কথা বলেছেন তিনি কোন মানুষ নন, তিনি হচ্ছেন রুহ। লেখা আছে, “সেই সাহায্যকারী সত্যের রূহ। দুনিয়ার লোকেরা তাঁকে গ্রহণ করতে পারে না, কারণ তারা তাঁকে দেখতে পায় না এবং জানেও না (ইঞ্জিল শরিফ, ইউহোন্না ১৪:১৭)। যদি নবির কথা বলতেন তবে পরবর্তিতে নবিকে তো দেখা না যাবার কথা নয়, নবিরা তো রক্তে মাংসে গড়া মানুষ, তাদের দেখা যায়।

দ্বিতীয়ত: হজরত ঈসা যাকে পাঠাবার কথা বলেছিলেন তিনি চিরকালের জন্য আসবার কথা। যেমন লেখা আছে, “আর তিনি চিরকাল থাকবার জন্য একজন সাহায্যাকারীকে পাঠিয়ে দেবেন” (ইঞ্জিল শরিফ, ইউহোন্না ১৪:১৬)। হজরত ঈসার পর যারাই এই পৃথিবীতে এসে নবি দাবি করেছিলেন তাদের কেউ চিরকাল থাকেননি বরং সকলে মৃত্যুবরণ করেছেন। একমাত্র হজরত ঈসা এবং তাঁর পাকরুহই চিরকাল আছেন।

তৃতীয়ত: হজরত ঈসা যাকে পাঠাবেন বলেছিলেন, তাঁর বিষয়ে তিনি বলেছিলেন যে, তিনি তাঁর নামে অর্থাৎ হজরত ঈসার নামেই আসবেন। আমরা বাস্তবে হজরত ঈসার নামে অন্যকোন নবিকে দুনিয়াতে আসতে শুনিনি বা দেখিনি। লেখা আছে, “সেই সাহায্যকারী অর্থাৎ পাকরুহ যাঁকে পিতা আমার নামে পাঠিয়ে দেবেন, তিনিই সব বিষয়ে তোমাদের শিক্ষা দেবেন, আর আমি তোমাদের যাকিছু বলেছি সেই সব তোমাদের মনে করিয়ে দেবেন (ইঞ্জিল শরিফ, ১৪:২৬)। দেহধারী যত নবি দুনিয়াতে এসেছেন, তাদের কাউকেই দেখা যায়নি যিনি হজরত ঈসার নামে এসে, তিনি যা বলেছেন তা শিক্ষা দিয়েছেন। তবে তাঁর পাকরুহের পরিচালনায়, উম্মতেরাই তাঁর বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন।

চতুর্থত: হজরত ঈসা বলেন, “যে সাহায্যকারীকে আমি পিতার কাছ থেকে তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেব, তিনি যখন আসবেন তখন তিনিই আমার বিষয়ে সাক্ষি দেবেন” (ইঞ্জিল শরিফ, ইউহোন্না ১৫:২৬)। হজরত ঈসার বেহেশতে চলে যাবার পর আর কোন নবি আসেন নি যিনি তাঁর বিষয়ে শেষপর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন। কেউ কেউ তাঁর বিষয়ে কিছু কথা বললেও ইঞ্জিল শরিফ অনুযায়ী তাঁর যে শিক্ষা তা থেকে সরে গেছেন। কিন্তু যারা মনেপ্রাণে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, এমন কি মৃত্যু বরণ করেছিলেন তারা হলেন তাঁর সাহাবি এবং উম্মত; তাঁরা কখনও নিজেদের নবি দাবি করেন নি কিংবা আলাদা কোন ধর্মও প্রতিষ্ঠা করেন নি।

পঞ্চমত: তিনি বলেছেন, “সেই সত্যের রুহ আমার মহিমা প্রকাশ করবেন, কারণ আমি যা করি ও বলি তা-ই তিনি তোমাদের কাছে প্রকাশ করবেন (ইঞ্জিল শরিফ, ইউহোন্না ১৬:১৪)। এখন প্রশ্ন হলো কোন নবি যদি এসে ঈসা মসীহের মহিমা প্রকাশ করেন, তবে সংগত কারণেই মানুষ ঈসা মসীহেরই অনুসরণ করবে; অন্য কোন নবির প্রয়োজন হবে না।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

একমাত্র ঈসাই কি সবশেষে আসবেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

হ্যাঁ, একমাত্র ঈসাই সবশেষে দুনিয়াতে আসবেন।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

