সংক্ষিপ্ত উত্তর:
কেয়ামতের সময় দুনিয়ার অবস্থা কল্পনাতীত ভয়াবহ হবে। মানুষ সীমাহীন দুঃখকষ্ট ভোগ করবে। কিন্তু ঈসা মসীহের উম্মতেরা মসীহের আশ্রয়ে নিরাপদে থাকবে। তাদের আকাশে মেঘের মধ্যে তুলে নেয় হবে। পরে মসীহ তাঁর রাজত্ব কায়েম করবেন এবং সিংহাসনে বসে সমস্ত জাতির বিচার করবেন।
ব্যাখ্যামূলক উত্তর:
কেয়ামতের আলামত সম্পর্কে ইঞ্জিল শরিফের বিভিন্ন সুরায় বিশদ বর্ণনা দেয়া হয়েছে। বর্ণিত আলামতের সবটুকু এই ক্ষুদ্র পরিসরে তুলে ধরা খুবই কঠিন। তবে সংক্ষিপ্ত আকারে দুনিয়ার অবস্থা, ঈসার উম্মতদের এবং ঈসা মসীহের অবস্থা তিনটি ধারায় তুলে ধরা হলো:
প্রথমত, দুনিয়ার অবস্থা: কেয়ামতের সময় দুনিয়ার অবস্থা কীরকম হবে তার বর্ণনা দিতে গিয়ে, হজরত ঈসা বলেন, “…আমি তোমাদের সত্যই বলছি, এখানে একটা পাথরের উপরে আর একটা পাথর থাকবে না; সমস্তই ভেঙে ফেলা হবে।” যুদ্ধের আওয়াজ শোনা যাবে। জাতির বিপক্ষে জাতির ভয়াবহ যুদ্ধ হবে। দেশে দেশে ভূমিকম্প হবে। মানুষের মধ্যে দুষ্টতা বেড়ে যাবে। সর্বনাশা ঘৃণার জিনিসকে পবিত্র জায়গায় রাখা হবে। তখন মানুষের এমন কষ্ট হবে যে, দুনিয়ার শুরু থেকে সেই সময় পর্যন্ত কখনও হয়নি এবং এরপরও শেষ হবে না। সেই সময় সূর্য অন্ধকার হয়ে যাবে, চাঁদ আর আলো দেবে না, তারাগুলো আসমান থেকে খসে পড়ে যাবে এবং চাঁদ-সূর্য-তারা আর স্থির থাকবে না” (ইঞ্জিল শরিফ, মথি ২৪ অধ্যায়)।
দ্বিতীয়ত, উম্মতদের অবস্থা: যুদ্ধের খবরাখবর শোনা গেলেও হজরত ঈসা তাঁর উম্মতদের অভয় দিয়ে বলেছেন, তাদের জন্য ভয় নেই, কারণ এসব হবেই হবে। তিনি আরো বলেন, অনেকেই আমার নাম নিয়ে এসে বলবে, ‘আমিই মসীহ’; এই বলে ঈমানদারগণকে ঠকাবে। হজরত ঈসা তাঁর উম্মতদের বিষয়ে বলেছেন, “সেই সময়ে লোকে তোমাদের কষ্ট দেবার জন্য ধরিয়ে দেবে এবং তোমাদের খুন করবে। আমার জন্য সব লোকেরা তোমাদের ঘৃণা করবে। সেই সময় অনেকে পিছিয়ে যাবে এবং একে অন্যকে ধরিয়ে দেবে।” স্থির থাকবার বিষয়ে বলতে গিয়ে তিনি বলেন যে, তারা যেন কারো ঠকামিপূর্ণ কথায় বিশ্বাস না করে। তবে তিনি তাদের সর্বদা সতর্ক ও প্রস্তুত থাকতে বলেছেন। তিনি বলেন, “তোমরা সতর্ক থাক, কারণ তোমাদের প্রভু কোন্দিন আসবেন তা তোমরা জানো না। সেই জন্য তোমরা প্রস্তুত থাক, কারণ যে সময়ের কথা তেমরা চিন্তাও করবে না, সেই সময়েই ইবনে আদম আসবেন।
তৃতীয়ত, হজরত ঈসা মসীহের অবস্থা: আমরা জানি যে, কেয়ামতের অর্থাৎ শেষ সময় হজরত ঈসা এই দুনিয়াতে ফিরে আসবেন। তবে সেই দিন বা সময়ের কথা কেউ জানে না; কেবল আল্লাহই জানেন, কখন তিনি আসবেন। নুহ নবির সময়ে যেমন হঠাৎ বন্যা এসেছিল, তেমটি তিনি হঠাৎ আসবেন। তাঁর উম্মদের তিনি বলেছেন যে, তাদের বিচলিত হবার কোন কারণ নেই। কারো কথা শোনা কিংবা অনুসন্ধান করারও কোন প্রয়োজন নেই, “কেননা বিদ্যুৎ যেমন পূর্বদিকে দেখা দিয়ে পশ্চিম দিক পর্যন্ত চমকে যায়, ইবনে আদমের আসা সেইভাবেই হবে”। ইঞ্জিল শরিফে হজরত ঈসা নিজেই কেয়ামতের সময় তাঁর নিজের অবস্থা সম্পর্কে বলেন। তিনি বলেন, এমন সময় আসমানে ইব্নেআদমের চিহ্ন দেখা দেবে, দেখেই তাঁকে চেনা যাবে। মানুষ ইবনে আদমকে শক্তি ও মহিমার সঙ্গে মেঘে করে আসতে দেখবে। এই সময় ‘জোরে জোরে শিঙা বেজে উঠবে আর সঙ্গে সঙ্গে ইবনে আদম তাঁর ফেরেশতাদের পাঠিয়ে দেবেন। সেই ফেরেশতারা দুনিয়ার একদিক থেকে অন্যদিক পর্যন্ত, চারদিক থেকে তাঁর বাছাই করা বান্দাদের একসঙ্গে জড়ো করবেন (ইঞ্জিল শরিফ মথি ২৪ অধ্যায়)। হজরত ঈসা আরো বলেন, ইবনে আদম সমস্ত ফেরেশতাদের সঙ্গে নিয়ে যখন নিজের মহিমায় আসবেন, তখন তিনি বাদশাহ হিসাবে তাঁর সিংহাসনে মহিমার সাথে বসবেন এবং সকল জাতির বিচার করবেন (মথি ২৫ অধ্যায়)।