All posts by জাহাঙ্গীর

ঈসা মসীহের সাহাবিরাই বর্তমান যে ইঞ্জিল শরিফ পাওয়া যায় তা লিখেছেন, আমরা তা কেন মানবো?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ইঞ্জিল শরিফ হজরত ঈসার সাহাবিরা লিখলেও তা আল্লাহর কালাম হিসাবে স্বীকৃত।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

বলা হয়ে থাকে যে, ঈসা মসীহের সাহাবিরাই অর্থাৎ সাধারণ মানুষেরাই ইঞ্জিল শরিফের লেখক। সুতরাং আমাদের সেই লেখা পড়ার ও মানার কোন যৌক্তিকতা নেই। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, আল্লাহ সাধারণত খুব সাধারণ মানুষকেই তাঁর কাজে ব্যবহার করেছেন। আল্লাহ হজরত ঈসার আগেকার যে নবিদের মনোনীত করেছিলেন, তাঁদের মধ্যে হজরত মুসা এবং হজরত দাউদ উল্লেখযোগ্য। দেখা যায়, এই দু’জনই একসময় ভেড়ার রাখাল ছিলেন। আল্লাহ সবসময় সাধারণ লোকদের দিয়ে অসাধারণ কাজ করেছেন। হজরত ঈসার সাহাবিরা সাধারণ লোক ছিলেন সত্য; কিন্তু তাদের মধ্যে কয়েকজন নবি, কয়েকজন শিক্ষক, কয়েকজন প্রচারক ইত্যাদি ছিলেন। তাঁরা একসময় অসাধ্য সাধন করেছিলেন। তাঁরা হজরত ঈসার মতো রোগীদের সুস্থ করেছিলেন, মৃতকে জীবন দিয়েছিলেন, প্রাকৃতিক শক্তির উপর বিজয়ী হয়েছিলেন। অর্থাৎ সাধারণ লোক হলেও আল্লাহ তাঁদের অসাধারণ ক্ষমতা দিয়েছিলেন। আল্লাহ তাদের মধ্যে কয়েকজনকে নবি হিসাবে কিতাব লেখার জন্য নিযুক্ত করেছিলেন। সেজন্য ইঞ্জিল শরিফের লেখকদের একজন বলেছেন, “…এই কথা মনে রেখ যে, কিতাবের মধ্যেকার কোন কথা নবিদের মনগড়া নয়, কারণ নবিরা তাদের ইচ্ছামতো কোন কথা বলেন নি; পাকরুহের দ্বারা পরিচালিত হয়েই তাঁরা আল্লাহর দেওয়া কথা বলেছেন” (২ পিতর ১:২০, ২১ আয়াত)।

এছাড়া যেসব কিতাব পাককিতাবের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, তা অনেক পরীক্ষা নিরীক্ষা করেই গ্রহণ করা হয়েছে। এই লেখাগুলোর মধ্যে যদি আগের কিতাবের বিষয়বস্তুর সাথে ধারবাহিকতা না থাকতো, তবে যে মহান সাধকেরা এগুলো একসাথে যুক্ত করেছেন তথা আল্লাহর কালাম হিসাবে স্বীকৃতি দিয়েছেন, তা দিতেন না। পাককিতাবের একজন লেখক বলেছেন, “পাককিতাবের প্রত্যেকটি কথা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে এবং তা শিক্ষা, চেতনা দান, সংশোধান এবং সৎ জীবনে গড়ে উঠবার জন্য দরকারি” (২ তীমথিয় ৩:১৬ আয়াত)। অর্থাৎ আল্লাহর কালামের প্রত্যেকটি কথা আমাদের পড়া উচিত যেন আমরা সংশোধিত হই এবং সৎ জীবনে গড়ে উঠি। কোরান শরিফে বলা হয়েছে, “হে মুমিনগণ, তোমরা আল্লাহ, তাঁর রসুলে, তিনি যে কিতাব তাঁর রসুলের প্রতি অবর্তীর্ণ করেছেন তাতে এবং যে কিতাব তিনি পূর্বে অবতীর্ণ করেছেন তাতে ঈমান আন” (সূরা নিসা ১৩৬)। পূর্বে যেসব কিতাব নাজেল হয়েছে, ইঞ্জিল শরিফ যা পাকরুহের পরিচালনায় হজরত ঈসার সাহবীগণ কর্তৃক লিখিত হয়েছে, তা অন্যতম। তাতে ঈমান আনার জন্য কোরানও নির্দেশ দিয়েছে।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

কোরানের দৃষ্টিতে ইঞ্জিল শরিফের গুরুত্ব কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

কোরানের দৃষ্টিতে ইঞ্জিল শরিফ খুবই গুরুত্বপূর্ণ কিতাব। কোরানের অনুসারীদের তা পড়তে বলা হয়েছে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