হজরত ঈসা দুনিয়া ছেড়ে চলে যাবার আগে বলেছিলেন, “তোমাদের মন যেন আর অস্থির না হয়। আল্লাহর উপর বিশ্বাস কর, আমার উপরও বিশ্বাস কর। … আমি গিয়ে তোমাদের জন্য জায়গা ঠিক করে, আবার আসব, আর আমার কাছে তোমাদের নিয়ে যাব; যেন আমি যেখানে থাকি তোমরাও সেখানে থাকতে পার” (ইঞ্জিল শরিফ ইউহোন্না ১৪:১-৩)। পৃথিবীতে অনেক নবি এসেছেন এবং সবাই একের পর এক পৃথিবীরই আমোঘ নিয়মানুযায়ী মৃত্যু বরণ করেছেন। একমাত্র ব্যতিক্রম হজরত ঈসা। তিনি নিজের গুনাহর কারণে নয়, পৃথিবীর সকল মানুষের গুনাহর কারণে মৃত্যু বরণ করেছেন, কবর থেকে পুনর্জীবিত হয়েছেন, বেহেস্তে চলে গিয়েছেন এবং পুনরায় দুনিয়াতে আসবেন। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো তিনি সবশেষে কিয়ামতের শেষে আবার দুনিয়াতে ফিরে আসবেন। অতএব, তিনিই শেষ নবি।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

হজরত ঈসা কি শেষনবি ছিলেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

হ্যাঁ, হজরত ঈসা প্রথম ও শেষ নবি ছিলেন।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

পৃথিবীতে ধর্মধারী যত মহাপুরুষ এসেছেন, তাঁদের অনুসারীরা প্রায় সবাই তাদেরকে নিজেদের নবি, রসুল, পয়গাম্বর, দেবতা, অবতার, একমাত্র উপায় এবং সর্বশেষ ভরসা বলে দাবি করেন। যার ফলে পৃথিবীতে এত ধর্ম, এত মত এবং এত পথ সৃষ্টি হয়েছে। তবে কয়েকজন মহাপুরুষ যেমন হজরত মুসা, হজরত দাউদ, হজরত ইশাইয়া, হজরত ইয়াহিয়া হজরত ঈসাকে মানব জাতির নাজাতদাতা হিসাবে স্বীকার করেছেন। তাঁদের ভবিষ্যতবাণী ও দাবি অনুযায়ী তিনি হবেন মানব মুক্তির একমাত্র উপায়। সেই অনাগত নবিও উদ্ধারকর্তাকে তাঁরা কেউ প্রভু বলে, কেউ নাজাতাদাতা বলে স্বীকার করেছেন। সর্বশেষে হজরত ইয়াহিয়া যিনি হজরত ঈসার ছয়মাস আগে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তিনি সুস্পষ্ট ও দ্যর্থহীনভাবে ঈসা মসীহের বিষয়ে ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তিনি মসীহের জুতার ফিতার বাঁধন খুলবারও উপযুক্ত নন। এমনকি স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী হজরত ঈসা যখন তাঁর কাছে তরিকাবন্দি নিতে গিয়েছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমারই বরং আপনার কাছ থেকে তরিকাবন্দি নেওয়া উচিত।’ একজন নবি হয়ে আর একজন নবির কাছে এমন সমর্পণ আর কোন নবির কাছে করেছে বলে দেখা যায় না। অতপর আর কেউ আসবেন কিনা সে সম্পর্কে যেমন তাঁরা কিছু বলেননি, তেমনি হজরত ঈসা নিজেও কখনও বলেননি যে অন্য একজন আসবেন।

