সংক্ষিপ্ত উত্তর:
হ্যাঁ, হজরত ঈসা প্রথম ও শেষ নবি ছিলেন।
ব্যাখ্যামূলক উত্তর:
পৃথিবীতে ধর্মধারী যত মহাপুরুষ এসেছেন, তাঁদের অনুসারীরা প্রায় সবাই তাদেরকে নিজেদের নবি, রসুল, পয়গাম্বর, দেবতা, অবতার, একমাত্র উপায় এবং সর্বশেষ ভরসা বলে দাবি করেন। যার ফলে পৃথিবীতে এত ধর্ম, এত মত এবং এত পথ সৃষ্টি হয়েছে। তবে কয়েকজন মহাপুরুষ যেমন হজরত মুসা, হজরত দাউদ, হজরত ইশাইয়া, হজরত ইয়াহিয়া হজরত ঈসাকে মানব জাতির নাজাতদাতা হিসাবে স্বীকার করেছেন। তাঁদের ভবিষ্যতবাণী ও দাবি অনুযায়ী তিনি হবেন মানব মুক্তির একমাত্র উপায়। সেই অনাগত নবিও উদ্ধারকর্তাকে তাঁরা কেউ প্রভু বলে, কেউ নাজাতাদাতা বলে স্বীকার করেছেন। সর্বশেষে হজরত ইয়াহিয়া যিনি হজরত ঈসার ছয়মাস আগে জন্মগ্রহণ করেছিলেন, তিনি সুস্পষ্ট ও দ্যর্থহীনভাবে ঈসা মসীহের বিষয়ে ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, তিনি মসীহের জুতার ফিতার বাঁধন খুলবারও উপযুক্ত নন। এমনকি স্বাভাবিক নিয়ম অনুযায়ী হজরত ঈসা যখন তাঁর কাছে তরিকাবন্দি নিতে গিয়েছিলেন, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমারই বরং আপনার কাছ থেকে তরিকাবন্দি নেওয়া উচিত।’ একজন নবি হয়ে আর একজন নবির কাছে এমন সমর্পণ আর কোন নবির কাছে করেছে বলে দেখা যায় না। অতপর আর কেউ আসবেন কিনা সে সম্পর্কে যেমন তাঁরা কিছু বলেননি, তেমনি হজরত ঈসা নিজেও কখনও বলেননি যে অন্য একজন আসবেন।
মসীহ তাঁর দাবির যথার্থতা প্রমাণ করেছেন: ‘হজরত ঈসা শেষ নবি কি না’ এই প্রশ্নের উত্তর পেতে হলে, হজরত ঈসার আগমনের উদ্দেশ্য পরিষ্কারভাবে জানা দরকার। হজরত ঈসা বলেন, “যিনি আমাকে পাঠিয়েছেন তাঁর কাজ শেষ করাই হলো আমার খাবার” (ইউহোন্না ৪:৩৪)। এই আয়াত থেকে পরিষ্কার বুঝা যায়, তিনি একটি বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে এই দুনিয়াতে এসেছিলেন, আর প্রতিনিয়ত সেই কাজেই তিনি নিবেদিত ছিলেন। এখন প্রশ্ন হলো কি সেই কাজ? হজরত ঈসা বলেন, “আমিই সেই জীবন্ত রুটি যা বেহেশত থেকে নেমে এসেছে। এই রুটি যে খাবে সে চিরকালের জন্য জীবন পাবে। আমার শরীরই সেই রুটি। মানুষ যেন জীবন পায় সেই জন্য আমি আমার এই শরীর দেব” (ইউহোন্না ৬:৫১)। আমরা জানি হজরত ঈসা তাঁর জীবন কোরবানি দিয়ে মানুষকে নাজাত করতে এসেছিলেন। আর সেই কাজ তিনি ক্রুশের উপর শেষ করেছেন। মৃত্যুর সময় তিনি বলেছিলেন ‘শেষ হয়েছে’। অর্থাৎ তিনি তাঁর কাজ যথার্থই শেষ করেছিলেন। এখন কথা হলো, তিনি যদি মানবজাতির গুনাহ থেকে নাজাতের কাজ শেষ করেন, তবে কি তিনি শেষ নবি নন? হজরত ঈসা বলেন, “…আমি আল্ফা এবং ওমেগা অর্থাৎ আমি শুরু ও আমি শেষ। যার পিপাসা পেয়েছে তাকে আমি জীবন পানির ঝর্ণা থেকে বিনামূল্যে পানি খেতে দেব” (প্রকাশিত কালাম ২১:৬)।
সমস্যার সমাধান তাঁর মধ্য দিয়েই হয়ে গেছে: মানুষের সবচেয়ে বড় প্রয়োজন হলো অনন্ত জীবন। সেই জীবন ইহকাল ও পরকালের জীবন। এইজন্যই মানুষ এত ধর্ম-কর্ম করে, পীর-ফকির ধারণ করে, নামাজ, রোজা, হজ, জাকাত, পূজা-পার্বণ ইত্যাদি পালন করার কাজে সময় দেয়। প্রশ্ন হলো, তাতে কি মানুষ জীবনের নিশ্চয়তা লাভ করতে পারছে। হজরত ঈসা মসীহ দুনিয়াতে আসার আগে, মানুষের মধ্যে বিশেষত এক আল্লাহ বিশ্বাসী লোকদের মধ্যে অনেক ধর্মীয় নিয়ম কানুন ছিল এবং তাঁর পরেও অনেকে নানা ধর্মীয় নিয়মকানুন পালন করছে। কেউ কি অনন্ত জীবনের নিশ্চয়তা লাভ করতে পারছে? হজরত ঈসা দাবি করেছেন, “আমিই পুনরুত্থান ও জীবন। যে আমার উপর ঈমান আনে সে মরলেও জীবিত হবে আর যে জীবিত আছে এবং আমার উপর ঈমান আনে সে কখনও মরবে না (ইঞ্জিল শরিফ ১১: ২৫, ২৬)।