All posts by জাহাঙ্গীর

ঈসায়ীরা কি কোরান বিশ্বাস করে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

কোরান বলে যে মুসলমানদের একটি ধর্মগ্রন্থ আছে ঈসায়ীরা তা বিশ্বাস করে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

কোন একজন মুসলমানকে যদি প্রশ্ন করা হয়, “আপনি কি ইঞ্জিল বিশ্বাস করেন?” তিনি নির্দ্বিধায় উত্তর দেন যে তিনি বিশ্বাস করেন। কোরানেই সকল আসমানি কিতাবকে বিশ্বাস করতে বলা হয়েছে। কিন্তু দেখা যায় এই প্রশ্নের উত্তর হ্যাঁ বোধক দিলেও ইঞ্জিল শরিফ তিনি মানেন না। এদিক থেকে যুক্তির খাতিরে, ঈসায়ীরাও বলতে পারে যে, তারাও কোরান বিশ্বাস করে কিন্তু এর আদেশ নিষেধ তারা মানে না। এর আগের প্রশ্নোত্তরে বলা হয়েছে যে কোরানের মধ্যে অনেক সত্য কথা রয়েছে, রয়েছে আগের কিতাব থেকে নানা ঘটনার উল্লেখ। সত্য চিরকালই সত্য, যে সত্য হাজার হাজার বছর আগে হজরত মুসাকে, হজরত দাউদকে, হজরত সোলায়মানকে, হজরত ঈসাকে আল্লাহ দিয়েছেন, তা যদি কোরানে থাকে তা বিশ্বাস না করার কিংবা না মানারও কিছু নেই।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

কোরান সম্পর্কে ঈসায়ীদের ধারণা কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

কোরান সম্পর্কে ঈসায়ীদের ধারণা হলো, কোরান মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ যা হজরত মুহম্মদের মধ্যদিয়ে এসেছে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

কোরান মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ হলেও হজরত ঈসা, ইঞ্জিল শরিফ ও ঈসায়ীদের সম্পর্কে কোরানে অনেক কিছুই বলা হয়েছে। হজরত ঈসা সম্পর্কে বলা হয়েছে যে, তিনি নিষ্পাপ ছিলেন, তিনি অবিবাহিতা মেয়ের গর্ভে জন্ম গ্রহণ করেছেন, জন্মের পরই তিনি তাঁর অলৌকিক জন্মের বিষয়ে মানুষের সাথে কথা বলেছেন। তিনি অনেক আশ্চর্য কাজ করেছেন এবং তিনি শেষকালে আবার আসবেন। কোরান থেকে বোঝা যায়, ইঞ্জিল কিতাব বিশুদ্ধ এবং তা মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রয়োজনীয় একটি ধর্মগ্রন্থ ছিল। কোরানে নির্দেশ দেয়া হয়েছে যেন মানুষ ইঞ্জিল শরিফ পড়ে। কোরান শরিফ অনুসারে ঈসায়ীরা গুরুত্বপূর্ণ, তারা আল্লাহ ও তার কালাম সম্পর্কে অনেক জানে। আর তাই প্রয়োজনীয় জ্ঞান লাভ করার জন্য ঈসায়ীদের কাছে যাবার পরামর্শও কোরান দিয়েছে। অতএব, এদিক থেকে কোরান ঈসায়ীদের কাছে একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থ।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসায়ীদের জন্য কি কোন হাদিস আছে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ঈসায়ীদের কাছে ইঞ্জিল শরিফের বাইরে হাদিস বলতে কিছু নেই।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

