সংক্ষিপ্ত উত্তর:
বর্ণিত সবকিছু সম্পর্কে ঈসায়ীরা সাধারণভাবে বিশ্বাস করে।
ব্যাখ্যামূলক উত্তর:
উপরিউক্ত বিষয়গুলোতে বিশ্বাসের প্রশ্ন দেখা দিলে বলতে হয় যে, এদের প্রত্যেকটা সম্পর্কে কিতাবুল মোকাদ্দসে নির্দিষ্ট সীমারেখা অনুসারেই ঈসায়ীরা বিশ্বাস করে। এসব সম্পর্কে সমাজে নানা গল্প এবং কিংবদন্তি প্রচলিত আছে। আমরা সরাসরি যতটুকু আল্লাহর কালামে লেখা আছে, ততটুকু বিশ্বাস করি, এর বাইরে কোন বিন্দু বিসর্গে আমাদের আস্থা নেই। উদাহরণ স্বরূপ:
ফেরেশতা: আমরা যতদূর আল্লাহর কালাম থেকে জানি, সৃষ্টির সময় আল্লাহ ফেরেশতাদের সৃষ্টি করেছিলেন। পাককালামে লেখা আছে, আল্লাহর বিস্ময়কর সৃষ্টিকাজ দেখে, ফেরেশতারা আল্লাহর প্রশংসা করেছিলেন। ফেরেশতাদের সম্পর্কে নানা ধর্মে নানা মতবাদ থাকলেও আমরা কালাম অনুসারে বিশ্বাস করি যে, ফেরেশতারা আল্লাহর সৃষ্ট আত্মা যাদের তাঁর সেবা করার জন্য এবং তাঁর সংবাদ বাহক হিসাবে তিনি তৈরি করেছেন। এই ফেরেশতাদের মধ্যে কিছু ফেরেশতা, সবচেয়ে বড় ও সুন্দর ফেরেশতা লুসিফারের সাথে আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহে যোগ দিয়ে, শয়তানের অনুসারী বা মন্দ আত্মায় পরিণত হয়েছে। এসব মন্দ আত্মারা মহাশাস্তির অপেক্ষায় আছে। আর মানুষকে মন্দতায় টেনে নেবার জন্য সর্বক্ষণ চেষ্টা চালাচ্ছে। তবে এই মন্দ আত্মারা ঈসার উম্মতদের তেমন ক্ষতি করতে পারে না। কারণ হজরত ঈসা মন্দ আত্মার সকল শক্তি থেকে তাঁর উম্মতদের উদ্ধার করেছেন।
নবি: নবি মানে ভাববাদী, যিনি ভবিষ্যতের কথা বলেন। পাককিতাবের মধ্যে অনেক নবির বিষয়ে আমরা জাতে পাই; কোন দেশ বা ব্যক্তি যখন আল্লাহর কথা ভুলে গিয়ে পাপ, অনাচার, অবিচার ইত্যাদির মধ্যে গা ভাসিয়েছে তখন আল্লাহ নবিদের পাঠাতেন যারা ব্যক্তি, সমষ্টি এমন কি কোন দেশের বিপক্ষে ভবিষ্যত বাণী করতেন। নবিরা মাঝে মাঝে মানুষকে সৎ পথের বিষয়ে শিক্ষাও দিতেন। নবিদের কথা যারা শোনেনি তারা নানা শাস্তি লাভ করতো আর যারা শুনতো তারা আল্লাহর আশ্রয় ও রহমত লাভ করতো।
কেয়ামত: কেয়ামত মানে শেষকাল। আমরা শেষকাল সম্পর্কে বিশ্বাস করি। কেয়ামতের অনেক আলামত সম্পর্কে ইঞ্জিল শরিফে বর্ণিত আছে। কেয়ামতের সবচেয়ে বড় আলামতগুলোর মধ্যে ভীষণ দুর্ভিক্ষ, মহামারি, ভূমিকম্পের উল্লেখ আছে। সবচেয়ে বড় আলামত হলো, হজরত ঈসা মসীহ দ্বিতীয়বার পৃথিবীতে আসবেন। কেয়ামত সম্পর্কে হজরত ঈসা বলেন, “তোমাদের কানে যুদ্ধের আওয়াজ আসবে আর যুদ্ধের খবরাখবরও তোমরা শুনতে পাবে। কিন্তু সাবধান! এতে ভয় পেয়ো না কারণ এই সব হবেই; কিন্তু তখনও শেষ নয় এক জাতি অন্য জাতির বিরুেেদ্ধ এবং এক রাজ্য অন্য রাজ্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। অনেক জায়গায় দুর্ভিক্ষ ও ভূমিকম্প হবে। কিন্তু এসবই যন্ত্রণার শুরু” (ইঞ্জিল শরিফ, মথি ২৪:৬-৮)।
আরো লেখা আছে, “সেই সময়কার কষ্টের ঠিক পরেই সূর্য অন্ধকার হয়ে যাবে, চাঁদ আর আলো দেবে না, তারাগুলো আসমান থেকে খসে পড়ে যাবে এবং চাঁদ-সূর্য-তারা আর স্থির থাকবে না। এমন সময় আসমানে ইবনে-আদমের চিহ্ন দেখা দেবে। তখন দুনিয়ার সমস্ত লোক দুঃখে বুক চাপড়াবে। তারা ইবনে-আদমকে শক্তি ও মহিমার সঙ্গে মেঘে করে আসতে দেখবে। জোরে জোরে শিঙা বেজে উঠবে আর সঙ্গে সঙ্গে ইবনে-আদম তার ফেরেশতাদের পাঠিয়ে দেবেন। সেই ফেরেশতারা দুনিয়ার একদিক থেকে অন্যদিক পর্যন্ত চার দিক থেকে তাঁর বাছাই করা বান্দাদের একসঙ্গে জমায়েত করবেন” (ইঞ্জিল শরিফ, মথি ২৪:২৯-৩১)।
শেষবিচার: শেষবিচার সম্বন্ধে আমাদের বিশ্বাস হলো, হজরত ঈসাই মানুষের শেষ বিচার করবেন। “সেইসময় সমস্ত জাতির লোকদের তাঁর সামনে একসঙ্গে জমায়েত করা হবে। রাখাল যেমন ভেড়া আর ছাগল আলাদা করে, তেমনি তিনি সব লোকদের দু’ভাগে আলাদা করবেন। তিনি নিজের ডানদিকে ভেড়াদের আর বাঁদিকে ছগলদের রাখবেন। এরপরে বাদশাহ তাঁর ডানদিকের লোকদের বলবেন, ‘তোমরা যারা আমার পিতার দোয়া পেয়েছ, এস। দুনিয়ার শুরুতে যে রাজ্য তোমাদের জন্য প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে, তার অধিকারী হও।… পরে তিনি বাঁদিকের লোকদের বলবেন, বদদোয়াপ্রাপ্ত লোকেরা, আমার কাছ থেকে দূর হও। ইবলিশ এবং তার ফেরেশতাদের জন্য যেআগুন প্রস্তুত করা হয়েছে, তার মধ্যে যাও” (মথি ২৫:৩২-৪১)। তিনি ঈমানদাদেরও বিচার করবেন। তবে সেই বিচার হবে ভালো কাজের পুরস্কার দেবার জন্য। যারা বিশ্বস্তভাবে ভালো কাজ করেছেন, তিনি তাদের মূল্যায়ন করে পুরস্কার দেবেন।