একটি ধারণা প্রচলিত আছে যে, একশ চারখানা আসমানি কিতাবের মধ্যে চারটি হলো শ্রেষ্ঠ কিতাব; ইঞ্জিল তাদের মধ্যে একটি। কোরান শরিফে ইঞ্জিল শরিফ পড়ার এবং চর্চা করার তাগিদ দেয়া হয়েছে জোড়ালোভাবে। কোরান শরিফে বলা হয়েছে, “বল, হে আহলে কিতাব, তোমরা কোন পথের উপরই নহ, যে পর্যন্ত না তোমরা তাওরাত, ইঞ্জিল ও তোমাদের রক্ষক হতে অবতীর্ণ কিতাবের অনুসরণ কর।” (সুরা মায়িদা ৬৮ আয়াত)। এখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে, যদি কেউ ইঞ্জিল শরিফ অনুসরণ না করে, তবে তার কোন ভিত্তিই নেই। সে নড়বড়ে এক খুঁটির মতো।

সুরা ইউনুস ৯৪ আয়াতে বলা হয়েছে, “আমি তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ করেছি, তাতে যদি তুমি সন্দেহে থাক তবে তোমার পূর্বের কিতাব যারা পাঠ করে, তাদের জিজ্ঞাসা কর।” হজরত মুহম্মদের সময়ের পূর্বের কিতাবগুলো হলো বিশেষত তাওরাত, জবুর ও ইঞ্জিল শরিফ। তৎকালে ইঞ্জিল বিশ্বাসী লোকেরাই অন্যান্য আসমানি কিতাব বিশ্বাস ও অনুসরণ করতো। সুতরাং এখানেও কোরানের দৃষ্টিতে ইঞ্জিল শরিফের গুরুত্ব বুঝানো হয়েছে।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ইঞ্জিল শরিফ ছাড়া ঈসায়ীরা আর কোন্ কোন্ কিতাব বিশ্বাস করে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ইঞ্জিল শরিফ ছাড়া, ঈসায়ীরা সকল আসমানি কিতাবই বিশ্বাস করে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

ঈসা নবির উম্মতদের কিতাবের নাম কিতাবুল মোকাদ্দস। কিতাবুল মোকাদ্দস হলো অনেকগুলো কিতাবের সমন্বয়। কিতাবুল মোকাদ্দস দ্ইুভাগে বিভক্ত; একভাগের নাম আগের কিতাব, যেগুলো ঈসা মসীহের জন্মের আগে নাজেল হয়েছে সেগুলো, যার সংখ্যা ৩৯টি। দ্বিতীয়ভাগের নাম ইঞ্জিল শরিফ। এই ইঞ্জিল শরিফে ২৭খানা কিতাব রয়েছে।

এখন প্রশ্ন হলো, ইঞ্জিল শরিফ ছাড়া ঈসায়ীরা আর কোন্ কোন্ কিতাব বিশ্বাস করে? এর সহজ উত্তর হলো ঈসায়ীরা ইঞ্জিল শরিফ ছাড়া আরো ৩৯খানা কিতাব বিশ্বাস করে। সেগুলো হলো: তাওরাত শরিফের পাঁচটি খণ্ড, যেমন: পয়দায়েশ, হিজরত, লেবীয়, শুমারি, দ্বিতীয় বিবরণ। নবিদের অন্যান্য কিতাবের মধ্যে রয়েছে: ইউসা, কাজীগণ, রূত, ১শামুয়েল, ২শামুয়েল, ১বাদশাহনামা, ২বাদশাহনামা, ১খান্দাননামা, ২খান্দাননামা, উযায়ের, নহিমিয়া, ইষ্টের, আইয়ুব, জবুর শরিফ, মেসাল, হেদায়েতকারী, সোলায়মান, ইশাইয়া, ইয়ারমিয়া, মাতম, হেজকিল, দানিয়াল, হোসিয়া, যোয়েল, আমোস, ওবদিয়া, ইউনুস, মিকাহ্ , নাহুম, হাবাক্কুক, সফনিয়, হগয়, জাকারিয়া ও মালাখি।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ইঞ্জিল শরিফ কি বাতিল কিংবা পরিবর্তিত?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, আসমানি কিতাবসমূহ বাতিল কিংবা পরিবর্তন হয় না। ইঞ্জিল শরিফও তার ব্যতিক্রম নয় বরং নাজেল হওয়ার সময় যা ছিল হুবহু তা-ই আছে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

বলা হয়ে থাকে যে, “ইঞ্জিল শরিফ বাতিল হয়ে গেছে, পরিবর্তিত হয়ে গেছে, বিকৃত হয়ে গেছে ইত্যাদি”। সাধারণত মানুষ এই অভিযোগ করার সময় তিনটি কারণ দেখায়। সেই তিনটি কারণ হলো:

  1. একটি আসমানি কিতাব নাজেল হবার পর পূর্ববর্তী আসমানি কিতাব এমনিতেই তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। অতএব, স্বাভাবিকভাবেই তা বাতিল হয়ে যায়।
  2. কিতাবগুলোকে ধর্মীয় নেতারা তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য পরিবর্তন, পরিবর্ধনের মাধ্যমে বাতিলযোগ্য করে ফেলেছে।
  3. বলা হয়ে থাকে যে, এসব আসমানি কিতাবকে যেভাবে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন ছিল, সেভাবে যতœ ও সংরক্ষণ করা যায়নি।

উপরিউক্ত অভিযোগগুলো সত্য হলে, ঈসায়ীদের ঈমান ও আমলের কোন অস্তিত্ব নেই- একথা বলা অযৌক্তিক হবে না। ঈসায়ীদের ঈমানের ভিত্তি হলো কিতাবুল মোকাদ্দস। এই কিতাবুল মোকাদ্দস যদি সত্যই বিকৃত বা বাতিল হয়ে থাকে, তবে তাদের ঈমানেরই বা মূল্য কী আছে?

একথা আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আসমানি কিতাবগুলোর একটাও বাতিল বা বিকৃত হয়নি বরং আল্লাহর শাশ্বত ও চিরন্তন কালাম হিসাবে আজও নিখুঁতভাবে টিকে আছে। এবিষয়ে আমাদের যুক্তি তুলে ধরছি:

১। আল্লাহর কালাম পর্যায়ক্রমিকভাবে দেয়া হয়েছে। হজরত ঈসা মসীহ পর্যন্ত যে কালাম নাজেল হয়েছিল তার প্রত্যেকটি কিতাব এবং প্রত্যেকটি সহিফা যখনই দেওয়া হোক না কেন, তা সর্বকালের জন্য এবং সব মানুষের জন্যই প্রয়োজন। এদের বিষয়বস্তু দেখলেই আমরা সে কথা বুঝতে পারি। আগেকার কিতাবের বিষয়বস্ত হলো:

  • ক) আল্লাহ উত্তমরূপে সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।
  • খ) শয়তান অহংকারের বশবর্তী হয়ে, আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল এবং পতিত হলো।
  • গ) হজরত আদমের মধ্যদিয়ে পৃথিবীতে গুনাহ ঢুকল কিন্তু আল্লাহ পবিত্র, তাই গুনাহের বিচার করেন।
  • ঘ) আল্লাহ মহব্বতে পূর্ণ, তাই তিনি গুনাহগার মানুষেকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করেন।
  • ঙ) আল্লাহ গুনাহগারদের জন্য নাজাতদাতা পাঠানোর ওয়াদা করেছেন।
  • চ) তাওরাত কিতাবে বর্ণিত শরিয়ত নয়, মানুষ কেবল ঈমানের দ্বারাই নাজাত পাবে।
  • ছ) আল্লাহর মনোনীত বনি-ইসরাইল জাতির লোক, হজরত দাউদের বংশের মধ্যদিয়েই নাজাতদাতা আসবেন।
  • জ) একজন নিষ্পাপ ব্যক্তি, এক অবিবাহিত মেয়ের গর্ভে জন্মাবেন যার মধ্যদিয়ে নাজাত আসবে।

মানুষের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় নাজাত। হজরত আদমের গুনাহের ফলে, মানুষ আল্লাহর সান্নিধ্য থেকে পৃথক হয়েছে। এই অবস্থা থেকে নাজাত লাভ করাই মানুষের একান্ত প্রয়োজনীয় বিষয়। তাই বর্ণিত বিষয়গুলো নাজাতকামী প্রত্যেক মানুষের জন্যই প্রয়োজন। আর আগেকার প্রত্যেক কিতাবের মধ্যেই নানাভাবে উপরিউক্ত কথাগুলোই নবিগণ বলে গেছেন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

হজরত ঈসা কি ১২০ বছর বেঁচেছিলেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, ১২০ বছর নয়, হজরত ঈসা মাত্র ৩৩ বছর দুনিয়াতে বেঁচেছিলেন।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