কোন নবিকে কেউ কিছু বলতে শুনেছেন, করতে দেখেছেন কিংবা কোন নবি কোন বিষয়ে মৌন থেকেছেন বা সরাসরি আদেশ করেছেন অথবা নিষেধ করেছেন বলে, প্রকাশ করা হয়, তা-ই হাদিস। ঈসায়ীদের কাছে এ ধরনের কোন কিছুর অস্তিত্ব নেই। যারা হাদিসে বিশ্বাসী, তারা সাধারণত হাদিসকে জীবন-যাপনের নির্দেশনা বলে মানে। তারা ভাবে যে, হাদিস তাদের মূল ধর্মগ্রন্থকে ব্যাখ্যা করার সহায়ক হিসাবে কাজ করে এবং হাদিস ছাড়া জীবন-যাপন প্রায় অসম্ভব। তাই হাদিসকে আল্লাহর কালামের সাথে সমতুল্য করা হয়।

এ ধরনের কোন হাদিস বিশ্বাস না করলেও ঈসায়ীরা আল্লাহর কালামের ব্যাখ্যার উপর গুরুত্ব আরোপ করে। ঈসায়ীদের মধ্যে কালামের লক্ষ লক্ষ তফসিরকারক বা ব্যাখ্যাকারক রয়েছেন, যারা প্রতিনিয়ত আল্লাহর কালামের চর্চার জন্য আত্মনিয়োজিত আছেন। ঈসায়ীরা বিশ্বাস করে যে, আল্লাহর কালাম তফসির করার জন্য আল্লাহ মানুষকে ব্যবহার করতে পারেন। একদিক থেকে এধরনের তফসিরকে হাদিস বলা যেতে পারে। মনে রাখতে হবে যে, এসব তফসির কোনভাবেই আল্লাহর কালামের সমতুল্য নয় এবং তুলনা করাও অসমীচীন। কিতাবুল মোকাদ্দসের মতো আর কোন লিখিত কালামের অস্তিত্ব নেই, প্রয়োজনও নেই। তবে ঈসায়ীদের বিশ্বাস হলো, এখনও আল্লাহ পাকরুহের মধ্য দিয়ে মানুষের সাথে কথা বলেন। তার মানে হলো, তফসিরকারকগণ আল্লাহর পাকরুহের চেতনা পেয়ে, মানুষের শিক্ষার জন্য আল্লাহর কালাম ব্যাখ্যা করেন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

হজরত পৌলের কথা ঈসায়ীরা কেন বিশ্বাস করে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

হজরত পৌলের কথা কিতাবুল মোকাদ্দস এবং হজরত ঈসার শিক্ষার সাথে সংগতিপূর্ণ ও শিক্ষামূলক, তাই তা বিশ্বাস করে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

ইঞ্জিল শরিফের মধ্যে হজরত পৌলের লেখা সিপারাই সবচেয়ে বেশি। তিনি মানবজীবনের প্রয়োজনীয় প্রত্যেক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধান দিয়েছেন, ঈসায়ী ঈমানের মূলসত্যকে ঈমানদারগণের কাছে জীবন্ত করে তুলেছেন। তাঁর শিক্ষার মধ্যদিয়ে ঈসায়ী ধর্মতত্ত্বের প্রধান প্রধান দিকগুলো উন্মোচিত হয়েছে। আল্লাহ, হজরত ঈসা, পাকরুহ, সমাজ, সমাজের নেতৃত্ব, সামাজিক জীবন, ঈসায়ী জীবন ইত্যাদি কোনটাই তাঁর শিক্ষা থেকে বাদ পড়েনি।

একসময় হজরত পৌল ছিলেন ঈসায়ীদের অত্যাচারী। তিনি ঈসায়ীদের ধরে ধরে হত্যা করার নেতৃত্ব দিতেন। তিনি স্তিফান নামক একজন নামকরা ঈমানদারকে হত্যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। একদিন হজরত ঈসা তাঁকে দর্শন দেন, তিনি অন্ধ হয়ে যান। এই সময় তিনি হজরত ঈসাকে দেখতে পান এবং তাঁর কাছ থেকে সরাসরি সাহাবিত্ব লাভ করেন। অতঃপর হজরত ঈসার আদর্শ প্রচার এবং শিক্ষা দেবার জন্য তিনি আজীবন দুঃখ-কষ্ট ও অত্যাচার ভোগ করেন। শেষে এই বিশ্বাসের জন্য তাঁকে হত্যাও করা হয়। হজরত ঈসা যে কারণে দুনিয়াতে এসেছিলেন এবং যে বিষয়ে তিনি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছিলেন হজরত পৌল তারই ব্যাখ্যা দেন। অতএব, হজরত পৌলের শিক্ষা ঈসায়ীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

