মসীহ্‌ সম্বন্ধে আপনি কী চিন্তা করেন?

লেখক: আবদ-আল-মসীহ্‌

অনুবাদ: মসীহী জামাত

প্রকাশক: মসীহী জামাত

প্রকাশকাল: অক্টোবর ২০০১


সূচিপত্র

মসীহ্‌ সম্বন্ধে আপনি কতটুকু জানেন?
মসীহের অলৌকিক জন্ম সম্বন্ধে আপনি কী চিন্তা করেন?
মসীহের অলৌকিক জন্ম
মসীহের বেগুনাহ্ জিন্দেগী সম্বন্ধে আপনি কী জানেন?
মসীহের শিক্ষা থেকে আপনি কী বুঝেছেন?
মসীহের ক্ষমতা সম্বন্ধে আপনি কী চিন্তা করেন?
মসীহের দুঃখভোগ সম্বন্ধে আপনি কী জানেন?
আপনি কি মৃত্যুর উপর মসীহের বিজয় উপলব্ধি করেছেন?
আল্লাহ্-পাকের কাছে মসীহের আরোহণ সম্বন্ধে আপনার কী ভাবনা?
মসীহের পৃথিবীতে-প্রত্যাবর্তন সম্বন্ধে আপনি কী জানেন?
মসীহের নাম ও উপাধি থেকে আপনি কী বুঝেছেন?
মসীহের দাওয়াতের প্রতি আপনার কী প্রতিক্রিয়া?
পরিশেষে
পাঠক-পাঠিকার জন্য প্রশ্ন


মসীহ্‌ সম্বন্ধে আপনি কতটুকু জানেন?

জগৎ দ্রুততালে চূড়ান্ত লক্ষ্যপানে ধাবমান্। সকল বস্তুর ধ্বংস অতি নিকটে। প্রত্যেক অনুরাগী ও ধর্মপ্রাণ ব্যক্তি জানেন যে, ঈসা-মসীহ আল্লাহ-পাকের কাছ থেকে আবার আসছেন। অবিশ্বাসীরা ভয়ে বিচলিত হয়ে যাবে। কারণ, ঈসা-মসীহ্ ও তাঁর প্রকৃত ক্ষমতাকে তারা অবহেলা করেছে।

আপনিও সেই মুহুর্তে অনুভব করবেন যে, আপনার এখনকার ও আখেরাতের জিন্দেগী এই চূড়ান্ত প্রশ্নের উপর নির্ভরশীলঃ “মসীহের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কী”?

আপনি যদি মসীহের ব্যক্তিত্বের প্রকৃত ও বাতেনী অস্তিত্বকে হৃদয়ঙ্গম করে থাকেন, তাহলে তা প্রকাশ করুন, আনন্দে পরিপূর্ণ হোন- দেখবেন, আপনার জীবনের সব-কিছু সচল হয়ে উঠেছে, কেননা ঈসা-মসীহ্ সমস্ত জ্ঞান ও বিচক্ষণতার গোপন আধার। তিনি মহিমার সঙ্গে আসবেন। তিনি আপনাকে জিজ্ঞাসা করবেন, “আমার সম্বন্ধে তুমি কী চিন্তা করেছিলে?”

সময় থাকতে আমাদের সঙ্গে তাঁর জীবন সম্বন্ধে ধ্যান করুন- তাহলে আপনি তাঁর রহমৎ ও মহব্বতের মাধ্যমে আপনার হৃদয়ে সান্ত¦না পাবেন এবং আপনার সব সমস্যার সমাধান পাবেন।

মসীহের অলৌকিক জন্ম সম্বন্ধে আপনি কী চিন্তা করেন?

ঈসা-মসীহের মতো অন্য-কেউ কখনও আর জন্মগ্রহণ করেননি। কারণ, তিনি মরিয়মের পুত্র।

ইসমাইলকে বলা হয় ইব্রাহীমের পুত্র, ইয়াহিয়া-নবীকে বলা হয় জাকারিয়ার পুত্র, মুহম্মদকে বলা হয় আবদুল্লাহর পুত্র। এমনি করে সকল মানুষ পিতার কাছ থেকে নাম পায়। তবে কেন শুধু ঈসার নাম তাঁর মায়ের নামানুসারে রাখা হল? এর কারণ, অন্যান্য পিতার মতো তাঁর কোন পিতা ছিল না। তিনি একজন কুমারীর ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর আল্লাহ-পাকের ক্ষমতা ও বেহেশ্‌তী উদ্দেশ্যের উপর নির্ভরশীল ছিল।

মসীহের জন্মের সাত শো বছর পূর্বে তাঁর জন্মের বৃত্তান্তের উপর ইশায়া-নবী ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন এই বলে:

“একজন কুমারী মেয়ের গর্ভ হইবে, আর তাঁহার একটি ছেলে হইবে; তাঁহার নাম রাখা হইবে ইম্মানুয়েল (এই নামের অর্থ এই- ‘আমাদের সঙ্গে খোদা’)।”

কিতাবুল মোকাদ্দস, ইশাইয়া ১৪:৭)

আল্লাহ্-পাক তাঁর ওয়াদা পূরণ করেছিলেন; কেননা তিনি বিশ্বাসী ও ন্যায়পরায়ণ, এবং তাঁর পক্ষে কোন-কিছুই অসম্ভব নয়।

আপনি কি জানেন যে, ঈসা-কালেমাতুল্লাহ্ আল্লাহ্-পাকের কালাম? ইঞ্জিল শরীফের অনুপ্রাণিত বাণী পাঠ করুণ:

“প্রথমেই কালাম ছিলেন, কালাম আল্লাহ্-পাকের সঙ্গে ছিলেন … এবং সেই কালামই মানুষ হইয়া জন্মগ্রহণ করিলেন এবং আমাদের মধ্যে বাস করিলেন।”