অবধারিত সত্য – আহমদিয়া মতবাদ অনুসারে হজরত ঈসা ১২০ বছর বেঁচেছিলেন এবং ভারতে গিয়ে স্বাভাবিক মৃত্যু বরণ করেছেন। সুতরাং তাদের মতে তাঁর ৩৩ বছর বয়সের ক্রুশীয় মৃত্যু কাল্পনিক গল্পমাত্র। আহমদিয়া বা কাদিয়ানি মতবাদীদের প্রধান লক্ষ্য ক্রুশধ্বংস। কিতাবি সত্য অনুযায়ী, আসলে এটা ইব্লিশের ইচ্ছা ছিল যেন ক্রুশের সত্যকে ধবংস করা যায়। কিন্তু যে সত্যের উপর ভিত্তি করে ঈসায়ী ঈমান ও আমল প্রতিষ্ঠিত, সেই চিরস্থায়ী সত্যকে খোঁড়া যুক্তি দিয়ে বিযুক্ত করা যায় না। হজরত ঈসার দুনিয়াতে আগমনের উদ্দেশ্যই ছিল মৃত্যুবরণ। তিনি বেঁচে থাকতে সরাসরি তিনবার উদাহরণ হিসাবে, আরো চারবার নানা দৃষ্টান্তের মধ্যদিয়ে তাঁর মৃত্যুর বিষয়ে সরাসরি বলেছেন। প্রাচীনকালের নবিরা তাঁর যন্ত্রণাদায়ী মৃত্যুর বিষয়ে ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন। জন্মের ছয়মাস আগে হজরত ইয়াহিয়া এসে তাঁর মৃত্যুদায়ী কোরবানির কথা ঘোষণা করেছিলেন। অতএব, তাঁর মৃত্যু যে অবধারিত সত্য এতে কোন সংশয় থাকার অবকাশ নেই।

ঐতিহাসিক ঘটনা – রোমীয় শাসনকর্তা একজন ঐতিহাসিক ব্যক্তি যিনি হজরত ঈসার মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছিলেন। কিতাব বলে, তিনি কোন দোষ পান নি তাই হাত ধুয়ে, ‘এই মৃত্যুর জন্য তিনি দায়ী নন’ বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন। রাজা হেরোদ এবং আগ্রিপাস ছিলেন ঐতিহাসিক ব্যক্তিবর্গ। তারা একই সময়ে বাস করতেন এবং হজরত ঈসার মৃত্যুর ঘটনার সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন। হজরত ঈসা মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে ওঠার ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন বলে রোমীয় কর্তৃপক্ষ হজরত ঈসার কবর পাথর দিয়ে সীলমোহর করে দিয়েছিলেন। হজরত ঈসার মৃত্যুর বিষয়টি ইহুদি ও ফরিশিদের বিশ্বাসের পরিপন্থি বলে, তারা গোপনে পাহারা দিয়েছিলেন। এই মৃত্যু যদি সত্য না হতো তবে এতো ব্যবস্থার কী প্রয়োজন ছিল?

কাদিয়ানিদের দাবি অনুযায়ী, হজরত ঈসা ১২০ বছর পর মৃত্যু বরণ করলে, তাঁর পুনরুত্থানের বিষয়টি কীভাবে ব্যাখ্য করা যাবে। নবিরাসহ হজরত ঈসা কেবল তাঁর মৃত্যুর ভবিষ্যতবাণীই করেননি, পুনরুত্থানের ভবিষ্যতবাণীও করেছিলেন। এছাড়া মসলা নিয়ে কবরের কাছে মহিলাদের যাওয়া, মসীহের দেখা পাওয়া, সাহাবিদের খবর দেওয়া, পাকরুহের জন্য অপেক্ষা করার কথা বলা এবং সাহাবিদের সামনে তাঁর বেহেশতে চলে যাওয়া ইত্যাদি সব ঘটনাই হজরত ঈসার ৩৩ বছর বয়সেই সংঘটিত হয়েছে এবং অনেক সাক্ষীর সামনেই হয়েছে। হজরত ঈসা যদি সেই সময় মৃত্যু বরণ না করতেন, তবে তিনি নিশ্চয় পরবর্তিতে তাঁর মৃত্যু ও পুনরুত্থানের কথা বলতেন না। অতএব, হজরত ঈসা ১২০ বছর বেঁচে থাকবার কাহিনী একটি কাল্পনিক গল্পমাত্র যা সত্যের ধারেকাছে নেই।

কোরানের দৃষ্টিতে ঈসা মসীহ কে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

কোরানের দৃষ্টিতে হজরত ঈসা আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত পূর্ববর্তী নবির সমর্থক ও পথ প্রদর্শক।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

সুরা আলে-ইমরান (৩:৪৯) অনুসারে হজরত ঈসা আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত হয়েছেন যা ইঞ্জিল শরিফের বহু নিকট ভবিষ্যতবাণীর সাথে মিলে যায়। কোরান শরিফে হজরত ঈসাকে আল্লাহর রসুল ও তাঁর বাণী বলেও অবহিত করা হয়েছে (সুরা নিসা ৪:১৭১)। রসুল মানে পথপ্রদর্শক। এ থেকে বোঝা যায়, হজরত ঈসা মানুষের পথপ্রদর্শক হিসাবে এসেছিলেন শুধু তা নয়, তিনি আল্লাহর কালাম হয়ে নেমে এসেছিলেন। ইঞ্জিল শরিফও একই কথা বলে। ইউহোন্না ১:১ আয়াতে বলা হয়েছে, প্রথমে কালাম ছিলেন আর কালাম আল্লাহর সঙ্গে ছিলেন। একই অধ্যায়ের ১৪ আয়াতে বলা হয়েছে, সেই কালাম মাংসে রূপান্তরিত হয়ে, দুনিয়াতে আসলেন। ব্যাখ্যাটা কোরান শরিফে দেওয়া হয়নি।

