সংক্ষিপ্ত উত্তর:
না, জাতিগতভাবে হজরত ঈসা মুসলমান ছিলেন না। বংশের দিক থেকে তিনি ছিলেন ইহুদি; তবে তাঁকে মুসলমান বলতে দোষের কিছু নেই।
ব্যাখ্যামূলক উত্তর:
কিতাব থেকে জানা যায়, হজরত ঈসার মা-বাবা দু’জনই ইহুদি ছিলেন। ইঞ্জিল শরিফে আছে, ‘ইউসুফ ছিলেন বাদশাহ্ দাউদের বংশের লোক। বাদ্শাহ দাউদের জন্মস্থান ছিল এহুদিয়া প্রদেশের বেথেলহেম গ্রামে। তাই ইউসুফ নাম লেখাবার জন্য গালীল প্রদেশের নাসরত গ্রাম থেকে বেথেলহেম গ্রামে গেলেন। মরিয়মও তাঁর সঙ্গে সেখানে গেলেন’ (লূক ২:৪,৫)। আরো লেখা আছে, ‘ঈসা মসীহ দাউদের বংশের এবং দাউদ ইবরাাহিমের বংশের লোক’ (মথি ১:১)। হজরত ঈসা ছোটবেলা থেকেই ইহুদি নিয়মকানুনের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছিলেন। লেখা আছে, ‘পরে মুসার শরিয়ত মতে তাঁদের পাকসাফ হবার সময় হলো। তখন ইউসুফ ও মরিয়ম ঈসাকে মাবুদের সামনে উপস্থিত করবার জন্য তাঁকে জেরুজালেম শহরে নিয়ে গেলেন’ (লূক ২:২২)। তিনি শুধু একবারই যে এ নিয়ম পালন করেছিলেন তা নয়; লেখা আছে, ‘উদ্ধার-ঈদের সময়ে ঈসার মা-বাবা প্রত্যেক বছর জেরুজালেমে যেতেন। ঈসার বয়স যখন বরো বছর, তখন নিয়ম মতোই তাঁরা সেই ঈদে গেলেন’ (লূক ২:৪১)। হজরত ঈসা তাঁর ৩০ বছর বয়সে তরিকাবন্দি গ্রহণ করে তাঁর কাজ শুরু করেন। তিনি যে নিয়মিত ইহুদি মজলিশখানায় যেতেন তাঁর প্রমাণও মেলে। লেখা আছে, ‘আর এক বিশ্রামবারে ঈসা মজলিস-খানায় গিয়ে শিক্ষা দিচ্ছিলেন’ (লূক ৬:৬)। হজরত ঈসার জীবনের শেষ দিকেও আমরা দেখতে পাই, তিনি তাঁর জাতীয় নিয়মগুলো ভালোভাবে পালন করতেন। কিতাবে লেখা আছে, ‘খামিহীন রুটির ঈদের দিনে, উদ্ধার-ঈদের ভোজের জন্য ভেড়ার বাচ্চা জবাই করা হতো। সেই দিনটা উপস্থিত হলে পর, ঈসা পিতর ও ইউহোন্নাকে এই বলে পাঠিয়ে দিলেন, “তোমরা গিয়ে আমাদের জন্য উদ্ধার ঈদের ভোজ প্রস্তুত কর যেন আমরা তা খেতে পারি (লূক ২২:৭,৮)।
মুসলমান সেই ব্যক্তি, যার জীবনে শান্তি আছে; আর যিনি আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণকারী। হজরত ঈসা বলেছিলেন, আমি শান্তি দিতে এসেছি, আমারই শান্তি আমি তোমাদের দিচ্ছি। প্রকৃতই তিনি শান্তি দিতে এসেছিলেন, আর মানবজাতির শান্তির জন্য নিজেকে আল্লাহর কাছে সমর্পণ করেছিলেন। কিতাবে লেখা আছে, ‘তিনি বরং গোলাম হয়ে এবং মানুষ হিসাবে জন্মগ্রহণ করে, নিজেকে সীমিত করে রাখলেন। এছাড়া চেহারায় মানুষ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত, এমন কি ক্রুশের উপরে মৃত্যু পর্যন্ত বাধ্য থেকে তিনি নিজেকে নিচু করলেন’ (ফিলিপীয় ২:৭,৮)। ঈসা মসীহ আল্লাহর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘দেখ, আমি তোমার ইচ্ছা পালন করতে এসেছি’ (ইবরানি ১০:৯)। সত্যই তাই, আল্লাহর ইচ্ছায় হজরত ঈসা আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণ করেছিলেন আর মানবজাতির উদ্ধারের জন্য নিজের জীবন কোরবানি দিয়েছিলেন। অতএব, তাঁকে একজন শ্রেষ্ঠ মুসলমান বলা যায়।