ইঞ্জিল শরীফ, ইউহোন্না ১: ১, ১৪

আল্লাহ-পাকের পবিত্র কালামের মধ্যে কর্মরত সমস্ত সৃষ্টিধর্মী ক্ষমতা মসীহ-রূপী সম্বন্ধে মনে মনে ধ্যান করলে আপনি বিস্ময়াভিভূত হয়ে যাবেন।

মসীহের অলৌকিক জন্ম

কারণ, কোন মানুষই মরিয়মের পুত্রের মতো নয়, তাঁর সঙ্গে তুলনীয় কেউ নেই। জন্মের দিক দিয়ে তিনি অদ্বিতীয়।

আপনার কি স্মরণ আছে যে, আদমকে মাটি দিয়ে পয়দা করা হয়েছিল? আমরা সবাই আদমের সন্তান, এবং এমন কি নারীরাও এই মাটি থেকেই সৃষ্ট। আমরা সবাই জাগতিক- নিচু থেকে সৃষ্ট; কিন্তু মসীহের জন্ম উপর থেকে। কারণ, তিনি বেহেশ্ৎ থেকে নিচে নেমে আসেন। তিনি পবিত্র, নির্দোষ ও পরিষ্কার- তুষারের মতো ধপধপে। কিন্তু আমরা সবাই অপবিত্র, দোষী, গুনাহে পূর্ণ। কারণ, আমরা জাগতিক, এবং কেউই আমরা রূহুল কুদ্দুস থেকে জন্মগ্রহণ করিনি।

কিতাবুল মুক্কাদ্দাসে আমরা একটা বিস্ময়কর বিবরণ দেখতে পাই যে, ঈসা-মসীহ জগতে আসেন গুনাহ্গারদের নাজৎ দেবার উদ্দেশ্যে। কেউই মসীহের স্থান নিতে পারে না। কারণ, আমরা সবাই মাটির তৈরী। কিন্তু ঈসা-রুহুল্লাহ্ সরাসরি আল্লাহ্-পাক থেকে পয়দা হন। তা সত্ত্বেও আমাদের মতো বিরক্তিকর মানুষকে তিনি অস্বীকার করেননি। বরং, এমন কি নাজাৎ-প্রদানের জন্য তিনি আমাদেরকে বাছাই করেন। আমাদের এই দুঃখময় জগতে তিনি আগমন করেন সেজন্যই। সুতরাং ঈসা-মসীহের, অলৌকিক জন্মের জন্য আমরা সবাই কৃতজ্ঞ- এজন্য আল্লাহ-পাকের হাজার শুক্রিয়া।

মসীহের বেগুনাহ্ জিন্দেগী সম্বন্ধে আপনি কী জানেন?

ঈসা-মসীহ্ রুহুল কুদ্দুস থেকে জন্মগ্রহণ করেন। জন্মাবধি তিনি ছিলেন বেগুনাহ্ ও পবিত্র। কখনও তিনি গুনাহ্ করেননি, একবারও না। কখনও তিনি কর্তব্যচ্যুত হননি। আমাদের মতো তিনি কখনও আল্লাহ্-পাকের কাছে মাগ্ফেরাৎ কামনা করেননি।

আমাদেরকে অবশ্যই নিজেদের গুনাহ্ স্বীকার করতে হবে। অন্যথায় আল্লাহ্-পাক এবং আমাদের নিজেদেরকে প্রতারণা করা হবে। আমরা তো আমরা-দাউদ-নবী অশ্রু-জলে বিগলিত হয়ে আল্লাহ্-পাকের কাছ মাগফেরাৎ কামনা করেছিলাম। ইব্রাহীম নবীও স্বীয় গুনাহের জন্য আল্লাহ্-পাকের দরবারে ক্রন্দন করেছিলেন। কিন্তু আপনি কিতাবুল মুকাদ্দাস বা কোরান শরীফ অনুসন্ধান করলে এমন কোন আয়াত বা নিদর্শন দেখতে পাবেন না, যাতে বলা হয়েছে যে, ঈসা-মসীহ্ মাগফেরাৎ কামনা করেছেন। না, একবারও না।

এখন বুঝতে হবে যে, যেহেতু তিনি ছিলেন নিখুঁত, নিষ্পাপ, তাই তাঁর নিজের সংশোধিত হয়ে দোষমুক্ত হবার কোন প্রশ্ন ওঠে না। তিনি তাঁর শত্রুদের খোলাখুলি প্রশ্ন করেছিলেন:

“আপনাদের মধ্যে কে আমাকে গুনাহ্গার বলিয়া প্রমাণ করিতে পারিবেন?”

ইঞ্জিল শরীফ, ইউহোন্না ৮:৪৬

কিন্তু তাদের মধ্যে কেউই তাঁর কথায় বা কাজে কোন দোষ বের করতে পারেন নি। তাঁর বিচারের সময়ও রোমান উকিলের সামনে বিচারক আইনতঃ তিনবার স্বীকার করতে বাধ্য হন:

“আমি ইহার কোন দোষ দেখিতে পাইতেছি না।”

ইঞ্জিল শরীফ, ইউহোন্না ১৮:৩৮; ১৯:৪,৬

এমন কি একজন ভূতে-পাওয়া লোকের মধ্যে আশ্রিত ভূতও মসীহের আগমনে ভয়বিহ্বল হয়ে চীৎকার দিয়ে উঠেছিল:

“ওহে নাসরতের ঈসা,…. আপনি আমাদিগকে ধ্বংস করিতে আসিয়াছেন। আমি জানি, আপনি কে; আপনি তো খোদার সেই পবিত্র লোক!”