কোরান শরিফে হজরত ঈসার আশ্চর্য জন্ম এবং অলৌকিক জীবন যাপন সম্পর্কে অনেক কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, তিনি জন্মের পরপর শিশু অবস্থায় কথা বলতেন, পাখি বানিয়ে জীবন দিতেন, অসুস্থকে সুস্থ করতেন এবং মৃত মানুষকে জীবন দিতেন। কোরানের দৃষ্টিতে হজরত ঈসা একজন অসাধারণ নবি।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

হজরত ঈসা কি দ্বিতীয় আগমনের পর মৃত্যুবরণ করবেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, তিনি মৃত্যুবরণ করবেন না, করতে পারেন না। কারণ তিনি মৃত্যুকে জয় করেছেন।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

হজরত ঈসা নিষ্পাপ, তার মৃত্যু হতে পারে না। অন্যদের গুনাহর কাফফারা হিসাবে তিনি নিজেকে মৃত্যুর হাতে সমর্পণ করলেও মৃত্যুকে জয় করে তিনি কবর থেকে উঠেছেন। তিনি আর মৃত্যুবরণ করবেন না। তিনি যদি মৃত্যুবরণ করেন তবে সম্পূর্ণ ইঞ্জিল শরিফই মিথ্যা হয়ে যাবে। ইঞ্জিল শরিফে পরিষ্কার এ কথা লেখা আছে যে, “তিনি যখন দ্বিতীয়বার আসবেন তখন গুনাহের জন্য মরতে আসবেন না, বরং যারা তাঁর জন্য আগ্রহের সঙ্গে অপেক্ষা করে আছে, তাদের সম্পূর্ণভাবে নাজাত করাবার জন্য আসবেন” (ইবরানী ৯:২৮)। একথা আবারও জোর দিয়ে বলছি যে, মানুষের গুনাহর কাফফারা দিতে গিয়ে তিনি একবার মৃত্যুবরণ করেছিলেন। সেই মৃত্যু তাঁর নিজের গুনাহর জন্য মৃত্যু নয়, বরং আমাদের গুনাহর জন্য মৃত্যু। তার প্রমাণস্বরূপ তিনি তৃতীয়দিন কবর থেকে জীবিত হয়ে উঠেছিলেন। সবচেয়ে বড়কথা, পুনরুত্থান হলো ঈসায়ী জীবনের ভিত্তি। আর সেই একই মৃত্যু যদি তিনি আবার বরণ করেন তবে ইঞ্জিল শরিফের শিক্ষাই বিফল হবে। তাঁর মৃত্যু হওয়া তো দূরের কথা বরং পুরো মৃত্যুর ব্যবস্থাকেই তিনি ধ্বংস করবেন। অর্থাৎ হজরত ঈসার উপর যারা ঈমান আনে, তাদের আর কখনও মৃত্যু হবে না। কিতাবে লেখা আছে, “শেষ শত্রু যে মৃত্যু, তাকেও ধ্বংস করা হবে” (১ করিন্থীয় ১৫:২৬)। হজরত আদম এবং তাঁর রক্তে জন্মগ্রহণকারী প্রত্যেকের মৃত্যু হবে, কারণ হজরত আদম মাটি দিয়েই তৈরি ছিলেন কিন্তু হজরত ঈসা ছিলেন মাটি ও রুহের তৈরি। তিনি বেহেশত থেকে এসেছিলেন আর বেহেশতেই চলে গিয়েছেন (১ করিন্থীয় ১৫:৪৫-৪৮)। কিতাবি সত্য হলো, হজরত ঈসা দ্বিতীয়বার ফিরে আসার পর ১০০০ (্এক হাজার) বছর রাজত্ব করবেন; সেই রাজত্ব শান্তির রাজত্ব। সেই রাজ্যের রাজা হবেন তিনি নিজে এবং প্রজা হবেন তাঁর উম্মতেরা।

তারপরে আসবে শেষবিচার। আর সেই বিচারে কেউ অনন্ত দোজখের জন্য এবং কেউ অনন্ত বেহেশতের জন্য মনোনীত হবেন। আল্লাহর কালাম বলে, মানুষের জন্য একবার মৃত্যু তারপর বিচারের ব্যবস্থা আছে। ঈসায়ীদের বিশ্বাস, হজরত ঈসা একবার মারা গিয়েছিলেন। তিনি মৃত্যু থেকে জীবিত হয়ে উঠেছেন। তিনি আর কখনও মারা যাবেন না বরং অনন্তকাল বেঁচে থাকবেন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

