সংক্ষিপ্ত উত্তর:
প্রকৃত শিক্ষা আল্লাহর কালামের জ্ঞান থেকেই আসে। তিনি জ্ঞানে পূর্ণ ছিলেন, তাই শিক্ষা দিতে পারেন।
ব্যাখ্যামূলক উত্তর:
এই প্রশ্নটি এমনিই যে, শিক্ষা দিতে হলে শিক্ষককে সকল বিষয়ে আদর্শ হতে হবে। একদিক থেকে প্রশ্নটি যথার্থ, অপরদিক থেকে প্রশ্নটিই প্রশ্নসাপেক্ষ। এই প্রশ্নটি এজন্য করা হয়ে থাকে যে, যেহেতু তিনি স্বামী হননি অর্থাৎ যেহেতু স্বামী-স্ত্রী কিংবা বিবাহিত জীবনের জ্ঞান হজরত ঈসার নেই সেহেতু তিনি পরিপূর্ণ শিক্ষক নন। একথা সত্য যে, হজরত ঈসা বিয়ে করেন নি। তাই বলে যে তিনি সকল মানুষকে শিক্ষা দেবার অধিকার রাখেন না, তা বলা যায় না। প্রত্যেক নবিকে যদি প্রত্যেক রকম আদর্শ হতে হতো তবে কোন নবি বা শিক্ষকই প্রকৃত শিক্ষক হতে পারতেন না। উদারহণ স্বরূপ, নবিরা বেশির ভাগই ছিলেন পুরুষ; তবে কি উত্তম শিক্ষক হতে হলে, তাঁদের সকলকে মেয়ে হতে হতো না? এছাড়া অবিবাহিতদের সম্পর্কে কী বলা যেতো? রাজাদের সম্পর্কে কী বলা যেতো? জেলে, তাঁতী, ধনী, ব্যবসায়ী? তিনি যদি বিয়ে করতেন তবে অবিবাহিতদের তিনি কী করে আদর্শ শিক্ষা দিতেন?
হজরত ঈসা মানুষকে জাগতিক জ্ঞানে জ্ঞানী করে তোলার জন্য এই দুনিয়াতে আসেন নি। জাগতিক জ্ঞানগুলো মানুষ প্রকৃতিগতভাবেই অর্জন করে। মানুষ দেখে দেখে, বুঝে বুঝে শেখে। হজরত ঈসা এসেছিলেন যেন মানুষ জীবন পায় এবং জীবনের উপচয় পায়। সেইজন্য তিনি মানুষকে জীবনের অতি প্রয়োজনীয় বিষয়ে শিক্ষা দিয়েছেন। এছাড়া নবিরা মানুষের কিংবা নিজের জ্ঞানে কথা বলেন না। তাঁরা আল্লাহর পাকরুহ দ্বারা পরিচালিত হয়ে, আল্লাহ নিজে যা চান তাই শিক্ষা দেন। সুতরাং ছোট-বড়, পুরুষ-মহিলা, স্বামী-স্ত্রী, জ্ঞানী-মূর্খ সকলকে নবিরা শিক্ষা দিতে পারেন। নবিদের যোগ্যতা হলো, তাঁরা আল্লাহর ইচ্ছামতো চলেন এবং আল্লাহর ইচ্ছায় শিক্ষা দেন।
হজরত ঈসার বারো বছর বয়সে যখন তার মা-বাবার সাথে জেরুজালেম এবাদতখানায় গিয়েছিলেন, তখন বাঘা বাঘা ইহুদি আলেমরা তাঁর পাণ্ডিত্যে ও জ্ঞানে আশ্চর্য হয়ে গিয়েছিলেন। বড় হয়ে যখন তিনি সমাজগৃহে ও এবাদতখানায় শিক্ষা দিতেন, তখনও তাঁর চেয়ে অভিজ্ঞ ও পণ্ডিত ব্যক্তিরা হার মানতেন এবং বুঝতেন যে, তিনি এমনভাবে শিক্ষা দেন যার শিক্ষা দেবার অধিকার আছে। অনেক কুটিল এবং জটিল প্রশ্নেরও এমন উত্তর দিতেন যে, সবাই হা হয়ে যেতো এবং তাঁর সামনে মুখ তুলে দাঁড়াতে সাহস করতো না। আধুনিক যুগের বড় বড় পণ্ডিত, শিক্ষক ও দার্শনিকরা তাঁর শিক্ষার উদাহরণ দেন। মহাত্মা গান্ধী হজরত ঈসার শিক্ষায় উদ্বুদ্ধ হয়েছিলেন। আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘হে দারিদ্র্য তুমি মোরে করেছ মহান, তুমি মোরে দানিয়াছ খ্রিস্টের সম্মান।”