ইঞ্জিল শরীফ, মার্ক ১: ২৪

সুতরাং আজকের পৃথিবীতে এবং আখিরাতে বিচারের দিনে সবারই ভালভাবে জানা আছে যে, মসীহ্ স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে খাঁটি, পরিপূর্ণ ও পবিত্র। আর-কেউ তাঁর মতো নাই। কারণ, তিনি ছাড়া সবাই গুনাহ্ করেছে।

মসীহের শিক্ষা থেকে আপনি কী বুঝেছেন?

সকল নবী, রসূল ও সুসংবাদদাতা আল্লাহ্-পাকের কালাম-দ্বারা অনুপ্রাণিত হয়েছেন। কিন্তু ঈসা-মসীহ্ হলেন স্বীয় অস্তিত্বে নিজেই আল্লাহ-পাকের কালাম। তাঁকে কেন্দ্র করেই আল্লাহ্-পাকের সমস্ত সৃষ্টিশীল ক্ষমতা ও মহব্বতের শক্তি আবর্তিত। তাঁর কথা শুধু মুখের কথা নয়- বরং তিনি যা বলতেন, তাই করতেন। তাঁর জীবনে কোন অন্তর্দ্বন্দ্ব বা ব্যক্তিতের কোন দ্বিধার ছোঁয়াটুকু পর্যন্ত পাওয়া যায় না। তাঁর কথায় ও কাজে আল্লাহ্-পাকের মহান্ ক্ষমতা স্পষ্টভাবে প্রতিভাত এবং তাঁর কথা ও কাজ পরস্পর-সম্পূরক।

বহু দৃষ্ঠান্তে তাঁর সম্বন্ধে অমরা এই প্রকারের বয়ান দেখতে পাই:

“যখন মসীহ্-ঈসা কথা বলা শেষ করিলেন, তখন লোকেরা তাঁহার কথায় আশ্চর্য হইয়া গেল, কারণ তিনি আলেমদের মতো শিক্ষা দিতেছিলেন না; বরং যাঁহার অধিকার আছে, সেই রকম লোকের মতোই শিক্ষা দিতেছিলেন।”

মথি ৭:২৮-২৯

যখন ঈসা-মসীহের বিরোধীরা তাদের চাকরদের সাহায্যে মসীহ্ কে আটক করতে চেষ্ট করে, তখন তারা তাঁর কথার দ্বারা বিচলিত হয়ে পড়ে এবং তাদের বিবেক কম্পিত হয়ে ওঠে। তাঁর কাছে ঘেঁষবার সহাসটুকু পর্যন্ত তারা হারিয়ে বসে। নিজেদের নেতাদের কাছে ফিরে এসে তারা বিড়বিড় করে বলতে থাকে:

“লোকটি যেভাবে কথা বলে, সেইভাবে আর তো কেউ কখনও বলে নাই।”

ইউহোন্না ৭: ৪৬

ঈসা-মসীহের কয়েকটি বাণী শুনুন, যা তিনি পূর্ণ বিনয়ের সঙ্গে উচ্চারণ করেন:

আমিই দুনিয়ার নূর; যে আমার পথে চলে, সে কখনও অন্ধকারে পা ফেলিবে না, বরং জীবনের নূর পাইবে।

ইউহোন্না ৮:১২

আমিই সেই জীবন-রুটি। যে আমার নিকট আসে , তাহার কখনও ক্ষুধা পাইবে না। যে আমার উপর ঈমান আনে, তাহার কখনও পিপাসাও পাইবে না।

ইউহোন্না ৬:৩৫

তোমাদের শত্রুদেরও মহব্বৎ করিও। যাহারা তোমাদের উপর অত্যাচার করে, তাহাদের জন্য মুনাজাতৎ করিও।

মথি ৬:৪৪

তোমরা অন্যের দোষ ধরিয়া বেড়াইও না, যেন তোমাদেরও দোষ ধরা না হয়; কারণ যেভাবে তোমরা অন্যের দোষ ধরো, সেইভাবে তোমাদেরও দোষ ধরা হইবে। আর যেভাবে তোমরা মাপিয়া দাও, সেই ভাবে তোমাদের জন্যও মাপা হইবে। তোমার ভাইয়ের চোখে যে কুটা আছে, কেবল তাহাই দেখিতেছ, অথচ তোমার নিজের চোখের মধ্যে যে কড়িকাঠ আছে, তাহা লক্ষ্য করিতেছ না কেন? যখন তোমার নিজের চোখেই কড়িকাঠ রহিয়াছে, তখন কেমন করিয়া তোমার ভাইকে এই কথা বলিতেছ, ‘এসো, তোমার চোখ হইতে কুটাটি বাহির করিয়া দিই’? ভণ্ড! প্রথমে তোমার নিজের চোখ হইতে কড়িকাঠটি বাহির করিয়া ফেলো, তাহাতে তোমার ভাইয়ের চোখ হইতে কুটাটি বাহির করিবার জন্য ষ্পষ্ট দেখিতে পাইবে।

ইঞ্জিল শরীফ, মথি ৭:১-৫

তোমরা যাহারা ক্লান্ত ও বোঝা বহিয়া বেড়াইতেছ, সকলে আমার নিকট এস- আমি তোমাদের বিশ্রাম দিব। আমার জোয়াল তোমাদের উপর তুলিয়া লও এবং আমার নিকট হইতে শিখো, কেননা আমার স্বাভাব নরম ও নম্র। ইহাতে তোমরা অন্তরে বিশ্রাম পাইবে। কারণ, আমার জোয়াল বহন করা সহজ ও আমার বোঝা হাল্কা।

মথি ১১:২৮-৩০

আপনি যদি এ সব কালামের গভীরে প্রবেশ করেন তাহলে বুঝতে পারবেন যে, ঈসা-মসীহ্ই জগতের নূর, এবং যারা তাঁর কালাম মেনে চলে, তাদের তিনি অনন্ত শান্তি ও প্রকৃত জীবন দান করেন।

