All posts by জাহাঙ্গীর

ঈসায়ীদের ধর্মকর্ম কেমন? (নামাজ, রোজা, হজ্জ, জাকাত, কোরবানি, দানখয়রাত, জানাজা, ইত্যাদি)।

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ধর্মকর্ম পালনের ব্যাপারে ঈসায়ীদের কঠিন আদেশ দেওয়া আছে; অন্যথায় তাদের ঈমান মিথ্যা বা মৃত (ইয়াকুব ২:১৬, ১৭) ।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

মানুষ বাস্তববাদী, সামাজিক ও রুহানি জীব। সমাজে বাস করতে হলে, যেমন সমাজের নিয়ম মানতে হয়, তেমনি আল্লাহর রাজ্যের প্রজা অর্থাৎ ঈসায়ী হলেও তাদের আল্লাহর কালাম অনুসারে জীবন যাপন করতে হয়। এখন প্রশ্ন হলো, এই কাজগুলো নাজাতের জন্য করা, না কি সামাজিকতা কিংবা রুহানিকতার জন্য করা? ঈসায়ীরা নাজাতের জন্য এসব ধর্মকর্ম করে না। কারণ এগুলোর মধ্যদিয়ে প্রকৃতপক্ষে নাজাত পাওয়া যায় না। এর কারণ হলো কেউ এসব ধর্মকর্ম পালন করতে পারে না। আল্লাহর কালাম বলে, ধার্মিক কেউ নেই, একজনও নেই (রোমীয় ৩:২৩)। ধর্মকর্ম করে কেউ ধার্মিক হতে পারলে, এই আয়াত নাজেল হতো না।

নাজাত লাভের জন্য ঈসায়ীরা হজরত ঈসার উপর ঈমান আনে। কারণ তাদের সাফায়াতকারী হবার জন্যই ঈসা মসীহ কোরবানি হয়ে, কাফফারা দিয়েছেন। হজরত ঈসার উপর যারা ঈমান আনে, তারা আল্লাহর রাজ্যের প্রজা হয়। আর প্রজা হিসাবে তাদের উচিত যুক্তিসংগত সামাজিক, রুহানি ও নাগরিক হিসাবে ধর্মকর্ম ও সামাজিক দায়িত্ব পালন করা। তবে নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত ও জানাজার বিষয়ে কথা আছে। জানাজা সাধারণত মৃত ব্যক্তির জন্য করা হয়। ঈসায়ীরা মৃত ব্যক্তির জন্য জানাজা পড়ে না। কারণ তাতে কোন লাভ নেই। মৃত্যুর পর সেই ব্যক্তি ইহজীবনে যা করেছে তার কিছুই জানাজার মধ্যদিয়ে বদলানো যায় না। তবে সেই জানাজা বা মুনাজাত যদি মৃত ব্যক্তির আত্মীয়স্বজনদের জন্য হয়, তবে ঈসায়ীরা তা করতে প্রস্তুত। আল্লাহর কালামে লেখা আছে, “যাতে আল্লাহর উপরে যারা ঈমান এনেছে তারা অন্যদের উপকার করবার কাজে নিজেদের ব্যস্ত রাখবার দিকে মন দেয়। মানুষের পক্ষে এই সব ভাল এবং উপকারী (তীত ৩:৮)।

ঈসায়ীরা হজরত মুহম্মদের উম্মত হয় না কেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

হজরত মুহম্মদ নিজেই নিজের বিষয়ে এবং অন্যদের বিষয়ে কী হবে তা জানেন না, তাই তারা তাঁর উম্মত হয় না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

কোরান শরিফে বলা হয়েছে, “বল, আমি কোন নতুন রসুল নহি। আমি জানি না, আমার ও তোমাদের ব্যাপারে কী করা হবে … আর আমি তো এক স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র (সুরা আহকাফ ৪৬:৯)। যিনি নিজের বিষয়েই জানেন না বলেছেন, তবে অন্যদের দায়দায়িত্ব তিনি কীভাবে নেবেন? রোজ কেয়ামতের মাঠে যা যা হবে তার বিবরণ ইঞ্জিল শরিফে খুব পরিষ্কারভাবে বর্ণিত আছে। লেখা আছে, হজরত ঈসা তাঁর উম্মতদের জন্যই ফিরে আসবেন, আর এটাই স্বাভাবিক। লেখা আছে, যারা মারা গেছে, সেদিন তারা পুনর্জীবিত হবে। আর যারা জীবিত আছে, তারা ঈসা মসীহের সাথে সাক্ষাত করার জন্য আকাশে উঠে যাবে। এরপর ঈসা মসীহ সিংহাসনে বসে বিচার করবেন। তিনি গোটা মানব জাতিকে দুই ভাগে ভাগ করবেন; একদল তার ডানদিকে অপর দল তার বাঁদিকে রাখবেন। যারা বাঁদিকে থাকবে তারা হলেন সেই অবিশ্বাসীরাই যারা ঈসার উপর ঈমান আনেনি। তাদের তিনি অনন্ত শাস্তি ভোগ করার জন্য আগুনের হ্রদে ফেলে দেবেন, যেখানে শয়তান ও তার অনুসারীরা থাকবে। যারা ডানদিকে থাকবে, তারা হলেন সেই সব ঈমানদারেরা যারা হজরত ঈসার উপর ঈমান এনেছেন। তাদের তিনি অনন্ত সুখ ভোগ করার নির্দেশ দেবেন এবং তাদের নিয়ে একহাজার বছর রাজত্ব করবেন।