মসীহ তাঁর দাবির যথার্থতা প্রমাণ করেছেন: ‘হজরত ঈসা শেষ নবি কি না’ এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে, হজরত ঈসার আগমনের উদ্দেশ্য পরিষ্কারভাবে জানা দরকার। হজরত ঈসা বলেন, “যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁর কাজ শেষ করাই হলো আমার খাবার” (ইউহোন্না ৪:৩৪)। এই আয়াত থেকে পরিষ্কার বুঝা যায়, তিনি একটি বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে এই দুনিয়াতে এসেছিলেন, আর প্রতিনিয়ত সেই কাজেই তিনি নিবেদিত ছিলেন। এখন প্রশ্ন হলো কি সেই কাজ? হজরত ঈসা বলেন, “আমিই সেই জীবন্ত রুটি যা বেহেশত থেকে নেমে এসেছে। এই রুটি যে খাবে সে চিরকালের জন্য জীবন পাবে। আমার শরীরই সেই রুটি। মানুষ যেন জীবন পায় সেই জন্য আমি আমার এই শরীর দেব” (ইউহোন্না ৬:৫১)। আমরা জানি হজরত ঈসা তাঁর জীবন কোরবানি দিয়ে মানুষকে নাজাত করতে এসেছিলেন। আর সেই কাজ তিনি ক্রুশের উপর শেষ করেছেন। মৃত্যুর সময় তিনি বলেছিলেন ‘শেষ হয়েছে’। অর্থাৎ তিনি তাঁর কাজ যথার্থই শেষ করেছিলেন। এখন কথা হলো, তিনি যদি মানবজাতির গুনাহ থেকে নাজাতের কাজ শেষ করেন, তবে কি তিনি শেষ নবি নন? হজরত ঈসা বলেন, “…আমি আল্ফা এবং ওমেগা অর্থাৎ আমি শুরু ও আমি শেষ। যার পিপাসা পেয়েছে তাকে আমি জীবন পানির ঝর্ণা থেকে বিনামূল্যে পানি খেতে দেব” (প্রকাশিত কালাম ২১:৬)।

সমস্যার সমাধান তাঁর মধ্য দিয়েই হয়ে গেছে: মানুষের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হলো অনন্ত জীবন। সেই জীবন ইহকাল ও পরকালের জীবন। এইজন্যই মানুষ এত ধর্ম-কর্ম করে, পীর-ফকির ধারণ করে, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পূজা-পার্বণ ইত্যাদি পালন করার কাজে সময় দেয়। প্রশ্ন হলো, তাতে কি মানুষ জীবনের নিশ্চয়তা লাভ করতে পারছে। হজরত ঈসা মসীহ দুনিয়াতে আসার আগে, মানুষের মধ্যে বিশেষত এক আল্লাহ বিশ্বাসী লোকদের মধ্যে অনেক ধর্মীয় নিয়ম কানুন ছিল এবং তাঁর পরেও অনেকে নানা ধর্মীয় নিয়মকানুন পালন করছে। কেউ কি অনন্ত জীবনের নিশ্চয়তা লাভ করতে পারছে? হজরত ঈসা দাবি করেছেন, “আমিই পুনরুত্থান ও জীবন। যে আমার উপর ঈমান আনে সে মরলেও জীবিত হবে আর যে জীবিত আছে এবং আমার উপর ঈমান আনে সে কখনও মরবে না (ইঞ্জিল শরিফ ১১: ২৫, ২৬)।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসা মসীহ কি আল্লাহর পুত্র?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

হ্যাঁ, হজরত ঈসা আল্লাহর পুত্র, তবে মানবিক ধারণাপ্রসূত পুত্র নয়।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

ত্রিত্ব বিষয়ে আলোকপাত করতে গিয়ে, হজরত ঈসা মসীহের পুত্রত্ব নিয়ে ইতোমধ্যেই কিছু আলোচনা হয়েছে। এবার এই বিষয়টি ভিন্ন আঙ্গিকে তুলে ধরতে চাই। এই প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ অথবা না উভয়ই দেওয়া যায়। আপনি হয়তো ভাববেন এ হলো প্রশ্ন এড়িয়ে যাবার ফন্দি। আসলে তা নয়। আপনি দয়া করে, ধৈর্য রেখে শুনুন।

আল্লাহর কথা: প্রথমতঃ বলতে হয় যে, হ্যাঁ তিনি আল্লাহর পুত্র। এই স্বীকৃতি আল্লাহ নিজেই দিয়েছেন। হজরত ঈসা মসীহের জন্মের সময় ফেরেশতা বিবি মরিয়মকে বলেছিলেন, “পাকরুহ তোমার উপরে আসবেন এবং আল্লাহতা’লার কুদরতির ছায়া তোমার উপরে পড়বে। এই জন্য যে পবিত্র সন্তান জন্মগ্রহণ করবেন তাঁকে ইব্নুল্লাহ বলা হবে” (ইউহোন্না ১:৩৫)। হজরত ঈসার তরিকাবন্দির সময় আল্লাহ স্বয়ং বলেছিলেন, ইনি আমার প্রিয় পুত্র এঁর উপর আমি সন্তুষ্ট। এই পুত্র ধারণাটি হজরত দাউদ তাঁর জবুর কিতাবেও উল্লেখ করেছিলেন। ইশাইয়া নবি মসীহের জন্মের হাজার বছর আগে এই পুত্রবিষয়ক ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন। তিনি ইশাইয়া কিতাবের ৯:৫ আয়াতে বলেন, “… একটি ছেলে আমাদের জন্য জন্মগ্রহণ করবেন, একটি পুত্র আমাদের দেওয়া হবে।”