হজরত ঈসা কি মুসলমান ছিলেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, জাতিগতভাবে হজরত ঈসা মুসলমান ছিলেন না। বংশের দিক থেকে তিনি ছিলেন ইহুদি; তবে তাঁকে মুসলমান বলতে দোষের কিছু নেই।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

কিতাব থেকে জানা যায়, হজরত ঈসার মা-বাবা দু’জনই ইহুদি ছিলেন। ইঞ্জিল শরিফে আছে, ‘ইউসুফ ছিলেন বাদশাহ্ দাউদের বংশের লোক। বাদ্শাহ দাউদের জন্মস্থান ছিল এহুদিয়া প্রদেশের বেথেলহেম গ্রামে। তাই ইউসুফ নাম লেখাবার জন্য গালীল প্রদেশের নাসরত গ্রাম থেকে বেথেলহেম গ্রামে গেলেন। মরিয়মও তাঁর সঙ্গে সেখানে গেলেন’ (লূক ২:৪,৫)। আরো লেখা আছে, ‘ঈসা মসীহ দাউদের বংশের এবং দাউদ ইবরাাহিমের বংশের লোক’ (মথি ১:১)। হজরত ঈসা ছোটবেলা থেকেই ইহুদি নিয়মকানুনের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছিলেন। লেখা আছে, ‘পরে মুসার শরিয়ত মতে তাঁদের পাকসাফ হবার সময় হলো। তখন ইউসুফ ও মরিয়ম ঈসাকে মাবুদের সামনে উপস্থিত করবার জন্য তাঁকে জেরুজালেম শহরে নিয়ে গেলেন’ (লূক ২:২২)। তিনি শুধু একবারই যে এ নিয়ম পালন করেছিলেন তা নয়; লেখা আছে, ‘উদ্ধার-ঈদের সময়ে ঈসার মা-বাবা প্রত্যেক বছর জেরুজালেমে যেতেন। ঈসার বয়স যখন বরো বছর, তখন নিয়ম মতোই তাঁরা সেই ঈদে গেলেন’ (লূক ২:৪১)। হজরত ঈসা তাঁর ৩০ বছর বয়সে তরিকাবন্দি গ্রহণ করে তাঁর কাজ শুরু করেন। তিনি যে নিয়মিত ইহুদি মজলিশখানায় যেতেন তাঁর প্রমাণও মেলে। লেখা আছে, ‘আর এক বিশ্রামবারে ঈসা মজলিস-খানায় গিয়ে শিক্ষা দিচ্ছিলেন’ (লূক ৬:৬)। হজরত ঈসার জীবনের শেষ দিকেও আমরা দেখতে পাই, তিনি তাঁর জাতীয় নিয়মগুলো ভালোভাবে পালন করতেন। কিতাবে লেখা আছে, ‘খামিহীন রুটির ঈদের দিনে, উদ্ধার-ঈদের ভোজের জন্য ভেড়ার বাচ্চা জবাই করা হতো। সেই দিনটা উপস্থিত হলে পর, ঈসা পিতর ও ইউহোন্নাকে এই বলে পাঠিয়ে দিলেন, “তোমরা গিয়ে আমাদের জন্য উদ্ধার ঈদের ভোজ প্রস্তুত কর যেন আমরা তা খেতে পারি (লূক ২২:৭,৮)।

মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার জীবনে শান্তি আছে; আর যিনি আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী। হজরত ঈসা বলেছিলেন, আমি শান্তি দিতে এসেছি, আমারই শান্তি আমি তোমাদের দিচ্ছি। প্রকৃতই তিনি শান্তি দিতে এসেছিলেন, আর মানবজাতির শান্তির জন্য নিজেকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করেছিলেন। কিতাবে লেখা আছে, ‘তিনি বরং গোলাম হয়ে এবং মানুষ হিসাবে জন্মগ্রহণ করে, নিজেকে সীমিত করে রাখলেন। এছাড়া চেহারায় মানুষ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত, এমন কি ক্রুশের উপরে মৃত্যু পর্যন্ত বাধ্য থেকে তিনি নিজেকে নিচু করলেন’ (ফিলিপীয় ২:৭,৮)। ঈসা মসীহ আল্লাহর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘দেখ, আমি তোমার ইচ্ছা পালন করতে এসেছি’ (ইবরানি ১০:৯)। সত্যই তাই, আল্লাহর ইচ্ছায় হজরত ঈসা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন আর মানবজাতির উদ্ধারের জন্য নিজের জীবন কোরবানি দিয়েছিলেন। অতএব, তাঁকে একজন শ্রেষ্ঠ মুসলমান বলা যায়।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসা নবিতো বিয়ে করেননি, তিনি কীভাবে একজন পরিপূর্ণ শিক্ষক হতে পারেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