অন্য সকল নবী বেহেশতী নূরের অংশমাত্র নিয়ে এসেছিলেন, যা আমাদের অন্ধকার পৃথিবীকে চন্দ্রালোকের মতো মোলায়েম আলো দিয়েছে। অর্ধচন্দ্রের আলোর মতো তাঁরা ম্লান হয়ে গেছেন। কিন্তু ঈসা-মসীহের প্রজ্বলিত সূর্যের মতো, যা তার আলোর সমস্ত শক্তিসহ দীপ্তিমান্। সূর্য যখন দীপ্তিমান, তখন আমরা কেমন করে চাঁদের অনুসরণ করি? মসীহ্ই প্রকৃত নূর। কারণ, তিনিই আল্লাহ্-পাকের বাণী সম্পন্ন করে এবং নতুন শরীয়ৎ প্রকাশ করেন, যা ছিল মহব্বতে পূর্ণ ।

তিনি নিজেই মহব্বত, যিনিমানবরূপ ধারণ করেন। আর তাই তিনি যথাথই বলতে পারেন:

“আপই পথ, সত্য আর জীবন। আসমান ও জমিন শেষ হইবে, কিন্তু আমার কথা চিরদিন থাকিবে।”

ইঞ্জিল শরীফ, ইউহোন্না ১৪: ৬

মসীহের ক্ষমতা সম্বন্ধে আপনি কী চিন্তা করেন?

যিনি ঈসা-মসীহের কাজকর্ম নিয়ে ভাবেন, তিনি অনুধাবন করতে পারেন যে, তাঁর ক্ষমতা অসীম, কেননা সমস্ত বেহেশতী ক্ষমতা ও অধিকার তাঁকে সম্পূর্ণভাবে দেওয়া হয়ে। খোলাখুলিভাবে তিনি আল্লাহ্-পাকের কাজ নিষ্পন্ন করেন এবং তিনি যে কাজ করেন, কেউই তা করতে পারেনি।

তিনি তাঁর মুখের কথায় কুষ্ঠরোগীকে সুস্থ করে তোলেন, এবং তাঁর রহমতের দ্বারা অন্ধের চোখ খুলে যায়। ভয়ানক ঝড়কে তিনি কেবল তাঁর মুখের কথায় শান্ত করে দেন। ভৎসনা করে শয়তানদের তিনি তাড়িয়ে দেন এবং মাত্র পাঁচখানা রুটি ও দু’টি মাছ দিয়ে পাঁচ হাজার লোককে তৃপ্ত করেন। কেউ পূর্বে আর কখনও এমন কাজ করতে পারেনি।

কোন কোন নবী নিজের প্রভুর নামে সীমিত অলৌকিক কাজ করেছেন বটে, কিন্তু, ঈসা-মসীহ যা করেছেন, তা তিনি নিজের নামে নিজেরই অভিভূতকারী অধিকার বলে করেছেন।

লাসার নামের একটি লোকের কথা শুনুন। সে মারা গিয়েছিল এবং তাকে কবর দেওয়া হয়েছিল। তার ক্রন্দনরত আত্মীয়-স্বজন মসীহের কাছে সাহায্যের জন্য আসে। তিনি যেদিন তাদের গ্রামে গিয়ে পৌঁছান, তার চারদিন আগেই লাসারকে কবর দেওয়া হয়েছিল। লাসারের কবরের কাছে গিয়ে মসীহ্ খুব জোরে চীৎকার করে: “লাসার, বেরিয়ে এস” এবং মৃত ব্যক্তি সত্যই বেরিয়ে আসে।

আপনি যখন জীবনদানকারী বেহেশতী বাণী শুনবেন, শুনাহের দ্বারা আপনার যে রুহানী মৃত্য, তার থেকে আপনিও তখন জেগে উঠবেন। কারণ, মসীহ্ বলেছেন:

“আমিই পুনরুত্থান ও জীবন।”
ইউহোন্না ১১: ২৫

এমন একদিন আসবে, যখন সমস্ত মৃত-ব্যক্তি তাঁর বাণী শুনতে পাবে এবং আল্লাহ্-পাকের সঙ্গে বসবাসের জন্য কিংবা ভয়ঙ্কর একটা বিচারের জন্য জেগে উঠবে। আপনি যদি নিজের হৃদয়-মন মসীহের বাণীর জন্য খুলে দেন, তাহলে আনন্দময় ধামে প্রবেশ করে আপনিও অমর জীবন যাপন করতে পারবেন।

মসীহের দুঃখভোগ সম্বন্ধে আপনি কী জানেন?

ঈসা-মসীহ্ যে মৃতুবরণ করেন, তাতে কোন সন্দেহ নেই। অনেক দুঃখভোগের পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন। তিনি অগেই জানতেন, কেমন করে তিনি মৃত্যুবরণ করবেন। এ সম্বন্ধে তিনি প্রকাশ্যে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন।

আপনি কি জানেন, আপনি কোথায় মারা যাবেন? আপনার নিজের শহরে, না রাস্তায়, না আপনার শয্যায়- কোথায় আপনার মৃত্যু হবে, কেউ কি তা বলতে পারে? আপনি কি দুর্ঘটনায় মরবেন, না স্বাভাবিক মৃত্যৃ হবে আপনার? কত বয়সে, কোন মাসে, কোন দিনে আপনি মারা যাবেন? আপনার মৃত্যুর পর আপনার আত্মীয় স্বজনের কী হবে?

