সংক্ষিপ্ত উত্তর:
না, তিনি বলেননি যে, আর এক জন নবি আসবেন।
ব্যাখ্যামূলক উত্তর:
কেউ কেউ ব্যাখ্যা দেন, হজরত ঈসা ভবিষ্যতবাণী করে গেছেন যে, দুনিয়াতে আর একজন নবি আসবেন। আসলে এই কথার যৌক্তিকতা আমরা ইঞ্জিল শরিফে দেখতে পাই না। যারা এই যুক্তি দেন তারা ইঞ্জিল শরিফের একটি আয়াতকে তুলে ধরেন। সেই আয়াতটি হলো, “আমি পিতার কাছে চাইব, আর তিনি তোমাদের কাছে চিরকাল থাকবার জন্য আর একজন সাহায্যকারীকে পাঠিয়ে দেবেন। সেই সাহায্যকারী সত্যের রুহ” (ইঞ্জিল ইউহোন্না ১৪:১৬)। অনেকে এই আয়াতকে ব্যাখ্যা করে বলেন যে, তিনি তো আর একজন নবির আসার কথা বলেছেন সুতরাং তিনি নিজে শেষ নবি নন। কিন্তু গভীরভাবে কালাম পাঠ করলে বোঝা যায়, তিনি অন্যকোন নবির আগমনের কথা বলেননি। লক্ষ্য করুন:
প্রথমত: তিনি যার আসবার কথা বলেছেন তিনি কোন মানুষ নন, তিনি হচ্ছেন রুহ। লেখা আছে, “সেই সাহায্যকারী সত্যের রূহ। দুনিয়ার লোকেরা তাঁকে গ্রহণ করতে পারে না, কারণ তারা তাঁকে দেখতে পায় না এবং জানেও না (ইঞ্জিল শরিফ, ইউহোন্না ১৪:১৭)। যদি নবির কথা বলতেন তবে পরবর্তিতে নবিকে তো দেখা না যাবার কথা নয়, নবিরা তো রক্তে মাংসে গড়া মানুষ, তাদের দেখা যায়।
দ্বিতীয়ত: হজরত ঈসা যাকে পাঠাবার কথা বলেছিলেন তিনি চিরকালের জন্য আসবার কথা। যেমন লেখা আছে, “আর তিনি চিরকাল থাকবার জন্য একজন সাহায্যাকারীকে পাঠিয়ে দেবেন” (ইঞ্জিল শরিফ, ইউহোন্না ১৪:১৬)। হজরত ঈসার পর যারাই এই পৃথিবীতে এসে নবি দাবি করেছিলেন তাদের কেউ চিরকাল থাকেননি বরং সকলে মৃত্যুবরণ করেছেন। একমাত্র হজরত ঈসা এবং তাঁর পাকরুহই চিরকাল আছেন।
তৃতীয়ত: হজরত ঈসা যাকে পাঠাবেন বলেছিলেন, তাঁর বিষয়ে তিনি বলেছিলেন যে, তিনি তাঁর নামে অর্থাৎ হজরত ঈসার নামেই আসবেন। আমরা বাস্তবে হজরত ঈসার নামে অন্যকোন নবিকে দুনিয়াতে আসতে শুনিনি বা দেখিনি। লেখা আছে, “সেই সাহায্যকারী অর্থাৎ পাকরুহ যাঁকে পিতা আমার নামে পাঠিয়ে দেবেন, তিনিই সব বিষয়ে তোমাদের শিক্ষা দেবেন, আর আমি তোমাদের যাকিছু বলেছি সেই সব তোমাদের মনে করিয়ে দেবেন (ইঞ্জিল শরিফ, ১৪:২৬)। দেহধারী যত নবি দুনিয়াতে এসেছেন, তাদের কাউকেই দেখা যায়নি যিনি হজরত ঈসার নামে এসে, তিনি যা বলেছেন তা শিক্ষা দিয়েছেন। তবে তাঁর পাকরুহের পরিচালনায়, উম্মতেরাই তাঁর বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন।
চতুর্থত: হজরত ঈসা বলেন, “যে সাহায্যকারীকে আমি পিতার কাছ থেকে তোমাদের কাছে পাঠিয়ে দেব, তিনি যখন আসবেন তখন তিনিই আমার বিষয়ে সাক্ষি দেবেন” (ইঞ্জিল শরিফ, ইউহোন্না ১৫:২৬)। হজরত ঈসার বেহেশতে চলে যাবার পর আর কোন নবি আসেন নি যিনি তাঁর বিষয়ে শেষপর্যন্ত সাক্ষ্য দিয়েছেন। কেউ কেউ তাঁর বিষয়ে কিছু কথা বললেও ইঞ্জিল শরিফ অনুযায়ী তাঁর যে শিক্ষা তা থেকে সরে গেছেন। কিন্তু যারা মনেপ্রাণে সাক্ষ্য দিয়েছিলেন, এমন কি মৃত্যু বরণ করেছিলেন তারা হলেন তাঁর সাহাবি এবং উম্মত; তাঁরা কখনও নিজেদের নবি দাবি করেন নি কিংবা আলাদা কোন ধর্মও প্রতিষ্ঠা করেন নি।
পঞ্চমত: তিনি বলেছেন, “সেই সত্যের রুহ আমার মহিমা প্রকাশ করবেন, কারণ আমি যা করি ও বলি তা-ই তিনি তোমাদের কাছে প্রকাশ করবেন (ইঞ্জিল শরিফ, ইউহোন্না ১৬:১৪)। এখন প্রশ্ন হলো কোন নবি যদি এসে ঈসা মসীহের মহিমা প্রকাশ করেন, তবে সংগত কারণেই মানুষ ঈসা মসীহেরই অনুসরণ করবে; অন্য কোন নবির প্রয়োজন হবে না।