কিতাবুল মোকাদ্দস কি সবাই পড়তে পারে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

হ্যাঁ, কিতাবুল মোকাদ্দস সবাই পড়তে পারে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

আমাদের দেশে হিন্দু সমাজের মধ্যে একটি প্রচলন ছিল যে, ব্রাহ্মণ ছাড়া সাধারণ লোক হিন্দু শাস্ত্র পড়তে পারতো না এমন কি স্পর্শও করতে পারতো না। ঈসায়ীদের মধ্যেও একসময় ছিল সাধারণ মানুষকে কিতাবুল মোকাদ্দস পড়তে দেয়া হতো না। বিশেষ বিশেষ ধর্মীয় নেতারা তা পড়তে ও শিক্ষা দিতে পারতেন। কিন্তু এটি কিতাবি সত্য অনুসারে সঠিক নয়। আল্লাহ তাঁর কালাম সবার জন্য দিয়েছেন। সবার মঙ্গলের কথা এখানে লেখা আছে। কেউ যদি আল্লাহর কালাম না পড়ে, তবে সে আল্লাহর ইচ্ছা জানা থেকে বঞ্চিত হয়। তাই একসময় এই অপব্যবস্থার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আসে; মানুষ এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়। অবশেষে কিতাব পড়া এবং শিক্ষা দেবার সুযোগ সাধারণ মানুষের হাতে ফিরে আসে। আল্লাহ চান যেন সবাই তাঁর কিতাব পড়ে এবং তাঁর ইচ্ছা জেনে তাঁর বাধ্য হয়। তাওরাত কিতাবে ছেলেমেয়েদের আল্লাহর কালাম শিক্ষা দেবার কথা বলা হয়েছে। দিনে রাতে, উঠতে, বসতে সবসময় তাদের সাথে কিতাবের বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে বলা হয়েছে। অনেকে পড়তে জানতো না বলে, নবিরা লোকদের সামনে কিতাব থেকে পাঠ করে শোনাতেন এবং তাদের জীবনে কিতাবের গুরুত্ব বুঝিয়ে দিতেন। তার মানে এই নয় যে, একজন পড়বে বা শিক্ষা দেবে আর সবাই পড়বে না। শোনার অধিকার যেমন আছে, আল্লাহর কালাম পড়ার অধিকারও সকলের রয়েছে।

কোন কোন সময় বলা হয়ে থাকে যে, কোন একটি বিশেষ ধর্মগ্রন্থ অন্যধর্মের লোক ধরতে পারে না, কারণ সে বা তারা নাপাক। আর ধরতে পারে না মানেই হলো পড়তেও পারে না। আল্লাহর ইচ্ছাও কি তাই? একজন লোক যদি কালাম পড়তেই না পারলো তবে সে পাক-নাপাক সম্বন্ধে কীভাবে জানবে? তাই কিতাবুল মোকাদ্দস ঈসায়ী-অঈসায়ী, জাতি-ধর্ম-নির্বিশেষ সবাই পড়তে পারে।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ইঞ্জিল শরিফ ও কিতাবুল মোকাদ্দসের মধ্যে পার্থক্য কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ইঞ্জিল শরিফ হলো হজরত ঈসার সাহাবিদের কাছে নাজেল হওয়া ২৭ সুরার আসমানি কিতাব আর কিতাবুল মোকাদ্দস হলো ইঞ্জিল শরিফসহ আগের কিতাবের সমষ্টি। অর্থাৎ তৌরাত, জবুর ও অন্যান্য নবিদের সহিফাসহ মোট ৬৬ সুরার আসমানি কিতাব।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

