সংক্ষিপ্ত উত্তর:
সকল ভাষাই বেহেস্তের ভাষা হবে।
ব্যাখ্যামূলক উত্তর:
ভাষার ক্ষেত্রে আল্লাহর কোন সীমাবদ্ধতা নেই।
ভাষা মানুষের আজন্ম অধিকার। জন্মের মধ্য দিয়ে মানুষ ভাষার সাথে পরিচিত হয়। কোন শিশু যে ভাষাভাষী মা-বাবার কোলে জন্মগ্রহণ করে, সে সেই ভাষা রপ্ত করে, সেই ভাষাতেই কথা বলতে ও যোগাযোগ করতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে। তবে আধুনিক মানুষ মাতৃভাষার গণ্ডি পেরিয়ে দুই তিনটি ভাষা শেখে। এমনকি অনেকে মাতৃভাষার মতোই বিভিন্ন ভাষাতে পারদর্শী হয়। ভাষা হলো মানুষের সীমাবদ্ধতার প্রতীক। মানুষ সব ভাষা বলতে পারে না কিন্তু আল্লাহ সব ভাষা বুঝতে পারেন। তাওরাত শরিফের পয়দায়েশ কিতাবের ১১ অধ্যায়ে দেখা যায়, মানুষ একসময় একটা ভাষাতেই কথা বলতো। তাওরাত লেখা হয়েছিল হিব্রু ভাষায়, যে ভাষায় হজরত মুসা কথা বলতেন। যেহেতু তখন পৃথিবীতে একটির বেশি ভাষা ছিল না, সেহেতু বলা যায় হজরত আদম ও বিবি হাওয়াও সেই হিব্রু ভাষাতেই কথা বলতেন। গুনাহের কারণে হজরত আদম ও বিবি হাওয়াকে আল্লাহ বেহেশত থেকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছিলেন। গুনাহর কারণে যদি তাদের ভাষারও পরিবর্তন না হয়ে থাকে, তবে বলতে হয় হজরত আদম বেহেশতে হিব্রু ভাষায় কথা বলতেন। কিন্তু পয়দায়েশ ১১ অধ্যায়ে বিশেষ কারণে আল্লাহ মানুষের ভাষার মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করেছিলেন। ফলে মানুষ একে অপরের ভাষা বুঝতে না পেরে বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছিল।
বেহেস্তে সবাই সব ভাষা বুঝবে: ভাষা ব্যবহারের আর একটি উদাহরণ আছে ইঞ্জিল শরিফের প্রেরিত কিতাবের ২ অধ্যায়ে। এখানে হজরত ঈসা মসীহের প্রতিজ্ঞা অনুসারে, পাকরুহ নেমে আসার পর সাহাবিরা তাঁর (পাকরুহের) দেওয়া শক্তিতে কথা বলতে শুরু করেছিলেন। লেখা আছে, “তাতে তাঁরা সবাই পাকরুহে পূর্ণ হলেন এবং সেই রুহ যাঁকে যেমন কথা বলবার শক্তি দিলেন সেই অনুসারে তাঁরা ভিন্ন ভিন্ন কথা বলতে লাগলেন। সেই সময় দুনিয়ার নানা দেশ থেকে আল্লাহভক্ত ইহুদি লোকেরা এসে, জেরুজালেমে বাস করছিল।” কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাপার ছিল, সেই আগত লোকদের ভাষা ভিন্ন ভিন্ন হলেও সবাই তাদের কথা বুঝতে পারছিল। তারা আশ্চর্য হয়ে বলছিল, “এই যে লোকেরা কথা বলছে, এরা কি সবাই গালীলের লোক নয়? যদি তা-ই হয়, তাহলে আমরা প্রত্যেকে কি করে নিজের নিজের মাতৃভাষা ওদের মুখে শুনছি? … আমরা সকলেই তো আমাদের নিজের নিজের ভাষায় আল্লাহর মহৎ কাজের কথা ওদের বলতে শুনছি।” এই ঘটনা থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, আল্লাহ কিংবা তাঁর পাকরুহের কাছে ভাষার কোন সীমাবদ্ধতা নেই। অতএব, বেহেশতে যে যার মাতৃভাষাতেই সুন্দর করে কথা বলবে আর সবাই তা বুঝতে পারবে। শিশুর না বলা কথা ও হাসির ভাষা যেভাবে মা বোঝে, সেভাবে আল্লাহপাক আমাদের প্রিয় মাতৃভাষায় বলা কথা আরো বেশি করে বুঝবেন।