সত্যি, আমাদের মৃত্যু সম্বন্ধে আমরা কিছুই জানি না। আমরা তো আমরা নবীরাও নিজেদের মৃত্যুর নির্ধারিত সময় জানতেন না। কিন্তু খোদবন্দ মসীহ্ জানতেন এবং পূর্বেই বলে দিয়েছিলেন যে, ইহুদী বিচারক ও পৌত্তলিক রোমানদের দ্বারা বিচারের পর এবং অনেক কষ্টভোগের পর জেরুজালেমে তিনি মৃত্যুবরণ করবেন। কখন মৃত্যুবরণ করবেন, সে সম্বন্ধে নিজের স্বাধীন ইচ্ছায় নিজেই সিদ্ধান্ত নেন।

দিনই ছিল ইহুদীদের ভোজন-পর্বের দিন। লোকেরা ঐ দিন ভেড়া কোবারানী করত, যেন রক্ত ঝড়ার ফলে আল্লাহ্-পাকের গজব তাদের উপর আপতিত না হয়।

সুতরাং, সেই দিন আল্লাহ্-পাকের মেষ-শাবক আমাদের কলুষিত কর্মফল নিজের উপর বহন করে, সারা জগতের গুনাহের বোঝা নিজের কাঁধে চাপিয়ে নিয়ে কোরবানী হন, যেন তাঁর উপর যিনি ঈমান এনেছেন, তেমন প্রত্যেক ব্যক্তির উপর থেকে আল্লাহ্-পাকের গজব সরে যায়। যিনি মসীহের উপর ঈমান আনেন, তিনি পূত-পবিত্র হয়ে যান, বেগুনাহ্ ও নির্দোষ প্রতিপন্ন হন এবং অনন্তকালের জন্য মুক্তিলাভ করেন।

ঈসা-মসীহ যে কেবল তাঁর মৃতুর দিন-ক্ষণ এবং তার অর্থ ও তাৎপর্য সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী করেন, তাই নয়- বরং তিনি তার উম্মৎদেরকে পূর্ণ নিশ্চয়তা দেন যে, তিনি তিনদিন পর মৃত্যু থেকে পুনরুত্থান করবেন, কেউ তাঁর এই বিজয়দীপ্ত পুনরুত্থানে বাধা দিতে পারবে না। এবং যথার্থ তাই-ই হয়েছিল।

ঈসা-মসীহ্ আরও বলেছেন:

“কেহই আমার প্রাণ আমার নিকট হইতে লাইয়া যাইবে না, কিন্তু আমি নিজেই তাহা দিব। প্রাণ দিবার ক্ষমতা আমার আছে, আবার প্রাণ ফিরাইয়া লইবার ক্ষমতাও আমার আছে। এই ক্ষমতা আমি আমার পিতার নিকট হইতে পাইয়াছি।”
ইঞ্জিল শরীফ, ইউহোন্না ১০:১৮

কোন মানুষেরই তার মৃত্যুর নির্ধারিত সময় সম্বন্ধে ধারণা নেই এবং নিজের ব্যক্তিগত উদ্যোগে পুনরুত্থানেরও কোন শক্তি নেই। কিন্তু ঈসা-মসীহে্র তা ছিল। মসীহ্ মৃত্যুকে সম্পূর্ণরূপে স্বীকার করে, জগতের গুনাহ্ বহন করে আমাদের নাজাতের জন্য স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করেন এবং মৃত্যু থেকে জীবিত হন। তাই তিনিই একমাত্র ব্যক্তিসত্তা, যিনি তাঁর উপর ঈমান-আনয়নকারী সকলকৈ নিজের রুহানী জিন্দেগী দিয়ে জীবিত করেন। আমরা ইহজগতে এমন কাউকে আদৌ দেখিনা যিনি মসীহের মতো মৃত্যুর পর পুনর্জীবিত হয়েছেন। মসীহের মৃত্যু সকল মানুষের জন্য আল্লাহ্-পাকের অশেষ মেহেরবানি।

আল্লাহ-পাকের সমস্ত নবী ও রসূল মৃত্যুবরণ করেছেন। তাঁদের শবদেহ ক্ষয়প্রাপ্ত ও জীর্ণ অবস্থায় এখনও তাঁদের কবরে আছে। কিন্তু মসীহ্ জীবন্ত তিনি মৃত্যুঞ্চয়ী।

আপনি কি মসীহের মৃত্যু-থেকে পুনরুত্থানের অর্থ হৃদয়াঙ্গম করতে পেরেছেন?

সলীবের উপর তাঁর আত্মকোরবানীর এই মহান কর্মের দ্বারা প্রমাণ হয়েছে যে, যিনি সলীবের উপর স্বেচ্ছায় কোরবান হন, আল্লাহ-পাক তাঁকে মহব্বৎ করেন এবং জগতের জন্য তাঁর এই কোরবানী আল্লাহ্-পাক কবুল করেছেন।

আপনি কি মৃত্যুর উপর মসীহের বিজয় উপলব্ধি করেছেন?

মসীহ বাস্তবিকই শাহাদাৎ বরণ করেন এবং কঠিন পাথরের কবরে সমাহিত হন। কবরের দরজায় তাঁর শত্রুরা বিশালাকার এক খন্ড পাখর চাপা দেয় এবং তার উপর সেই সময়ের সবচাইতে বৃহৎ সম্প্রদায়ের মোহর মেরে দ্বার রুদ্ধ করে দেওয়া হয়, তাঁর উম্মতেরা যাতে রাতের বেলায় লাশ চুরি করতে না পারেন। সশস্ত্র প্রহরীও কবরের দরজায় মোতায়েন রাখা হয়।

কিন্তু তিনদিন বাদে ঈসা-মসীহ্ মৃত অবস্থায় থেকে জীবিত হন এবং কবর থেকে বেরিয়ে আসেন। তাঁর উম্মতেরা পরে কবর খালি দেখতে পান। তাঁরা জীবন্ত মসীহের সাক্ষাত পেয়ে তাঁকে ভূত ভেবে ভয়ে-বিস্ময়ে কাঁপতে থাকেন। কিন্তু তিনি তাঁদের সঙ্গে মহব্বতের ভাষায় কথা বলেন এবং তাঁদেরকে নিজের হাত-পায়ে পেরেকের ক্ষত-চিহ্ন দেখান। তাদের সামনে তিনি খাদ্য গ্রহণ করেন এবং তাঁকে স্পর্শ করতে তাঁদের অনুমতি দেন, যাতে তাঁরা নিশ্চিত হতে পারেন যে, তিনি সত্যিকার ভাবে পুনরুত্থিত হয়েছেন এবং তাঁর এই পুনর্জীবিত দেহ বাস্তব সত্য।

আল্লাহ্-পাকের কাছে মসীহের আরোহণ সম্বন্ধে আপনার কী ভাবনা?