নাজেল হওয়ার দিক থেকে ইঞ্জিল শরিফ ও কিতাবুল মোকাদ্দসের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। সচচেয়ে বড় পার্থক্য যা, তা হলো ইঞ্জিল শরিফ কিতাবুল মোকাদ্দসেরই একটি বড় অংশ। তারপর যে বড় পার্থক্য তা হলো ইঞ্জিল শরিফ ২৭টি সুরার সমন্বয়ে একটি আসমানি কিতাব আর কিতাবুল মোকাদ্দস হলো ইঞ্জিল শরিফসহ তিনটি প্রধান আসমানি কিতাব এবং সহিফাগুলোর সমন্বয়ে একটি আসমানি কিতাব। এছাড়া যেভাবে ইঞ্জিল শরিফ বিভিন্ন লোকের মারফত নাজেল হয়েছে ঠিক সেভাবে কিতাবুল মোকাদ্দসের লেখকরাও ছিলেন বিভিন্ন শ্রেণী ও পেশার মানুষ। সাধারণ রাখাল বালক (হজরত মুসা ও হজরত দাউদ) থেকে শুরু করে, দেশের রাজা মহারাজারাও (হজরত মুসা, বাদশাহ দাউদ ও বাদশাহ সোলায়মান) কিতাবুল মোকাদ্দসের লেখকের মর্যাদা লাভ করেছেন। অর্থাৎ তাঁদের মধ্যদিয়ে আল্লাহ তাঁর কিতাব নাজেল করেছেন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

নাজেল হওয়ার দিক থেকে কোরান ও ইঞ্জিলের পার্থক্য কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

নাজেল হওয়ার দিক থেকে ইসলামি শিক্ষা অনুযায়ী বলা হয়, কোরান সরাসরি আল্লাহর কথা, এখানে মানুষের কোন হাত নেই। আর ইঞ্জিল শরিফের দিক থেকে বলা যায়, ইঞ্জিল শরিফ আল্লাহর সরাসরি কথা নয়, আল্লাহ কিছু মানুষকে পাকরুহের দ্বারা অনুপ্রণিত করেছেন। আর সেই অনুপ্রেরণা পেয়ে, লেখকগণ আল্লাহর কথা নিজেদের ভাষায় লিখেছেন।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

কোরানকে বলা হয় আল্লাহর সরাসরি কালাম। এর ভাষা, প্রত্যেকটি দাড়ি, কমা, জের, জবর সবই আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে। কোরান হজরত মুহম্মদের উপর তাঁর ৪০ বছর বয়সে নাজেল হয় প্রথমে হেরা পর্বতের গুহায় এবং পরবর্তিতে বিভিন্ন স্থানে। জিবরাইল ফেরেশতা এসে হজরত মুহম্মদকে বলতেন আর তিনি তা মনে রেখে অন্যদের বলতেন। আর তারা তা শুনেশুনে মুখস্থ রাখতেন এবং পরবর্তিতে তা লিখতেন। ইসলামের প্রথম খলিফা হজরত আবু বকরের সময়, কোরানের বিভিন্ন লিপি সংরক্ষণের তেমন জোড়ালো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। অতপর দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমরও এ বিষয়ে তেমন কাজ করেননি। কিন্তু তৃতীয় খলিফা হজরত ওসমানের সময়েই কোরানের লেখা সংগ্রহ ও সন্নিবদ্ধ করা হয়। কোরান নাজেল হয় শুধু একজনের কাছে, আর তিনি হলেন হজরত মুহম্মদ। তিনি তাঁর বিশেষ সাহাবিগণকে বলেছেন আর তারা মনে রেখেছেন ও সময় ও সুযোগ পেয়ে তা লিপিবদ্ধ করেছেন। ধারণা ও বিশ্বাস করা হয় যে, কোরানের কথা যেভাবে আছে, আল্লাহ ঠিক সেভাবে বলেছেন।

