সংক্ষিপ্ত উত্তর:
হজরত ঈসা নিজে কখনও বলেননি যে, ‘আমি নিজেই আল্লাহ’। কিন্তু আল্লাহর সব গুণাবলী তাঁর মধ্যে ছিল।
ব্যাখ্যামূলক উত্তর:
হজরত ঈসা নিজেকে কখনও আল্লাহ বলে দাবি করেননি। এরূপ দাবি করলে তিনি কুফরি করতেন বরং তিনি আল্লাহর অধীনতা প্রকাশ করে নিজেকে আল্লাহর কাছে নত করেছেন। তাঁকে যখন সৎগুরু উল্লেখ করে তৎকালীন লোকেরা প্রশ্ন করতেন তখন তিনি বলতেন, ‘আমাকে কেন সৎ বলছ? সৎ কেবল একজনই আছেন।’ কেয়ামতের সময় সম্পর্কে সাহাবিরা জানতে চাইলে তিনি বলতেন, সেই সময় সম্পর্কে একমাত্র আল্লাহ ছাড়া কেউ জানে না। সাহাবিরা যখন মুনাজাত করতে শিক্ষা দেবার জন্য হজরত ঈসা মসীহকে অনুরোধ করেছিলেন তখন শিক্ষা দিয়েছিলেন, তোমরা এইভাবে মুনাজাত করো, ‘হে আমাদের বেহেস্তি পিতা’। উপরিউক্ত উদ্ধৃতি থেকে বোঝা যায় তিনি সব সময় আল্লাহকে যথার্থ সম্মান দান করেছেন।
আমরা জানি হজরত ঈসা নিজে ইহুদি ছিলেন। ইহুদি ধর্মের প্রধান হুকুমগুলোর একটি হলো আল্লাহকে স্বীকার করা এবং সম্মান করা। তিনি নিজে তা মেনেছেন এবং অন্যদের শিক্ষা দিয়েছেন যে, আমাদের মাবুদ আল্লাহ এক, যা ছিল তাওরাত কিতাবের প্রধান শিক্ষা। অতএব, তিনি যদি নিজেকে আল্লাহ বলে দাবি করতেন তবে আল্লাহর বিরুদ্ধেই কাজ করতেন। একবার শয়তান হজরত ঈসাকে পরীক্ষায় ফেলতে এসে বলেছিল, ‘তুমি পাহাড়ের উপর থেকে লাফিয়ে পড়, তোমার কোন ক্ষতি হবে না।’ তখন শয়তানকে হজরত ঈসা বলেছিলেন, ‘তোমার মাবুদ আল্লাহকে তুমি পরীক্ষা করতে যেয়ো না।’ আল্লাহকে বরং হজরত ঈসা পিতা বলে ডাকতেন এবং পিতার মতোই সম্মান করতেন। নিশ্চিত মৃত্যুর সামনে দাঁড়িয়ে যিনি বলেছিলেন, ‘পিতা আমার ইচ্ছা নয় বরং তোমার ইচ্ছাই সিদ্ধ হোক’, তাহালে তিনি কীভাবে নিজেকে আল্লাহ বলে দাবি করতে পারেন?
তিনি নিজেকে আল্লাহ বলে দাবি করেন নি সত্য কিন্তু কালাম বলে যে, তিনি ‘আল্লাহর সমান থাকা আঁকড়ে ধরে রাখবার মতো এমন কিছু করেন নি’। এই কথাকে আমরা কেমন করে ব্যাখ্যা করব? এদ্বারা তো এটাই বোঝা যায় যে, একসময় তিনি আল্লাহর সমান ছিলেন। পরে নিজেকে নিচু করলেন। পাককালামের অন্যত্র আছে, ‘এই পুত্রই হলেন অদৃশ্য আল্লাহর হুবহু প্রকাশ’। যদি তা না হবেন তবে আমরা কেমন করে এই আয়াত বুঝব, ‘প্রথমেই কালাম ছিলেন, কালাম আল্লাহর সঙ্গে ছিলেন এবং কালাম নিজেই আল্লাহ ছিলেন’? হজরত ঈসার জন্মের সময় ফেরেশতার দেওয়া দু’টো নাম খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একটি ঈসা, যার মানে নাজাতদাতা আর দ্বিতীয়টি হলো, ‘ইম্মানুয়েল’ যার মানে আমাদের সাথে আল্লাহ। হজরত ঈসা নিজেই সাক্ষ্য দিয়ে বলেছেন, যে আমাকে দেখেছে সে পিতাকে দেখেছেন।