কোরান শরিফ বলে, “স্মরণ কর, যখন ফিরিশতাগণ বলল, ‘হে মারইয়াম! নিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাকে তাঁর পক্ষ থেকে একটি কালেমার সুসংবাদ দিচ্ছেন। তাঁর নাম মসীহ মারইয়াম পুত্র ঈসা, সে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত এবং সান্নিধ্যপ্রাপ্তদের অন্যমত হবে” (সুরা আল-ইমরান ৪৫ আয়াত)। কোরান এবং ইঞ্জিল অনুসারে যাকে আল্লাহ নিজেই দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত করেছেন তাঁর উম্মত হওয়াই তো বেশি যুক্তিসংগত।

কোরান শরিফ অনুসারে হজরত মুহম্মদ নিজেই জানেন না তাঁর উম্মতদের ব্যাপারে কী হবে বা না হবে বরং তার আক্ষেপ হবে যে, তিনি তাদের জন্য কিছুই করতে পারবেন না। কোরান শরিফে আল্লাহ হজরত মুহম্মদকে বলতে বলেন, “বল, আমি কোন নূতন রসুল নহি। আমি জানি না, আমার ও তোমাদের ব্যাপারে কী করা হবে। আমি আমার প্রতি যা ওহি করা হয় কেবল তারই অনুসরণ করি। আমি তো এক স্পষ্ট সতর্ককারী মাত্র” (সুরা আহকাফ ৯ আয়াত)।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

পঞ্চম অধ্যায়
ঈসায়ীদের ধর্মকর্ম সম্পর্কে

ঈসায়ীরা কি হজরত মুহম্মদকে নবি হিসাবে সম্মান করে?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

হ্যাঁ, যেহেতু পৃথিবীর কোটি কোটি লোক হজরত মুহম্মদকে মানে ও বিশ্বাস করে, সেহেতু ঈসায়ীরাও তাঁকে একজন মহাপুরুষ হিসাবে সম্মান করে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

নবি শব্দের মানে হলো ভবিষ্যত প্রবক্তা আর রসুল হলো আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ। যদি এই শব্দগুলো দিয়ে সাফায়াতকারী ধরা হয়, তবে ঈসায়ীরা তাঁকে মানে না বলতে হবে। কারণ ইঞ্জিল শরিফ অনুসারে সাফায়াতকারী একজনই আছেন, আর তিনি হলেন হজরত ঈসা কালেমাতুল্লাহ। পাককালাম বলে যে, আল্লাহ যেমন একজন ঠিক তেমনি আল্লাহ ও মানুষের মধ্যে সাফায়াতকারীও একজনই আছেন, আর তিনি হলেন হজরত ঈসা মসীহ।

পাককিতাবের কথা অনুযায়ী হজরত ঈসা দুনিয়াতে সাফায়ত করার জন্য এসেছিলেন। তিনি নিজের জীবন কোরবানি দিয়ে সাফায়াত করার গ্রহণযোগ্যতা লাভ করেছিলেন। পাককিতাবে লেখা আছে, “মসীহ আমাদের জন্য একটা নতুন ও জীবন্ত পথ খুলে দিয়েছেন, যেন আমরা পর্দার মধ্যদিয়ে অর্থাৎ তাঁর শরীরের মধ্য দিয়ে আল্লাহর সামনে উপস্থিত হতে পারি” (ইবরানি ১০:২০)। শুধু তা নয়, তিনি এখনও প্রতিদিন আমাদের জন্য সাফায়ত করছেন যেন আমরা শয়তানের কুটকৌশল থেকে রক্ষা পাই। পাককিতাব বলে, “…এইজন্য যারা তাঁর মধ্যদিয়ে আল্লাহর কাছে আসে, তাদের তিনি সম্পূর্ণভাবে নাজাত করতে পারেন। কারণ তাদের পক্ষে অনুরোধ করবার জন্য তিনি সবসময় জীবিত আছেন” (ইবরানি ৭:২৫)। ঈসা নামের অর্থ হলো উদ্ধারকর্তা। এ নাম ফেরেশতা তাঁর জন্মের আগেই রেখেছিলেন। সুতরাং ঈসায়ীদের তথা সকল মানুষের একমাত্র সাফায়াতকারী হলেন ঈসা কালেমাতুল্লাহ।

তবে হজর মুহম্মদকে একজন মহাপুরুষ বলতে ঈসায়ীদের কোন বাধা নেই। এই অর্থে যদি নবি বা রসুল বলা হয়, তবে তাঁকে নবি বলতেও দোষের কিছু নেই।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