ইঞ্জিল শরিফের বেলায় ব্যাপারটি ভিন্ন রকমের। বিশ্বাস করা হয় যে, আল্লাহ বেশকিছু লোককে বাছাই করেছেন ই্িঞ্জল শরিফ লেখার জন্য। এই লেখকরা পাকরুহের অনুপ্রেরণায় নিজেদের দক্ষতা, কৃষ্টি, সংস্কৃতি, আচার-ব্যবহার, রীতি-নীতি ইত্যাদি ব্যবহার করে, নিজেদের ভাষায় তা লিখেছেন। অর্থাৎ আল্লাহ এই লেখকদের পরিপূর্ণভাবে ব্যবহার করেছেন। ইঞ্জিল শরিফের লেখকদের মধ্যে আছেন মাছ ধরার জেলে ও ক্রীতদাস থেকে শুরু করে সুশিক্ষিত পন্ডিত ব্যক্তিবর্গ। এই লেখকদের মধ্যে রয়েছেন হজরত ঈসার ঘনিষ্ঠ সাহবিদের মধ্যে কয়েকজন এবং তাঁর আপন ভাই, যিনি প্রথম জামাত বা সমাজের প্রথম ইমাম ছিলেন। এই লেখকেরা খুব কাছে থেকে তাঁকে দেখেছেন ও তাঁর সাথে থেকেছেন এবং আল্লাহর পাকরুহের পরিচালনায় লিখেছেন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ইঞ্জিল শরিফ কীভাবে নাজেল হলো?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

আল্লাহর পাকরুহের দ্বারা পরিচালিত হয়ে, হজরত ঈসার সাহাবিরা ইঞ্জিল শরিফের বাণীগুলো লিখেছেন।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

আরবি উঞ্জালা শব্দ থেকে বাংলায় নাজেল শব্দের উৎপত্তি। উঞ্জালা মানে অনুপ্রেরণা সুতরাং নাজেল মানে অনুপ্রাণিত। ঈসায়ীদের বিশ্বাস হলো, হজরত ঈসার উম্মতেরা যা স্বচক্ষে দেখেছেন, যার মুখের কথা শুনেছেন তা পাকরুহের পরিচালনায় সাক্ষ্য দিয়েছেন ও লিখেছেন। আর তা-ই হলো ইঞ্জিল শরিফ (১ ইউহোন্না ১:১-৩)। ইঞ্জিল শরিফের মধ্যে রয়েছে ২৭টি সুরা। তার মধ্যে ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ সুরাকে বলা হয় ইঞ্জিল বা সুখবর। পরের ২৩টি সুরার মধ্যে শেষ সুরা হলো প্রকাশিত কালাম বা ভবিষ্যৎবাণী। আর বাকী ২২টি সুরা হলো সমাজ বা জামাতের জন্য শিক্ষামূলক পত্র। এই ২৭টি সুরার লেখক ছিলেন হজরত ঈসার সাথে অত্যন্ত ঘনিষ্ট জন, যারা খুব নিকট থেকে তাঁকে দেখেছেন, তাঁর সাথে থেকেছেন এবং তাঁর শিক্ষা সরাসরি শুনেছেন।

এই লেখকদের মধ্যে একজনই শুধু ব্যতিক্রম ছিলেন। তিনি হলেন হজরত পৌল। তিনি হজরত ঈসার সাথে ছিলেন না ও তাঁর শিক্ষা তিনি সরাসরি শোনেননি। বরং তিনি হজরত ঈসার উম্মতদের অত্যাচার করেছিলেন, তিনি স্তিফান নামে একজন উম্মতকে হত্যা করার কাজে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। সেইসময় হজরত ঈসা তাঁকে সরাসরি দর্শন দিয়ে তাঁর সাথে কথা বলেছেন। এই দর্শনের মধ্যদিয়েই তাঁর জীবন পরিবর্তিত হয়। এরপর থেকে তিনি হজরত ঈসার বিষয়ে শিক্ষা দিতে থাকেন, একসময় মসীহের জন্য তাঁর জীবনও উৎসর্গ করেন। পাকরুহের অনুপ্রেরণায় তিনি ইঞ্জিল শরিফের বেশ কয়েকটি সুরা লিখেন।