যারা ঈসা-মসীহের মাধ্যমে প্রচারিত আল্লাহ্-পাকের মহব্বত অস্বীকার করে, তারা প্রকৃতপক্ষে নিজেদেরকেই অস্বীকার করে ও ধিক্কৃত করে। আল্লাহ্-পাকের রহমতকে যে অস্বীকার করে, মেই অস্বীকৃতির জন্য সে আল্লাহ্-পাকের গজবের মধ্যে থাকে; কারণ তাঁর দেওয়া নাজাত-প্রাপ্তির একমাত্র উপায়কে বার-বার সে অস্বীকার করেছে।

ঈসা-মসীহের পূনরুত্থানের পূর্ব পর্যন্ত গুনাহের শাস্তিজনিত মৃত্যু ছিল মানুষের প্রধার শত্রু। কিন্তু মসীহ্ মৃত্যুকে পরাভূত করেন এবং পুনরায় জীবন্তরূপে হাজির হন। অনন্তকাল পর্যন্ত তিনি আর কখনও মৃত্যুবরণ করবেন না। যারাই তাঁর সংলগ্ন থাকবে, তারা প্রত্যেকে তাঁর জীবনের ক্ষমতার অংশীদার হবে এবং অন্যায়কে পরাস্ত করতে পারবে।

আপনি কি মসীহের পুনরুত্থানের আশীর্বাদ উপলব্ধি করতে পেরেছেন এবং আপনি কি তা গ্রহণ করেছেন? এই তো সময়, এখনই তা গ্রহণ করুন।

মসীহের পৃথিবীতে-প্রত্যাবর্তন সম্বন্ধে আপনি কী জানেন?

ঈসা-মসীহ্ নিজেই মহব্বৎ। তিনি সকল মানুষকে মহব্বত করেন, বিশেষতঃ করেন যাঁরা তাঁর মহব্বতের স্পৃহায় লালিত, তাঁদেরকে। তাঁরা মহব্বতের পূর্ণ হয়ে, ক্ষমা সুন্দর হয়ে বেড়ে ওঠেন এবং আল্লাহ্-পাক তাঁদের ক্ষমা করে দেন। তিনি আমাদের প্রতীক্ষায় আছেন এবং সর্বদা আমাদেরকে তাঁর কাছে রাখতে চান।

ঈসা-মসীহ্ নিজের মৃত্যু ও পুনরুত্থান সম্বন্ধে যেমন ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, তেমনি তাঁর দ্বিতীয়বার আগমনের বিষয়েও খোলাখুলিভাবে ভবিষ্যদ্বাণী করেছেন। তিনি মহা-মহিমায় আসবেন, এই কথা জানবার পর প্রত্যেক বুদ্ধিমান লোকই তাঁর সঙ্গে সাক্ষাত করতে নিজেকে প্রস্তুত করবেন। তাঁর দেওয়া নাজাত যাঁরাই গ্রহণ করেছেন, মসীহ্ তাঁদেরকে সেই সব লোকদের থেকে আলাদা করবেন, যাদের হৃদয় কঠিন, যারা অহঙ্কারী এবং যারা স্বীকার করে না যে, তারা গুনাহগার, আর সেজন্য মসীহের তরফ থেকে মাগ্ফেরাতের প্রয়োজন রয়েছে।

প্রিয় ভ্রাতা, অবিলম্বে ঈসা-মসীহকে গ্রহণ করুন, যাতে আপনি আখেরাতের বিজারের কঠোর অবস্থার মধ্যে নিপতিত না হন। কারণ, তিনিই একমাত্র ব্যক্তি স্বত্তা, যিনি আপনাকে ভবিষ্যত গজব থেকে রক্ষা করতে পারেন।

সব খাঁটি ঈমানদার অবিরাম প্রত্যাশা নিয়ে মসীহের আগমন কামনা করেছেন। এমন কি ইহুদী ও মুসলমানগণও জানেন যে, তিনি শীঘ্রই আসছেন। কেউ কেউ বিশ্বাস করে যে, ঈসা-মসীহ্ চল্লিশ বছর পৃথিবীতে রাজত্ব করবেন। কারও অনুমান, তাঁর রাজত্বকাল হবে এক শো বছর। অন্যেরা নিশ্চিত যে, এই কাল হবে এক হাজার কছর। কিন্তু কিতাবুল মোকাদ্দসে এই বলে আমাদের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে যে, ঈসা-মসীহ্ সব রাজার রাজা (রাজাধিরাজ), তিনি প্রভুদের প্রভু এবং তাঁর কোন শেষ নেই। তাঁর সাম্রাজ্য চিরদিনের। তিনি কলেছেন:

“আমি রাজা-সত্যের পক্ষে সাক্ষ্য দিবার জন্য আমি আসিয়াছি, আর সেই জন্যই আমি দুনিয়াতে আসিয়াছি। যে কেহ সত্যের, সে আমার কথা শুনে।”

ইঞ্জিল শরীফ, ইউহোন্না ১৮:৩৭

মসীহের নাম ও উপাধি থেকে আপনি কী বুঝেছেন?