মুসা নবির শরিয়ত দানের উদ্দেশ্য কী ছিল?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

শরিয়ত দানের উদ্দেশ্য হলো, মানুষ যেন তাদের অন্তরের পাপময় অবস্থা বুঝতে পারে।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

বলা হয়ে থাকে যে, ঈসায়ীরা ধর্মকর্ম দিয়ে নাজাত পায় না অর্থাৎ নাজাত লাভের জন্য তারা ধর্মের বা শরিয়তের অধীন নয়। তাহলে এই প্রশ্ন ওঠে যে, মুসা নবির শরিয়ত দানের উদ্দেশ্য কী ছিল? এটি খুবই সংগত ও গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন এবং এর উত্তরও তেমন তাৎপর্যপূর্ণ। এই প্রশ্নের উত্তর জানার আগে আমাদের জানা দরকার শরিয়ত কী?

শরিয়ত হলো আল্লাহর দেওয়া বিধিনিষেধ। মানুষ সৃষ্টি করার পর হজরত আদমের জন্য বিধিনিষেধ ছিল একটি, “তোমরা ভালোমন্দ জ্ঞানের গাছের ফল খেয়োনা”। কিন্তু সেই একটি বিধি বা আদেশ হজরত আদম পালন করতে পারেনি। ফলে পৃথিবীর মধ্যে পাপ ও পাপের ফলে মৃত্যু প্রবেশ করেছে। অতঃপর শরিয়ত আসে হজরত মুসার আমলে। আল্লাহ পাথরের উপর খুদাই করে ১০টি শরিয়ত দিয়েছিলেন। আল্লাহর কালামে লেখা আছে, “আল্লাহ্ কী চান তা তুমি জানো এবং যা ভাল তা মেনে নাও। কারণ শরিয়ত থেকে তুমি সেই শিক্ষাই লাভ করেছ” (ইঞ্জিল শরিফ, রোমীয় ২:১৮)। এই শরিয়ত দেয়া হয়েছে যেন মানুষের অন্তরের অবস্থা কী তা জানা যায়, নিজেদের বিচার করা যায়। পাককালামে লেখা আছে, “মুসার শরিয়তের বাইরে থাকা অবস্থায় যারা গুনাহ করে, তারা শরিয়ত ছাড়াই ধ্বংস হবে কিন্তু যারা শরিয়তের ভিতরে থাকা অবস্থায় গুনাহ করে তাদের বিচার শরিয়তের দ্বারাই হবে” (রোমীয় ২:১২)। অতএব, হজরত মুসার মধ্যদিয়ে শরিয়ত দেয়া হয়েছে যেন গুনাহ কী তা জানা যায়। আর এভাবে মানুষ চেতনা লাভ করে আল্লাহর দিকে ফেরে (রোমীয় ৭:১২)।

এবার আসুন, ঈসায়ীরা কেন তা পালন করে না, তা দেখা যাক। প্রথমেই বলতে হবে যে, ঈসায়ীরা শরিয়ত পালন করে না এমন বলা যায় না। তারাও শরিয়ত পালন করে। শরিয়তের মধ্যে যা যা লেখা আছে তা পালন করা ঈসায়ীদের অন্যতম কাজ। তবে সেই কাজ তারা নাজাত লাভের জন্য করে না। আল্লাহর সন্তান হিসাবেই আনন্দের সাথে করে। “কারণ আল্লাহ মানুষকে এখন শরিয়ত ছাড়াই কেমন করে ধার্মিক বলে গ্রহণ করেন তা প্রকাশিত হয়েছে। তৌরাত শরিফ ও নবিদের কিতাব সেই বিষয়ে সাক্ষি দিয়ে গেছে। যারা ঈসা মসীহের উপর ঈমান আনে, তাদের সেই ঈমানের মধ্য দিয়েই আল্লাহ ধার্মিক বলে গ্রহণ করেন” (রোমীয় ৩:২১, ২২ আয়াত)।

শরিয়ত হলো একটি আয়না, যার মধ্যে নিজের রুহানি চেহারা দেখা যায়। যেহেতু কেউ শরিয়তের সব আইন পালন করতে পারে না, সেহেতু শরিয়ত মানুষের পাপময় অবস্থাকে তুলে ধরে, যাতে সকল মানুষ আল্লাহর অনুগ্রহের কাছে আসার সুযোগ পায়। ঈসায়ীরা এই সুযোগ নিয়েছে। শরিয়তের দ্বারা চেতনা লাভ করেই তারা ঈসা মসীহের কাছে এসেছে, যাতে ধার্মিক গণিত বা আল্লাহর গ্রহণযোগ্য হয়।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ইব্রাহিম নবির স্থাপিত কোরবানি ঈসায়ীরা পালন করে না কেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

কোন ঈসায়ী ইচ্ছা করলে ইব্রাহিম নবির ঈমানের বিষয়টিকে স্মরণ করে কোরবানি দিতে পারে; কিন্তু ঈসায়ীদের ক্ষেত্রে হজরত ইব্রাহিমের কোরবানির বাধ্যতামূলক নয়।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