যদিও বিভিন্ন লেখক ইঞ্জিল শরিফের কথাগুলো লিখেছেন, তথাপি আমরা বিশ্বাস করি যে, তা আল্লাহর কালাম। কেননা আল্লাহর পাকরুহের পরিচালনায় অনুপ্রাণিত হয়েই তাঁরা সেই কথাগুলো লিখেছেন। আগের কিতাব এবং ইঞ্জিল শরিফ মিলে যে একটি কিতাব, তাকে বলা হয় কিতাবুল মোকাদ্দস বা পাককিতাব। এই পাককিতাবের লেখাগুলো সম্পর্কে উল্লেখ করতে গিয়ে, ইঞ্জিল শরিফ বলে, “পাককিতাবের প্রত্যেকটি কথা আল্লাহর কাছ থেকে এসেছে এবং তা শিক্ষা, চেতনা দান, সংশোধন এবং সৎ জীবনে গড়ে উঠবার জন্য দরকারি” (২ তীমথিয় ৩:১৬)।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ইঞ্জিল শরিফে কি হজরত মুহম্মদ (স:) এর আগমনের কথা লেখা আছে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, ইঞ্জিল শরিফে হজরত মুহম্মদের আগমনের কথা লেখা নেই এবং হজরত ঈসা হজরত মুহম্মদের বিষয়ে কোন ভবিষ্যতবাণী করেননি।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

কেউ কেউ ধারণা করে যে, ইঞ্জিল শরিফে হজরত মুহম্মদের আগমনের কথা লেখা আছে। তারা ইউহোন্না কিতাবে পাকরুহের আগমন বিষয়ে তাঁর নিজের ভবিষ্যত বাণীর কথা উল্লেখ করেন। রেফারেন্স হিসাবে তারা দেখান, ইউহোন্না ১৪:১৫-১৬ আয়াত। এখানে লেখা আছে, “তোমরা যদি আমাকে মহ্বত কর তবে আমার সমস্ত হুকুম পালন করবে। আমি পিতার কাছে চাইব, আর তিনি তোমাদের কাছে চিরকাল থাকবার জন্য আর একজন সাহায্যকারীকে পাঠিয়ে দেবেন।” এই সাহায্যকারীকে অনেকে হজরত মুহম্মদ বলে মনে করে থাকেন।