কোন কোন নবীর বিশেষ বিশেষ উপাধি আছে। ইব্রাহীম আল্লাহ্-পাকের দোস্ত, মূসা আল্লাহ্-পাকের মুখপাত্র এবং ঈসা-মসীহ আল্লাহ-পাকের কালাম বা তিনি কালেমাতুল্লাহ্ ও রুহুল্লাহ্ কিন্তু ইঞ্জিল শরীফে আমরা সরাসরি এই কালাম পাঠ করি, যা বেহেশতী কন্ঠে আমাদের কাছে এসে পৌঁছায়:

“ইনিই আমার প্রিয় পুত্র (রূহানী), ইহার উপর আমি খুবই সন্তুষ্ট। তোমরা ইহার কথা শুন।”

মথি ১৭:৫

“আল্লাহ্‌র পুত্র” বলতে কী বোঝায়? কোর সন্তান স্বভাবতঃ তার পিতার প্রতিবিম্ব। একইভাবে আমরা ঈসা-মসীহের মধ্যে আল্লাহ-পাকের গুণাবলী প্রত্যক্ষ করি, যেমন মসীহ্ তাঁর সাহাবীদের বলেছিলেন:

“যে আমাকে দেখিয়াছে, সে পিতাকেও (রবকেও) দেখিয়াছে।”

ইঞ্জিল শরীফ, ইউহোন্না ১৪:৯

খোদা-না-খাস্তা, আপনি হয়তো বলবেন, তিনি নবী-মাত্র। কিন্তু আমরা আপনাকে জিজ্ঞাসা করি, আপনি তাহলে কেন তাঁর আহ্কাম পালন করেননি? আপনি যদি প্রায়শ্চিত না করে থাকেন এবং কথায় ও কাজে পরিবর্তিত না হয়ে থাকেন, তাহলে ইতিমধ্যেই আপনার বিচার হয়ে গেছে।

অতীব রহস্যের বিষয় যে, ঈসা-মসীহ্ আল্লাহ্-পাকের গোলাম হয়ে এসেছিলেন গুনাহের গোলামদের মুক্ত করতে। সত্যিকার মানবতা কী, আমাদের তা দেখাবার জন্য তিনি একজন সামান্য, বিনীত মানুষ হিসাবে জগতে আসেন। সুতরাং, শক্তি, মহিমা বা বিত্তের দম্ভ নয়-একমাত্র মসীহের মহব্বতই পারে আমাদের রক্ষা করতে।

যে ব্যক্তি সঙ্গে একটা তলোয়ার বহন করে, তাকে মনে হয় বেশ শক্তিশালী লোক বলে; কিন্তু যিনি নিজেকে জয় করেছেন, তিনি নিশ্চয় আরও বেশী শক্তিশালী। সবার জন্য যিনি নিজের জীবন কোরবানী দেন, তিনিই সর্বোত্তম। এই কারণে হযরত ইউহোন্না স্বীকার করেছেন এই বলে:

“সেই কালামই মানুষ হইয়া জন্মগ্রহণ করিলেন এবং কিছুকাল আমাদের মধ্যে বাস করিলেন। পিতা-খোদার একমাত্র পুত্র (কালেমাতুল্লাহ্) হিসাবে তাঁহার যে মহিমা, সেই মহিমা আরা দেখিয়াছি। তিনি রহমত আর সত্যে পূর্ণ।”

ইঞ্জিল শরীফ, ইউহোন্না ১:১৪

ঈসা-মসীহ্ রক্ত মাংসের মানবদেহে আগমন করেন ও অবস্থান করেন, যেন আমরা বুঝতে পারি যে আল্লাহ্-পাকই সেই পিতা (রব), যিনি রহমত ও মহব্বতে পূর্ণ এবং মাগ্ফেরাতদাতা-তিনি যোদ্ধা বা ধ্বংসকারী বিজেতা নন, কিংবা কোন উদাসীন ব্যক্তিসত্তা নন। এমনি করে ঈসা-মসীহ্ আল্লাহ্-পাকের সম্বন্ধে আমাদের মধ্যে নতুন ধারণা ও উপলব্ধি এনে দিয়েছেন। ঈসা-কালেমাতুল্লাহ্ আমাদেরকে যে কেবল বেহেশতী গুণাবলী শিক্ষা দিয়েছেন, তাই নয়-

উপরন্তু আল্লাহ্-পাকের মহব্বতে আমাদের সামনে ও সঙ্গে বাস করেছেন, যাতে আমরা নয়া জিন্দেগীর এমন একটা বিধান বুঝতে পারি, যে বিধান হল অনন্ত বেহেশতী মহব্বত।

“আমার ভেড়াগুলি আমার ডাক শুনে। আসি তাহাদের জানি আর তাহারা আমার পিছনে পিছনে চলে। আমি তাদের অনন্ত জীবন দিই। তাহারা কোনমতেই বিনষ্ট হইবে না এবং কেহই আমার হইতে তাহাদের কাড়িয়া লইবে না।”

ইঞ্জিল শরীফ, ইউহোন্না ১০:২৭-২৮

“আমার পিতার সমস্ত-কিছুই আমার হাতে দিয়াছেন। পিতা ছাড়া পুত্রকে কেহ জানে না এবং পুত্র ছাড়া পিতাকে কেহ জানে না। আর পুত্র যাহার নিকট পিতাকে প্রকাশ করিতে ইচ্ছা করেন, সেই-ই তাঁহাকে জানে।”

ইঞ্জিল শরীফ, মথি ১১:২৭

“আমিই আসল আঙ্গুর গাছ আর আমার পিতা মালী।”

ইঞ্জিল শরীফ, ইউহোন্না ১৫:১

মসীহের দাওয়াতের প্রতি আপনার কী প্রতিক্রিয়া?