হজরত ইবরাহিমের কোরবানি ছিল তাঁর ব্যক্তিগত ঈমানের পরীক্ষা। সেই পরীক্ষায় ইবরাহিম উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। হজরত ইবরাহিম কখনও সেই কোরবানি পালনের জন্য কোথাও কোন নির্দেশ দেননি। আজ তাঁর সেই মহা ঘটনাকে স্মরণ করার জন্য কোরবানি দেয়া হয়। ইবরাহিমের কোরবানি একটি ঐচ্ছিক বিষয়। যার অর্থনৈতিক সামর্থ্য আছে তিনি সেই কোরবানি দিতে পারেন। মূলত ধনী লোকেরাই কোরবানি দেন। কোরবান শব্দের অর্থ উৎসর্গ। কোন ধর্মীয় পর্ব বা উৎসর্গ ধনী-গরিব নির্বিশেষে হওয়া উচিত। হজরত ইব্রাহিমের কোরবানি ছিল পোড়ানো কোরবানি। তাওরাত কিতাবের নিয়ম অনুযায়ী (লেবীয় ১ অধ্যায়) কোরবানির পশুকে জবাই করে কোরবান গাহের উপর সম্পূর্ণ পুড়িয়ে দেয়া হতো। ইব্রাহিম তার পুত্রকে বেঁধে জ্বালানি কাঠ সাজিয়ে কোরবানগাহের উপর রেখেছিলেন (পয়দায়েশ ২২ অধ্যায়)। কিন্তু বর্তমানে ভিন্ন উপায়ে কোরবানি দেয়া হয়। অর্থাৎ এখন যে কোরবানি দেয়া হয়, তা স্মরণাত্মক কোরবানি। আল্লাহর উদ্দেশ্যে পশু কোরবানি দিয়ে তা দরিদ্রদের মধ্যে বিলিয়ে দেয়া হয়। সারাবছর যারা মাংস খাওয়া থেকে বঞ্চিত থাকে, তারা এই সময় মাংসের স্বাদ পায়। তবে বাস্তবতা হলো, কোরবানির পশুর মাংস বেশির ভাগই কোরবানি দাতারা নিজেরাই ভোগ করে; আর অবশিষ্টাংশ দরিদ্রদের মধ্যে বিতরণ করেন।

বার্ষিক কোরবানির উৎপত্তির ইতিহাস একদিক থেকে খুবই মজার অপরদিক থেকে খুবই বেদনাদায়ক। হজরত ইবরাহিমের অনেক পরে বনিইসরাইলরা ৪৩০ বছর যাবত মিসরে বন্দি ছিল। সেখানে তারা স্বৈরশাসকের নিয়ন্ত্রণে হাজারো দুঃখকষ্ট ভোগ করতো। তাদের দিয়ে অমানুষিক পরিশ্রমই শুধু নয়, তাদের ক্রীতদাস হিসাবে ব্যবহার করা হতো। একসময় হজরত মুসার নেতৃত্বে আল্লাহ তাদের উদ্ধারের ব্যবস্থা করলেন। যেদিন তারা মিসর দেশ থেকে উদ্ধার পাবে, সেদিন আল্লাহ তাদের এক অদ্ভুত আদেশ দিয়েছিলেন। তাদের বলেছিলেন, যেন তারা নির্দোষ পশু জবাই করে, সেই পশুর রক্ত তাদের ঘরের চৌকাঠে লাগিয়ে রাখে। বনিইসরাইলরা তা-ই করেছিলেন। সেই দিন রাতে আল্লাহর ফেরেশতা মিসর দেশের উপর দিয়ে গিয়েছিলেন। যে যে ঘরের দরজায় রক্ত ছিল সেই ঘরগুলো ছাড়া মিসরিয়দের সব ঘরের ১ম সন্তান এবং গরু-বাছুরের ১ম সন্তানও মারা গিয়েছিল। এমনকি ফেরাউনের ঘরেও সেই মৃত্যু হানা দিয়েছিল। ফলে তারা বনি-ইসরাইলকে মিসর থেকে ছেড়ে দিয়েছিল। বনিইসরাইল জাতি এই ঘটনাকে স্মরণ করার জন্য অর্থাৎ তাদের উদ্ধারের দিনকে স্মরণ করার জন্য বার্ষিক কোরবানি দিতো। এইভাবে তাদের দ্বারাই তাদের মধ্যে বার্ষিক কোরবানির প্রচলন হয়েছিল এবং পরবর্তীকালে অন্যান্য ধর্মের লোকও বার্ষিক কোরবানি দিতে শুরু করে।