বিষয়টি গভীরভাবে ভেবে দেখা প্রয়োজন। প্রথমত, যারা উপরিউক্ত আয়াতটি নিয়ে কথা বলেন, পরের আয়াতটি পড়লেই বিষয়টি পরিস্কার হয়ে যায়। পরের আয়াতে সুস্পষ্টভাবে লেখা আছে যে, সেই সাহায্যকারী হলেন সত্যের রুহ যাঁকে দুনিয়ার লোক দেখতে পায় না এবং তাকে জানেও না। এই দিক থেকে বিচার করলে দেখা যায়, হজরত মুহম্মদকে দুনিয়ার লোক দেখেছে এবং জেনেছে। এই প্রতিজ্ঞা হজরত ঈসা তাঁর উম্মতদের কাছে করেছিলেন। তিনি আরো বলেছিলেন, দুনিয়ার লোক না দেখতে পেলেও কিংবা না জানলেও তোমরা তাঁকে জানো। এখানে তিনি নিজের কথাই বলেছেন। আর সেই সময় হজরত ঈসার উম্মতদের পক্ষে, ৫৭০ বছর পর জন্মগ্রহণ করা হজরত মুহম্মদকে দেখা ও জানার প্রশ্নই আসে না (ইউহোন্না ১৪:১৭)। সুতরাং সেই সাহায্যকারী হজরত মুহম্মদ নন। দ্বিতীয়ত, যে সাহায্যকারী আসার কথা, সেই বিষয়ে কালামে লেখা আছে, “যে সাহায্যকারীকে আমি পিতার কাছ থেকে তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেব, তিনি যখন আসবেন, তখন তিনিই আমার বিষয়ে সাক্ষি দেবেন। ইনি হলেন সত্যের রুহ, যিনি পিতার কাছ থেকে আসবেন আর তোমরাও আমার বিষয়ে সাক্ষি হবে” (ইউহোন্না ১৫:২৬)। তিনি আরো বলেন, “… সেই সত্যের রুহ যখন আসবেন, তখন তিনি তোমাদের পথ দেখিয়ে পূর্ণসত্যে নিয়ে যাবেন। তিনি নিজ থেকে কথা বলবেন না কিন্তু যা কিছু শোনেন তা-ই বলবেন, আর যা কিছু ঘটবে তাও তিনি তোমাদের জানাবেন। সেই সত্যের রুহ আমারই মহিমা প্রকাশ করবেন, কারণ আমি যা করি ও বলি তা-ই তিনি তোমাদের কাছে প্রকাশ করবেন” (ইউহোন্না ১৬:১৩, ১৪)।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ইঞ্জিল শরিফ অনুসারে কেয়ামতের আলামত কী?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

কেয়ামতের সময় দুনিয়ার অবস্থা কল্পনাতীত ভয়াবহ হবে। মানুষ সীমাহীন দুঃখকষ্ট ভোগ করবে। কিন্তু ঈসা মসীহের উম্মতেরা মসীহের আশ্রয়ে নিরাপদে থাকবে। তাদের আকাশে মেঘের মধ্যে তুলে নেয় হবে। পরে মসীহ তাঁর রাজত্ব কায়েম করবেন এবং সিংহাসনে বসে সমস্ত জাতির বিচার করবেন।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

কেয়ামতের আলামত সম্পর্কে ইঞ্জিল শরিফের বিভিন্ন সুরায় বিশদ বর্ণনা দেয়া হয়েছে। বর্ণিত আলামতের সবটুকু এই ক্ষুদ্র পরিসরে তুলে ধরা খুবই কঠিন। তবে সংক্ষিপ্ত আকারে দুনিয়ার অবস্থা, ঈসার উম্মতদের এবং ঈসা মসীহের অবস্থা তিনটি ধারায় তুলে ধরা হলো:

প্রথমত, দুনিয়ার অবস্থা: কেয়ামতের সময় দুনিয়ার অবস্থা কীরকম হবে তার বর্ণনা দিতে গিয়ে, হজরত ঈসা বলেন, “…আমি তোমাদের সত্যই বলছি, এখানে একটা পাথরের উপরে আর একটা পাথর থাকবে না; সমস্তই ভেঙে ফেলা হবে।” যুদ্ধের আওয়াজ শোনা যাবে। জাতির বিপক্ষে জাতির ভয়াবহ যুদ্ধ হবে। দেশে দেশে ভূমিকম্প হবে। মানুষের মধ্যে দুষ্টতা বেড়ে যাবে। সর্বনাশা ঘৃণার জিনিসকে পবিত্র জায়গায় রাখা হবে। তখন মানুষের এমন কষ্ট হবে যে, দুনিয়ার শুরু থেকে সেই সময় পর্যন্ত কখনও হয়নি এবং এরপরও শেষ হবে না। সেই সময় সূর্য অন্ধকার হয়ে যাবে, চাঁদ আর আলো দেবে না, তারাগুলো আসমান থেকে খসে পড়ে যাবে এবং চাঁদ-সূর্য-তারা আর স্থির থাকবে না” (ইঞ্জিল শরিফ, মথি ২৪ অধ্যায়)।