হজরত ঈসার নিজের কথা: হজরত ঈসা নিজে এই পুত্র নামটি মেনে নিয়েছিলেন। তিনি সর্বদা আল্লাহকে পিতা বলে ডাকতেন। মুনাজাতের সময় প্রত্যেকবার তা উল্লেখ করতেন এবং তাঁর সাহাবিদেরকেও আল্লাহকে পিতা বলে ডাকতে উৎসাহিত করতেন। শিক্ষা দেবার সময় তিনি নিজের সম্পর্কে পুত্র কথাটি ব্যবহার করতেন। উদাহরণস্বরূপ, একবার তিনি এক ইহুদি নেতার সাথে কথা বলার সময় নিজের সম্পর্কে বলেন, “আল্লাহ মানুষকে এত মহব্বত করলেন যে, তাঁর একমাত্র পুত্রকে তিনি দান করলেন, যেন যে কেউ তাঁর উপর ঈমান আনে সে বিনষ্ট না হয় কিন্তু অনন্ত জীবন পায়” (ইউহোন্না ৩:১৬)। হজরত ঈসা আরো বলেন, “পিতা পুত্রকে মহব্বত করেন এবং তাঁর হাতে সমস্তই দিয়েছেন। যে কেউ পুত্রের উপর ঈমান আনে সে তখনই অনন্ত জীবন পায়” (ইউহোন্না ৩:৩৫,৩৬)। হজরত ঈসা মুনাজাত করে একবার বলেছিলেন, “পিতা, সময় এসেছে। তোমার পুত্রের মহিমা প্রকাশ কর যেন পুত্রও তোমার মহিমা প্রকাশ করতে পারেন” (ইউহোন্না ১৭:১)। এসব আয়াতে স্পষ্ট দেখা যায় যে, তিনি নিজেকে আল্লাহর পুত্র বলে দাবি করেছেন।

সাহাবিদের কথা: সাহাবিরা হজরত ঈসাকে পুত্র হিসেবে মেনে নিয়েছিলেন। পাকরুহের পরিচালনায় সাহাবি পিতর বলেছিলেন, “আপনি মসীহ, জীবন্ত আল্লাহর পুত্র।” হজরত পৌল বলেন, “… তিনি (আল্লাহ) অন্ধকারের রাজ্য থেকে আমাদের উদ্ধার করে তাঁর প্রিয়পুত্রের রাজ্যে এনেছেন। এই পুত্রের সঙ্গে যুক্ত হয়ে আমরা মুক্ত হয়েছি অর্থাৎ আমরা গুনাহের মাফ পেয়েছি” (কলসীয় ১:১৩,১৪)। হজরত ইউহোন্না বলেন, “যাঁকে আমরা দেখেছি এবং যাঁর মুখের কথা আমরা শুনেছি তাঁর বিষয়েই তোমাদের জানাচ্ছি। আমরা তা জানাচ্ছি যেন তোমাদের ও আমাদের মধ্যে একটা যোগাযোগ-সম্বন্ধ গড়ে ওঠে। এই যোগাযোগ হলো পিতা ও তাঁর পুত্র ঈসা মসীহ এবং আমাদের মধ্যে” (১ ইউহোন্না ১:৩)।