বোঝা যায়, হজরত ইবরাহিমের অনেক পরে বনিইসরাইল জাতির জন্য এই কোরবানি আবশ্যকীয় হয়। তবে কোরবানি উৎসবের আসল অর্থ তা নয়। এরপর এই কোরবানি তাদের গুনাহ মাফের কাফফারা হিসাবে দেয়ার জন্য আল্লাহর কাছ থেকে নির্দেশ আসে এবং এটাকে ফরজ করে দেয়া হয়। অর্থাৎ যে ব্যক্তি গুনাহ করে তাকেই কোরবানি দিতে হবে। যেহেতু গুনাহ ছাড়া মানুষ নেই সেহেতু প্রত্যেককেই প্রতিবছর একবার তো বটে, বরং সারা বছরই তাদের কোন না কোন কোরবানি দিতে হতো। জানা অজানা সব গুনাহ থেকে মাফ পাবার ব্যবস্থা হিসাবে আল্লাহ তাদের এই কোরবানির ব্যবস্থা দিয়েছিলেন। বছরে একবার তারা মহাইমামের মাধ্যমে মহাকোরবানি দিতো। সারা বছর আরো ছোট ছোট অনেক ধরনের কোরবানি দিতো।

ঈসায়ীরা কেন বার্ষিক কোরবানি দেয় না? এই প্রশ্নের প্রেক্ষাপট বড় হলেও তার উত্তর খুবই সহজ। সেই উত্তর হলো, ঈসায়ীরা বিশ্বাস করে যে, মানব জাতির গুনাহর জন্য হজরত ঈসা নিজের জীবন কাফফারা দিয়েছেন। তারা যেহেতু সেই কাফফারায় বিশ্বাসী সেহেতু তাদের জন্য সেই বার্ষিক কোরবানির আর প্রয়োজন নেই। কিতাবে লেখা আছে, “বর্তমানকালের জন্য এটা একটা চিহ্ন যা আমাদের বলে দিচ্ছে যে, কোরবানি দেওয়া পশু এবং অন্যান্য জিনিস এবাদতকারীর বিবেককে পরিষ্কার করতে পারে না। সেগুলো কেবল শরীরের ব্যাপার, অর্থাৎ খাওয়া-দাওয়া ও শরিয়ত মতো পাক-সাফ হবার ব্যাপারমাত্র। কিন্তু মসীহ এসেছিলেন ভবিষ্যতের সব উন্নতির বিষয়ে মহাইমাম হয়ে। আরো মহৎ ও আরো ভালো এবাদত-তাম্বুতেই আল্লাহর এবাদত-কাজ করবার জন্য তিনি এসেছিলেন” (ইঞ্জিল শরিফ, ইবরানি ৯:৯-১১ আয়াত) । নবিরা যেমন তাঁর এই জীবনদায়ী কাফফারা সম্পর্কে ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন, তেমনি তিনি নিজেও বলেছেন, “মনে রেখো, ইবনে-আদম সেবা পেতে আসেননি বরং সেবা করতে এসেছেন এবং অনেক লোকের মুক্তির মূল্য হিসাবে তাদের প্রাণের পরিবর্তে নিজের প্রাণ দিতে এসেছেন” (ইঞ্জিল শরিফ, মথি ২০:২৮)। তিনি আরো বলেন, “… আমি এসেছি যেন তারা জীবন পায় আর সেই জীবন যেন পরিপূর্ণ হয়” (ইঞ্জিল শরিফ, ইউহোন্না ১০:১০)। অতএব, ঈসায়ীরা ঈসা মসীহের কাফফারায় বিশ্বাসী বলে তাদের পশু কোরবানির প্রয়োজন নেই। কিতাব অনুযায়ী মানুষের গুনাহ মাফের জন্য মসীহই চূড়ান্ত এবং সর্বোত্তম কোরবানি।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ঈসা মসীহ সম্পর্কে নবিগণ কী কী বলেছেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর: নবিগণ হজরত ঈসা মসীহ সম্পর্কে তাঁর জন্মের আগের ঘটনা থেকে শুরু করে জন্ম, কাজ, মৃত্যু, পুনরুত্থান, বেহেস্তে চলে যাওয়া এবং শেষকালে ফিরে আসার সকল কথাই বলেছেন।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

হজরত ঈসা মসীহ সম্পর্কে হজরত মুসা, হজরত দাউদ, হরজত ইয়ারমিয়া, হজরত ইশাইয়া, হজরত দানিয়াল, হজরত যোয়েল, হজরত মিখা, হজরত ইয়াহিয়া প্রমুখ নবিগণ নানা ভবিষ্যতবাণী করেছেন। তারা কেউ কেউ তাঁর জন্মের আগে ও জন্মের পরের অনেক ঘটনাবলি নিয়ে, ভবিষ্যতবাণী করেছেন। নবিগণ এত খুটিনাটি বিষয়ে ভবিষ্যতবাণী করেছেন যে, তা বিস্ময়কর। উদাহরণস্বরূপ, তাঁর জন্মের আগে তাঁর পথপ্রস্তুতির জন্য কেন জন্মাবেন, কী রকম মায়ের গর্ভে জন্মাবেন, তাঁর জন্ম কোথায় হবে, কীভাবে হবে, জন্মের সময় কী দুর্ঘটনা ঘটবে, শিশুকাল কীভাবে কাটবে, যৌবন কালে তিনি কী কী করবেন, তাঁর বিরুদ্ধে কী কী হবে, তাঁর বিচার কেন হবে, বিচারের রায় কী হবে, তাঁর মৃত্যু কীভাবে হবে, কেন হবে, কোথায় কবর দেয়া হবে, কবর থেকে তিনি কী করবেন, অবশেষে তিনি কোথায় যাবেন এবং আবার যে দুনিয়াতে ফিরে আসবেন ইত্যাদি সব ঘটনাই নবিরা এক এক করে সব বলে গেছেন। হজরত ঈসার ৩৩ বছরের জীবন কালের প্রায় প্রত্যেকটি ঘটনাই নবিরা বলে গেছেন।

সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো নবিগণ তাঁর এই দুনিয়াতে আগমনের উদ্দেশ্য এবং লক্ষ্যের কথাও বলেছেন। তাঁরা বলেছেন, হজরত ঈসা গুনাহগার মানুষকে তাদের গুনাহ থেকে উদ্ধার করতেই এই দুনিয়াতে আসবেন। তাঁরা বলেছেন, তিনি নিষ্পাপ হিসাবে জন্ম গ্রহণ করবেন এবং নিজেকে পাপী মানুষের কাফফারা হিসাবে আল্লাহর কাছে উৎসর্গ করবেন। তাঁর এই কাফফারার মধ্যদিয়ে গুনাহগার মানুষকে আল্লাহ নির্দোষ হিসাবে ধরবেন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

আগেকার নবিরা কি মুসলমান ছিলেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

না, আগেকার নবিরা মুসলমান ছিলেন না।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

মুসলমান একটি জাতিসত্তার পরিচায়ক। সুনির্দিষ্ট ইসলামি নীতিমালা এবং আইন-কানুন দ্বারা উদ্বুদ্ধ এবং নিবেদিত বিশ্বাসীকেই মুসলমান বলা হয়। না, এই অর্থে হজরত ঈসা মসীহসহ তাঁর আগের কোন নবিই মুসলমান ছিলেন না। তারা বরং বনি-ইসরাইল জাতিরই লোক ছিলেন। কেবল হজরত আদম, হজরত নুহ, হজরত ইব্রাহিম এবং হজরত ইসহাক প্রমুখ নবিগণ বনিইসরাইল জাতির বাইরে ছিলেন। হজরত আদম নবি না হলেও প্রথম মানব হিসাবে তাঁকে কেউ কেউ নবির সম্মান দেন। এছাড়া হজরত ইবরাহিম, তাঁর ভাইপো লুত এবং ছেলে ইসহাসককে নবি ধরা হলে, তারা বনি ইসরাইল জাতির বাইরে আছেন। এ কালের নবিদের মধ্যে হজরত নুহই নবি হিসাবে তাঁর লোকদের উদ্দেশ্যে ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন। আর একদিক থেকে বিবেচনা করলে হজরত ইবরাহিম ছিলেন বনি-ইসরাইল জাতির আদিপিতা। যদিও হজরত ইবরাহিমের নাতি ইয়াকুবের মধ্য দিয়েই ইসরাইল জাতির সূচনা। তথাপি ইসরাইল জাতির উৎপত্তির প্রতিজ্ঞা হজরত ইবরাহিমের কাছেই করা হয়েছিল। নবি হিসাবে তাই হজরত ইবরাহিম ছিলেন সেই জাতির উৎস। সেদিক থেকে ইবরাহিম এবং ইসহাককেও ইসরাইল জাতির লোক বলা যায়। কিতাবধারী এবং সহিফাধারী সকল নবিই বনি-ইসরাইল জাতির লোক ছিলেন, তাঁরা মুসলমান ছিলেন না।

যে অর্থে হ্যাঁ অর্থাৎ তাদের মুসলমান বলা যায় তা হলো, মুসলমান শব্দের আভিধানিক অর্থের দিক থেকে। মুসলমান শব্দ আরবি ভাষার সালাম ধাতু থেকে এসেছে। সালাম মানে শান্তি। মুসলমান মানে হলো যার মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই শান্তি আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণের মধ্য দিয়ে হয়ে থাকে। অর্থাৎ মুসলমান মানে আল্লাহর কাছে সমর্পিত শান্তিকামী মানুষ। এই অর্থের দিক থেকে বলা যায়, সকল নবিই সাধারণভাবে আল্লাহর কাছে সমর্পিত ও শান্তিকামী ছিলেন। ফলে বলা যায় প্রত্যেক নবিই মুসলমান ছিলেন। কিন্তু ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করলে, তারা কোনভাবেই মুসলমান ছিলেন না। কেননা মুসলমান জাতির উৎপত্তি হয়েছে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের পর অথচ নবিগণ তার আগেই এসেছিলেন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

নবিরা কী পাপ করতে পারেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

হজরত ঈসা ব্যতীত সকল নবিই পাপের শিকার হয়েছেন।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

