সংক্ষিপ্ত উত্তর:
না, আসমানি কিতাবসমূহ বাতিল কিংবা পরিবর্তন হয় না। ইঞ্জিল শরিফও তার ব্যতিক্রম নয় বরং নাজেল হওয়ার সময় যা ছিল হুবহু তা-ই আছে।
ব্যাখ্যামূলক উত্তর:
বলা হয়ে থাকে যে, “ইঞ্জিল শরিফ বাতিল হয়ে গেছে, পরিবর্তিত হয়ে গেছে, বিকৃত হয়ে গেছে ইত্যাদি”। সাধারণত মানুষ এই অভিযোগ করার সময় তিনটি কারণ দেখায়। সেই তিনটি কারণ হলো:
- একটি আসমানি কিতাব নাজেল হবার পর পূর্ববর্তী আসমানি কিতাব এমনিতেই তার কার্যকারিতা হারিয়ে ফেলে। অতএব, স্বাভাবিকভাবেই তা বাতিল হয়ে যায়।
- কিতাবগুলোকে ধর্মীয় নেতারা তাদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য পরিবর্তন, পরিবর্ধনের মাধ্যমে বাতিলযোগ্য করে ফেলেছে।
- বলা হয়ে থাকে যে, এসব আসমানি কিতাবকে যেভাবে সংরক্ষণ করা প্রয়োজন ছিল, সেভাবে যতœ ও সংরক্ষণ করা যায়নি।
উপরিউক্ত অভিযোগগুলো সত্য হলে, ঈসায়ীদের ঈমান ও আমলের কোন অস্তিত্ব নেই- একথা বলা অযৌক্তিক হবে না। ঈসায়ীদের ঈমানের ভিত্তি হলো কিতাবুল মোকাদ্দস। এই কিতাবুল মোকাদ্দস যদি সত্যই বিকৃত বা বাতিল হয়ে থাকে, তবে তাদের ঈমানেরই বা মূল্য কী আছে?
একথা আমরা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি যে, আসমানি কিতাবগুলোর একটাও বাতিল বা বিকৃত হয়নি বরং আল্লাহর শাশ্বত ও চিরন্তন কালাম হিসাবে আজও নিখুঁতভাবে টিকে আছে। এবিষয়ে আমাদের যুক্তি তুলে ধরছি:
১। আল্লাহর কালাম পর্যায়ক্রমিকভাবে দেয়া হয়েছে। হজরত ঈসা মসীহ পর্যন্ত যে কালাম নাজেল হয়েছিল তার প্রত্যেকটি কিতাব এবং প্রত্যেকটি সহিফা যখনই দেওয়া হোক না কেন, তা সর্বকালের জন্য এবং সব মানুষের জন্যই প্রয়োজন। এদের বিষয়বস্তু দেখলেই আমরা সে কথা বুঝতে পারি। আগেকার কিতাবের বিষয়বস্ত হলো:
- ক) আল্লাহ উত্তমরূপে সবকিছু সৃষ্টি করেছেন।
- খ) শয়তান অহংকারের বশবর্তী হয়ে, আল্লাহর বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করল এবং পতিত হলো।
- গ) হজরত আদমের মধ্যদিয়ে পৃথিবীতে গুনাহ ঢুকল কিন্তু আল্লাহ পবিত্র, তাই গুনাহের বিচার করেন।
- ঘ) আল্লাহ মহব্বতে পূর্ণ, তাই তিনি গুনাহগার মানুষেকে উদ্ধারের ব্যবস্থা করেন।
- ঙ) আল্লাহ গুনাহগারদের জন্য নাজাতদাতা পাঠানোর ওয়াদা করেছেন।
- চ) তাওরাত কিতাবে বর্ণিত শরিয়ত নয়, মানুষ কেবল ঈমানের দ্বারাই নাজাত পাবে।
- ছ) আল্লাহর মনোনীত বনি-ইসরাইল জাতির লোক, হজরত দাউদের বংশের মধ্যদিয়েই নাজাতদাতা আসবেন।
- জ) একজন নিষ্পাপ ব্যক্তি, এক অবিবাহিত মেয়ের গর্ভে জন্মাবেন যার মধ্যদিয়ে নাজাত আসবে।
মানুষের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয় বিষয় নাজাত। হজরত আদমের গুনাহের ফলে, মানুষ আল্লাহর সান্নিধ্য থেকে পৃথক হয়েছে। এই অবস্থা থেকে নাজাত লাভ করাই মানুষের একান্ত প্রয়োজনীয় বিষয়। তাই বর্ণিত বিষয়গুলো নাজাতকামী প্রত্যেক মানুষের জন্যই প্রয়োজন। আর আগেকার প্রত্যেক কিতাবের মধ্যেই নানাভাবে উপরিউক্ত কথাগুলোই নবিগণ বলে গেছেন।