প্রকৃত শিক্ষা আল্লাহর কালামের জ্ঞান থেকেই আসে। তিনি জ্ঞানে পূর্ণ ছিলেন, তাই শিক্ষা দিতে পারেন।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

এই প্রশ্নটি এমনিই যে, শিক্ষা দিতে হলে শিক্ষককে সকল বিষয়ে আদর্শ হতে হবে। একদিক থেকে প্রশ্নটি যথার্থ, অপরদিক থেকে প্রশ্নটিই প্রশ্নসাপেক্ষ। এই প্রশ্নটি এজন্য করা হয়ে থাকে যে, যেহেতু তিনি স্বামী হননি অর্থাৎ যেহেতু স্বামী-স্ত্রী কিংবা বিবাহিত জীবনের জ্ঞান হজরত ঈসার নেই সেহেতু তিনি পরিপূর্ণ শিক্ষক নন। একথা সত্য যে, হজরত ঈসা বিয়ে করেন নি। তাই বলে যে তিনি সকল মানুষকে শিক্ষা দেবার অধিকার রাখেন না, তা বলা যায় না। প্রত্যেক নবিকে যদি প্রত্যেক রকম আদর্শ হতে হতো তবে কোন নবি বা শিক্ষকই প্রকৃত শিক্ষক হতে পারতেন না। উদারহণ স্বরূপ, নবিরা বেশির ভাগই ছিলেন পুরুষ; তবে কি উত্তম শিক্ষক হতে হলে, তাঁদের সকলকে মেয়ে হতে হতো না? এছাড়া অবিবাহিতদের সম্পর্কে কী বলা যেতো? রাজাদের সম্পর্কে কী বলা যেতো? জেলে, তাঁতী, ধনী, ব্যবসায়ী? তিনি যদি বিয়ে করতেন তবে অবিবাহিতদের তিনি কী করে আদর্শ শিক্ষা দিতেন?

হজরত ঈসা মানুষকে জাগতিক জ্ঞানে জ্ঞানী করে তোলার জন্য এই দুনিয়াতে আসেন নি। জাগতিক জ্ঞানগুলো মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই অর্জন করে। মানুষ দেখে দেখে, বুঝে বুঝে শেখে। হজরত ঈসা এসেছিলেন যেন মানুষ জীবন পায় এবং জীবনের উপচয় পায়। সেইজন্য তিনি মানুষকে জীবনের অতি প্রয়োজনীয় বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন। এছাড়া নবিরা মানুষের কিংবা নিজের জ্ঞানে কথা বলেন না। তাঁরা আল্লাহর পাকরুহ দ্বারা পরিচালিত হয়ে, আল্লাহ নিজে যা চান তাই শিক্ষা দেন। সুতরাং ছোট-বড়, পুরুষ-মহিলা, স্বামী-স্ত্রী, জ্ঞানী-মূর্খ সকলকে নবিরা শিক্ষা দিতে পারেন। নবিদের যোগ্যতা হলো, তাঁরা আল্লাহর ইচ্ছামতো চলেন এবং আল্লাহর ইচ্ছায় শিক্ষা দেন।

হজরত ঈসার বারো বছর বয়সে যখন তার মা-বাবার সাথে জেরুজালেম এবাদতখানায় গিয়েছিলেন, তখন বাঘা বাঘা ইহুদি আলেমরা তাঁর পাণ্ডিত্যে ও জ্ঞানে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন। বড় হয়ে যখন তিনি সমাজগৃহে ও এবাদতখানায় শিক্ষা দিতেন, তখনও তাঁর চেয়ে অভিজ্ঞ ও পণ্ডিত ব্যক্তিরা হার মানতেন এবং বুঝতেন যে, তিনি এমনভাবে শিক্ষা দেন যার শিক্ষা দেবার অধিকার আছে। অনেক কুটিল এবং জটিল প্রশ্নেরও এমন উত্তর দিতেন যে, সবাই হা হয়ে যেতো এবং তাঁর সামনে মুখ তুলে দাঁড়াতে সাহস করতো না। আধুনিক যুগের বড় বড় পণ্ডিত, শিক্ষক ও দার্শনিকরা তাঁর শিক্ষার উদাহরণ দেন। মহাত্মা গান্ধী হজরত ঈসার শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘হে দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছ মহান, তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রিস্টের সম্মান।”

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

হজরত ঈসা নিজে মানুষ হয়ে কীভাবে মানুষকে নাজাত দিতে পারেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

তিনি নাজাত দিতে পারেন কারণ তিনিই একমাত্র নিষ্পাপ মানুষ ছিলেন।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

