সংক্ষিপ্ত উত্তর:
ঈমান আরবি শব্দ, মানে বিশ্বাস। সাধারণত ঈসায়ীরা আল্লাহ, ফেরেশতা, বেহেস্ত, দোজখ, নবি-পয়গাম্বর, মৃত্যু, পরকাল ইত্যাদিতে বিশ্বাস করে।
ব্যাখ্যামূলক উত্তর:
শাব্দিক অনুবাদের খাতিরে ঈমান মানে বিশ্বাস অনুবাদ করা গেলেও ঈমান শব্দের কিতাবি ধারণার সাথে বিশ্বাস কথাটার অনেক দূরত্ব আছে। উদাহরণস্বরূপ, অনেকে ভূত বিশ্বাস করে, অনেকে করে না। পার্থক্য হলো, যারা ভূত বিশ্বাস করে, তারা ভূতের কথা শুনে ভয় পায়। অন্ধকারে চলাফেরায় ভূতের উপস্থিতি থাকতে পারে বলে ভয়েভয়ে থাকে। আবার অনেকে বলে, তারা সব নবিদের বিশ্বাস করে। আসলে, এই ধরনের বিশ্বাস আর ভূতের উপর বিশ্বাসের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। আবার একজন আর এক জনকে বলে, আমি তোমাকে বিশ্বাস করি; আবার কেউকেউ বলে, আমি আপনাকে বিশ্বাস করি না। এই বিশ্বাসের সাথে ঈমানের কোন সম্পর্ক নেই। বিশ্বাস মানে আস্থা রাখা, নির্ভর করা ইত্যাদি। একমানুষ আর এক মানুষকে সামর্থ্য না থাকলেও মনের জোরে বিশ্বাস করতে পারে এবং সেই বিশ্বাসে দ্বিতীয় পক্ষের অসামর্থের কারণে বিরূপ প্রভাবও পড়তে পারে।
ঈসায়ীদের ঈমান একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত বিশ্বাস। এই ঈমান কোন তথ্য জানার ঈমান নয়। যেমন অনেকে বলেন, ‘আমি আল্লাহ আছে, বিশ্বাস করি’। কিতাবের মতে, এরূপ ঈমান ভূতেরও আছে। অথচ এইরূপ ঈমান থেকে ভূত কখনও লাভবান হবে না। ঈসায়ীদের ঈমান হলো, আল্লাহর পুরো পরিকল্পনার উপর ঈমান, যার সাথে মানুষের গুনাহ থেকে নাজাত লাভের ইতিহাস রয়েছে। এই ইতিহাস হলো, আল্লাহ মানুষসহ সবকিছু সৃষ্টি করেছেন। কোনকিছুই তাঁকে ছাড়া সৃষ্ট হয়নি। আল্লাহ মানুষকে নিজের সুরতে ও সিফতে সৃষ্টি করে তাকে ইচ্ছাশক্তি দিয়েছেন যেন মানুষ তার পছন্দ মতো জীবন যাপন করতে পারে। এই পছন্দের স্বাধীনতা এবং অধিকারের সুযোগ নিয়ে মানুষ আল্লাহর অবাধ্য হয়েছে এবং অনন্ত শাস্তির যোগ্য হয়েছে। এই অসহায় অবস্থায় আল্লাহ মানুষকে ভালোবাসেন বলে, তিনি তার জন্য একজন উদ্ধারকর্তাকে পাঠিয়ে, নাজাতের ব্যবস্থা করেছেন। সেই নিষ্পাপ উদ্ধারকর্তা দুনিয়াতে এসে, মানুষের জন্য কাফফারা দিয়েছেন বলে, মানুষ গুনাহ থেকে নাজাত লাভ করার সুযোগ পেয়েছে। এই উদ্ধারকর্তা হলেন, হজরত ঈসা মসীহ, যিনি কালের পরিক্রমায় এই দুনিয়াতে এসে নিজে মৃত্যু বরণ করে, গুনাহগারদের শাস্তি নিজেই বহন করেছেন এবং কবরে গিয়েছেন। যেহেতু তিনি নিষ্পাপ ছিলেন, সেহেতু তিনি মৃত্যুকে জয় করে, কবর থেকে উঠেছেন। এই পুরো ইতিহাসই হলো ঈসায়ীদের ঈমান।