সংক্ষিপ্ত উত্তর:
না, আগেকার নবিরা মুসলমান ছিলেন না।
ব্যাখ্যামূলক উত্তর:
মুসলমান একটি জাতিসত্তার পরিচায়ক। সুনির্দিষ্ট ইসলামি নীতিমালা এবং আইন-কানুন দ্বারা উদ্বুদ্ধ এবং নিবেদিত বিশ্বাসীকেই মুসলমান বলা হয়। না, এই অর্থে হজরত ঈসা মসীহসহ তাঁর আগের কোন নবিই মুসলমান ছিলেন না। তারা বরং বনি-ইসরাইল জাতিরই লোক ছিলেন। কেবল হজরত আদম, হজরত নুহ, হজরত ইব্রাহিম এবং হজরত ইসহাক প্রমুখ নবিগণ বনিইসরাইল জাতির বাইরে ছিলেন। হজরত আদম নবি না হলেও প্রথম মানব হিসাবে তাঁকে কেউ কেউ নবির সম্মান দেন। এছাড়া হজরত ইবরাহিম, তাঁর ভাইপো লুত এবং ছেলে ইসহাসককে নবি ধরা হলে, তারা বনি ইসরাইল জাতির বাইরে আছেন। এ কালের নবিদের মধ্যে হজরত নুহই নবি হিসাবে তাঁর লোকদের উদ্দেশ্যে ভবিষ্যতবাণী করেছিলেন। আর একদিক থেকে বিবেচনা করলে হজরত ইবরাহিম ছিলেন বনি-ইসরাইল জাতির আদিপিতা। যদিও হজরত ইবরাহিমের নাতি ইয়াকুবের মধ্য দিয়েই ইসরাইল জাতির সূচনা। তথাপি ইসরাইল জাতির উৎপত্তির প্রতিজ্ঞা হজরত ইবরাহিমের কাছেই করা হয়েছিল। নবি হিসাবে তাই হজরত ইবরাহিম ছিলেন সেই জাতির উৎস। সেদিক থেকে ইবরাহিম এবং ইসহাককেও ইসরাইল জাতির লোক বলা যায়। কিতাবধারী এবং সহিফাধারী সকল নবিই বনি-ইসরাইল জাতির লোক ছিলেন, তাঁরা মুসলমান ছিলেন না।
যে অর্থে হ্যাঁ অর্থাৎ তাদের মুসলমান বলা যায় তা হলো, মুসলমান শব্দের আভিধানিক অর্থের দিক থেকে। মুসলমান শব্দ আরবি ভাষার সালাম ধাতু থেকে এসেছে। সালাম মানে শান্তি। মুসলমান মানে হলো যার মধ্যে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই শান্তি আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণের মধ্য দিয়ে হয়ে থাকে। অর্থাৎ মুসলমান মানে আল্লাহর কাছে সমর্পিত শান্তিকামী মানুষ। এই অর্থের দিক থেকে বলা যায়, সকল নবিই সাধারণভাবে আল্লাহর কাছে সমর্পিত ও শান্তিকামী ছিলেন। ফলে বলা যায় প্রত্যেক নবিই মুসলমান ছিলেন। কিন্তু ঐতিহাসিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিচার করলে, তারা কোনভাবেই মুসলমান ছিলেন না। কেননা মুসলমান জাতির উৎপত্তি হয়েছে ৫৭০ খ্রিস্টাব্দের পর অথচ নবিগণ তার আগেই এসেছিলেন।