সংক্ষিপ্ত উত্তর:
কিতাবের সত্য ও আধিপত্য মানা বা না মানা বিষয়ে দুটি আলাদা মতবাদ।
ব্যাখ্যামূলক উত্তর:
ক্যাথলিক মানে সর্বজনীন। এক সময় ছিল হজরত ঈসার উম্মত মানে রোমান ক্যাথলিক তথা খ্রিস্টান। হজরত ঈসার বেহেস্তে চলে যাবার পর, তাঁর উম্মতেরা সারা পৃথিবীতেই ছড়িয়ে পড়েছিল। তবে প্রথম দলভিত্তিক এবাদত যেহেতু রোম দেশের জেরুজালেমেই শুরু হয়, সেহেতু কারণে অকারণে রোমই যোগাযোগের কেন্দ্রে পরিণত হয়। রোমের জেরুজালেম জামাতকে ঘিরে পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলে ঈসার উম্মতেরা ক্যাথলিক খ্রিস্টান নামে বৃদ্ধি পেতে থাকে। রোমের ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, নেতারা ক্রমে অনৈতিকতার দিকে পা বাড়ায় আর এই ক্ষমতাকে পাকাপোক্ত করার জন্য অনেক নিয়মকানুন গড়ে তোলে। কালক্রমে নেতারা কিতাবের পাশাপাশি কিছু রীতিনীতি ও নিয়ম বেঁধে দিতে শুরু করে। এইভাবে চলতে চলতে একসময় ধর্মীয় নেতাদের মধ্যে অনেকে আল্লাহর কালামকে ভুলে গিয়ে, রীতিনীতি ও নিয়মনির্ভর হয়ে ওঠে এবং অন্যায় অবিচারে সমাজ কলুষিত হয়। ফলে ঈসার উম্মতের সংখ্যা বিশ্বব্যাপী বিস্তার লাভ করলেও ভুলশিক্ষার কারণে পাপাচারও বহুগুণ বৃদ্ধি পেতে থাকে। এমনও সময় আসে, যখন ধর্মীয় নেতারা বেহেশতের টিকেট বিক্রি থেকে শুরু করে, হেন অপকর্ম নেই যে তারা করেনি। কিতাবুল মোকাদ্দসের কোন গুরুত্বই ছিল না। সাধারণ লোকদের কিতাব পড়া নিষিদ্ধ ছিল। কিতাবের শিক্ষা বাদ দিয়ে তারা মানুষের মনগড়া নানা নিয়ম-নীতি পালনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিল। বলা যায়, ঈসায়ী সমাজে তখন এক অন্ধকারময় অবস্থা বিরাজ করছিল।
এমনি অস্বস্তিকর সময় একজন নির্ভীক লোককে আল্লাহ ব্যবহার করেছিলেন, যার নাম মার্টিন লুথার। তিনিই সর্বপ্রথম অনাচারের বিরুদ্ধে কথা বলেন এবং খ্রিস্টিয় সমাজে মানুষের গড়া নিয়মের পরিবর্তে, আল্লাহর কালামকে প্রতিষ্ঠিত করার পক্ষে, কালাম ভিক্তিক যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। অর্থাৎ অনাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে প্রটেস্ট বা প্রতিবাদ করেন। অনেক আলাপ-আলোচনা, বাক-বিতণ্ডা, যুক্তিতর্কের পর, মার্টিন লুথার তাঁর সমর্থকদের নিয়ে, রোমান ক্যাথলিকদের মধ্য থেকে বের হয়ে আসেন। চিরাচরিত কিতাব বহির্ভূত পন্থার বিরুদ্ধে প্রোটেস্ট করেন বলে, তাদেরকে প্রটেস্টান নাম দেয়া হয়। এই প্রোটেস্টান দলের মধ্যে আবার কালামের গুরুত্বের দিক ঠিক রেখে, কিছু বিশ্বাসগত মতভেদ দেখা দেয়। ফলে প্রটেস্টান দল লুথারেন, এ্যাংলিক্যান, প্রেসবিটারিয়া, ব্যাপ্টিস্ট ইত্যাদি দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। তবে প্রোটেস্টান দলের মধ্যে ছোটখাটো কিছু মতভেদ থাকলেও প্রত্যেক দলই হজরত ঈসার মসীহত্ব ও প্রভুত্ব স্বীকার করে এবং এই বিষয়ে কোন আপোষ করে না।