ঔরসজাত পুত্র নয়: দ্বিতীয়তঃ বলতে হয় যে না, তিনি মানুষের ধারণাপ্রসূত শাব্দিক অর্থে আল্লাহর পুত্র ছিলেন না। অর্থাৎ আল্লাহর কালামে দৈহিক অর্থে পুত্র কথাটা ব্যবহার করা হয় নি। শাব্দিক অর্থে পুত্র হলো যদি কেউ বিয়ে করে এবং স্বামী-স্ত্রী হিসেবে স্বাভাবিক জীবন যাপন করে আর তার ফলে যে পুরুষ সন্তান জন্ম হয় তাকে পুত্র বলা হয়। কিন্তু হজরত ঈসার বেলায় তা প্রযোজ্য নয়। কারণ নবিদের কিতাব, ইঞ্জিল শরিফ এমন কি কোরান শরিফও এই সাক্ষ্য দেয় যে, হজরত ঈসা পাকরুহের দ্বারা জন্ম লাভ করেছেন। এক কথায় বলা যায় তাঁর জন্মের ব্যাপারে মা-কিংবা বাবা কারোরই কোন ভূমিকা ছিল না বরং আল্লাহর কুদরতিতেই তাঁর জন্ম হয়েছে। কিতাবের শিক্ষার আলোকে বোঝা যায়, এই পুত্র কোন শারীরিক কামনা বাসনার ঔরসজাত পুত্র নয়; এ হলো, হজরত ঈসার সাথে আল্লাহর এক নিবিড় ও গভীর সম্পর্কের প্রকাশ। যারা ঈসা মসীহের উপর ঈমান আনে, ইঞ্জিল শরিফে তাদেরও আল্লাহর সন্তান বলা হয়েছে। তবে কীভাবে সেই সন্তানত্ব লাভ করে তার ব্যাখ্যা ইঞ্জিল শরিফ পড়লেই জানা যায় এবং হজরত ঈসার পুত্রত্বের ব্যাখ্যাও তা থেকে লাভ করা যায়। ইঞ্জিল শরিফে লেখা আছে, “… যতজন তাঁর উপর ঈমান এনে তাঁকে গ্রহণ করল, তাদের প্রত্যেককে তিনি আল্লাহর সন্তান হবার অধিকার দিলেন। এই লোকদের জন্ম রক্ত থেকে হয়নি, শারীরিক কামনা বা পুরুষের বাসনা থেকেও হয় নি কিন্তু আল্লাহ থেকেই হয়েছে” (ইউহোন্না ১:১২, ১৩)। হজরত ঈসার জন্মও একইভাবে কোন কামনা বাসনার ফল নয়, এ হলো আল্লাহর মহাকুদরতির ফসল। অতএব, শাব্দিক অর্থে তিনি আল্লাহর পুত্র নন, বরং রুহানি অর্থে।

কিতাবি উদাহরণ: বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য আরো কিছু উদাহরণ দেয়া যাক। হরজত ঈসা শিক্ষা দেবার সময় নিজের সম্পর্কে বিভিন্ন দাবি করেছেন। তিনি বলেছেন, “আমি দুনিয়ার আলো, আমিই আঙুর লতা, আমিই জীবন খাদ্য, আমিই জীবন্ত পানি, আমিই জীবন্ত পাথর, আমি দরজা, আমি উত্তম মেষপালক।” একবার ভেবে দেখুন তো, যদি এই শব্দগুলোর প্রত্যেকটিকে শাব্দিক অর্থে ধরা হতো, তবে হজরত ঈসার অস্তিত্ব কোথায় থাকতো? আমরা ব্যবহারিক জীবনে সকল শব্দ দিয়ে শাব্দিক অর্থ বুঝাই না। উদাহরণস্বরূপ, আমরা বলি, আল্লাহ নিরাকার কিন্তু আমরাই মুনাজাত করে বলি, ‘হে আল্লাহ তুমি আমার দিকে চোখ তুলে দেখ, আমার মুনাজাত শোন, কিংবা আমার দিকে হাত বাড়াও।’ আমাদের এই কথাগুলো যদি শাব্দিক বিবেচনায় আনি, তাহলে বলতে হবে আল্লাহর দৃশ্যমান চোখ আছে, কান আছে আর হাতও আছে। আসলে কি তাই? না, তা সঠিক নয়। আল্লাহ হচ্ছেন রুহ, তিনি নিরাকার। আমরা আমাদের বোধের উপযুক্ত করে, আমাদের ভাষা দিয়ে, তাঁর উপর শব্দ আরোপ করি। তাই বলে যে, তিনি শুনতে পান না তা নয়। তিনি অসীম হলেও আমাদের সীমাবদ্ধতা জানেন, আর আমাদের মুনাজাত শোনেন এবং তার উত্তর দেন।

