সংক্ষিপ্ত উত্তর:
হজরত ঈসা আল্লাহকে সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করেছিলেন বলে।
ব্যাখ্যামূলক উত্তর:
শিল্পী তার রং তুলি দিয়ে কারো ছবিকে কিংবা কোন দৃশ্যকে জীবন্ত করে তোলেন। একজন ভাল শিল্পীর ছবি দেখলে বোঝা যায় এটি অমুকের ছবি। কিন্তু ছবি কথা বলে না, কাজ করে না কিংবা ছবির ছবিত্ব ছাড়া তার অন্যকোন গুণ নেই। কারণ হলো শিল্পী ছবি বানাতে পারে কিন্তু প্রাণ দিতে পারে না বরং তুলির ব্যবহারে ছবিটি বাইরের দিক থেকে হুবহু আসলটির মতো মনে হতে পারে, বাস্তবে আসল নয়। ইঞ্জিল শরিফে স্বয়ং আল্লাহপাক হজরত ঈসা মসীহের বাস্তব ছবি এঁকেছেন। হজরত ঈসা সম্পর্কে বলা হয়েছে, “আল্লাহর সব গুণ সেই পুত্রের মধ্যেই রয়েছে; পুত্রই আল্লাহর পূর্ণছবি। পুত্র তাঁর শক্তিশালী কালামের দ্বারা সবকিছু ধরে রেখে পরিচালনা করেন। মানুষের গুনাহ দূর করবার পরে পুত্র বেহেশতে আল্লাহতা’লার ডান পাশে বসলেন। পিতার কাছ থেকে যে নাম পেয়েছেন তা যেমন ফেরেশতাদের নামের চেয়ে মহান, তেমনি তিনি নিজেও ফেরশতাদের চেয়ে অনেক মহান হয়েছেন” (ইঞ্জিল শরিফ ইবরানি ১:৩-৪)। মানুষ আশরাফুল মখলুকাত, সেই মানুষ হজরত আদম অবাধ্যতার মধ্যদিয়ে কলুষিত হয়েছিলেন, যার মাধ্যমে জন্মপ্রাপ্ত গোটা মানবজাতি কলুষিত হয়েছে। সকল নবিরাও এর মধ্যে রয়েছেন। এমনকি ফেরেশতারাও অবাধ্যতায় পতিত হয়ে, আল্লাহর কাছ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলেন। তাই আল্লাহ তাঁর নিজের সকল গুণাবলী দিয়ে সাজিয়ে হজরত ঈসা মসীকে দুনিয়াতে পাঠিয়েছেন। তিনি তাঁর শ্রেষ্ঠত্ব বজায় রেখেছিলেন, এখন আল্লাহর ডান পাশে বসে আছেন।
আল্লাহর হুবহু প্রকাশ: হজরত ঈসা সম্পর্কে ইঞ্জিল শরিফে বলা হয়েছে, “এই পুত্রই হলেন অদৃশ্য আল্লাহর হুবহু প্রকাশ। সমস্ত সৃষ্টির আগে তিনিই ছিলেন এবং সমস্ত সৃষ্টির উপরে তিনিই প্রধান। কারণ আসমান ও জমিনে যা দেখা যায় আর যা দেখা যায় না, সবকিছু তাঁর দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে। আসমানে যাদের হাতে রাজত্ব, কর্তৃত্ব, শাসন ও ক্ষমতা রয়েছে, তাদের সাবইকে তাঁকে দিয়ে, তাঁরই জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনিই সবকিছুর আগে ছিলেন এবং তাঁরই মধ্য দিয়ে সব কিছু টিকে আছে” (কলসীয় ১:১৫-১৭)। এই আয়াতদুটি থেকে পরিষ্কার বোঝা যায়, আল্লাহর পরে তাঁর স্থান নির্ধারিত। এখানে অন্যকারো প্রবেশের কোন স্থান নেই। হজরত ঈসা নিজেও বলেন, “বেহেশতের ও দুনিয়ার সমস্ত ক্ষমতা আমাকে দেওয়া হয়েছে” (ইঞ্জিল শরিফ মথি ২৮:১৮)। কিতাবে আরো লেখা আছে, “আল্লাহ এই জন্যই তাঁকে সবচেয়ে উঁচুতে উঠালেন এবং এমন একটা নাম দিলেন যা সব নামের চেয়ে মহৎ যেন বেহেশতে, দুনিয়াতে এবং দুনিয়ার গভীরে যারা আছে তারা প্রত্যেকেই ঈসার সামনে হাঁটু পাতে, আর পিতা আল্লাহর গৌরবের জন্য স্বীকার করে যে, ঈসা মসীহই প্রভু” (ফিলিপীয় ২:৯,১০)।
শ্রেষ্ঠত্ব বিচার করতে গেলে, যেসব গুণাগুণ থাকা প্রয়োজন তার সবই হজরত ঈসার মধ্যে রয়েছে; যেমন আশ্চর্য জন্মে তেমনি মৃত্যু থেকে পুনরুত্থান এবং বেহেশতে গমনে; যেমন মানবিকতায় তেমনি রুহানিকতায়; যেমন যৌক্তিকতায় তেমনি বাস্তবতায়; যেমন বিশ্বের সকল মানুষের ভালবাসায় তেমনি আল্লাহর পূর্ণ স্বীকৃতিতে। অতএব, হজরত ঈসা মসীহ একজন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ নবি, এতে কোন সন্দেহ নেই।