যাঁরা কোন মানুষ, দেশ, ঘটনা ও পরিস্থিতি সম্পর্কে ভবিষ্যতের কথা বলেন তাঁদের নবি বলা হয়। কিতাবি ইতিহাস থেকে জানা যায়, এই নবিরা শুধু ভবিষ্যতের কথাই বলতেন না, তাঁরা পাকরুহের পরিচালনায়, যে কোন সময় সম্পর্কে বিচারের, শাস্তির, ধ্বংসের ও পুরস্কারের কথা বলতেন। তাঁরা আল্লাহর কালাম শিক্ষা দিতেন, ব্যাখ্যা করতেন এবং মানুষকে আল্লাহর সত্যে পরিচালনা করতেন। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, এই নবিদের কেমন করে গুনাহগার বলা যেতে পারে কিংবা তাঁরা আসলেই গুনাহগার ছিলেন কিনা।

সাধারণ বিবেচনায় নবিদের গুনাহগার বলাটা অস্বাভাবিক, কারণ তাঁরা মানুষকে আল্লাহর কাছ থেকে পাওয়া বাণী শোনাতেন, আল্লাহ ও তাঁর কালামের বিষয়ে শিক্ষা দিতেন। কিন্তু বাস্তবতা অনেক কঠিন। আমরা যাকে স্বাভাবিক মনে করি তা অনেক সময় অস্বাভাবিক, আর যাকে অস্বাভাবিক মনে করি তাই স্বাভাবিক। কেননা নবিগণ নিজেরাই তাঁদের গুনাহর জন্য তওবা করেছেন, আল্লাহর কাছে মাগফেরাত কামনা করেছেন। হজরত আদমের অবাধ্যতা এবং তার শাস্তির কথা (তৌরাত, পয়দায়েশ ৩) আমরা জানি। এছাড়া হজরত নুহের মদ্যপান (তৌরাত শরিফ, পয়দায়েশ ৯:২০-২১) হজরত ইব্রাহিম ও ইসহাকের মিথ্যা বলা (তৌরাত শরিফ, পয়দায়েশ ১২:১০-১৩, ২০:১-২, ২৬:৬, হজরত লূতের মদ্যপান ও ব্যভিচার (তৌরাত শরিফ, পয়দায়েশ ১৯:৩০-৩৪), বিবি রেবেকা ও হজরত ইয়াকুবের ছলনা (তৌরাত শরিফ, পয়দায়েশ ২৭:৫-২৫, হজরত মুসার নরহত্যা (তৌরাত শরিফ, হিজরত ২:১১-১২), হজরত হারুনের মূর্তিপূজা (তৌরাত শরিফ, হিজরত ৩২:১-৭) হজরত দাউদের নরহত্যা ও ব্যভিচার (নবিদের কিতাব, ২শামুয়েল ১১ অধ্যায়), হজরত দাউদের ক্ষমা প্রার্থনা (জবুর শরিফ ৫১ অধ্যায়), হজরত সোলায়মানের বিলাসিতা, ব্যভিচার ও প্রতিমাপূজা (নবিদের কিতাব, ১বাদশাহনামা ১০:১৪-১১:১-১১), হজরত ইউনুসের অবাধ্যতা, পলায়ন ও শেষে মাছে গিলে খাওয়ার সত্য ঘটনা প্রমাণ করে যে, সকল নবি গুনাহগার ছিলেন। ইশাইয়া নবি আল্লাহর পবিত্রতার দর্শন দেখে বলেছিলেন, “হায় হায় আমি ধ্বংস হয়ে গেলাম, কারণ আমার মুখ নাপাক এবং আমি এমন লোকদের মধ্যে বাস করি, যাদের মুখ নাপাক” (নবিদের কিতাব, ইশাইয়া ৬:৫)। ইয়ারমিয়া কিতাবে আল্লাহ বলেন, “দেশের মধ্যে খুব ভয়ংকর ঘটনা ঘটেছে। নবিরা মিথ্যা কথা ঘোষণা করে, ইমামেরা নিজের হাতেই ক্ষমতা নিয়ে শাসন করে, আর আমার বান্দারা এই রকমই ভালবাসে। কিন্তু হে আমার বান্দারা, শেষে তোমরা কি করবে?” (নবিদের কিতাব, ইয়ারমিয়া ৫:৩০-৩১)।

তবে এখানে একটি কথা বলে রাখা খুবই জরুরি যে, আমরা যেন একই পাল্লায় নবিদের সাথে নিজেদের না মাপি। যদি তা করি, তবে জঘন্য অন্যায় হবে। তার কারণ তাঁরা অনেক দিক থেকে আমাদের চেয়ে অনেক অনেক আলাদা এবং বিশেষ ব্যক্তিত্বসম্পন্ন। অন্তত নিচের ৫টি কারণে আমাদের চেয়ে নবিগণ অনেক সম্মানের এবং অনেক গৌরবের:

  1. নবিদের আল্লাহ তাঁর বিশেষ কাজের জন্য বেছে নিতেন।
  2. পাকরুহের মধ্য দিয়ে নবিরা আল্লাহর বাণী বলতেন।
  3. নবিগণ বিনাস্বার্থে আল্লাহর কাজে জীবনের ঝুঁকি নিতেন।
  4. সারা জীবনে দু’একটি ব্যতিক্রম ছাড়া মানুষকে সত্যিকারভাবে ভালবাসতেন।
  5. কোনভাবে পতিত হলে, তওবা করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতেন।
উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০

