নবীরা কোন্‌ ধর্ম প্রচার করতেন?

প্রশ্ন: আদম, নুহ, ইদ্রীস, ইব্রাহীম, ইসমাঈল, ইসহাক, ইয়াকুব, ইউসুফ, আইয়ুব, মুসা, হারুণ, ইউনুস, সুলাইমান, যাকারিয়া, ও ইয়াহিয়া নবী রাসূলগণ এই পৃথিবীতে কোন্‌ ধর্ম প্রচার করেছিলেন?

ধন্যবাদ আপনার প্রশ্নের জন্য।  এইসব নবীদের জীবনী, বাণী, ও ইতিহাস মূলত তৌরাত শরীফ, নবীদের কিতাব ও জবুর শরীফে পাওয়া যায়, এইজন্য সেখান থেকেই আমাদের উত্তরটা আসতে হবে – নিজের অনুমান অথবা মতামত নয়।  আসলে এই কিতাবগুলো পড়লে দেখা যায় “ধর্ম” (religion) কথাটি একবারই উল্লেখ নেই।  আমরা আজকাল বিভিন্ন “ধর্ম” তুলনা নিয়ে ব্যস্ত থাকি – খ্রীষ্টধর্ম, দ্বীনে-ইসলাম, সনাতন ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম।  কিন্তু এইসব নবীদের যুগে এইসব আলাদা প্রতিষ্ঠিত “ধর্ম” ছিল না।  তাহলে এঁরা কী প্রচার করতেন?  আমরা যেমন “ধর্ম”-এর উপরে গুরুত্ব দিই, এঁরা তেমনি মানুষের সঙ্গে আল্লাহ্‌র প্রকাশিত “চুক্তি” (בְּרִיתּ বেরীথ্‌) এর উপরে গুরুত্ব দিতেন। যেমন এইজন্য বাইবেলের প্রধান ভাগ বলা হয় “নতুন ও পুরাতন নিয়ম”- ‘নিয়ম’ এই ক্ষেত্রে বিধান বোঝানো হয় না বরং ‘চুক্তিনামা’ বোঝায়, যেমন ‘Old Testament / New Testament’ এর ক্ষেত্রে টেস্টামেন্ট বোঝায় একটি চুক্তি/ব্যবস্থা/covenant এর দলিল। নবীদের বাণী বোঝার জন্য এই “চুক্তি” জিনিসটা গভীরভাবে বুঝতে হবে, কারণ সেই নবীদের কথার এটাই ভিত্তি, এটাই মৌলিক বিষয়।  এই নবীদের মাধ্যমে আল্লাহ্‌ মানব জাতির সঙ্গে একটি সম্পর্ক স্থাপন করার জন্যই এই চুক্তিগুলো প্রকাশ করেছেন।  এখানে কিতাবুল মোকাদ্দসের সেই ৬টি চুক্তির একটি চার্ট আছে:

chukti-chart

এক একটি নতুন চুক্তি আগেকার চুক্তিগুলো বাতিল করেনি। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে প্রত্যেকটি চুক্তি শেষ চুক্তি (ঈসা মসীহের) এর মধ্যে অনেকটা পূর্ণতা পায়। এইসব চুক্তির মধ্য দিয়ে আল্লাহ্‌ মানুষকে নাজাত করার জন্য, অর্থাৎ তার রহমতের ব্যবস্থা দেখানোর জন্য তার মহা-পরিকল্পনা তিনি ক্রমাগতভাবে প্রকাশ করেছেন।

যেমন হযরত ইবরাহিম (আঃ) এর চুক্তি (পয়দায়েশ ১২:১-৩) একটু দেখি।  আল্লাহ্‌ নিঃশর্তভাবে প্রতিজ্ঞা করেছিলেন যে তিনি ইবরাহিমকে আশীর্বাদ করবেন এবং তার বংশের একজনের মধ্য দিয়ে সমস্ত মানব জাতি আশীর্বাদ পাবে।  পয়দায়েশ কিতাবের ইতিহাসে স্পষ্ট করে লেখা আছে যে সেই চুক্তির বংশের লাইন ইসমাইলের দিকে যায়নি বরং ইসহাক, ইয়াকুব, ইউসুফ, ও এহুদার দিকে গেল, এবং শেষ সেই চুক্তি ঈসা মসীহে পূর্ণতা লাভ করল।  তার মাধ্যমে সমস্ত জাতি আশীর্বাদপ্রাপ্ত হয়েছে।

অনেকে কিতাব না জানার কারণে একটি ভুল ধারণা রাখে যে এইসব চুক্তির যুগে আলাদা আলাদা নাজাতের নিয়ম ছিল।  কিন্তু কিতাবুল মোকাদ্দসের সাক্ষ্য হচ্ছে যে আল্লাহ্‌র সর্বযুগে সকল মানুষের জন্য একটাই নাজাতের রাস্তা আছে।  যেমন ইব্রাহিম কীভাবে নাজাত পেয়েছেন?  তার নেক-আমলের জন্য কি? না, বরং পয়দায়েশ ১৫:৬-এ আছে যে ইব্রাহিম “মাবুদের কথার উপর ঈমান আনলেন আর মাবুদ সেইজন্য তাঁকে ধার্মিক বলে গ্রহণ করলেন।”  কোন্‌ কথার উপর ঈমান আনলেন?  আল্লাহ্‌র বলা সেই মসীহের প্রতিজ্ঞার উপর ঈমান, যে আল্লাহ্‌ তার জন্য একটি রহমতের ব্যবস্থা করবেন।

আবার মূসার চুক্তির উদাহরণ দেখি।  আমরা মনে করতে পারি যে, তাঁর শরিয়তের মধ্যে অনেকগুলো নিয়ম-কানুন আছে বলে অবশ্যই কাজ দ্বারাই তখনকার মানুষ নাজাত পেত।  কিন্তু মূসার শরিয়ত বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় যে তার নিয়মগুলো পালনের পুরষ্কার জান্নাত নয় বরং কেনান দেশে সফলতা।  মূসার চুক্তির পরেও ইব্রাহিমের চুক্তি চালু ছিল, অর্থাৎ তখনও ইব্রাহিমের মত ঈমানের মাধ্যমে লোকে নাজাত পেত ।

এখন আপনার মূল প্রশ্নে ফিরে যায়।  প্রাচীন নবীগণ কোন্‌ ধর্ম প্রচার করেছিলেন?  এরা আল্লাহ্‌র সেই চুক্তিগুলো প্রচার করেছিলেন এবং মানুষকে নাজাত দেয়ার জন্য আল্লাহ্‌র মহাপরিকল্পনার কথা প্রচার করছিলেন।  ভাই, এই উত্তর হল অতি সংক্ষিপ্ত।  এক একটি নবীর বাণীর মধ্যে এর বিস্তারিত বর্ণনা ও প্রমান দেয়া যায়, কিন্তু আপাতত সংক্ষিপ্ত উত্তর দিই।

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।