সংক্ষিপ্ত উত্তর:
যেকোন রংএর, জাতির ও দেশের মানুষই ঈসায়ী হতে পারে।
ব্যাখ্যামূলক উত্তর:
ঈসায়ী হবার জন্য সাদা কালোর কোন শর্ত নেই। যেকোন মানুষই ঈসায়ী হতে পারে। যে বা যারা ইঞ্জিল শরিফের শিক্ষা অনুসারে হজরত ঈসার উপর ঈমান আনে, সে-ই ঈসায়ী। হজরত ঈসা মধ্যপ্রাচ্যের লোক ছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যের কৃষ্টি, সভ্যতা; ভৌগলিক, ধর্মীয় এবং পরিবেশগত কারণে ইয়োরোপ আমেরিকার লোকদের কৃষ্টি সভ্যতার চেয়ে আরো কাছের, আরো ঘনিষ্টতর। কিন্তু দুঃখের বিষয় হলেও এ কথা সত্য যে, আমরা যে ধনের মূল্য বুঝতেও পারিনি, তারা সেই মহারতœ লুফে নিয়েছে এবং সুদূর পাশ্চাত্য থেকে আমাদের কাছে প্রচার করেছে। যেহেতু পাশ্চাত্যের সাদা লাল বর্ণের লোকেরা ঈসা মসীহের কথা আমাদের দেশে প্রথম প্রচার করে, সেহেতু লোকের ধারণা হয় এটি পাশ্চাত্যের ধর্ম। একথা বলা বাহুল্য যে, ঈসা মসীহের বাণী প্রচারের সাথে সাথে, পাশ্চাত্যের লোকেরা তাদের দেশের রীতিনীতি, আচার আচরণও নিয়ে এসেছিল। ফলে, সাধারণ লোকের কাছে ঈসায়ী বা খ্রিস্টান মানে হলো পাশ্চাত্য কৃষ্টি-সভ্যতা জড়িত বিদেশী লোক।
একথা ইসলামি প্রচারের ক্ষেত্রেও সত্য। এদেশে ইসলামও প্রচারিত হয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে। মধ্যযুগে মুহম্মদ বিন-কাশিমের সিন্ধু বিজয়ের মধ্যদিয়ে, পাক-ভারত উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারের শুরু হলে, একইভাবে মধ্যপ্রাচ্যের কৃষ্টি-সভ্যতা রীতিনীতি আমাদের সমাজে প্রবেশ করে। আমানত শাহ্, বদর শাহ্, পন্থিশাহ্, মোহছেন আউলিয়া, খান জাহান আলী, শাহ্ জালাল, খাজা মঈনুদ্দীন চিশ্তি প্রমুখ ইসলাম প্রচারকগণ মধ্যপ্রাচ্য থেকেই আগত। হিন্দুরা সংখ্যাগরিষ্ঠ থাকায়, পাক-ভারতের অধিবাসীরা একসময় ইসলামকেও বিদেশি ধর্ম ভাবতো আর মূসলমান মানে মধ্যপ্রাচ্যের লোক বলে মনে করতো। কালক্রমে ইসলামের এতো বেশি প্রসার হয় যে, সেই ধারণা লোপ পেতে থাকে। অতএব, আমরা বাঙালিরা তো কালো নই, তামাটে; অধিকন্তু আফ্রিকার কুচ্কুচে কালো লোকেরাও ঈসা মসীহকে বিশ্বাস করে, ঈসায়ী হয়।