ইঞ্জিল শরিফ সম্পর্কে কোরান কী শিক্ষা দেয়?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

ইঞ্জিল সম্পর্কে কোরান ভালো শিক্ষা দেয়।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

কোরান শরিফ প্রায় ৬১০ খ্রিস্টাব্দের পরে নাজেল হতে শুরু করে। এই সময় সমাজে তাওরাত, জবুর ও নবিদের কিতাব পর্যাপ্ত পরিমাণে পাওয়া যেতো ও মানুষ তা ব্যবহার করতো। কোরান শরিফের আগে ইঞ্জিল শরিফই নাজেল হয়েছিল। তাই সেই কিতাব আরো বেশি পরিমাণে ছিল। ফলে এই কিতাবের কথা বলা আরো সমীচীন ছিল। তাই আল্লাহ কোরানে সন্দেহবাদীদের উত্তর দেবার জন্য হজরত মুহম্মদকে উদ্দেশ্য করে বলেছেন, “আমি তোমার প্রতি যাহা অবতীর্ণ করিয়াছি উহাতে যদি তুমি সন্দেহ পোষণ করে থাকো তবে তোমার পূর্বের কিতাব যাহারা পাঠ করে তাহাদিগকে জিজ্ঞাসা কর; তোমার প্রতিপালকের নিকট হইতে তোমার নিকট সত্য অবশ্যই আসিয়াছে। তুমি কখনও সন্দিগ্ধচিত্তদের অনন্তর্ভুক্ত হইও না” (সুরা ইউনুস ৯৪ আয়াত)।

ইঞ্জিল শরিফের গ্রহণযোগ্যতা ছিল প্রশ্নাতীত। হজরত ঈসা ও ইঞ্জিল শরিফ সম্পর্কে তাই আরো স্পষ্ট করে কোরানে বলা হয়েছে। লেখা আছে, “মারইয়াম-তনয় ঈসাকে তাহার পূর্বে অবতীর্ণ তাওরাতের সমর্থকরূপে উহাদের পশ্চাতে পেরণ করিয়াছিলাম এবং তার পূর্বে অবতীর্ণ তাওরাতের সমর্থকরূপে এবং মুত্তাকিদের জন্য পথের নির্দেশ ও উপদেশরূপে তাহাকে ইঞ্জিল দিয়াছিলাম; উহাতে ছিল পথের নির্দেশ ও আলো (সুরা মায়িদা ৫৬ আয়াত)।

অতএব, এ আয়াতগুলো থেকে বোঝা যায়, কোরানের শিক্ষানুসারে আগের কিতাবগুলোকে সন্দেহ করা উচিত নয় বরং মানুষের জন্য তা সত্য এবং আলো হিসাবে গ্রহণ করা উচিত।

কোরানি শিক্ষার বিষয়ে ঈসা মসীহ কী বলেছেন?

সংক্ষিপ্ত উত্তর:

কোরানি শিক্ষার বিষয়ে হজরত ঈসা কিছুই বলেননি।

ব্যাখ্যামূলক উত্তর:

কোরান নাজেল হওয়ার প্রায় ৬১০ বছর আগে হজরত ঈসা এই দুনিয়াতে এসেছিলেন। তিনি যখন শিক্ষা দিতেন তখন তাওরাত, জবুর, ইঞ্জিল এবং অন্যান্য নবিগণের সহিফা ব্যবহার করতেন। অর্থাৎ হজরত ঈসা তাঁর আগে আসা নবিদের কিতাব বিশ্বাস করতেন এবং সেগুলোর ভিত্তিতে মানুষকে সত্য শিক্ষা দিতেন। এছাড়া হজরত ঈসা নিজে থেকেও অনেক শিক্ষা দিতেন। তিনি এসেছিলেন মানুষের গুনাহ থেকে নাজাতের জন্য। অন্যান্য নবিগণের শিক্ষায় মানুষের অনন্তকালীন নাজাত প্রাধান্য পায়নি। এই দুনিয়াতে কীভাবে শৃঙ্খলার সাথে বাঁচতে পারে, তাই ছিল তাদের প্রতিপাদ্য বিষয়। কিন্তু হজরত ঈসার আগমনের মূল কারণই ছিল মানুষের নাজাত; গুনাহ থেকে চিরকালীন মুক্তি অর্থাৎ নাজাত। তাই তিনি নাজাতের উপরই বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন। নাজাত লাভের ক্ষেত্রে বা আল্লাহকে সন্তুষ্ট করার ক্ষেত্রে আগেকার লোকদের জাগতিক ধর্মকর্মের অকার্যকারিতা তিনি প্রমাণ করেছেন।

উৎস: শত প্রশ্নের হাজার উত্তর, আবু তাহের চৌধুরী, ২০১০