সংক্ষিপ্ত উত্তর:
শরিয়ত দানের উদ্দেশ্য হলো, মানুষ যেন তাদের অন্তরের পাপময় অবস্থা বুঝতে পারে।
ব্যাখ্যামূলক উত্তর:
বলা হয়ে থাকে যে, ঈসায়ীরা ধর্মকর্ম দিয়ে নাজাত পায় না অর্থাৎ নাজাত লাভের জন্য তারা ধর্মের বা শরিয়তের অধীন নয়। তাহলে এই প্রশ্ন ওঠে যে, মুসা নবির শরিয়ত দানের উদ্দেশ্য কী ছিল? এটি খুবই সংগত ও গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রশ্ন এবং এর উত্তরও তেমন তাৎপর্যপূর্ণ। এই প্রশ্নের উত্তর জানার আগে আমাদের জানা দরকার শরিয়ত কী?
শরিয়ত হলো আল্লাহর দেওয়া বিধিনিষেধ। মানুষ সৃষ্টি করার পর হজরত আদমের জন্য বিধিনিষেধ ছিল একটি, “তোমরা ভালোমন্দ জ্ঞানের গাছের ফল খেয়োনা”। কিন্তু সেই একটি বিধি বা আদেশ হজরত আদম পালন করতে পারেনি। ফলে পৃথিবীর মধ্যে পাপ ও পাপের ফলে মৃত্যু প্রবেশ করেছে। অতঃপর শরিয়ত আসে হজরত মুসার আমলে। আল্লাহ পাথরের উপর খুদাই করে ১০টি শরিয়ত দিয়েছিলেন। আল্লাহর কালামে লেখা আছে, “আল্লাহ্ কী চান তা তুমি জানো এবং যা ভাল তা মেনে নাও। কারণ শরিয়ত থেকে তুমি সেই শিক্ষাই লাভ করেছ” (ইঞ্জিল শরিফ, রোমীয় ২:১৮)। এই শরিয়ত দেয়া হয়েছে যেন মানুষের অন্তরের অবস্থা কী তা জানা যায়, নিজেদের বিচার করা যায়। পাককালামে লেখা আছে, “মুসার শরিয়তের বাইরে থাকা অবস্থায় যারা গুনাহ করে, তারা শরিয়ত ছাড়াই ধ্বংস হবে কিন্তু যারা শরিয়তের ভিতরে থাকা অবস্থায় গুনাহ করে তাদের বিচার শরিয়তের দ্বারাই হবে” (রোমীয় ২:১২)। অতএব, হজরত মুসার মধ্যদিয়ে শরিয়ত দেয়া হয়েছে যেন গুনাহ কী তা জানা যায়। আর এভাবে মানুষ চেতনা লাভ করে আল্লাহর দিকে ফেরে (রোমীয় ৭:১২)।
এবার আসুন, ঈসায়ীরা কেন তা পালন করে না, তা দেখা যাক। প্রথমেই বলতে হবে যে, ঈসায়ীরা শরিয়ত পালন করে না এমন বলা যায় না। তারাও শরিয়ত পালন করে। শরিয়তের মধ্যে যা যা লেখা আছে তা পালন করা ঈসায়ীদের অন্যতম কাজ। তবে সেই কাজ তারা নাজাত লাভের জন্য করে না। আল্লাহর সন্তান হিসাবেই আনন্দের সাথে করে। “কারণ আল্লাহ মানুষকে এখন শরিয়ত ছাড়াই কেমন করে ধার্মিক বলে গ্রহণ করেন তা প্রকাশিত হয়েছে। তৌরাত শরিফ ও নবিদের কিতাব সেই বিষয়ে সাক্ষি দিয়ে গেছে। যারা ঈসা মসীহের উপর ঈমান আনে, তাদের সেই ঈমানের মধ্য দিয়েই আল্লাহ ধার্মিক বলে গ্রহণ করেন” (রোমীয় ৩:২১, ২২ আয়াত)।
শরিয়ত হলো একটি আয়না, যার মধ্যে নিজের রুহানি চেহারা দেখা যায়। যেহেতু কেউ শরিয়তের সব আইন পালন করতে পারে না, সেহেতু শরিয়ত মানুষের পাপময় অবস্থাকে তুলে ধরে, যাতে সকল মানুষ আল্লাহর অনুগ্রহের কাছে আসার সুযোগ পায়। ঈসায়ীরা এই সুযোগ নিয়েছে। শরিয়তের দ্বারা চেতনা লাভ করেই তারা ঈসা মসীহের কাছে এসেছে, যাতে ধার্মিক গণিত বা আল্লাহর গ্রহণযোগ্য হয়।