“অমুক ভাষা অন্যান্য সমস্ত ভাষার উৎস ও মূল, ‘সমস্ত ভাষার মাতা’”
অনেক ভাষা এই দাবী করেছেন; সংস্কৃত, হিব্রু, আরবি। কিন্তু আধুনিক ঐতিহাসিক ভাষাবিজ্ঞান প্রমাণ করেছেন যে সমস্ত ভাষা বিবর্তন এবং পরিবর্তন করতে থাকে, এবং আজকাল কোন “সমস্ত ভাষাদের মাতা” এমন ভাষা নেই। যেমন ধরুন, পাঁচ হাজার বছর আগে আরবি ও হিব্রু ভাষা বিদ্যমান ছিল না – এরা পশ্চিম সেমিতীয় নামক অন্য একটি লুপ্ত ভাষা থেকে বিবর্তন হয়েছে, এবং সেই পশ্চিম সেমিতীয় অন্য একটি আরো প্রাচীন ‘আদি সেমিতীয়’ ভাষা থেকে বিবর্তন হয়েছে।
“অমুক ভাষার বর্ণমালা এত সুন্দর যে দেখলেই বোঝা যায় সেটি ঐশীভাষা”
ভাষার বর্ণমালাগুলোও বিবর্তন হয়েছে। হযরত মূসা (আ.) এর আমলে আধুনিক হিব্রু অক্ষরের রূপ ছিল না – হিব্রু ভাষা লেখা হত প্রাচীন ফোনিষীয় ভাষার অক্ষরে (ইতিহাসের প্রথম বর্ণমালা)। হযরত ঈসা মসীহ্র আমলে আরবি বর্ণমালা আবিষ্কার হয় নি; আরবি অক্ষর প্রাচীন আরামায় অক্ষর থেকে খ্রীষ্টাব্দ চতুর্থ শতাব্দীতে ক্রমে ক্রমে বিবর্তন হয়েছে, এবং কোর’আন শরীফ নাজেল হওয়ার সময় দেখতে এইরকম ছিল:
হিব্রু, আরবি ও চীন লেখার সৌন্দর্য্য উন্নতি সাধন করেছেন পরে সেই ধর্মাবলম্বীদের শ্রমে, সেটা লেখাটার কোন স্থায়ী গুণ নয়। অনেক “ঐশী ভাষা” বিশ্বাসি ধর্মাবলম্বী অসংখ্য বছরের গবেষণার সময় নষ্ট করেছেন তাদের ঐশী ভাষার অক্ষরের পিছনে গুপ্ত আধ্যাতিক অর্থের খোঁজে, সংস্কৃত, হিব্রু, চীন বা আরবি হউক।
“অমুক ভাষা হচ্ছে সবচেয়ে গভীর ও সুন্দর ভাষা”
ভাষাবিজ্ঞানের পণ্ডিতেরা এখন একমত যে প্রত্যেকটি বক্তার অন্তরের কথা স্পষ্টভাবে প্রকাশ করতে সমানভাবে মানুষের পক্ষে তার সমর্থ। মানুষের পক্ষে তার নিজের ভাষাকে একটি শ্রেষ্ঠ ভাষা মনে করা স্বাভাবিক, কিন্তু আসলে সমস্ত ভাষা সমানভাবে সমৃদ্ধ।
“আমাদের ইবাদত বা উপাসনার অবশ্যই ধর্মগ্রন্থের মূল ভাষা ব্যবহার করা উচিত কারণ সেটি স্বয়ং আল্লাহ্র বাণী”
আল্লাহ্ যদি কোন ভাষা বলেন আর সেটা যদি হয় এমন ভাষা যেটা দন্ত ব্যাঞ্জনবর্ণ ব্যবহার (যেমন আরবি) তাহলে আল্লাহ্র দাঁত থাকতে হবে, এবং যেহেতু দাঁতের কাজ খাদ্য খাওয়া, তাই বলতে হবে যে আল্লাহ্ আহার করেন। এই যুক্তির সিদ্ধান্তটা কিন্তু বেশ শ্রুতিকটু।
“সংরক্ষণ ও তার বিচ্যুতি রোধের জন্য আমাদের অবশ্যই মূল ভাষা ব্যবহার করতে হবে।”
আমরা আগে দেখিয়েছি কীভাবে মাতৃভাষার অর্থ ব্যবহারের বদলে বিদেশী মূল ভাষা ব্যবহার করার ফলাফল তার বিপরীত; বৌদ্ধ ধর্মে যেভাবে ধর্মের পরিবর্তন হয়েছে তেমনভাবে পরিবর্তন ঢুকে যেতে পারে।
নিজের মাতৃভাষা নিয়ে গর্ব করা স্বাভাবিক ও ভাল বিষয়, কিন্তু সেটাকে একমাত্র “ঐশীভাষা” হিসাবে গণ্য করা অগ্রহণযোগ্য। আল্লাহ্ সমস্ত ভাষাগুলো সমানভাবে গ্রহণ করেন।