বিষয়ের গভীরে: অনেক বিষয় আছে যা যেভাবে বলা হয় তার বিপরীত অর্থেই বলা হয়। যেমন হজরত ঈসা একবার শিক্ষা দিতে গিয়ে বলেন, “আমি দুনিয়াতে শান্তি দিতে এসেছি এই কথা মনে করো না। আমি শান্তি দিতে আসিনি বরং মানুষকে মানুষের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে এসেছি; ছেলেকে বাবার বিরুদ্ধে, মেয়েকে মায়ের বিরুদ্ধে, স্ত্রীকে শাশুড়ির বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে এসেছি” (ইঞ্জিল শরিফ মথি ১০:৩৪,৩৫)। এই আয়াত শুনলে মনে হয় যেন হজরত ঈসা একজন হঠকারী ব্যক্তি, তিনি কারো মঙ্গল চান না। কিন্তু তিনি যদি অমঙ্গল চান তবে তিনি কেন বলেছেন, “তোমরা যারা ক্লান্ত ও বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছ, তোমরা সবাই আমারা কাছে এস; আমি তোমাদের বিশ্রাম দেব (ইঞ্জিল শরিফ মথি ১১:২৮)? অথবা কেন তিনি বলেছেন, “আমি তোমাদের জন্য শান্তি রেখে যাচ্ছি, আমারই শান্তি আমি তোমাদের দিচ্ছি; দুনিয়া যেভাবে দেয় আমি সেভাবে দিই না। তোমাদের মন যেন অস্থির না হয় এবং মনে ভয়ও না থাকে” (ইঞ্জিল শরিফ ইউহোন্না ১৫:২৭)? প্রথম আয়াতে তিনি না বোধক বলেছেন ঈমান আনার পার্থিব ফলাফল বোঝাবার জন্য। অর্থাৎ সত্যকে জানার ফলে, আমাদের আত্মীয় ও প্রতিবেশীরা যারা সত্যকে জানে না তারা আমাদের বিপক্ষে যায় আর এটাই স্বাভাবিক। কারণ সত্য আর মিথ্যা এক হতে পারে না, আঁধার এবং আলো একসাথে চলে না। কিন্তু আমরা যদি কথিত কথার গভীর অর্থ কিংবা প্রকৃত অর্থ বোঝার চেষ্টা না করি, তবে অনেক সময় চরম ভুল হতে পারে। ঠিক তেমনি হজরত ঈসাকে পুত্র বলার গভীর অর্থ লুকিয়ে আছে। আর সেই লুকিয়ে থাকা অর্থ হলো, পুত্র মানে প্রকাশক, যিনি আল্লাহকে হুবহু প্রকাশ করেছেন এবং সেই উদ্দেশ্যেই তিনি এই দুনিয়াতে এসেছেন। পাককালামে লেখা আছে, “আল্লাহকে কেউ কখনও দেখেনি। তাঁর সঙ্গে থাকা সেই একমাত্র পুত্র, যিনি নিজেই আল্লাহ, তিনিই তাঁকে প্রকাশ করেছেন” (ইউহোন্না ১:১৮)।

বাস্তব উদাহরণ: বাস্তব জীবনে আমরা অন্যদের বাবা কিংবা মা বলে ডাকি অহরহ। ভিক্ষুকেরা আমাদের বলে, “বাবা, একটা টাকা দিন।” আমরাও তদের বলি, “দিলাম তো বাবা, এবার যাও।” কিংবা মাগো একমুঠ ভিক্ষা দেন। এছাড়া বাবা মোহছেন আউলিয়া, বাবা শাহ্‌জালাল, বাবা মজু শাহ, বাবা ভাণ্ডারী, খাজা বাবা, দয়াল বাবা, পীর বাবা আরো কত না বাবা আমাদের আছে। আসলে কি আমরা তাদের শাব্দিক অর্থে বাবা বলি? কখনও না। মহাত্মা গান্ধী যদি শাব্দিক অর্থে ভারতীয়দের পিতা এবং শেখ মুজিব যদি শাব্দিক অর্থে আমাদের সকলের পিতা হতেন, তবে কত হাজার কোটি মায়ের দরকার হতো তা অংক কষে বলা যেত না।

অতএব, হজরত ঈসা আল্লাহর পুত্র তবে শাব্দিক অর্থের বিবেচনায় নয়; রুহানি অর্থে, যার মানে প্রকাশক। কেননা একমাত্র তিনিই আল্লাহকে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করেছেন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০