একথা ধ্রুব সত্য যে, হজরত ঈসা একজন মানুষ ছিলেন। ঈসায়ী ইতিহাসে দেখা যায় কেউ কেউ ‘তিনি মানুষ নন, আত্মা কিংবা অন্যকিছু’ হিসেবেও আখ্যায়িত করতেন। কেউ কেউ তাঁকে অতিমানব হিসেবে এমনকি অনেকে তাঁকে জিনদের সমগোত্রীয় কিছু বলে প্রচার করতেন। এখনও বিশ্বব্যাপী হজরত ঈসার অস্তিত্ব নিয়ে নানা মুণির নানা মত রয়েছে। কিন্তু আমাদের দেখতে হবে কিতাব কি বলে। ইঞ্জিল শরিফে তাঁর যে বংশ তালিকা দেওয়া হয়েছে (লূক ৩:২৩-৩৮) তাতে হজরত ঈসার জাগতিক পিতা ইউসুফ থেকে শুরু করে, হজরত আদম পর্যন্ত চলে গিয়েছেন। মানুষ হিসেবেই তিনি কোন এক মায়ের গর্ভে জন্মেছিলেন, লালিত পালিত হয়েছিলেন, জ্ঞানে ও বয়সে বেড়ে উঠেছিলেন, খাওয়া-দাওয়া করেছিলেন, মানুষের সুখ-দুঃখ অনুভব করেছিলেন, সামাজিক অনুষ্ঠানাদিতে যোগ দিয়েছিলেন এবং মানুষ হিসেবেই তিনি কষ্টকর মৃত্যু গ্রহণ করেছিলেন। হজরত ঈসা নিজেও নিজেকে ইবনেআদম বা মানবপুত্র বলতেন।

এখন প্রশ্নের মৌলিক অংশ হলো, মানুষ হয়েও কী করে হজরত ঈসা মানুষকে গুনাহ থেকে নাজাত দিতে পারেন। হজরত ঈসা নিজেই বলেছেন যে, অন্ধ অন্ধকে পথ দেখাতে পারে না, দুইজনই গর্তে পড়ে। একজন মানুষও তেমনি আর একজন মানুষকে নাজাত দিতে পারে না, কারণ মানুষ পাপী। হজরত ঈসা যদি একজন মানুষ হন তবে কীভাবে তিনি নাজাত দেবেন? এর রহস্য এখানেই যে, হজরত ঈসা একজন আসল মানুষ অর্থাৎ খাঁটি মানুষ ছিলেন, পাপী ছিলেন না। মানুষকে আল্লাহ যে গুণ (সুরত ও সিফত) দিয়ে সৃষ্টি করেছিলেন হজরত ঈসার মধ্যে তার সবটুকুই ছিল। অথচ সুরত থাকলেও আসল জিনিস যে সিফত তা হজরত আদম অর্থাৎ প্রথম মানুষ অবাধ্যতার মধ্য দিয়ে হারিয়ে ফেলেছিলেন। আর হারিয়ে ফেলেছিলেন বলে, অন্যকে নাজাত দেওয়া তো দূরের কথা নিজেই আল্লাহর কাছ থেকে দূরে সরে গিয়েছিলেন। ফলে মানব বংশে যারা জন্ম লাভ করেছে, তাদের প্রত্যেকেই হজরত আদমের মতো গুনাহগার হয়েছে। হজরত ঈসা মানব বংশে জন্ম গ্রহণ করলেও আল্লাহর অসীম কুদরতের ফলে তাঁকে পাপ স্পর্শ করতে পারে নি।

হজরত ঈসা ছিলেন নিষ্পাপ মানুষ। আর এই নিষ্পাপ মানুষ স্বেচ্ছায় নিজের প্রাণ দিতে রাজি হয়েছিলেন যেন আমাদের উদ্ধার করতে বা নাজাত দিতে পারেন। অন্যান্য নবিগণ শরিয়তের কথা বলেছেন, শিক্ষা দিয়েছেন, আশ্চর্য কাজ করেছেন কিন্তু কেউই মানুষের নাজাতের জন্য কোরবানি হননি। অবশ্য এটা তাঁদের কাজ এবং দায়িত্বও ছিল না। এই কারণে ফেরেশ্তা বিবি মরিয়মের কাছে গিয়ে, তাঁর নামও রেখেছিলেন ঈসা, যার মানে নাজাতদাতা। রাখালদের সংবাদ দিতে গিয়ে ফেরেশতা বলেছিলেন, ‘তোমাদের জন্য আজ দাউদের শহরে উদ্ধারকর্তা জন্মেছেন’। সুতরাং তিনি নাজাত দিতে না পারলে মানুষের নাজাত আর কার দ্বারা সম্ভব হবে? আমরা গান গাই, ‘আর কোন নাম নাই যে নামে নাজাত পাই’।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০