সংক্ষিপ্ত উত্তর:
না, জন্মসূত্রে কেউ ঈসায়ী হতে পারে না।
ব্যাখ্যামূলক উত্তর:
আমাদের চিরাচরিত নিয়ম হলো, যে যে ধর্মীয় মা-বাবার পরিবারে জন্ম গ্রহণ করে, সে সেই ধর্মীয় লোক হয়। ঈসায়ী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করলে ঈসায়ী, মুসলিম পরিবারে জন্ম গ্রহণ করলে মুসলমান, হিন্দু পরিবারে জন্ম গ্রহণ করলে হিন্দু, বৌদ্ধ পরিবারে জন্মগ্রহণ করলে বৌদ্ধ ইত্যাদি। মানুষের এই ধারণা কোন ধর্মীয় বিধান মতেই সঠিক নয়। যদি সঠিক হতো, তবে প্রত্যেককে ব্যক্তিগতভাবে ধর্মীয় তরিকাভুক্ত থাকার বিধান থাকতো না।
ঈসায়ী হতে হলে, একজন মানুষকে ব্যক্তিগতভাবে হজরত ঈসার উপর ঈমান আনতে হয়। ঈসায়ীদের এই ঈমান আনার বিষয়টি কয়েকটি ধাপে বিস্তৃত। যেমন- প্রথমত: কোন ব্যক্তিকে বুঝতে হয় যে, সে জন্মগত ও জীবনগতভাবে গুনাহগার এবং এই গুনাহ থেকে সে ধর্মকর্ম দিয়ে কিংবা ভাল কাজ দিয়ে উদ্ধার পেতে পারে না। দ্বিতীয়ত: তাকে বুঝতে হয় যে, আল্লাহ নিষ্পাপ ও ধার্মিক। এই চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণেই তিনি গুনাহগার মানুষকে তাঁর কাছে স্থান দিতে পারেন না। তৃতীয়ত: তাকে জানতে হয় যে, আল্লাহ তাঁর সেরা সৃষ্টি মানুষকে মহব্বত করেন এবং তাকে গুনাহ থেকে নাজাত দেবার ব্যবস্থা করেছেন। চতুর্থত: তাকে জানতে হয় যে, আল্লাহর সেই ব্যবস্থা হলো হজরত ঈসা মসীহ, যিনি তাঁর নিজের জীবন কোরবানি দিয়ে গুনাহগারকে আল্লাহর কাছে যাবার উপযুক্ত করে তুলেছেন। পঞ্চমত: তাকে মুখে হজরত ঈসাকে প্রভু বলে স্বীকার এবং হৃদয়ে ঈমান আনতে হয় যে, আল্লাহ তাঁকে মৃত্যু থেকে জীবিত করে তুলেছেন। উপরিউক্ত পাঁচটি ধাপ পেরিয়ে একজন ব্যক্তি ঈসায়ী হয়। বোধশক্তি ছাড়া কেউ কখনও ঈসায়ী হতে পারে না। জন্মের মধ্য দিয়ে কেউ সেই বোধসম্পন্ন হয় না।
ঈসায়ী ছাড়া অন্যান্য ধর্মের মধ্যেও প্রায়ই কিছু না কিছু করণীয় কাজের বা বিশ্বাসের মধ্য দিয়ে, নিজ নিজ ধর্মের অনুসারী হয়। যেমন: ইসলামে কলেমা কিংবা তরিকা নেওয়ার ব্যবস্থা, হিন্দু ও বৌদ্ধদের দীক্ষা নেবার ব্যবস্থা এবং অন্যান্য ধর্মের ক্ষেত্রে কোন কোন ব্যবস্থা থাকে, যার মধ্য দিয়ে তারা নিজেদের ধর্মে সম্পৃক্ত হয়। এইসব ব্যবস্থাই প্রমাণ করে যে, জন্মের মধ্য দিয়ে কেউ ধর্মের অন্তর্ভুক্ত হয় না। ধর্মীয় জীবনের মূলকথা হলো রুহানি জীবন। গুনাহগার বোধশক্তি ছাড়া রুহানি জীবনের কথা ভাবা যায় না। আকারগত পার্থক্য ছাড়া কোন পশুর বাচ্চা এবং কোন মানুষের সন্তানের মধ্যে জন্মের পর কোন পার্থক্যই থাকে না। মানুষ পশু নির্বিশেষে সকল বাচ্চারাই জন্মের পর থেকে মা-বাবাকে যা করতে দেখে, তাই করতে শেখে এবং নিজ নিজ জীবনকে উৎকৃষ্ট মনে করে, জীবন পথে চলতে থাকে। আবার মানুষের মধ্যেও যে যে ধর্মে জন্ম গ্রহণ করুক না কেন সে সেই ধর্মকেই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠধর্ম হিসেবে বিবেচনা করে আর অপরাপর ধর্মকে হেয় করে। কিন্তু কোন ব্যক্তি এখন যে পরিবারে জন্মেছে সেই পরিবারে না জন্মে সে অন্যকোন ধর্মীয় পরিবারে এবং পরিবেশেও জন্মাতে পারতো। তাহলে তখন সেই ধর্মই আবার তার কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠধর্ম হয়ে যেত।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বুঝা যায় জন্মগতভাবে কেউ ঈসায়ী হয় না। জেনে, বুঝে ও ঈমান এনে এবং হৃদয়ে গ্রহণ করেই ঈসায়ী হতে হয়। অর্থাৎ সজ্ঞানে ঈসায়ী হতে হয়, জন্মের মধ্য দিয়ে অজ্ঞানে কিংবা অসচেতনতায় নয়।