দ্বিতীয়ত, উম্মতদের অবস্থা: যুদ্ধের খবরাখবর শোনা গেলেও হজরত ঈসা তাঁর উম্মতদের অভয় দিয়ে বলেছেন, তাদের জন্য ভয় নেই, কারণ এসব হবেই হবে। তিনি আরো বলেন, অনেকেই আমার নাম নিয়ে এসে বলবে, ‘আমিই মসীহ’; এই বলে ঈমানদারগণকে ঠকাবে। হজরত ঈসা তাঁর উম্মতদের বিষয়ে বলেছেন, “সেই সময়ে লোকে তোমাদের কষ্ট দেবার জন্য ধরিয়ে দেবে এবং তোমাদের খুন করবে। আমার জন্য সব লোকেরা তোমাদের ঘৃণা করবে। সেই সময় অনেকে পিছিয়ে যাবে এবং একে অন্যকে ধরিয়ে দেবে।” স্থির থাকবার বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন যে, তারা যেন কারো ঠকামিপূর্ণ কথায় বিশ্বাস না করে। তবে তিনি তাদের সর্বদা সতর্ক ও প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। তিনি বলেন, “তোমরা সতর্ক থাক, কারণ তোমাদের প্রভু কোন্দিন আসবেন তা তোমরা জানো না। সেই জন্য তোমরা প্রস্তুত থাক, কারণ যে সময়ের কথা তেমরা চিন্তাও করবে না, সেই সময়েই ইবনে আদম আসবেন।

তৃতীয়ত, হজরত ঈসা মসীহের অবস্থা: আমরা জানি যে, কেয়ামতের অর্থাৎ শেষ সময় হজরত ঈসা এই দুনিয়াতে ফিরে আসবেন। তবে সেই দিন বা সময়ের কথা কেউ জানে না; কেবল আল্লাহই জানেন, কখন তিনি আসবেন। নুহ নবির সময়ে যেমন হঠাৎ বন্যা এসেছিল, তেমটি তিনি হঠাৎ আসবেন। তাঁর উম্মদের তিনি বলেছেন যে, তাদের বিচলিত হবার কোন কারণ নেই। কারো কথা শোনা কিংবা অনুসন্ধান করারও কোন প্রয়োজন নেই, “কেননা বিদ্যুৎ যেমন পূর্বদিকে দেখা দিয়ে পশ্চিম দিক পর্যন্ত চমকে যায়, ইবনে আদমের আসা সেইভাবেই হবে”। ইঞ্জিল শরিফে হজরত ঈসা নিজেই কেয়ামতের সময় তাঁর নিজের অবস্থা সম্পর্কে বলেন। তিনি বলেন, এমন সময় আসমানে ইব্নেআদমের চিহ্ন দেখা দেবে, দেখেই তাঁকে চেনা যাবে। মানুষ ইবনে আদমকে শক্তি ও মহিমার সঙ্গে মেঘে করে আসতে দেখবে। এই সময় ‘জোরে জোরে শিঙা বেজে উঠবে আর সঙ্গে সঙ্গে ইবনে আদম তাঁর ফেরেশতাদের পাঠিয়ে দেবেন। সেই ফেরেশতারা দুনিয়ার একদিক থেকে অন্যদিক পর্যন্ত, চারদিক থেকে তাঁর বাছাই করা বান্দাদের একসঙ্গে জড়ো করবেন (ইঞ্জিল শরিফ মথি ২৪ অধ্যায়)। হজরত ঈসা আরো বলেন, ইবনে আদম সমস্ত ফেরেশতাদের সঙ্গে নিয়ে যখন নিজের মহিমায় আসবেন, তখন তিনি বাদশাহ হিসাবে তাঁর সিংহাসনে মহিমার সাথে বসবেন এবং সকল জাতির বিচার করবেন (মথি ২৫ অধ্যায়)।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০