আল্লাহ্‌র পুত্র ঈসা-মসীহ্ বিনম্র কণ্ঠে আপনাকে বলেছেন:

“তোমরা যাহারা কলান্ত ও বোঝা বহিয়া বেড়াইতেছ, তোমরা সকলে আমার নিকটে এস- আমি তোমাদের বিশ্রাম দিব। আমার জোয়াল তোমাদের উপর তুলিয়া লও এবং আমার নিকট হইতে শিখো। কারণ, আমার স্বভাব নরম ও নম্র। ইহাতে তোমরা অন্তরে বিশ্রাম পাইবে। কারণ, আমার জোয়াল বহণ করা সহজ এবং আমার বোঝা হালকা।”

ইঞ্জিল শরীফ, মথি ১১:২৮-৩০

যখন মসীহ্ তাঁর সাহাবীদের এমনি ভাষায় ডাকতেন, তখন তাঁরা উঠে দাঁড়াতেন এবং তাঁর কথার উপর ভরসা করে ঘর-বাড়ী, মাতা-পিতা, চাকরী-বাকরী ছেড়ে তাঁর অনুগামী হতেন। তাঁরা তাঁকে অনুসরণ করেছিলেন, তাঁকে বুঝতে পেরেছিলেন, তাঁর উপর ঈমান এনেছিলেন, নিজেদের জীবন তাঁর কাছে সমর্পণ করেছিলেন এবং শেষ পর্যন্ত তাঁরা রুহুল কুদ্দুস- এর ক্ষমতায় পরিপূর্ণ হয়েছিলেন।

মসীহ্ আজও জীবিত এবং আপনার কাছ থেকেও তিনি একই প্রতিক্রিয়ার অপেক্ষায় আছেন। কারণ, তিনি ব্যক্তিগতভাবে আপনাকে সব-কিছু ত্যাগ করে তঁকে অনুসরণের দাওয়াৎ দিয়েছেন। সেই দাওয়াৎ কবুল করলে আপনি আরও বেশী করে তাঁকে চিনতে পারবেন এবং তাঁর রহমতের কছে নিজেকে সমর্পণ করতে পারবেন। প্রতিদানে তিনি তাঁর পাক-রূহের দ্বারা আপনাকে অভিষিক্ত করবেন, যেন কথায় ও কাজে আপনি একজন পরিবর্তিত মানুষ হয়ে গড়ে উঠতে পারেন। তখন আপনি হবেন সত্যবাদী, কর্মোপযোগী, সদাশয়, বিনয়ী ও মহব্বতে পূর্ণ সুপ্রিয় ব্যক্তি। তখন সমস্ত উপলব্ধির সেরা উপলব্ধি যে আল্লাহ্-পাকের রহমত, সেই রহমত আপনার হৃদয়-মনকে ঈসা-মসীহের পুনরাগমন পর্যন্ত পবিত্র ও পূর্ণ করে রাখবে।

এবং তাঁর সেই পুনরাগমণ অতি-নিকটে।

পরিশেষে

সুতরাং, কালেমাতুল্লাহ্ সম্বন্ধে আপনি কী চিন্তা করেন?

প্রিয় বন্ধু, আপনি হয়তো ইঞ্জিলের বক্তব্যের সঙ্গে একমত, কিংবা হয়তো বেহেশতী সুসংবাদ আপনি অস্বীকার করেন। এ দুইয়ের যেটাই সত্য হোক, আমরা ঈসা-মসীহ সম্বন্ধে আপনার মতামত জানতে আগ্রহী। এখন, আপনি যদি দয়া করে আপনার মতামত আমাদের জানান, তাহলে আমরা আপনাকে আপনার জিজ্ঞাসা অনুযায়ী আরও তথ্য দিতে চেষ্টা করব।

এই পুস্তকের ২ পৃষ্ঠায় দেওয়া ঠিকানায় মূূল প্রকাশকের সঙ্গে (ইংরেজীতে) কিংবা ৩০ পৃষ্ঠায় দেওয়া ঠিকানায় সরাসরী আমাদের সঙ্গে (বাংলায়) যোগাযোগ করতে পারেন।

পাঠক-পাঠিকার জন্য প্রশ্ন

প্রিয় পাঠক- পাঠিকা,

এই পুস্তিকার অন্তর্গত প্রশ্নোত্তরসমূহ মনোযোগসহকারে পাঠ করে থাকলে আপনি নিচের প্রশ্নগুলিরও উত্তর দিতে পারবেন। আপনি এ ব্যাপারে আগ্রহী হলে এবং আপনার পাঠানো উত্তর। অন্ততঃ ৭০%সঠিক হলে আমাদের জামাতের পক্ষ থেকে আপনার পছন্দমত একটি পুস্তক (আমাদের প্রকাশিত) শুভেচ্ছার নিদর্শন স্বরূপ আপনার কাছে আমরা পাঠাবো।

  1. ঈসা-মসীহের জন্মের মধ্যে কী অলৌকিকতা লক্ষ্য করা যায়?
  2. ঈসা-মসীহ্ কেন সব সময়ই নিষ্পাপ?
  3. ঈসা-মসীহের বাণীর রহস্য কী?
  4. ঈসা-মসীহের কোন্ কাজ আপনাকে সর্বাধিক প্রভাবিত করেছে?
  5. ঈসা-মসীহের মৃত্যুর মধ্যে বিস্ময়কর কী দেখতে পাওয়া যায়?
  6. ঈসা-মসীহের মৃত্যু থেকে পুনরুত্থানের হেতু কী?
  7. ঈসা-মসীহ্ এখন কোথায় অবস্থান করছেন ও কী করছেন?
  8. ঈসা-মসীহের দ্বিতীয় আগমন সম্বন্ধে আপনি কী বুঝেছেন?
  9. আল্লাহ্-পাক ঈসা-মসীহকে তাঁর পুত্র বলেন কেন?
  10. আপনি নিজে ঈসা-মসীহ্ সম্বন্ধে কী চিন্তা করেন?

মন্তব্য করুন

আপনার ই-মেইল এ্যাড্রেস প্রকাশিত হবে না। * চিহ্নিত বিষয়গুলো আবশ্যক।